নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি মূলত সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে লিখি, যেখানে বিশ্লেষণ ও গভীর চিন্তাভাবনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পাশাপাশি, ছোটগল্প লেখা আমার অন্যতম শখ, যেখানে আমি জীবন ও সমাজের নান্দনিকতা তুলে ধরার চেষ্টা করি।

শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু

লেখালেখির মাধ্যমে আমি নতুন ভাবনা, নতুন দৃষ্টিভঙ্গি ও সৃজনশীল প্রকাশ খুঁজে পাই। আমার লেখার লক্ষ্য পাঠকদের ভাবতে উদ্বুদ্ধ করা এবং একটি অর্থবহ আলোচনা তৈরি করা।

শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু › বিস্তারিত পোস্টঃ

সখী ভালোবাসা কারে কয়... সিরিজের তৃতীয় গল্প “মাঝরাতের বৃষ্টির পুরুষ”

২০ শে জুন, ২০২৫ সকাল ১০:২৯



"ভেজা ছাদের নির্জনতায়, এক নারীর হৃদয়ে ফিরে আসে হারিয়ে যাওয়া প্রেম। "মাঝরাতের বৃষ্টির পুরুষ" গল্পে ভালোবাসা, অভিমান আর শোক মিশে তৈরি হয় এক অপূর্ণ অপেক্ষার প্রতিধ্বনি।"

বৃষ্টিভেজা শহর আজও থেমে থেমে কাঁদে। নীলা জানে, এই কান্না তার একার নয়।

অরণ্য ও নীলা — শেষ সাক্ষাৎ

সেই দিনটাও ছিল এমনই ভিজে দুপুর। অরণ্য তাকে ছাদের এক কোণে নিয়ে গিয়েছিল। কপালের চুল সরিয়ে বলে, "আমি যেতে বাধ্য, নীলা। তোমাকে কথা দিচ্ছি—ফিরে আসবো।"

নীলা কিছু বলতে পারেনি, শুধু চোখের কোণে জমে থাকা জলরেখা সামলাতে পারেনি। বিদায়ের মুহূর্তে অরণ্য নীলার হাতের তালুতে ভাঁজ করে দিয়েছিল ছোট্ট একটা চিঠি। তারপর চলে গিয়েছিল — কাঁপতে থাকা বৃষ্টির পর্দার ওপারে।

চিঠির কথা

চিঠিতে লেখা ছিল:

"নীলা, যদি কোনোদিন মাঝরাতে ছাদে উঠে বৃষ্টি দেখো, জানবে—আমি সেই বৃষ্টির মধ্যে আছি। চাইলেই আমায় ছুঁতে পারবে না, তবে আমি তোমায় ছুঁয়ে যাবো। —অরণ্য।"

কিন্তু নীলা ব্যস্ততা, দ্বিধা আর সমাজের চাপে চিঠি খুলে দেখতে পারেনি।

রুদ্রের সাথে জীবন

রুদ্র, ভদ্র এবং দৃঢ়। কিন্তু তার চোখে কখনোই ছিল না অরণ্যের মতো উন্মাদনা।

এক সন্ধ্যায়, নীলা রান্নাঘরে থাকাকালে, রুদ্র তার পুরনো ড্রয়ার খুঁজতে গিয়ে পায় নীলার সেই ডায়রি। পড়তে গিয়ে সে দেখতে পায়:
"আজও মাঝরাতে বৃষ্টির শব্দে আমি তার গন্ধ পাই..."

রুদ্র কিছু বলেনি। তবে তার বুকের কোথাও যেন ছোট্ট করে একটা কিছু ভেঙে গিয়েছিল।

অরণ্যের মৃত্যুসংবাদ

রুদ্র জানত — এক যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ফিরে আসা বন্ধুর চিঠি পড়ে। চিঠিতে লেখা ছিল:

"অরণ্য আর ফিরবে না, ভাই। শেষবার বৃষ্টির ভেতর দাঁড়িয়ে বলেছিল—সে কাউকে কথা দিয়েছিল।"

রুদ্র জানত না সেই ‘কাউকে’ কে। কিন্তু এখন বুঝতে পারছিল—সে নীলা।

সেই রাত

সেই রাতে প্রবল বৃষ্টিতে ছাদে উঠে আসে নীলা। ছাদের বাতাসে মিশে আছে মৃত্তিকার ঘ্রাণ, বিদীর্ণ বেদনা।

বৃষ্টির ফোঁটা গায়ে পড়ছে, মনে হচ্ছে অরণ্য যেন তার হাতে হাত রাখছে। অরণ্যের সেই চিঠির শব্দগুলো আজ ভেতর থেকে জেগে ওঠে।
তখনই পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা রুদ্র নীলার দিকে এগিয়ে আসে।

"আমি জানতাম," রুদ্র বলে নরম গলায়। "তোমার অরণ্য আর নেই, নীলা। যুদ্ধক্ষেত্রে সে হারিয়ে গেছে। আমি তার বন্ধুর চিঠিতে পড়েছিলাম..."

নীলা বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকে, ঠোঁট কাঁপে। তার পা দুর্বল হয়ে আসে। সে হঠাৎ মাটিতে বসে পড়ে — হাত দিয়ে মাথা ঢেকে ফেলে।

কাঁপতে থাকে, ঠিক বৃষ্টির ধাক্কায় ভিজে ওঠা পাতার মতো।

রুদ্র এগিয়ে এসে তার কাঁধে হাত রাখে। কিন্তু সেই স্পর্শেও নীলা একা। সে জানে, তার অরণ্য একমাত্র মাঝরাতের বৃষ্টিতেই ফিরে আসে। ভিন্ন জগতের, অদৃশ্য এক মৃদু হাসি নিয়ে।

বৃষ্টির ভেতর চোখ বন্ধ করে নীলা ফিসফিস করে: "তুমি আজও আছো, অরণ্য।"

দূরে কোথাও বাজে মৃদু গিটারের ঝঙ্কার। মাঝরাতের বৃষ্টিতে মিলিয়ে যায় দুই হৃদয়ের অপূর্ণ গান।

শেষ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.