![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
চিনির দলা মাথায় নিয়ে পিঁপড়ার দলে নাম লেখালো ছোট্ট টিনি। একদলা চিনি মাথায় রাখা আজকাল তার কাছে কোন বিষয় না। পোড়ামাটির ফাঁক দিয়ে সবুজ পাতা দেখতে গিয়ে চিনির দলা কিছুক্ষনের জন্যে মাথা থেকে নামিয়ে রাখলো সে। সবুজ পাতার দিকে তাকানোর জন্যে টিনির মা টিনিকে অযথা কিছুক্ষন বকাবকি করলো। বকাবকির কারন টিনির কাছে অস্পষ্ট। পিঁপড়ার সারিতে দাঁড়িয়ে মোটামোটি লম্বা একটা বক্তৃতা দিয়ে ফেললো টিনির মা।দুই বছর বয়সের পিঁপড়াদের টবের উপর উঠা নিষেধ।নিষেধাজ্ঞা শুনে মোটামোটি লজ্জিত ছোট্ট টিনি।সবুজ পাতা দেখে দুপুরের ফাঁকে টবে ওঠার অনেক ইচ্ছা ছিলো টিনির।প্রবল আতঙ্কে গাছের পাতার গন্ধ নেয়ার প্রবল ইচ্ছা দমন করলো টিনি।
বারোটা পর্যন্ত চিনির দলা খাদ্যভান্ডারে জমা রাখা আষাঢ় শ্রাবন মাসে টি সম্প্রদায়ের নিয়ম। দুপুরে খাবার পরে কি করবে ভেবে পাচ্ছেনা টিনি। চি সম্প্রদায়ের চিটির সাথে তার ভালো পরিচয়। টবে ওঠার ইচ্ছা চাপা দিয়ে চিটির সাথে দেখা করে দুপুর কাটালে ভালোই কাটতো। কিন্তু চি সম্প্রদায়ের নিয়ম ভিন্ন। বর্ষাকালে তারা দুপুর বেলা খাবার সংগ্রহ করতে বের হয়। বৃষ্টির গন্ধ পেলে সকালের দিকে দুই এক ঘন্টা খাবার সংগ্রহ করে তারা। তবে পৃহষ্পতিবার রাতে গোলবোতাম বৈঠকে একসাথে মিলিত হয় টি সম্প্রদায় আর চি সম্প্রদায়। আজকে পুধবার। লাল বোতাম মিটিং আসতে আরো এক দিন।দিন কিভাবে কাটানো যায় ভাবতে ব্যস্ত সে। শেষমেষ ঘুমিয়ে সময় কাটানোর সিদ্ধান্ত নিলো টিনি।
মায়ের চিৎকারে সন্ধ্যার আগে আগে ঘুম ভাংলো টিনির। ঘুম থেকে উঠে নিরস মুখে জমানো বৃষ্টির পানি দিয়ে হাত মুখ ধুলো সে। গেলো বছর ভাঙা দেয়ালের ফাঁকে বছর কেটেছে তাদের।ভালোই ছিলো দিনগুলো। ভাঙা দেয়াল আরেকটু ভাঙতেই মরিচ গাছের টবে আশ্রয় নিলো তারা।সেই একবারই বাইরের জগতের সাথে পরিচয় তার।তারপর থেকে বাইরের আলোয় চোখ ঝলসানোর জন্যে মোটামোটি উতলা টিনি।নিরস মুখে হাত মুখ ধুয়ে পিনোদন আসরে বসলো টিনি।সকালে বাইরে তাকানোর জন্যে বকাবকি হজম করে পিনোদন আসর শেষ হলো তার।ছানামিষ্টি আর তেলাপোকার ভুড়ি দিয়ে রাতের খাবার শেষ করলো সে।
তিন নম্বর পি বিপদ সংকেত শুনে তাড়াহুড়ো করে ঘুম ভাঙলো টিনির।মুখে করে ডিম নিয়ে পিঁপড়ার দল নিরাপদের সন্ধানে।তিন নম্বর বিপদ সংকেত মানে বৃষ্টি আসার সম্ভাবনা নিরানব্বই ভাগ।তাড়াহুড়া করে নতুন দুইটা ডিম মুখে নিয়ে সারিতে যোগ দিলো টিনি।জীবনে দ্বিতীয়বার বাইরে যাওয়ার সুযোগে মোটামোটি উত্তেজিত টিনি। লাইনের মধ্যে বেশ লুকিয়ে লুকিয়ে হাঁটতে শুরু করলো সে।আধা ঘন্টা শেষে টবের ফাঁক দিয়ে উঁকি দিলো সে। পুরোনো শেওলাধরা ইটের পিছনে বাসা বাধার পরিকল্পনা এবার।হৈ হট্টোগোল চলতে চলতে তাড়াহুড়া করে ইটের ফাঁক থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে বের হলো সে।
