নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শূন্য

অকল্পনীয় গতিতে কল্পনায় বিচরন

লুবান

শূণ্য

লুবান › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছয়টা ত্রিশ বেজে ত্রিশ সেকেন্ড

০৬ ই জুন, ২০১৪ রাত ৮:১৩

অনেক কষ্টে লোকাল বাসে একটা সিট পাওয়া গেছে।বাসের ঘড়িতে সময় ছয়টা ত্রিশ বেজে ত্রিশ সেকেন্ড। বাস দুই একটা বড়সড় ঝাকুনি না খেলে এই সময় পরিবর্তন হওয়ার কোন সম্ভাবনা নাই। আমি রাস্তার দিকে মনোযোগ দেয়ার চেষ্টা করলাম। গুড়িগুড়ি বৃষ্টিতে বাস সাত রাস্তার মোড় পার হচ্ছে। বর্ষারানীর সাথে বৃষ্টিতে ভেজার আমার মেলা দিনের শখ। বাস থেকে নেমে যাবো নাকি ভাবতে ভাবতে আর নামলাম না। পরে এক সময় ভেজা যাবে।



হঠাৎ হৈচৈ শুনে বাসের ভিতরে তাকালাম। বাস ভাড়া নিয়ে তুমুল ঝগড়া শুরু হয়ে গেসে। আমি দর্শকের ভূমিকায় অবতীর্ন হলাম এবং কিছুক্ষনের মধ্যেই প্রমোশন নিয়ে কোন কারন ছাড়া মধ্যবয়ষ্ক একজনকে চটকনা বসায়া দিলাম। চটকনার ফলাফল শুভ।ভদ্রলোক বাস থেকে নেমে গেলেন। আমি খুশিমনে জানালা দিয়ে বাইরে তাকালাম। ব্যস্ত শহরের ব্যস্ততা দেখতে আমার বড়ই আনন্দ লাগে। কতই না তাড়াহুড়া মানুষের !



বাসের ঘড়িতে ছয়টা ত্রিশ বেজে ত্রিশ সেকেন্ড। মহাখালীর জ্যামে এক ভিক্ষুকের বিরামহীন আকুতি শুনে চিন্তার ঘোড়া থামাতে বাধ্য হলাম। মানিব্যাগে দশ টাকার চেয়ে ছোট নোট নাই। দশ টাকা ভিক্ষা দেয়ার কোন অর্থ নাই দেখে বিনীতভাবে মাফ চেয়ে নিলাম। ঢাকা শহরের ভিক্ষুকরা মাফ করার ব্যাপারটা খুব একটা পছন্দ করেনা। আরো কিছুক্ষন চেষ্টার পরে ভিক্ষুক সাহেব আমাকে মাফ করতে বাধ্য হলেন। ততক্ষনে জ্যাম ছেড়ে দিসে। পুনরায় আনন্দ নিয়ে রাস্তায় দৃষ্টি দিলাম। এই ব্যস্ত শহরের ব্যস্ততা দেখতে আমার বড়ই আনন্দ লাগে।



বাসে বসে বনানীর ট্র্যাফিক জ্যাম খাওয়ার মধ্যে আদতে কোন আনন্দ নাই। আমি আনন্দের সন্ধানে এদিক ওদিক তাকাচ্ছি। বাচ্চা একটা মেয়ে ছোট্ট একটা গোলাপ ফুল নিয়ে ঘোরাঘোরি করতেসে। ওর কার্যক্রম পর্যবেক্ষন করতে করতে চোখে চোখ পড়ে গেলো। মোটেও দেরী না করে সে গোলাপ নিয়ে হাজির। ফুল নিয়ে কখনোই আমার কোন অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি নাই। আর কোন কারন ছাড়া একটা গোলাপ হাতে নিয়ে রাস্তায় ঘুরে বেড়ানোরও কোন মানে নাই। ভালো কথায় কাজ না হওয়ায় মোটামোটি ঝাড়ি দিয়েই মেয়েটাকে পাঠায়ে দিলাম।



বাসের ঘড়িতে ছয়টা ত্রিশ বেজে ত্রিশ সেকেন্ড।জ্যাম ছেড়ে দিসে। কিছুটা রাস্তা ফাকা পাওয়া গেসে।বাসের চাকা ঘুরতেসে এই আনন্দে আমি চোখ বন্ধ করলাম।পরিচিত একটা গলায় কে যেন ডাকতেসে। আমার চোখ খুলতে ইচ্ছে করতেসেনা। আজাইড়া রাস্তার মধ্যে এত কথা বলার দরকার নাই। কারো বেশি প্রয়োজন হলে পরে যোগাযোগ করবে। আমি না শোনার ভান করে চোখ বন্ধ করে আছি। মহান আনন্দ চোখ বন্ধ করে উপভোগ করতে হয়।



চোখ বন্ধ করে থাকতে থাকতে ঘুমায়ে গেলাম। ঘুম ভাঙলো সাত রাস্তার মোড়ে। বাসের ঘড়িতে সময় ছয়টা ত্রিশ মিনিট ত্রিশ সেকেন্ড।বর্ষারানীর দিকে তাকায়ে বাস থেকে নামবো নাকি ভাবলাম। নেমে কোন লাভ নাই। বৃষ্টি থেমে গেসে।



সকালে যেই লোকটাকে চড় দিসিলাম তাকে দেখা যাচ্ছে। লোকটার দিকে তাকায়ে নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে।উঠে গিয়ে সরি বললাম। ভদ্রলোক প্রচন্ড অবাক হয়ে আমাকে বিগলিত হাসি দিয়ে বললেন সরি বলছেন কেন? আপনি কি করেছেন? আমি উত্তর না দিয়ে সিটে চলে আসলাম।



বাসের ঘড়িতে সময় ছয়টা ত্রিশ মিনিট ত্রিশ সেকেন্ড। পকেট থেকে দশ টাকার নোটটা বের করে রেখেছি। মহাখালীতে ভিক্ষুকটাকে পেলে দিয়ে দিতে হবে। এত টাকা বাঁচায়ে কি হবে? কি আশ্চর্য! মহাখালীতে কোন ভিক্ষুকই পাওয়া গেলোনা।দশ টাকার নোটটার দিকে কিছুক্ষন তাকায়ে থাকলাম। বনানীতে ওই ফুল হাতের বাচ্চাটাও নাই। কই গেলো মেয়েটা? আমার একটা ফুল কিনে বুক ভরে একটু গন্ধ নিতে ইচ্ছে করতেসে।



এয়ারপোর্টের রাস্তাটায় কে যেন ডাকতেসিলো না আমাকে? কে ছিলো? অনেক জানতে ইচ্ছা করতেসে! বোকার মতো বাসের জানালা দিয়ে এদিক ওদিক তাকাচ্ছি। আমার বাসের ঘড়িতে ছয়টা ত্রিশ বেজে ত্রিশ সেকেন্ড।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.