![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বিমানবন্দর থেকে জিয়ার নাম বাদ
জিয়ার নামে কোনো স্থাপনা থাকবে নাঃ ত্রিশালে বঙ্গবন্ধুর নামে বিমানবন্দর হবে
ফজলুল হক শাওন
জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নাম থেকে শহীদ রাষ্ট্রপতির জিয়ার নাম বাদ দেয়া হয়েছে। ১৯৮১ সালে তদানীন্তন সরকার কুর্মিটোলা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নাম ‘জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর’ করেছিল। এত দিন এটিই ছিল বিমানবন্দরটির নাম। গতকাল মন্ত্রিসভার বৈঠকে বিমানবন্দরের নাম পাল্টানোর এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এখন থেকে এই বিমানবন্দরের নাম হবে হজরত শাহজালাল রহঃ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। এ ছাড়া বরিশাল জিয়াউর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের নামও পরিবর্তন করে শুধু ‘বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়’ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বলা হয়েছে, সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নাম বাংলাদেশের কোনো স্থাপনাতেই থাকবে না। কারণ সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে একজন স্বৈরশাসক বলে মনে করে সরকার। একজন মন্ত্রী এ প্রসঙ্গে বলেন, সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী সম্পর্কিত রায় অনুসারে দেশের কোনো স্বৈরশাসকের নামে কোনো স্থাপনা থাকতে পারবে না।
এ দিকে ময়মনসিংহের ত্রিশালে ‘বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর’ প্রতিষ্ঠার বিষয়েও মন্ত্রিসভা বৈঠকে আলোচনা করা হয়েছে। আগামী মার্চ মাসে বঙ্গবন্ধু বিমানবন্দর স্থাপনের প্রাথমিক সমীক্ষা প্রতিবেদন পেলে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানা গেছে।
গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার সাপ্তাহিক সভায় নাম পরিবর্তনের এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় মন্ত্রিপরিষদের সদস্য ছাড়াও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
মন্ত্রিপরিষদের সভা শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ সাংবাদিকদের এ সম্পর্কে ব্রিফিং করেন।
প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ বলেন, জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নাম পরিবর্তন করে হজরত শাহজালাল রহঃ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর করা হয়েছে। বরিশাল শহীদ জিয়াউর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় (সংশোধন) আইন ২০১০-এর খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা কমিটি। এ আইনের আওতায় বরিশাল শহীদ জিয়াউর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম হবে ‘বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়’।
মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তে বলা হয়, ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত সরকার আসার পর দেশের যেসব স্থাপনার নাম পরিবর্তন করা হয়েছিল তার সবই পুনঃস্থাপন করা হবে। ঢাকাস্থ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ১৯৭৯ সালে তেজগাঁও থেকে কুর্মিটোলায় স্থানান্তরিত হওয়ার পর এটি ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নামে পরিচিত ছিল।
সভায় বলা হয়, বাংলাদেশ সুফি সাধক ও ধর্মপ্রচারকদের সূতিকাগার ও পুণ্যভূমি। তাদের উদার মানবিক ও সার্বজনীন কল্যাণ চেতনা অতীত কাল থেকে এ দেশের গণমানুষকে গভীরভাবে অনুপ্রাণিত, আলোড়িত ও প্রভাবিত করেছে। সাধকদের প্রতি গণমানুষের গভীর শ্রদ্ধাবোধ ও গণ-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলনস্বরূপ তাদের স্মৃতি রক্ষার্থে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নামকরণ করা হবে।
ইতঃপূর্বে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের নাম মহান সাধক হজরত শাহ আমানত রঃ-এর নামে নামকরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া রাজশাহী বিমানবন্দরের নাম হজরত শাহ মখদুম রঃ-এর নামে করা হয়েছে এবং নির্মাণাধীন খুলনা বিমানবন্দরের নাম হজরত খানজাহান আলী রঃ-এর নামে নামকরণ করা হয়েছে।
১৯৭৯ সালে ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্যক্রম শুরু হয়। পরে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃতুর পর তৎকালীন বিএনপি সরকার ১৯৮১ সালে জিয়া আন্তজাতিক বিমানবন্দর নামে এর কার্যক্রম শুরু করে। এক হাজার ৩০০ একর জমির ওপর নির্মিত দেশের সর্ববৃহৎ এ বিমানবন্দরটি ১৬টি আন্তর্জাতিক এয়ারলাইনস নিয়মিত ব্যবহার করে। বছরে প্রায় পাঁচ লাখ যাত্রী এই বিমানবন্দর দিয়ে আসা-যাওয়া করেন। এ ছাড়াও বছরে নয় হাজার ৮০০ কোটি টন মালামাল ওঠানামা করে এই বিমানবন্দরে।
গত ১৪ ডিসেম্বর স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম মন্ত্রিসভার বৈঠকে জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নাম পরিবর্তনের জন্য একটি প্রস্তাব দেন। প্রস্তাবটি নিয়ে আলোচনার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিমানবন্দরটির জন্য নতুন নাম আহ্বান করেন। এ সময় সভায় উপস্থিত কয়েকজন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী এই বিমানবন্দরের নাম হজরত শাহজালাল রহঃ এবং ঢাকা বিমানবন্দর নামকরণের প্রস্তাব দেন। আলোচনার পর হজরত শাহজালাল রহঃ বিমানবন্দর করার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
মন্ত্রিসভা সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যোগাযোগ মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত একটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করছিলেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রীদের উদ্দেশে বলেন, মনে রাখবেন কারো মন্ত্রিত্বই স্থায়ী নয়। অদক্ষতার পরিচয় পাওয়া গেলে যেকোনো সময় যেকোনো মন্ত্রী পরিবর্তন হতে পারেন। তিনি মনোযোগ দিয়ে কাজ করতে মন্ত্রিসভার সব সদস্যের প্রতি আহ্বান জানান।
আবুল কালাম আজাদ বলেন, মন্ত্রিসভার বৈঠকে ইপিজেড শ্রমিককল্যাণ সমিতি আইন ২০১০, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল আইন ২০১০, কলেজ অব টেক্সটাইল টেকনোলজিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত করতে বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ এবং চার্টার্ড সেক্রেটারি আইন ২০১০-এর খসড়া অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
নয়া দিগন্ত
১৬-০২-২০১০
©somewhere in net ltd.