নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মানবসম্পদ ও কমপ্লায়েন্স ব্যবস্থাপনা আমার পেশা হলেও, লেখালিখির মাধ্যমে নিজের ভাবনাগুলো ভাগ করে নিতে আমি সবসময় আগ্রহী।

শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু

আমি ইতিবাচক চিন্তার শক্তিতে বিশ্বাস করি এবং আমার কাজ এবং কথার মাধ্যমে অন্যদের অনুপ্রাণিত করার চেষ্টা করি। আমার ব্লগে আসার জন্য ধন্যবাদ। আসুন, একসাথে কাজ করে সফলতার পথে এগিয়ে যাই!

শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু › বিস্তারিত পোস্টঃ

রাজনীতি যখন নাটক হয় – ২০২৫ সালের বাস্তবচিত্র

২৫ শে মে, ২০২৫ রাত ১০:৫৩



(একটি কাল্পনিক চিত্র)

বাংলাদেশের রাজনীতিতে যেন হঠাৎ করেই অদ্ভুত এক নাটকীয়তার আবির্ভাব ঘটেছে। একটার পর একটা ঘটনা এমনভাবে ঘটে চলেছে, যেন সবকিছু আগে থেকেই কেউ লিখে রেখেছে, আমরা কেবল চোখ মেলে তা দেখে যাচ্ছি। মানুষের জীবনের অসহায়তা আর ক্ষমতার চাতুরী যেন একই ফ্রেমে বাঁধা পড়েছে।

সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা ছিল বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হিসেবে আদালতের রায়ে নির্বাচিত হওয়া। কিন্তু আইনের স্বীকৃতি পেলেও তিনি এখনো শপথ নিতে পারেননি। কারণ সরকার নানান টেকনিক্যাল এবং প্রশাসনিক বাঁধা তৈরি করে তাকে শপথ থেকে বিরত রাখছে। এই অবস্থায় ইশরাক প্রতিবাদে রাস্তায় নামলেন, তার সমর্থকরাও রাজপথ অবরোধ করে রাখলেন। দুদিন ধরে কার্যত অচল হয়ে পড়ল রাজধানী ঢাকা। নাগরিক ভোগান্তি চরমে পৌঁছাল, আর তাতেই যেন দেশের রাজনীতিতে নতুন উত্তাপ ছড়াল।

এই পরিপ্রেক্ষিতে ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রকাশ্যে তার বিরক্তি প্রকাশ করলেন। অনেকেই বলছেন, তিনি পদত্যাগের কথাও ভাবছেন। কিন্তু তার এই ভাবনার পেছনে যে শুধু ব্যক্তিগত ক্ষোভ নয়, বরং রাজনৈতিক বার্তা লুকিয়ে আছে, সেটাও এখন স্পষ্ট। বরাবরের মতোই সরাসরি কিছু না বললেও, ড. ইউনূস যেন ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে বেশ কিছু বিষয়ের উপর আলোকপাত করতে চাইলেন। সেই আলো আসলেই কার গায়ে পড়বে, তা এখনো অনিশ্চিত।

তার চেয়েও বেশি বিস্ময় জাগানো ঘটনা ঘটল গতকাল সন্ধ্যায়। ড. ইউনূস বিএনপি, জামায়াত ও এসিপি নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। আর সেখানে তার পাশে বসে ছিলেন সেই আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়া, যাকে বিএনপি নিজেই উপদেষ্টা পদ থেকে অপসারণের দাবি তুলেছিল। এটি নিছক কাকতালীয় নয়—এটি একটি প্রতীকী অবস্থান, একটি সুস্পষ্ট বার্তাবিএনপি যাকে দূরে ঠেলতে চায়, ড. ইউনূস তাকেই পাশে রেখে বুঝিয়ে দিলেন, কার সঙ্গে তার সখ্যতা রয়েছে আর কার দিকে তার অনীহা। অনেক বিশ্লেষক বলছেন, এটি ছিল বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে তার একরকম ‘ঠান্ডা প্রতিক্রিয়া’তোমরা চাও না তো, আমি ঠিক তাকে নিয়েই চলব।

এই পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনী প্রধানের বক্তব্যও বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। সেনা অফিসারদের উদ্দেশ্যে দেওয়া বক্তৃতায় তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচন ডিসেম্বর ২০২৫-এর মধ্যেই হওয়া উচিত। একইসঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন যে, চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশি কোম্পানির হাতে না দেওয়া এবং রাখাইন অঞ্চলের করিডোরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকারেরই কাজ। সেনাবাহিনী এই সিদ্ধান্ত নেবে না, তবে তারা চাইছেন বিষয়গুলো নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য হোক। তার এই বক্তব্য যেন এক ধরনের বার্তা—যে ভবিষ্যতের নির্বাচন ও জাতীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে সেনাবাহিনী কোন অবস্থানে আছে, সেটিও স্পষ্ট।

