![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শেখ মুজিবুর রহমান ক্ষমতায় এসে মানুষকে নিরাশ করেন। তার শাসনামলে (১৯৭২-৭৫) সাধারণ মানুষের অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্ট, গুম, হত্যা, ব্যাংক ডাকাতি, রাহাজানি, দুর্ভিক্ষ, দুর্নীতি,দুঃশাসনের স্টিমরোলার চলতে থাকে। দেশে সে সময় সিরাজ শিকদারসহ প্রায় ২৭ হাজার ভিন্ন মতাবলম্বী রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও মুক্তিযোদ্ধাদের রক্ষীবাহিনী কর্তৃক হত্যা করা হয় এবং গুম করা হয় প্রায় ১০ হাজার বিরোধী নেতাকর্মীকে। গণতন্ত্রের পথ হয় রুদ্ধ, সৃষ্টি হয় বাকশাল, সব পত্র-পত্রিকা বন্ধ করে দেয়া হয়। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন মাত্র চারটি পত্রিকা রাখা হয়। প্রয়াত স্বনামধন্য সাংবাদিক নির্মল সেন দৈনিক ইত্তেফাকের এক উপসম্পাদকীয়তে লেখেন, ‘স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই।’ সাংবাদিক, মুক্তিযোদ্ধা, ছড়াকার আবু সালেহ স্বাধীনতার এক বছর পর লিখলেন, ‘ধরা যাবে না, ছোঁয়া যাবে না, বলা যাবে না কথা,রক্ত দিয়ে পেলাম শালার আজাব স্বাধীনতা।’ ১৯৭৪-এর দুর্ভিক্ষে বিদেশ থেকে পর্যাপ্ত সাহায্য আসার পরও লাখ লাখ মানুষ না খেয়ে মারা গেল। তার পরিপ্রেক্ষিতে কবি রফিক আজাদ লিখলেন, ‘ভাত দে হারামজাদা, নইলে মানচিত্র খাবো।’শেখ মুজিবের একদলীয় দুঃশাসনের পূর্ণাঙ্গ চিত্র পাওয়া যায় মার্কিন মাসিক রিডার্স ডাইজেস্টে। ১৯৭৫-এর মে মাসের সংখ্যায় লেখা হয় "শেখ মুজিব দু’টি বেসামরিক সংগঠনের ওপর নির্ভরশীল। একটি হচ্ছে তার ভাগ্নে শেখ মনির এক লাখ সশস্ত্র একগুঁয়ে যুবকের সংগঠন যুবলীগ, আর একটি হলো নিষ্ঠুর রক্ষীবাহিনী।" তাদের কাজ হলো যখন-তখন কল কারখানায় ঢুকে পড়ে শ্রমিকদের ওপর অত্যাচার, নির্যাতন করা, হত্যা করে সন্ত্রাসের রাজত্ব চালানো।
১৯৭২ সালের জানুয়ারি মাসে খুন করা হয় মুক্তিযোদ্ধা টুয়াড কামালকে,এর কিছুদিন পর হত্যা করা হয় বীর মুক্তিযোদ্ধা নেভাল সিরাজকে। আর এই ভাবেই শুরু হয় এইদেশে হত্যার রাজনীতি।
"১৯৭২ সালে ( বিরোধী মতের রাজনৈতিক দল, পিকিং পন্থি) নকশালদের দেখা মাত্র গুলি করে হত্যার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান॥ ( তথ্যসূত্র: বাংলার বানী, ১ এপ্রিল, ১৯৭২)।"
"শুধু মাত্র ১৯৭২ সালে মুজিব সরকারের আমলে সারা দেশে ব্যাঙ্ক ডাকাতি হয় ৩১ টি, গুপ্তহত্যা হয় ১৪৬৭ টি, ডাকাতি ২০০০, নগদ অর্থ লুট প্রায় ৮ কোটি টাকা॥ ( তথ্যসূত্র: দৈনিক গনকন্ঠ, ২৬ জানুয়ারি, ১৯৭৩)।"
