নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শেষ পর্যন্ত সত্য আর ভালবাসার বিজয় হবেই।

আমি সাধারন মানুষ।অতি সাধারন একজন।

জাগতিক ভালবাসা

্নিজেকে নিজেকে নিয়ে নিজে কিছু লেখাটা নিতান্তই বোকামি।

জাগতিক ভালবাসা › বিস্তারিত পোস্টঃ

"ভয়ংকর কসাই হবার গল্প"

২২ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:৩৫

জীবন আর মরনের সন্ধিক্ষনে আমার সামনের তরুন যুবকটি।



বয়স বেশি হলে ৩০ বছর।

স্থান- কাঁচপুর ব্রীজ সংলগ্ন একটা হাসপাতাল।

বাইক অ্যাক্সিডেন্ট।কান দিয়ে,মুখ দিয়ে রক্ত আসছে।

মাথায় প্রচন্ড আঘাত।

রোগী প্রায় অচেতন।

লোকটি প্রাণপণে শ্বাস নেবার চেষ্টা করছে।





ইমার্জেন্সি রুমে অন্তত ৫০ জন লোক।

আমি কিছুক্ষনের জন্য হতবম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম।

কি করব এখন?

ইতিমধ্যে ক্লিনিকের ম্যানেজার চোখের ইঙ্গিতে রোগী রেফার করতে বলে দিল।

কিন্তু জেনে শুনে নূন্যতম চিকিৎসা না দিয়ে রোগীটাকে মৃত্যু মুখে ঠেলে দিতে আমার বিবেক সায় দিল না।আমার বার বার মনে হচ্ছিল এই মানুষটার জন্য অপেক্ষা করে থাকবে তার মা,বাবা,পরিবার,পরিজন।

আবার এও মনে হল,লোকটির স্থানে আমি শুয়ে আছি।আর কর্তব্যরত ডাক্তার কোন চেষ্টা না করেই আমাকে অন্য কোন হাসপাতালে পাঠিয়ে দিচ্ছেন।





ম্যানেজার আবার ও ইঙ্গিত দিলেন।

রোগী যেন দ্রুত বিদায় দেই।



ম্যানেজারের রক্তচক্ষে উপেক্ষা করে আমি নিজেকে স্থির করে নিলাম।

ব্লাড প্রেশার আর পালস দেখে নিলাম দ্রুত।

দুইটাই ভাল আছে।

কিন্তু যেভাবে রক্তপাত হচ্ছে কতক্ষন ঠিক থাকবে আল্লাহ জানে।

ইমার্জেন্সী রুমে ভীড় বেড়েই চলেছে।

আমি চিৎকার করে অভিভাবক ছাড়া সবাইকে বের হয়ে যেতে বললাম।

খুব একটা কাজ হল না।

ভীড় কিছুটা পাতলা হল।







রোগীর তখন ও প্রচন্ড শ্বাস কষ্ট হচ্ছে।

অক্সিজেন চলছে।

ব্রাদার আর সিস্টার রক্ত সব মুছে নিচ্ছেন।



দেখা গেল,রোগীর কাছের কোন মানুষ নেই।

যারা আছেন সবাই পথচারী।

তাদের দ্রুত অ্যাম্বুলেন্স যোগাড় করতে বললাম।

ঢাকা মেডিকেল নিতে হবে।



এরপর আর পিছে ফিরে তাকালাম না।

ম্যানেজার মহাবিরক্ত।



এরপর যা হল

-সিস্টার ক্যানুলা।কুইক।



রোগী অচেতন।জিহবা পেছনে পড়ে শ্বাস বন্ধ হয়ে যেতে পারে যে কো সময়।



-ব্রাদার,টাং ডিপ্রেসর,টাং ডিপ্রেসর......



