নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শূন্য

অকল্পনীয় গতিতে কল্পনায় বিচরন

লুবান

শূণ্য

লুবান › বিস্তারিত পোস্টঃ

আত্নহত্যা

১৪ ই জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৩:২২

রাত বারোটা। চা চট্টলা টি স্টল থেকে দশটা গোল্ডলীফ সিগারেট কিনেছেন রফিক সাহেব। অর্থ সংকটের কারনে বেনসনের বদলে গোল্ডলীফ সিগারেট। কাঠের চেয়ারে বসে আরাম করে একটা সিগারেট ধরিয়ে ঠান্ডা মাথায় আত্নহত্যার সিদ্ধান্ত গ্রহন করলেন তিনি। বিগত এক মাসে এটা তার তৃতীয়বারের মতো আত্নহত্যার সিদ্ধান্ত। প্রথমবার দড়িতে ঝুলতে যাবার সময় প্রচন্ড চায়ের পিপাসা হওয়ায় মৃত্যু সিদ্ধান্ত বাতিল করেন তিনি। দ্বিতীয়বার অবশ্য আত্নহত্যা না করার কারন ভিন্ন। দড়িতে ঝুলতে যাবার সময় তার পুরোনো বন্ধু রাসেল এসে পড়ায় সারারাত গল্প করে কাটিয়ে দেন সেবার তিনি। গল্পের বিষয় – মাদার তেরেসা কেন জান্নাতবাসী হবেন না? রফিক সাহেবের স্থূল ধারনা কোন সমস্যার কারনে আজও তার শেষ মুহূর্তে আত্নহত্যা করা হবে না। রফিক সাহেবের বাসা পুরোনো ধাঁচের। তার বিশাল বড় বেডরুমে দুইটা ফ্যানের হুক। একটিতে ন্যাশনাল ফ্যান লাগানো হয়েছে। ফ্যানের নিচে রট আয়রনের খাট। ফ্যানের বাতাস চমৎকার। প্রচন্ড গরমের রাতে মাঝে মাঝে এই ফ্যানের বাতাসে রফিক সাহেবের নিজেকে শোকরগোজার বান্দা মনে হয়। ফ্যান ঝোলানোর আরেকটা হুকে গরু বাঁধার মোটা দড়ি ঝোলানো হয়েছে। এই দড়ি ঝোলানো হয়েছে তার স্ত্রী তাবাসসুমের ইচ্ছায়। তার স্ত্রীর ধারনা ছিল প্রতিদিন দশ মিনিট করে দড়ি ধরে না ঝুললে তার বাচ্চা লম্বা হবে না। স্ত্রীর অতি আগ্রহে রফিক সাহেব কোরবানীর হাট থেকে দড়ি এনে লাগালেন। ঝোলাঝোলি বিষয়ক কর্মকান্ডে পুত্র সাকিনের প্রবল অনিচ্ছার কারনে বিগত এক বছর ধরে দড়িটি অযথাই সিলিং থেকে ঝুলছে। এ মুহূর্তে রফিক সাহেবের দৃষ্টি সিলিং থেকে ঝুলে থাকা দড়ির দিকে নিক্ষিপ্ত। তার উদ্দেশ্য পরিষ্কার। গরু বাঁধার দড়িতে ঝুলে আত্নহত্যা করা।