"১৯৭২ সালের ১৯ মার্চ আওয়ামী শ্রমিক লীগ ১০০০০ সদস্য নিয়ে গঠন করে 'লাল বাহিনী'॥ যাদের কাজ ছিল গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে বিরোধী দলীয় নেতা কর্মীর উপর অত্যাচার করা॥( তথ্যসূত্র: দৈনিক সংবাদ, ২১ জুলাই, ১৯৭২)।"
"১৯৭৩ সালে পুলিশের গুলিতে মতিউল আলম এবং কাদেরুল ইসলাম নিহত হন। এই হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে ২ জানুয়ারি সারাদেশে হরতাল পালিত হয়॥ ছাত্র ইউনিয়নের নেতারা ডাকসুর আজীবন সদস্য পদ থেকে শেখ মুজিবুর রহমানকে বহিষ্কারের ঘোষণা দেন। (তথ্যসূত্র: দৈনিক বাংলা, ৪ জানুয়ারি, ১৯৭৩)।"
"১৯৭৩ সালে বাজিতপুরে রক্ষি বাহিনী এবং মুজিব বাহিনীর অত্যাচারে ১২৬ জন নিহত হয়॥ ( তথ্যসূত্র: আহমদ মুসা, প্রগুক্ত,পৃ- ৯১) । গাইবান্ধায় ৭৩ সালে মুজিব বাহিনীর হাতে খুন হয় জাসদ সভাপতি সুজা। এছাড়া আরো অনেক নেতা কর্মীকে হত্যা করে মুজিব বাহিনী॥ ( তথ্যসূত্র: গনকন্ঠ, ২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৪)"
৭২ - ৭৫ ময়মনসিংহ জেলার ঈশ্বরগনজে ছিল লাশের ছড়াছড়ি। হাশেম নামের একজনকে প্রকােশ্য গুলি করে হত্যা করে রক্ষি বাহিনী। ( তথ্যসূত্র: কাজী শামীম, সন্ত্রাস ৭৩ - ৭৪, সাপ্তাহিক সংহতি,৮ জানুয়ারি, ১৯৮৪)।
১৯৭৩ সালে দৈনিক ইত্তেফাকের কিছু খবরের শিরোনাম ছিল এই রকম - 'ঝিনাইদহে এক সপ্তাহে আটটি গুপ্তহত্যা (০১/০৭/৭৩)'। 'বরিশালে থানা অস্ত্রশালা লুটঃ ৪ ব্যক্তি নিহত (৪/০৭/৭৩)'। 'পুলিশ ফাঁড়ি আক্রান্তঃ সমুদয় অস্ত্রশস্ত্র লুট (১২/০৭/৭৩)'। 'চট্টগ্রামে ব্যাংক ডাকাতি,লাল দীঘিতে গ্রেনেড চার্জে ১৮ জন আহত, (১৫/০৮/৭৩)'। 'খুন ডাকাতি রাহাজানিঃ নোয়াখালীর নিত্যকার ঘটনা,জনমনে ভীতি (১৬/০৮/৭৩)'। '২০ মাসে জামালপুরে ১৬১৮টি ডাকাতি ও হত্যাকান্ড (১৭/১১/৭৩)'। 'আরও একটি পুলিশ ক্যাম্প লুটঃ সুবেদরসহ ৩ জন পুলিশ অপহৃত (১৩/০৭/৭৩)'।
" শেখ মুজিবের শাসন আমলে সাড়ে ৪ হাজার জাসদ কর্মী হত্যার অভিযোগ করে থাকে জাসদ। সাম্যবাদী দলের প্রায় ৩০০০ কর্মী নিহত হয়॥ ৭৫ সালের ২ জানুয়ারি সম্পূর্ণ পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করা হয় সরবহারা দলের প্রধান সিরাজ সিকদারকে। ( তথ্যসূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, ১৪ ই জানুয়ারি,১৯৮২)। ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারী শেখ মুজিবুর রহমান সংসদে ভাষণ দিতে গিয়ে বলেন, ' কোথায় আজ সিরাজ সিকদার?'