-টাং ডিপ্রেসর তো ইমার্জেন্সি তে নাই।



-তাহলে কিছু একটা দেন। আর্টারি,টিশ্যু কিছু একটা দেন।



আর্টারি দিয়েই জিহবাটা চেপে ধরলাম।

কিন্তু কিছুতেই লোকটার শক্তির সাথে আমি পেরে উঠছি না।

মনে হচ্ছে,ওই অচেতন অবস্থায় তার গায়ে অসুরের শক্তি ভর করেছে।

আমি,একজন ব্রাদার,একজন সিস্টার মিলেও তাকে ধরে রাখতে পারছি না।

বেড থেকে পড়ে যেতে যাচ্ছে বারবার।







ক্যানুলা করা হয়েছে।

কিন্তু হাত ধরে রাখা যাচ্ছে না কোন ভাবেই।

ক্যানুলা খুলে যেতে পারে যে কোন সময়।

অপারেশন থিয়েটার থেকে সিস্টার চলে এসেছেন।হাসপাতালের বুয়াও এসে দাড়িয়েছেন। যদি কোন সাহায্য লাগে।



আবারও ব্লাড প্রেশার আর পালস দেখে নিলাম।

আল্লাহর রহমতে এখন ও ভাল।

কিন্তু ব্লিডিং আর শ্বাসকষ্ট কমছে না।





কি করি... কি করি



-সাকার,সাকার,ব্রাদার সাকার মেশিন দেন।



সাকার মেশিন কি আছে?



সাধারনত ক্লিনিকের ইমার্জেন্সিতে সাকার মেশিন থাকে না।



কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে এই ক্লিনিকে ছিল।



-সাকার অন। আমি সাকশন দেয়া শুরু করলাম।



রোগী প্রচণ্ড জোরে নড়ে উঠল। সম্ভবত ব্রেইন হেমোরেজ।

ব্রাদার,ওয়ার্ড বয় আর খালা মিলে অনেক কষ্টে ধরে রেখেছেন।

সাকশনের সাথে ব্লাড বের হয়ে আসছে।

আস্তে আস্তে শ্বাসকষ্ট কিছুটা কমে আসল।

কোন ব্লিডিং সাইট পাওয়া যায় কিনা দেখছি।



এর মধ্যে ম্যানেজার বহুবার আকারে ইঙ্গিতে কিছু বলতে চেয়েছেন।

আমি না দেখার ভাব ধরলাম।

কিন্তু রোগীর অবস্থা ভাল না।

মাথায় আঘাত,সাথে বমি আর অচেতন অবস্থা।

কোনটাই ভাল লক্ষন না।

রোগী শ্বাসকষ্টে মারা যেতে পারে যে কোন সময়।



অ্যাম্বুলেন্স চলে এসেছে।

আমি টিটি,টিআইজি,আর অ্যান্টিবায়োটিক দিতে চাচ্ছিলাম।

ব্রাদার রাজি হলেন না।

ব্রাদার কানে কানে বললেন,স্যার রোগী মারা গেলে পরে বলবে ইনজেকশন দেয়ার কারনে মারা গেছে।

পরে বিপদে পড়বেন।

যা করসেন তাই অনেক বেশি।

আমরা তো এইসব রোগী গেট থেকেই বিদায় দেই।





আমার চোখে পত্রিকার সেই সংবাদ গুলো ভেসে উঠল,ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু কিংবা ভুল ইঞ্জেকশানে রোগীর মৃত্যু।



আমি আর্টারি দিয়ে ধরা জিহবা ছেড়ে দিলাম।



জিহবা পেছনে সরে গিয়ে শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেল।



সাকার মেশিন বন্ধ হয়ে গেল।





রোগী অ্যাম্বুলেন্সে উঠানো হল ......

রোগীর আত্নীয় স্বজন এসেছেন।

চারিদিকে কান্নার শব্দ।

চারিদিকে হাহাকার।



আমি একজনকে বললাম জিহবাটা আঙ্গুল দিয়ে চেপে রাখতে ...

এই স্যালাইনটা শেষ হলে এটা এভাবে খুলে লাগাবেন .....

শ্বাস বন্ধ মনে করলে মুখটা খুলে এভাবে শ্বাস দিবেন ......