সবুজ পাতার উপর উঠে বেশ আনন্দে বৃষ্টির গন্ধ নিচ্ছে টিনি। বৃষ্টি আসলেও খুব একটা সমস্যা হবেনা ভাবছিলো সে। জীবনে প্রথমবারের মতো দলছাড়া হয়ে বৃষ্টিকে খুব ভয়ঙ্কর কিছু মনে হচ্ছেনা তার।পা দুলাতে দুলাতে জনপ্রিয় পি সঙ্গীত গায়ক টিকির বিখ্যাত গান গুনগুন করে ভাজতে লাগলো সে।“ বৃষ্টির পানি জলোচ্ছাস – বড় ফোটাতে সর্বনাশ – ভীরু কেন শ্বাস প্রশ্বাস – শুকনো ধূলোয় বসবাস।” খুব একটা উল্টাপালটা না করে বৃষ্টি আসলেই ঘরে ফিরবে ভাবলো টিনি। গাইতে গাইতে উদাস মনে বাইরের আলো মন ভরে দেখতে দেখতে অনেকক্ষন গড়িয়ে গেলো।বৃষ্টির ফোঁটা গায়ে পড়তেই চমকে উঠে নতুন বাড়িতে রওয়ানা দিলো টিনি।গরম ডিম দুটা নিয়ে কি করবে ভেবে পাচ্ছেনা।
বৃষ্টির ফোটা বাড়তে বাড়তে মোটামোটি উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে টিনিকে।বাড়ির পথ ভুলে উদ্দেশ্যবিহীন ঘুরছে অনেকক্ষন।ছোট একটা ব্যাঙের ছাতার নিচে মোটামোটি শুকনোই আছে এখন।শুকনো ধূলোয় বসবাস করতে প্রচন্ড ইচ্ছে হচ্ছে তার। বৃষ্টি থামার কোন লক্ষন দেখা যাচ্ছেনা। ঘন্টা তিন ব্যাঙের ছাতার নিচে কাটিয়ে বৃষ্টির মধ্যেই শুকনো খুঁজতে রওয়ানা দিলো টিনি।বৃষ্টি না থামলে যে কোন সময় ডিম ভিজে যেতে পারে।দৌড়াতে দৌড়াতে পুরোনো দেয়ালের ফাঁকে ভেজা শরীর নিয়ে ঢুকলো টিনি।পুরোনো বাসা পুরোনোই আছে।অনেকক্ষন পরে দম নিলো টিনি।ডিম দুটো ছোট্ট কাপড়ে রেখে সরাতে না পারা ভারী পুরোনো ধূলোপড়া আসবাবপত্রে চোখ বুলাতে লাগলো টিনি।বোতলের মুখে ঢুকে কখন যেন ঘুমিয়ে গেলো সে।
ছানামিষ্টি আর তেলাপোকার ভুড়ি দিয়ে সকালের নাস্তা করছে টিনি।টিচি আর টিছির এখনো তেলাপোকার ভুড়ি খাওয়ার বয়স হয়নি। ছানামিষ্টি খেতে খেতে খেলা করছে তারা।টিচি আর টিছির মা অনুভব করে নিজেকে এখন টিনি।আজকে বাইরে তুমুল বৃষ্টি।পি সম্প্রদায়ের নিয়ম অনুযায়ী পাঁচ নম্বর বিপদ সংকেত হবার কথা।যেকোন খারাপ অবস্থার জন্যে সর্তক অবস্থায় টিনি।দেয়ালের ফাঁক দিয়ে বৃষ্টির গন্ধ নেবার চেষ্টা করছিলো সে।হঠাৎ টিচি আর টিনির গানের শব্দে চমকে উঠলো সে।
“বৃষ্টির পানি জলোচ্ছাস
বড় ফোটাতে সর্বনাশ
ভীরু কেন শ্বাস প্রশ্বাস
শুকনো ধূলোয় বসবাস।”
২| ১০ ই জুন, ২০১৪ রাত ১০:৪৪
হাসান মাহবুব বলেছেন: দারুণ!
৩| ১১ ই জুন, ২০১৪ রাত ১২:১৮
মিনুল বলেছেন: বেশ ! ভালো লাগলো।শুভকামনা।
©somewhere in net ltd.
১|
১০ ই জুন, ২০১৪ বিকাল ৩:৪৬
জাহাঙ্গীর.আলম বলেছেন:
টিনিময় পিপঁড়েকথন ভাল লাগল ৷ মজা পেলুম ৷
লিখতে থাকুন ৷