![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ক্লাসরুমের জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে ফাহিম। বৃষ্টিভেজা দিনে বাংলা ২য় পত্র ক্লাসেও বৃষ্টির আমেজ। ফাহিমের স্যারের লেকচারে মন নেই। সে নিবিষ্ট মনে জানালা দিয়ে ছিটে আসা বৃষ্টির পানিতে ভেজার চেষ্টা করছে। সে গল্পের বইয়ে পড়েছে বৃষ্টিতে ভিজলে নাকি অনেক আনন্দ হয়। বাংলা ২য় পত্র বিষয়ের চেয়ে বৃষ্টিতে ভেজার আনন্দ কি সেটা বুঝতে ফাহিমের আগ্রহ বেশী। ফাহিমের ধারনা তার বাংলা ২য় পত্র শিক্ষক বৃষ্টিতে ভেজার আনন্দ বিষয়ে জ্ঞাত। কারন অল্প কিছুক্ষন আগে স্যার ক্লাসের সব ছাত্রকে জানালার পাশের সারি থেকে সরিয়ে অন্য বেঞ্চগুলাতে বসালেও ফাহিমকে জানালার পাশে বসার অনুমতি দিলেন । দশ মিনিট ধরে ফাহিম জানালার সানসেট থেকে চুঁইয়ে পড়া বৃষ্টির পানিতে ভিজছে। তার শার্টের বামপাশ পুরা ভিজে গেছে। বৃষ্টিতে ভেজার আনন্দটুকু ধরতে পারছে না ফাহিম। ভেজা শার্টে ঠান্ডা বাতাস লাগতে তার বরং শিরশির লাগতে থাকে। টিফিন পিরিওডে ফাহিম স্কুলের দেয়াল টপকে বাসায় চলে এলো। বাসায় আসতে আসতে তার ভেজা শার্ট শুকিয়ে গেছে। ফাহিমের হঠাৎ মনে হলো ভেজা শার্ট গায়ে শুকানোই হয়তো বৃষ্টিতে ভেজার আনন্দ।
দশ বছর পার হয়েছে। ফাহিম বৃষ্টিতে ভেজার আনন্দ এখনো বের করতে পারেনি। সে নিয়মিত প্রতি বর্ষায় বৃষ্টিতে ভিজছে। কিন্তু বৃষ্টিতে ভেজার আনন্দ আবিষ্কার করতে পারেনি। আজ বৃষ্টি শুরু হবার পর ফাহিম ক্লাস না করে ইউনিভার্সিটি থেকে বের হয়ে হাঁটতে হাঁটতে বাসার দিকে রওয়ানা দিলো। প্রায়ই সে বৃষ্টিতে ভেজার আনন্দ উপভোগ করার জন্য এই কাজ করে। ফাহিমের ব্যাগে কখনো ছাতা থাকেনা। ছাতা শব্দের অর্থ তার অনেকদিন ধরেই ছাতা মনে হয়। নিউমার্কেটের মোড়ে দুইজন তরুন তরুনী রিকশার হুড খুলে বৃষ্টিতে ভিজছে। সেদিকে চোখ পড়তে ফাহিমের মনে হলো একজন প্রেমিকা থাকলে সে বৃষ্টিতে ভেজার আনন্দ বুঝতে পারবে।
মানুষের জীবন ফুরিয়ে যায় সম্ভবত খুব তাড়াতাড়ি। আরো দশ বছর পার হয়েছে। আজ অফিস থেকে বের হয়ে রিকশার বদলে হাঁটতে হাঁটতে বাসায় রওয়ানা দিলো ফাহিম। হাঁটার কারন ঝুম বৃষ্টি। নিমিষে ভিজে চুপচুপা হয়ে গেলো সে। তার অনেক হতাশ মনে হচ্ছে নিজেকে। বিশ বছর ধরে সে বৃষ্টিতে ভেজার আনন্দ খুঁজে বেড়াচ্ছে। এখনো বুঝতে পারেনি সে। এতদিনে বৃষ্টি বিষয়ক বিভিন্ন লেখকের অনেকগুলো গল্পের বই পড়েছে। সব বইয়ে বৃষ্টিতে ভেজা একটা আনন্দের কাজ বলা হলেও বৃষ্টিতে ভেজা কেন আনন্দের তা কোন বইয়েই সে খুঁজে পায়নি। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পদ্ধতিতে বৃষ্টিতে ভেজার পর বৃষ্টিতে ভেজার মধ্যে আসলেই আনন্দের কিছু আছে নাকি সে বিষয়ে তার সন্দেহ হতে থাকে। রাত আটটায় বাসায় ঢুকে ফাহিম জানতে পারলো তার মেয়ে সন্ধ্যার একশো তিন ডিগ্রী জ্বর। মেয়ে এবং মেয়ের মা বিকেলে বৃষ্টিতে ভিজেছে। সন্ধ্যার পর থেকে মেয়ের জ্বর। মেয়ের মায়েরও অবস্থা সুবিধার না। অনবরত হাঁচি দিচ্ছে সে। মা ও মেয়ের অবস্থা দেখে ফাহিমের হঠাৎ মনে হলো সে বৃষ্টিতে ভেজার আনন্দ বুঝতে পেরেছে। বৃষ্টিতে ভিজলে তার কখনো জ্বর টর হয়না এইটাই বৃষ্টিতে ভেজার আনন্দ।
সকাল সাতটা। ঝুম বৃষ্টির মধ্যে ফাহিম হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের সামনে দাঁঁড়িয়ে আছে। প্রচন্ড জ্বরের কারনে তার মেয়ে সন্ধ্যা রাত তিনটা থেকে হাসপাতালে ভর্তি। ফাহিম তার স্ত্রীকে নিয়ে খোলা রিকশায় বৃষ্টিতে ভিজে কোন আনন্দ পায়নি। তার ইচ্ছা ছিলো মেয়েকে নিয়ে বৃষ্টিতে ভিজে বৃষ্টিতে ভেজার আনন্দ খুঁজে বের করবে। মেয়ের মার কান্ড দেখে ফাহিমের আশায় গুড়েবালি। হাসপা্তালের সামনে দাঁঁড়িয়ে ফাহিম ঠিক করলো কিছুদিনের মধ্যেই তার মেয়েকে সে তার মতো ওয়াটারপ্রুফ করে ফেলবে।
ফাহিমের মেয়ে সন্ধ্যা শ্রাবন মাসের ঝুম বৃষ্টির মধ্যে দুপু্র বেলা নিউমোনিয়ায় মারা গেলো। মেয়ে মারা যাওয়ার পর পরই শ্রাবনের আকাশ আরো কালো করে বৃষ্টি নামলো। বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতেই ফাহিম সন্ধ্যার দাফন শেষ করলো। বাদ আসর জানাজা শেষে মেয়েকে কবর দেয়ার পর থেকে ফাহিম উদ্দেশ্যবিহীন ভাবে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে রাস্তায় হাঁটছে।রাত দশটার দিকে ফাহিম হাঁটতে হাঁটতে কেমন যেন এক ঘোরের মধ্যে বাসায় চলে আসলো। বাসায় না ঢুকে ছাদে উঠে গেলো সে। এখনো তুমুল বৃষ্টি হচ্ছে। একটু পর পর বজ্রপাত। এতটুকুন মেয়ে মারা যাবার পর বাসায় কেন আসলো ভাবতেই নিজের উপর ঘৃনা হতে থাকে ফাহিমের। প্রচন্ড ঘৃনায় কান্না আসতে থাকে তার। মেয়ে মারা যাবার পর পরই সে ঠিক করেছিলো কান্না করবে না। তাই কাঁদতে পারছে না। হঠাৎ বিদ্যুৎ চমকানোর কারনে ছাদ আলোকিত হয়ে গেলো। ফাহিম আলো দেখেই ছাদে উবু হয়ে বসে মনে মনে প্রার্থনা করলো " ইয়া আল্লাহ! ঠাটাটা আমার উপর ফেলো, ঠাটাটা আমার উপর ফেলো "। বিকট শব্দে বজ্রপাতের শব্দ হলো। ঠান্ডা বাতাসে থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে হাউমাউ করে কান্না শুরু করলো ফাহিম। হঠাৎ করে তার কাছে মনে হতে থাকে বৃষ্টিতে ভেজার আনন্দ সে ধরতে পেরেছে।
©somewhere in net ltd.
১|
১৪ ই জুন, ২০১৫ রাত ১১:০৬
আরণ্যক রাখাল বলেছেন: আনন্দের কোন ধরাবাধা রীতি নেই| সব অবস্থাতেই আনন্দ পাওয়া যায়