লোকটার শ্বাসকষ্ট বেড়েই চলেছে।

এ্যাম্বুলেন্স ছেড়ে দিচ্ছে।

আমি দেখতে পাচ্ছি,কাচপুর থেকে তীব্র যানজট পার হয়ে ঢাকা মেডিকেল পর্যন্ত জীবনযুদ্ধে এই যুবক পরাজিত হবে।

চোখের সামনে অতি সন্নিকটে মৃত্যু।

আমার চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে।









ঘটনাটা মাস দুয়েক পুরানো।লিখার ইচ্ছা ছিলনা।



কিন্তু প্রিয় পাঠক,

দুইজন তরুন চিকিৎসক কে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।



অপরাধ,তারা একজন হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে যাওয়া পুলিশ সদস্যকে কিছু মুখে খাবার ঔষুধ দিয়েছিলেন।



তার কিছুক্ষন ঐ পুলিশ সদস্যের মৃত্যু হয়।

আপনাদের সকলের কাছে আমার বিনীত প্রশ্ন,দয়া করে বলবেন কি,কোন ঔষধ দিয়ে মুহুর্তেই রোগি মেরে ফেলা যায়?



দয়া করে কিছু মুখে খাবারের ঔষধের নাম বলেন যা ১০ মিনিটে মানুষের মৃত্যু ঘটায়।



প্লিজ বলেন.........





নিজেকে একটু স্বান্তনা দেই ......







আমার ক্ষুদ্র জ্ঞ্যানে এই ধরনের ঔষধের নাম আমার জানা নেই।



আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে,পুলিশ রিমান্ডে কি জানতে চাইবে?

একজন পুলিশ সদস্য ঔষধ সম্পর্কে কতটুকু জানেন?



অপরাধ যদি হয় শাস্তি নিশ্চই প্রাপ্য।

কিন্তু সম্পূর্ন ভিত্তিহীন অভিযোগে ক্ষমতার দাপটে এই হেনেস্তা কি আদৌ গ্রহনযোগ্য।



এরপর কোন অসুস্থ রোগী এলে আমি ও তাকে ওই ম্যানেজারের মত গেট থেকেই বিদায় দেবার চেষ্টা করবো।



আমরা হয়তো চিকিৎসা না দিয়ে তাকে অ্যাপোলো বা স্কয়ারে যেতে বলব।



গরিব রোগী হলে ঢাকা মেডিকেল।

রোগি মরুক আর বাঁচুক তাতে আমাদের কিছু যায় আসে না।

চাচা,আগে আপন প্রাণ বাঁচা।





প্রিয় পাঠক,আপনি তখন ডাক্তার সমাজকে “ভয়ংকর কসাই” বলার প্রস্তুতি নিন।



মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ৩:১৯

বাঁশ আর বাঁশ বলেছেন: আমরা কসাই। গরীবের রক্ত চোষা।।।

২৩ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:০৮

জাগতিক ভালবাসা বলেছেন: কসাই না ভাই,মহা কসাই।

২| ২২ শে নভেম্বর, ২০১৩ ভোর ৫:৫৩

খেয়া ঘাট বলেছেন: বাঁশ আর বাঁশ বলেছেন: আমরা কসাই। গরীবের রক্ত চোষা।।।

২৩ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:৩৪

জাগতিক ভালবাসা বলেছেন: ভাইয়ের কি মাথাডা গ্যাছেনি!!!!

শুধু গরীবের রক্ত চোষা?

ডাক্তাররা তো সবারই রক্ত চোষে!!!!!!!

৩| ২৩ শে নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ৯:৪৪

উপপাদ্য বলেছেন: পড়ে মনটা খারাপ হয়ে গেলো

৪| ২৫ শে নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:২৬

জাগতিক ভালবাসা বলেছেন: আপনার মত আমার ও মন খারাপ হয়েছিলো।

কিন্তু আমি অনুভব করি এভাবে ভুল কারনে ডাক্তার গ্রেপ্তার হলে চেষ্টা না করেই রোগীকে রেফার করার প্রবনতা বেড়ে যাবে।

কে নিজের জীবনের ঝুঁকি নেবে,বলুন?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.