নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি মূলত সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে লিখি, যেখানে বিশ্লেষণ ও গভীর চিন্তাভাবনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পাশাপাশি, ছোটগল্প লেখা আমার অন্যতম শখ, যেখানে আমি জীবন ও সমাজের নান্দনিকতা তুলে ধরার চেষ্টা করি।

শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু

লেখালেখির মাধ্যমে আমি নতুন ভাবনা, নতুন দৃষ্টিভঙ্গি ও সৃজনশীল প্রকাশ খুঁজে পাই। আমার লেখার লক্ষ্য পাঠকদের ভাবতে উদ্বুদ্ধ করা এবং একটি অর্থবহ আলোচনা তৈরি করা।

শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভালোবাসা কারে কয় সিরিজের দ্বিতীয় গল্প - চিলেকোঠার প্রথম বৃষ্টি

১২ ই জুন, ২০২৫ রাত ৯:৩৯


চিলেকোঠার এক ভিজে দুপুরে শুরু হওয়া নীরব প্রেম, সমাজের বাধা, হারিয়ে ফেলা সম্পর্ক এবং ফিরে পাওয়া এক আবেগময় চিঠির গল্প—‘চিলেকোঠার প্রথম বৃষ্টি’ একটি গভীর, আবেগঘন ফ্ল্যাশব্যাকভিত্তিক প্রেমকাহিনি, যেখানে ভালোবাসা প্রকাশের বদলে নীরবতার ভাষায় বেঁচে থাকে।

চিলেকোঠার সেই জানালাহীন ঘরে সেদিন প্রথমবার বৃষ্টি নামে। টিনের চালের ওপর শব্দ করে পড়তে থাকা ফোঁটাগুলোর ছন্দে এক অদ্ভুত নরমতা ছড়িয়ে পড়ে। দেয়ালে ঝুলে থাকা পুরনো ঘড়ির কাঁটাগুলো যেন থমকে গিয়েছিল, আর ঠিক সেই থমকে যাওয়ার মুহূর্তে রুদ্র প্রথম বুঝেছিল—নীলা তার জন্য কেবল এক বন্ধু নয়।

নীলা বসে ছিল সিঁড়ির ধাপে। নীলের মতো ওড়নাটা তার গলা ছুঁয়ে পড়েছিল বৃষ্টির ফোঁটায় ভিজে। মুখের বাঁদিকে একরাশ চুল এসে জমা হয়েছিল, চোখের সামনে। রুদ্র বুঝতে পারছিল, কিছু একটা বলার আছে তার, কিন্তু শব্দ যেন আটকে আছে গলার গভীরে।

সে এগিয়ে এসে ধীরে ধীরে নীলার পাশেই বসে পড়ে। দূর থেকে ভেসে আসছিল শিউলি ফুলের গন্ধ—মেঘলা দুপুরের বাতাসে মিশে থাকা মধুর ক্লান্তি। বাইরে থমথমে আকাশের নিচে দিগন্তজোড়া সবুজ মাঠ, ভিজে ভিজে নরম হয়ে যাওয়া মাটির গন্ধ।
রুদ্র বলেছিল, খুব আস্তে— "নীলা, তোমাকে কিছু বলতে চাই।"

নীলা তাকায়নি। শুধু বৃষ্টির দিকে অপলক চেয়ে থেকে বলেছিল, "সব কথা বলার হয় না, রুদ্র। কিছু কিছু অনুভূতি... চুপ করেও বলা হয়ে যায়।"

রুদ্র থমকে গিয়েছিল। বুকের ভেতর টান টান করা সেই অজানা অনুভূতি জমাট বাঁধছিল। ইচ্ছে হয়েছিল, নীলার হাত ধরে বলতে—"থেমে যাও। থেকো।" কিন্তু সে জানত না, এই থেমে যাওয়ার অনুমতি তাদের কেউ পাবে না।

দূরে একটা বজ্রপাতের শব্দ হলো। নীলা কাঁপলো একটু। মুহূর্তের জন্য তার আঙুলগুলো রুদ্রের হাত ছুঁয়ে গেল। অথচ পরমুহূর্তে সে দ্রুত উঠে দাঁড়িয়ে, সামলে নিলো নিজেকে।

নীলা হেসে বলেছিল, "চলো, বৃষ্টি থামার আগে বাসায় ফিরতে হবে। দেরি করলে মা চিন্তা করবে।"

রুদ্র কিছু বলতে পারেনি। কিছুই। শুধু দেখেছিল, নীলা ধীরে ধীরে নেমে যাচ্ছে ভেজা সিঁড়ি ধরে, আর প্রতিটি ধাপে ফেলে যাচ্ছে একরাশ না-বলা কথা।


(ফ্ল্যাশব্যাক: নীলার মনে)

এক সন্ধ্যায়, বারান্দার কোণে দাঁড়িয়ে নীলা শুনেছিল বাবার গলা— "নিজের কাজিনের সাথে? এসব সম্পর্ক সমাজ মানবে না। মেয়ের ভবিষ্যত শেষ করে দেবে!"

