নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মানবসম্পদ ও কমপ্লায়েন্স ব্যবস্থাপনা আমার পেশা হলেও, লেখালিখির মাধ্যমে নিজের ভাবনাগুলো ভাগ করে নিতে আমি সবসময় আগ্রহী।

শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু

আমি ইতিবাচক চিন্তার শক্তিতে বিশ্বাস করি এবং আমার কাজ এবং কথার মাধ্যমে অন্যদের অনুপ্রাণিত করার চেষ্টা করি। আমার ব্লগে আসার জন্য ধন্যবাদ। আসুন, একসাথে কাজ করে সফলতার পথে এগিয়ে যাই!

শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছায়া - “ঈশ্বরের ভুল ছায়া” সিরিজের সমাপ্তি পর্ব

৩০ শে মে, ২০২৫ সকাল ৮:৩৮



একদল পলাতক যুবক ও এক বিশ্বস্ত কুকুর আশ্রয় নেয় চট্টগ্রামের পাহাড়ের এক গুহায়, যেখানে এক ভূমিকম্প তাদের বন্দি করে দেয় শতবর্ষের ঘুমে। জেগে উঠে তারা দেখে, পৃথিবী বদলে গেছে—ধর্ম এখন অ্যাপ, রাষ্ট্র কৃত্রিম, আর ইতিহাসে তাদের অস্তিত্বই নেই। "ছায়া – ঈশ্বরের ভুল ছায়া" সিরিজের এই সমাপ্তি পর্বে সময়, স্মৃতি ও মানবতার ছায়ার বিরুদ্ধে এক গভীর ডার্ক ফ্যান্টাসি প্রতিরোধ রচিত হয়।



ঢাকার বাতাস তখনও গুমোট। স্বাধীনতা বলে কিছু ছিল, সেই ইতিহাসের পাতায়। শাসকেরা এখনো আধিপত্যে, এবং বিশ্বাস যেন নিঃশেষ।

ছয়জন যুবক—জুবায়ের, মাহির, সাইদ, রুবেল, কাশফী, আর রাহিন—তাদের নাম এখন পোস্টারেও নেই। তারা একসময় লেখালেখি করত, কেউ কবিতা, কেউ হ্যাকার, কেউ ক্যাম্পাস অ্যাক্টিভিস্ট। কিন্তু আজ তারা সবাই পলাতক। সঙ্গে রয়েছে শুধু একটা কুকুর—বেরু

জুবায়ের ছিল দলের নেতা, আস্থার মুখ। মাহির একসময় বুয়েটের ছাত্র, এখন অস্ত্র বানাতে পারে কাগজ দিয়েও। সাইদ ছিল কবি—কিন্তু এখন কেবল নিঃশ্বাস ফেলে। রুবেল হাসতে হাসতে আশংকা ঢাকে, কাশফী অতীত নিয়ে ভাবে, আর রাহিন সর্বদা আতঙ্কে।

তারা পাহাড়ে চলে এসেছে—চট্টগ্রামের এক অজানা অংশে, যেখানে মানচিত্র থেমে গেছে। সেখানকার এক গুহায় আশ্রয় নেয় তারা। গুহাটির প্রবেশপথ ছিল সরু, আর পাহাড় ঘেরা জায়গাটা ছিল অতল নিঃস্তব্ধতায় মোড়া।



বেরু সবসময় আগে চলে। সে যেন জানে কোন পথে পুলিশ আসবে, কোন গন্ধ বিপদের।

তিনদিন তারা লোকালয়ের কাছাকাছি গিয়ে খাবার এনেছে। কিন্তু চতুর্থ রাতে ঘটে গেল অপ্রত্যাশিত ভূমিকম্প। গুহার মুখ ধসে পড়ে, ভিতরে আটকে পড়ে তারা।

ভয়ে, ক্লান্তিতে, দীর্ঘশ্বাসে কাটে সময়। তারা পাথর সরাতে থাকে, কিন্তু ব্যর্থতা ঘনিয়ে আসে। পরিশেষে তারা একে একে ঘুমিয়ে পড়ে।



ঘুম... ঘুম... যেন সময় তার হৃদস্পন্দন থামিয়ে দিয়েছে। যখন তাদের ঘুম ভাঙে, তখন বেরুই প্রথম উঠে। সে গুহার মুখের দিকে তাকায়, এবং তার হালকা ঘেউ ঘেউ শুনে বাকিরাও জেগে ওঠে।

তারা দেখে—গুহার পাথর সরে গেছে। আলোর রেখা ভিতরে ঢুকছে।
“হয়ত ভূমিকম্প আবার হয়েছে,” বলে মাহির।
বা হয়ত… আমাদের ঘুমটা অস্বাভাবিক ছিল,” ফিসফিস করে কাশফী।

তারা নেমে আসে পাহাড় থেকে। ক্ষুধার্ত, দুর্বল, কিন্তু মুক্ত। এক বাজারে গিয়ে তারা খাবার চায়। কিন্তু দোকানদার অবাক হয়ে চেয়ে থাকে।
“এই পোশাক... এই ভাষা... তোমরা কে?”