রাত বারোটা সাতান্ন। রফিক সাহেব আত্নহত্যা করার পুরো প্রক্রিয়াটি চূড়ান্ত করার চেষ্টা করছেন। কোন ত্রুটির কারনে আত্নহত্যার করার ইচ্ছা বাতিল করার কোন ইচ্ছাই নেই তার। রফিক সাহেবের হাতে কাপড় মাপার ফিতা। তিনি অনেক খাটাখাটনি করে রুমের কিছু মাপজোখ করে ফেললেন। তার রুমের উচ্চতা দশ ফিট। ফাঁস তৈরী করে সে ঝুলে পড়লে সিলিং থেকে দড়িসহ তার উচ্চতা হয় প্রায় আট ফিট সাত ইঞ্চি। পায়ের নিচে প্রয়োজনের অতিরিক্ত ফাঁকা জায়গা পাওয়া যাবে মারা যাওয়ার আগে। আত্নহত্যা প্রক্রিয়া নিয়ে মোটামোটি নিশ্চিন্ত হয়ে আরেকটা সিগারেট ধরালেন রফিক সাহেব। প্যাকেটে আরও সাতটা সিগারেট বাকি। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মস্তিষ্কে নিকোটিন সরবরাহ করার জন্য যথেষ্ট। মৃত্যুর পর নিকোটিনের প্রয়োজন নেই। আত্নার নিকোটিন প্রয়োজন হয় না। সিগারেটে টান দিতে দিতে দীর্ঘদিনের অসমাপ্ত কাজ শেষ হবে ভেবে তৃপ্তির নিঃশ্বাস ছাড়লেন রফিক সাহেব। দড়িতে একেবারে ঝুলে পড়ার আগে তার কিছু কাজ আছে। এই কার্যক্রম তিন স্তরে সাজানো। প্রথম স্তরের কাজ মৃত্যুর আগে শেষবারের মতো ডায়েরী লেখা। আত্নহত্যার কারন সম্পর্কিত কোন জবানবন্দী না। টুকটাক জাতীয় হালকা কথাবার্তা। রফিক সাহেব জানেন তার স্ত্রী তার মৃত্যুর পর এই ডায়েরী খুলবেন। রফিক সাহেবের খুব ইচ্ছা হলো ডায়েরীতে একটা প্রেমের কবিতা লিখে ফেলেন। তার স্ত্রী দীর্ঘদিন রাগ করে বাসার বাইরে। দুই মাস অনেক চেষ্টা করার পরে গেলো কিছুদিন হলো তিনি খোঁজাখোঁজি বন্ধ করে দিয়েছেন। তার স্ত্রী তাবাসসুমের রাগের কারন ছেলের জন্য সাইকেল না কেনা। সে “ দৈনিক স্বদেশপ্রেম” পত্রিকায় পড়েছে সাইকেল চালালে বাচ্চারা লম্বা হয়। রফিক সাহেব ডায়েরীতে লিখলেন – “একাল সেকাল।” আরো কিছু শব্দ মাথায় আনার জন্য ডায়েরী থেকে মাথা তুললেন তিনি। হঠাৎ জানালার দিকে চোখ গেলো। ঝুলন্ত দড়ি বরাবর পশ্চিম দিকে চার পাল্লার বিশাল জানালা। ডায়েরী বন্ধ করে তাড়াতাড়ি দড়ি বরাবর মেঝের প্রায় দু ফিট উপর থেকে জানালার দুরত্ব মেপে ফেললেন তিনি। দুরত্ব মাত্র সাড়ে তিন ফিট। রফিক সাহেবের হঠাৎ মনে হলো তার আজও আত্নহত্যা করা হবে না। মৃত্যুর শেষ মুহূর্তে সে বেঁচে থাকার জন্য মরিয়া হয়ে গেলে চাইলেই দু দিকে ঝুলে পা দিয়ে জানালা আঁকড়ে ধরে চেঁচামেচি শুরু করে দিতে পারবে। সেক্ষেত্রে জেনেশুনে এই মাঝরাতে হট্টগোল পাকানো অনর্থক। বেঁচে থাকার আনন্দেই হয়তো বেশ তৃপ্তি নিয়ে সিগারেটে শেষ টান দিয়ে ঘুমাতে গেলেন রফিক সাহেব।

বেলা একটা দশে রফিক সাহেবের মৃতদেহ আবিষ্কার করা হয়। মৃতদেহ আবিষ্কার করেন তার বাসার সাবলেট মোতালেব সাহেব। তিনি জুম্মার নামায পড়তে যাবার সময় রফিক সাহেবকে ডাকতে এসে ঘুমন্ত অবস্থায় পান। অনেক ডাকাডাকির পরে তিনি সাফেনা হাসপাতাল থেকে ডাক্তার নিয়ে আসেন। বয়ষ্ক ডাক্তার বিভিন্ন যন্ত্রপাতি দিয়ে অনেক্ষন পরীক্ষা নীরিক্ষা করার পরে জানান রোগী মৃত। একা বাসায় মৃতদেহ নিয়ে ঘোরের জগতে চলে গেলেন মোতালেব সাহেব। ভয়ে তার চিন্তা ভাবনা জট পাকিয়ে যাচ্ছে।

সন্ধ্যা সাতটা। বারান্দায় কাঠের চেয়ারে শক্ত হয়ে বসে আছে রফিক সাহেবের স্ত্রী তাবাসসুম। মাত্র আধাঘন্টা আগে সে স্বামীর মৃত্যু সংবাদ পায়। সে বাসায় আসতে আসতে মোতালেব সাহেব একাই রফিকের কিছু পরিচিতজন নিয়ে সৎ্কার সম্পন্ন করে ফেলেছেন। রফিক সাহেবকে কবর দেয়া হয়েছে শাজাহানপুর কবরস্থানে। একা বাসায় ভয় ভয় লাগতে থাকে তাবাসসুমের। সে ঠিক করেছে যতই ভয় পাক কোনভাবেই সে বারান্দা থেকে উঠবে না। তার এই ইচ্ছা বেশীক্ষন বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলো না। মাঝরাতে প্রচন্ড মশার কামড়ে কাঠের চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়লো সে।

রাত তিনটা দশ। প্রচন্ড চিৎকারে মোতালেব সাহেবের ঘুম ভেঙে গেলো। শব্দের উৎস রফিক সাহেবের রুম। দৌড়ে এসে রফিক সাহেবের রুমে বিচিত্র দৃশ্য দেখতে পেলেন তিনি। দুই পা দিয়ে জানালা আঁকড়ে ধরে বিচিত্র ভঙ্গিতে সিলিং থেকে দড়িতে ঝুলে আছে তাবাসসুম। গলায় ফাঁস শক্ত হয়ে আটকে যাবার কারনে তার চিৎকার করতে কষ্ট হচ্ছে। মৃত্যু আতঙ্কে তার চোখমুখ লাল। মোতালেব সাহেব বেশীক্ষন এই দৃশ্য সহ্য করতে পারলেন না। বেকায়দায় ঝুলে থাকার জন্যে তাবাসসুমের পরনের পোশাক এলোমেলো হয়ে আছে।

রাত তিনটা পঁচিশ। জবথবু হয়ে মোতালেব সাহেবের পাশে বসে আছে তাবাসসুম। তার চোখে মুখে তখনো মৃত্যু আতঙ্ক।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.