সেদিন থেকেই, এক অদৃশ্য দেওয়াল গড়ে উঠেছিল নীলার হৃদয়ের চারপাশে। সে জানত, ভালোবাসা থাকলেও, কিছু যুদ্ধ হারার জন্যই লড়া হয়।


(তিন বছর পর)

হোস্টেলের জানালার পাশে বসে, বৃষ্টির শব্দে রুদ্র নিজেকে আবিষ্কার করত—একাকী। তিন বছর পেরিয়ে গেছে। প্রতিটি বর্ষায়, প্রতিটি মেঘলা দুপুরে সে খুঁজেছে নীলার চিঠির ছায়া। কখনো আসেনি।

কলেজের খাতায় চোখ রাখলেও, মন পড়ে থাকত সেই চিলেকোঠার ভিজে সিঁড়ির ধাপগুলোয়। আজ সে বুঝতে শিখেছে—সব উত্তর শব্দের অপেক্ষায় আসে না। কিছু উত্তর মিশে থাকে নীরবতাতেই।

"হয়তো তার না-বলা নীরবতাই ছিল শেষ উত্তর," রুদ্র ভাবত, ভেজা মাঠের দিকে তাকিয়ে।


(বর্তমান)

অজানা টানে একদিন রুদ্র আবার ফিরে যায় সেই পুরনো বাড়িতে। চিলেকোঠার ধুলো জমা সিঁড়ি, ভাঙা টিনের ছাদ, দেয়ালে ফাটল—সবই আছে। কেবল নেই নীলা। অথবা... থেকে গেছে, কোনো অদৃশ্য ছায়ায়।

হঠাৎ, সিঁড়ির ধারে পায়ে ঠেকে যায় কিছু একটা। একটা পুরনো, বিবর্ণ চিঠি। তাতে অমলিন হাতে লেখা কয়েকটা লাইন:
"আমি জানতাম তুমি আসবে। চাইলেও তোমাকে দূরে রাখতে পারিনি, রুদ্র। ভয় পেয়েছিলাম—সমাজের, পরিবারের, ভবিষ্যতের। কিন্তু ভালোবাসা তো ভয় মানে না, তাই না?"

চোখ ঝাপসা হয়ে এলে রুদ্র আবছাভাবে দেখতে পেল— নীলার সেই নীল ওড়না, হাওয়ার দোলায় একবার নড়ে উঠল জানালার ফাঁক দিয়ে, যেন শেষ বিদায় জানাতে।


শেষ লাইন:

"ভালোবাসা হয়তো দুইটা আলাদা পথে এগিয়ে গেল, তবু চিলেকোঠার সেই ভিজে সিঁড়িতে আজও দুটি হৃদয়ের অদৃশ্য ছাপ রয়ে গেছে—একসাথে, নিঃশব্দে।"

পরিশিষ্ট: রুদ্রের চিঠি

চিলেকোঠার সেই জানালার ধারে বসে, বৃষ্টির ভেজা গন্ধে আজও তোমাকে খুঁজি...

নীলা, আজ কত বছর হয়ে গেল, গুনতে গুনতে সংখ্যাগুলো গুলিয়ে যায়। জীবন বদলেছে, শহর বদলেছে, আমিও বদলে গেছি। কিন্তু জানো? কিছু বদলায়নি— বৃষ্টির প্রথম ফোঁটা পড়লে এখনো তোমার কথা মনে পড়ে।

সেই চিলেকোঠার সিঁড়িতে, ভিজে জামাকাপড়ে দাঁড়িয়ে তুমি যে দৃষ্টি ফেলে তাকিয়েছিলে, তার মানে আমি তখন বুঝিনি। এখন বুঝি— ভালোবাসা কখনো উচ্চারণের অপেক্ষা করে না; সে শুধু হৃদয়ে খোদাই হয়ে থাকে। তোমার নীরবতা ছিল তোমার অশ্রুপাত, ছিল তোমার ভয়, তোমার ভালোবাসা—সবকিছুর মিশ্র প্রতিফলন।

আজ আমি জানি, তুমি তোমার নিজের লড়াই লড়ছিলে। সমাজের চোখ, পরিবারে বাঁধা, বয়সের ব্যবধান—এসবের পাথর বুকে বেঁধে তুমি হয়তো চুপ করে থেকেছিলে, আর আমি অপমান ভেবে রাগ করেছিলাম, চলে গিয়েছিলাম...

এখন ভাবি, কতো শিশু ছিলাম তখন। এখন বুঝি, ভালোবাসা মানে শুধু পাওয়ার দাবি নয়; ভালোবাসা মানে কখনো কখনো নীরবে মুক্তি দেওয়া। ভালোবাসা মানে কাউকে তার নিজের ভয় থেকে রক্ষা করা।

নীলা, যদি কখনো কোনো চিলেকোঠার জানালা দিয়ে তুমি আকাশের দিকে তাকাও, জেনে নিও— কোনো এক দূর শহরে, কোনো এক ব্যস্ত জীবনের ভেতর থেকেও, আমি এখনো তোমাকে মনে রাখি।

ভালোবাসা শেষ হয় না। সে শুধু রূপ বদলায়, অপেক্ষার এক অনন্ত বৃত্ত হয়ে থেকে যায়।

তোমার, রুদ্র

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই জুন, ২০২৫ রাত ১২:৫৯

জ্যাক স্মিথ বলেছেন: চিলেকোঠার প্রথম বৃষ্টি.............. হুমম..............

১৩ ই জুন, ২০২৫ ভোর ৬:০৮

শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু বলেছেন: আপনার মন্তব্য এবং গানের জন্য অনেক ধন্যবাদ।

২| ১৪ ই জুন, ২০২৫ সকাল ১১:৩৭

রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর গল্প।

১৪ ই জুন, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৩৯

শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু বলেছেন: আপনার মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ রাজীব ভাই।

৩| ১৭ ই জুন, ২০২৫ রাত ৮:২৯

শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু বলেছেন: এই গল্পটি অডিও ফরম্যাটে শুনতে চাইলে Please visit my You Tube channel https://youtu.be/qpofA5OYCa4

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.