" ১৯৭৩ সালের জুন থেকে ১৯৭৪ সালের জুন পর্যন্ত এক বছরে ঢাকা শহরে আনজুমান মুফিদুল ইসলাম ১৪০০ বেওয়ারিশ লাশ দাফন করেছে। আর ১৯৭৪ এর জুলাই হতে১৯৭৫ এর জুলাই পর্যন্ত দাফন করেছে ৬২৮১টি বেওয়ারিশ লাশ। ( তথ্যসূত্র: ইত্তেফাক: ২১ অক্টোবর ১৯৭৫)।"
" চরম বামপন্থী, নকশাল বাহিনী, সর্বহারা ও জাসদের গণবাহিনীর হাতে আওয়ামী লীগের অনেক নেতা কর্মী নিহত হন। ১৯৭২ সালের ৬ জুন সংসদ সদস্য আবদুল গফুর নিহত হন। তাঁর সঙ্গে ছিল কামাল ও রিয়াজ নামের দুজন। তারাও নিহত হয়। আবদুল গফুর ১৯৭০ সালের নির্বাচনে খুলনা থেকে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৭৩ সালের ৩ জানুয়ারি নিহত হন সংসদ সদস্য সওগাতুল আলম সগির। তিনি পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের নির্বাচনে মঠবাড়িয়া থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৭৩ সালের ৩ মে সংসদ সদস্য নুরুল হক নিহত হন। তিনি ১৯৭০ সালে পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য হিসেবে নড়িয়া থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৭৪ সালের ১০ জানুয়ারি নিহত হন সংসদ সদস্যমোতাহার উদ্দিন আহমদ। তিনি ১৯৭০ সালে ভোলা থেকে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। সংসদ সদস্য গাজী ফজলুর রহমান নিহত হন ১৯৭৪ সালের ১৬ মার্চ। তিনি ছিলেন নরসিংদীর মনোহরদী এলাকা থেকে নির্বাচিত প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য। ১ আগস্ট ১৯৭৪ সংসদ সদস্য এডভোকেট ইমান আলী নিহত হন। তিনিজাতীয় পরিষদের সদস্য এবং ময়মনসিংহ আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। ২৭ ডিসেম্বর ১৯৭৪কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে ঈদের নামায পড়ার সময় নিহত হন সংসদ সদস্য গোলাম কিবরিয়া। তিনি ১৯৭০ সালে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৭৫ সালের ২৪ফেব্রুয়ারি সংসদ সদস্য আবুল খালেক নিহত হন। তিনি প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন নেত্রকোনা থেকে। ১৯৭২ সালে ২৯ জন, ১৯৭৩ সালে ৭৭ জন, ১৯৭৪ সালে ৫২ জন এবং ১৯৭৫ সালের জুলাই পর্যন্ত ৪৪ জন প্রতিনিধি, ছাত্রনেতা, শ্রমিকনেতা, মুক্তিযোদ্ধা, পুলিশ ও রক্ষীবাহিনীর সদস্যকে হত্যা করা হয়।
( তথ্যসূত্র: আনোয়ার উল আলমের স্মৃতিচারণ মূলক গ্রন্থ ‘রক্ষী বাহিনীর সত্য-মিথ্যা’)।
অবশেষে,১৯৭৫ সালের ১৫ ই আগস্ট মেজর ফারুক এবং মেজর রশিদের নেতৃত্বে সপরিবারে হত্যা করা হয় শেখ মুজিবর রহমানকে।
................. চলবে
২| ০৯ ই জুন, ২০১৪ বিকাল ৩:২৬
ঢাকাবাসী বলেছেন: প্রত্যেকে যার যার রাজনৈতিক অবস্হান থেকে সরকারের ভাল খারাপ কাজ দেখেন তাই এই তর্ক কখনো শেষ হবেনা!
৩| ০৯ ই জুন, ২০১৪ বিকাল ৫:৪৬
আলোকিত আধারে বলেছেন: শফিক আলম, লেখাটা নিরপেক্ষ ভাবই লেখা হয়েছে॥
আওয়ামী লীগের যেসব সংসদ মারা গিয়েছিল তাদের কথাও লেখা হয়েছে॥
৪| ০৯ ই জুন, ২০১৪ বিকাল ৫:৫২
অেসন বলেছেন: আপনার তথ্য সঠিক ধরেই বলছি ৭১ পরবর্তী কি বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু পেয়েছিল তার ধারনা কি আপনার আছে ?
