![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। এই দিবসটি উদযাপনের পেছনে রয়েছে নারী শ্রমিকের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের ইতিহাস। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে মজুরি বৈষম্য, কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করা, কাজের অমানবিক পরিবেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের রাস্তায় নেমেছিলেন সুতা কারখানার নারী শ্রমিকেরা। সেই মিছিলে চলে সরকার লেঠেল বাহিনীর দমন-পীড়ন। অতঃপর ১৯৭৫ সালে, ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসাবে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। বাংলাদেশে অনেক দিন থেকেই এই দিবসটি পালিত হচ্ছে।
প্রথমেই বিশেষ ভাবে বলা প্রয়োজন নারী শ্রমিকদের কথা। গার্মেন্টস গুলোতে লক্ষ লক্ষ নারী শ্রমিক কর্মরত। কিন্তু তাদের ইজ্জত-আব্রুর হেফাযতের ন্যূনতম ব্যবস্থাটুকুও কি আছে? প্রতিদিন রাস্তাঘাটে ও কর্মস্থলে নারী শ্রমিকরা উত্তক্ত্যতার শিকার হয় এবং অনেকে বাধ্য হয়ে বিপথগামী হয়। আবার শ্রমজীবী নারীদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ বিভিন্ন বাসাবাড়িতে কর্মরত। এদের উপর বাড়ির কর্তা, গিন্নী ও অন্যান্য সদস্যের নির্যাতনের যে ভয়াবহ সংবাদ পত্রিকার পাতায় মাঝে মাঝে প্রকাশিত হয় তা কি এই সমাজের চরম হিংস্র রূপটিই প্রকাশ করে দেয় না? অথচ যারা নির্যাতন করেন অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা ‘শিক্ষিত’, ‘ভদ্র’ ও সমাজের চোখে ‘গণ্যমান্য’। আমাদের দেশে নারী নির্যাতনের অবস্থা অনেকটা ভয়াবহ॥ পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০০১ জানুয়ারি থেকে ২০১২ জুন পর্যন্ত মোট এক লাখ ৭৪ হাজার ৮৫০ জন নারী সহিংসতার শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে যৌতুকের জন্য সহিংসতার শিকার হয়েছেন ৫১ হাজার ৯৫৭ জন, অ্যাসিড হামলার শিকার হয়েছেন এক হাজার ৮৮৩ জন, ধর্ষণ ৩৮ হাজার৭৯১ জন, খুন এক হাজার ৪৯৭ জন, পাচার হয়েছেন ৯৫৯ জন ও অন্যান্য ধরনের সহিংসতার শিকার হয়েছেন ৪৮ হাজার ৪৩৪ জন। [২০১৪ সালে ১৯২০ জন নারী ও মেয়ে শিশুকে হত্যা করা হয়েছে এবং ৪৪৯ জন আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে। ১৭৪ জন গণধর্ষণের শিকার হয়েছে। সুত্র: দৈনিক যুগান্তর ] [২০১৪ সালের জানুয়রি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত চার হাজার ৬৫৪ নারী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৯৩৯টি। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৯৯ জনকে। সুত্র - প্রথম আলো]
মহিলা পরিষদের তথ্য অনুযায়ী,গত বছরে এসিডদগ্ধে মৃত্যু ৪, অপহরণ ১১৮, নারী ও শিশু পাচার ৩০, নারী ও শিশু হত্যা ৮৯৮, যৌতুকের জন্য নির্যাতন ৪৩১, উত্ত্যক্তের শিকার ৪৬৫, বিভিন্ন নির্যাতনে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন ৩৪১ জন। নির্যাতনের প্রকৃত সংখ্যাটি আরও অনেক বেশি, যা দ্বিগুণের মতো।
নারীদের প্রতি নানা ধরনের সহিংসতার মধ্যে রয়েছে এসিড নিক্ষেপ, অপহরণ, ধর্ষণ, ধর্ষণ-পরবর্তী হত্যা, পাচার, খুন এবং যৌতুকের জন্য নির্যাতন। কিন্তু এসব নির্যাতনের অভিযোগের মধ্যে কতগুলোর বিচার হয়??? বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অপরাধী বিচারের ঊর্ধ্বে থেকে যায়, তাদের যথাযথ বিচারের আওতায় আনা হয় না। গত বছর কুমিল্লার দেবিদ্বারে এক গৃহবধূকে খুন করে ৮০ ফুট নলকূপের পাইপের ভেতর ফেলে দেয়া হয়। ধানমণ্ডিতে ডা. শামারুখ মাহজাবিনকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। ফেসবুকে আপত্তিকর ছবি ছড়িয়ে পড়ায় ভৈরবে এক স্কুলছাত্রী আত্মহত্যা করে। ঢাবির থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান কর্তৃক যৌন নির্যাতনের শিকার হয় এক শিক্ষার্থী। রংপুরে এক জেএসসি পরীক্ষার্থীকে জোরপূর্বক গণধর্ষণ করা হয়। গাজীপুরে ৭ বছর বয়সী গৃহকর্মী এক মেয়ে শিশুকে শারীরিক নির্যাতন করে হাতের আঙুলে সুঁই ঢোকানো হয়। প্রেম ও কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় নারায়ণগঞ্জ শহরে সপ্তম শ্রেণীর এক ছাত্রীকে অপহরণ করে দুর্বৃত্তরা। রাজধানীতে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে এক গার্মেন্ট কর্মীকে ধর্ষণ করা হয়, ওই সময় ধর্ষণের ভিডিও চিত্র ধারণ করা হয়। বোঝা যাচ্ছে কি পরিমাণ ভয়াবহ অবস্থা। শুধু নারী দিবস পালন করলেই কি নারীদের অধিকার বৃদ্ধি পাবে অবস্থার পরিবর্তন হবে?? বর্তমানে পৃথিবীতে কিছু তথাকথিত বুদ্ধিজীবি আছে, যারা নিজেদেরকে নারীবাদী বলে পরিচয় দেয়। আর নারীবাদের বিপরীতে তারা পুুরুষতন্ত্র নামে একটি পরিভাষা আবিষ্কার করেছে। লজ্জার ব্যাপার হল এই নারীবাদীরা পুরুষ হয়ে নিজেদের নাম দিয়েছে নারীবাদী। তারা পৃথিবীর মানুষকে দু’ভাগে বিভক্ত করতে চায়-পুরুষবাদী ও নারীবাদী। এরই প্রেক্ষাপটে বহু লেখক-লেখিকা ইসলামকে নারী বিদ্বেষী ধর্ম হিসেবে চিত্রায়িত করতে চায়। এ ব্যাপারে বিতর্কিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন একধাপ এগিয়ে আছে। বছরের চাকা ঘুরে যখন ৮ই মার্চ ‘নারী দিবস’ আসে তখন এই কথাগুলো বিশেষভাবে উচ্চারিত হয়। মিডিয়ায় ফলাও করে প্রচার করা হয়। নারীবাদীদের বক্তব্য হল- নারীরা অধিকার থেকে বঞ্চিত। বিশেষ করে ইসলাম নারীদের অধিকার খর্ব করেছে। নারীর অগ্রযাত্রায় অনেক বাধা দিয়েছে, সৃষ্টি করেছে নানা প্রতিবন্ধকতা। কিন্তু নারীবাদীদের ফর্মুলায় আধুনিক যুগে নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ হয়নি।
একমাত্র ইসলামই নারীদের সঠিক অধিকার দিয়েছে॥ ইসলাম বলে,"স্ত্রীর সকল বৈধ উপার্জনের মালিক শুধু সে নিজেই । তার অর্থ সে নিজেই ব্যয় করতে পারবে। স্ত্রীর অনুমতি ছাড়া স্বামী বা অন্য কেউ একটুও ব্যয় করার অধিকার রাখে না। [নারী অধিকার - মুহাম্মদ মামুনুল হক (দারুল উলূম লাইব্রেরী) পৃ. ১৮]"
অথচ বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় পুরুষকে নারীর প্রতিদন্দী ভাবা হচ্ছে। পুরুষরা নারীদের শত্রু নয় । প্রত্যেকে প্রত্যেকের পরিপূরক । পুরুষবাদী সমাজ ব্যবস্খায় গুটি কয়েক নারী নেত্রী ও এনজিওর কল্যাণে পুরুষ ক্রমাগত নারীর শত্রু হচ্ছে। "শুধুমাত্র এই বছরের জানুয়ারিতে ৩২৭ জন ও ফেব্র“য়ারি মাসে ৩৭৮ জন নারী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। (প্রথম আলো)"। শুধু দিবস পালন করলে এসব থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব না। নারী দিবসের সার্থকতা থাকে তখনই যখন দিবসকে কেন্দ্র করে সারাবছরই দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয়গুলো চর্চা করা হয়। নাহলে সেটা মশকরা হয়ে যায়। নারীর অধিকার মানে যা খুশি তাই নয়॥
সুন্দরী প্রতিযোগিতার নামে দেহটাকে ব্যবসায় খাটিয়ে টু-পাই কামানোর মানসিকতায় ব্যস্ত অনেক নারী। সুপার স্টার নামক মরন কামড বহু নারীর মস্তিষ্কে ঢুকিয়ে শুধু তাদের শিক্ষা জীবন নয় তাদের চরিত্রের অদঃপতন ঘটিয়েছে এমন প্রমান বহু আছে। নারীরা আজ পণ্যর পাসাপাশি তারাও সস্তা পন্য হয়ে গেছে॥ এই ভোগবাদী সমাজে নারীকে পন্য বানালে কোনো দিনই নারীর মুক্তি সম্ভব না।
বিশ্ব নারী দিবস। সম্মান জানাচ্ছি সেই সকল নারী দের যারা কষ্ট করে আমাদের পরিবার তথা সমাজকে ভালোবাসা দিয়ে অলংকৃত করে রেখেছেন।
©somewhere in net ltd.
১|
০৯ ই মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৩:০২
লাইলী আরজুমান খানম লায়লা বলেছেন: অনেক তথ্য সমৃদ্ধ পোস্ট