সবকিছুর মধ্যে সবচেয়ে জটিল মোড় দেখা দিয়েছে বিএনপি ও এনসিপির মধ্যে সম্পর্ক ঘিরে। দুই দল পরস্পরবিরোধী অবস্থান নিয়েছে, তিনজন করে উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করেছে একে অপরের কাছ থেকে। এই দাবিদাওয়া, এই টানাপোড়েনের মাঝেই সরকার জামায়াত ও এনসিপির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে। যেন কেউ কাউকে সামনে রেখে, আবার কাউকে পেছনে রেখে খেলাটি চালিয়ে যাচ্ছে।

পুরো চিত্রটা এখন এমন দাঁড়িয়েছে যে, দেশের রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব আর অদৃশ্য সমঝোতায় ব্যস্ত। সাধারণ মানুষ যে প্রশ্ন করে—কে আসলে দেশ চালাচ্ছে? তাদের কথা কে শোনে? তাদের ভোট বা মতামতের কি কোনো দাম আছে? এসব প্রশ্নের জবাব এই ঘটনাপ্রবাহের কোথাও নেই। আছে শুধু সংঘাত, সন্দেহ, আর কৌশলের খেলা।

রাজনীতি এখন আর মতাদর্শের জায়গা নয়—এটা এখন একেকটা ব্যাকরুম বৈঠক, একেকটা চেয়ারের পাশে বসানো লোক, একেকটা টুইস্টেড বার্তার মধ্য দিয়ে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা। কে কার বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে, কার হাত ধরে সভায় বসবে, আর কার পেছনে ছুরি চালাবে—এই অস্পষ্ট হিসেব-নিকেশেই দেশ চলছে।

২০২৫ সাল বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য এক নির্ধারণী সময় হয়ে উঠছে। সামনে নির্বাচন। কিন্তু এই নির্বাচনের পথে যতটা না গণতন্ত্র, তার চেয়েও বেশি রাজনীতির রাহাজানি। আর সেই পথে হেঁটে সাধারণ মানুষ হয়তো দিন দিন রাজনীতি থেকে আরও দূরে সরে যাচ্ছে। হয়তো এটাই কারো চাওয়া। কিংবা, এটাই আমাদের নিয়তি।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে মে, ২০২৫ রাত ১২:০৩

সামিয়া বলেছেন: একটা বিপদজ্জনক পরিস্থিতি পার করছি

২| ২৬ শে মে, ২০২৫ রাত ১২:৩১

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: সংকট পূর্বে ছিলো না। । বিএনপি ডিসেম্বরে নির্বাচন চায় কারণ সেনাবাহিনী বলে দিয়েছে তারা ডিসেম্বরের পর ব্যারাকে ফিরে যাবে। তখন দেশের পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যেতে পারে। আম্লিক হয়তো ভয়ে এখন তেমন নামছে না। তখন রাস্তায় আন্দোলন করে দেশকে অস্থিতিশীল করলে আর কোনো প্রকার নির্বাচন সহসা হবে না। ড. ইউনূস বলেন তিনি নাকি স্মরণ কালের সেরা সুষ্ঠু নির্বাচন দিবেন। আপনার কি মনে হয় আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হওয়ার পর ৫০ শতাংশ ভোট পড়বে বাক্সে ? একটা বিগ কুয়েশ্চন এটা ! আমার আত্নীয় স্বজনের যারা নির্বাচনের সময় কেন্দ্রে সরকারের পক্ষ থেকে দায়িত্ব পালন করেছিলো ২০১৪/২০১৮/২০২৪ সালে তাদের মুখে এবং কিছুটা নিজ চোখে দেখেছি আম্লিক শত চেষ্টা করে ভোটার আনতে পারেনি কেন্দ্রে। ওখন মাঠে বড়ো দল কেবল বিএনপি ! এই অবস্থায় নির্বাচন দিলে বহিঃবিশ্ব মেনে নিবে ? ডিসেম্বরে নির্বাচনের বড়ো সমস্যা হচ্ছে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার সময় যে হিসাবে বয়স ধরেছে সেখানে নতুন অনেক ভোটারের জানুয়ারি মাসে ১৮ বছর হবে। ফেব্রুয়ারিতে যদি নির্বাচন না হয় রোজার আগে দেশ পুরোপুরি অনিশ্চয়তার দিকে হাটবে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.