৫| ০৯ ই জুন, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৫৯
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: এরা কাকের মতো!
চোখ বুঝেই মনে করে সবাই সব ভুলে গেছে!!!
আর রাজ্যের অজুহাত!!! অথচ তখন যে পরিমান অনুদান এসেছিল তাতে ঐ সময়ের হিসাবেই সবাই ধনী না হলেও চলনসই এষ্টাবলিষ্ট হয়ে যাবার কথা। যার প্রমা সূচক প্রচলিত বাক্যটি হল- সাড়ে সাত কোটি কম্বলের আমার কমব্ল কই????
এটাই প্রমাণ প্রশাসনিক এবং পারিবারিক নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠা করতে পারেন নাই, তিনি। যার পরিণতিতে সর্বগ্রাসী প্রতিবাদ, প্রতিরোধ- আবার তাকেও নিষ্ঠুর দমননীতিততে নিয়ন্ত্রন করতে গিয়ে - ম্যাসাকার!!!
আলটিমেটলি সবই ছিল ব্যর্থতা। যার ফল ৩৬ বছর পর কেঁদে কেটে ক্ষমতায় আসতে পেরেছিল!!
আর আজ যে পরিমাণ ব্যর্থতা আর স্বজনপ্রীতি, লুটপাট, প্রশাসনিক কাঠামোকে দলীয় ডান্ডা বাহিনী হিসাবে ব্যবহার, হত্যা, গুম, বিরোধী দমন....স্বৈরাচার আর স্বেচ্ছাচার, অনির্বাচিত সংসদের ইতিহাস,
পরে ৭২ বছর লাগে কিনা কে জানে!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!
৬| ১০ ই জুন, ২০১৪ রাত ১:২৩
বাংলার ঈগল বলেছেন: চালিয়ে জান সত্য সহকারে, তাহলে সাথে আছি।
৭| ১০ ই জুন, ২০১৪ সকাল ১০:২৮
আলোকিত আধারে বলেছেন: ধন্যবাদ, বাংলার ঈগল ॥
©somewhere in net ltd.
১|
০৯ ই জুন, ২০১৪ দুপুর ২:৪৪
শফিক আলম বলেছেন: আপনার খাতিয়ান দেখলে হাসি পায়। যারা নক্সালিস্ট, চরমপন্থি, গুপ্তচারী চীনপন্থি, যারা সুপরিকল্পিতভাবে আইনশৃংখলাকে রসাতলে নিয়ে গিয়েছিল, তাদের কথাও আপনি চরমভাবে লিখেছেন। তৎকালীন সরকারের দোষ-ত্রুটি ছিল অনেক সন্দেহ নেই, কিন্তু পিছনে কারা ছিল সেটাও দেখতে হবে। আর ৭৪'এর দুর্ভিক্ষের জন্য কিছু সুযোগসন্ধানি রাজনীতিবিদ যেমন ছিল, তেমনি পরাজিত আমেরিকা-পাকিরাও ছিল। '৭৫ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের ১৭ জন সংসদ সদস্যকে হত্যা করা হয়েছিল। গনবাহিনী তৈরী করেছিল কারা এবং তারা কি করেছিল, কত মানুষকে হত্যা করেছিল সেটাও দেখতে হবে। আপনি লাল বাহিনী এবং রক্ষী বাহিনী নিয়ে যা লিখেছেন তা আজগুবিই মনে হয়। এসবের কোন ভিত্তি নেই। রক্ষী বাহিনী সৃষ্টির পর আইন শৃংখলা অনেকটাই নিয়ন্ত্রনে চলে এসেছিল। এসব ব্যাপারে আপনাকে আরেকটু বিশ্লেষনধর্মী বই-পুস্তক পড়তে হবে। ঐ সময়কার সরকারকে কি কি প্রতিকুল অবস্থা মোকবিলা করতে হয়েছে তাও আপনাকে জানতে হবে। আর যদি আপনি বিশেষ কোন রাজনৈতিক পণ্থিভূক্ত হয়ে থাকেন অথবা বিশেষ কোন উদ্দেশ্য নিয়ে এই পোস্ট করে থাকেন তা'হলে কিছু বলার নেই।