জুবায়ের টাকা দেয়। দোকানদার টাকাটি নিয়ে হেসে ওঠে।
“এই টাকা... এটা তো ১০০ বছর আগের।”



তারা হতভম্ব। কীভাবে? কীভাবে এটা সম্ভব?

তারা বলে, “আমরা তো গতকাল গুহায় ঢুকেছিলাম।”

কিন্তু চারপাশ বদলে গেছে। রাস্তায় মানুষ হাওয়ায় কথা বলে, চোখে গুগল-লেন্স। দোকান নেই, ‘ড্রোন সার্ভ’ বুথ আছে। এবং ধর্ম—ধর্ম এখন ডেটা, স্মার্টফোনে আপলোড করা অ্যাপ।

এক সাইনবোর্ডে তারা দেখে: “আধা-স্বাধীন কৃত্রিম গণপ্রজাতন্ত্রী অঞ্চল – ২১৩১ খ্রিষ্টাব্দ।”

জুবায়ের মাটিতে বসে পড়ে। রাহিন চিৎকার করে: “তাহলে আমরা ঘুমিয়ে ছিলাম একশো বছর?”



বেরু হেঁটে চলে। তারা অনুসরণ করে তাকে। সে তাদের নিয়ে যায় একটি ভাঙা মন্দিরের কাছে। সেখানে প্রাচীন ভাষায় লেখা:
“সত্যকে ঘুম পাড়ানো যায়, কিন্তু সময় সবসময় জেগে থাকে।”

এক বৃদ্ধ এগিয়ে আসে। তিনি বলেন, “তোমরা... সেই হারিয়ে যাওয়া ছায়ার সন্তান? পুরনো দিনের কথা শুনেছি। আর তুমি... তুমি তো সেই পাহাড়ের প্রহরী!”

বেরুর চোখ জ্বলে ওঠে। যেন তার ভিতরে অন্য কিছু আছে। তার শরীর থরথর করে কেঁপে ওঠে, এবং হঠাৎ সে আকাশের দিকে চেয়ে চিৎকার করে—
“আর কতকাল ছায়ার নীচে থাকবে মানুষ?”

বৃদ্ধ কাঁদেন। “তোমরা ঘুমিয়ে ছিলে না। তোমরা রক্ষা পেয়েছিলে।”



কিন্তু তারা জানে না কী করবে। রাষ্ট্র নেই, তাদের শত্রুরা ইতিহাসে গলে গেছে। তারা কি নতুন সভ্যতার অংশ হবে, না আবার ছায়ার ভিতরেই হারিয়ে যাবে?

সাইদ বলে, “আমরা কি জেগে উঠেছি... নাকি এখনো ঘুমিয়ে?”

কাশফী তাকিয়ে থাকে আকাশের দিকে, যেখানে ড্রোনের বদলে আজও তারা দেখা যায়। জুবায়ের বেরুর মাথায় হাত রাখে। সে থেমে গেছে। হয়ত আবার ঘুমিয়ে পড়েছে, পরবর্তী ১০০ বছরের জন্য।

শেষ।

“যারা সময়কে ভুলে যায়, তারা সময়ের দ্বারা ভুলে যাওয়া হয়।”

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে মে, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

রাজীব নুর বলেছেন: চমৎকার।

৩০ শে মে, ২০২৫ সকাল ৯:২৭

শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু বলেছেন: আপনার মন্তব্যের জন্য অনিক ধন্যবাদ রাজীব ভাই।

২| ৩০ শে মে, ২০২৫ দুপুর ২:৪২

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: ভালো লিখেছেন।

৩০ শে মে, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৭

শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু বলেছেন: সময় করে পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

৩| ৩০ শে মে, ২০২৫ রাত ৯:২৯

ফেনিক্স বলেছেন:




যাক, নতুন কিছু নিয়ে ভাবেন। আমি মানুষকে সাদামাটা ও জ্ঞানী মানুষ হিসেবেই দেখে আসছি।

৩০ শে মে, ২০২৫ রাত ১১:১৫

শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু বলেছেন: চেষ্টা করবো। অনেক ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।

৪| ৩১ শে মে, ২০২৫ সকাল ১০:১৫

রাজীব নুর বলেছেন: দেশের সমস্যা ও সমাধান নিয়েও লিখবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.