![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি খুব সাধারণ একজন। সাধারণের ভিড়েই আমার বেড়ে ওঠা ,সাধারণের ভিড়েই বিচরণ আর সাধারণের ভিড়েই পথ চলা ......
বাংলাদেশে আজ উজ্জ্বলতম একটি নক্ষত্র নিঃশব্দে ঝরে পড়ল। নিঃশব্দে শব্দটায় অনেকে হয়ত বলবেন-আমি জেনেছি। গত কয়েকদিন ধরে দেখছি- বাংলাদেশের ছেলেরা শ্রীলংকার টেস্টে কত ভাল করছে। কেমন প্র্যাক্টিজ করছে! সম্ভাবনা কতটুকু! ইত্যাদি। সন্দেহ নেই- আমরা তাদের নিয়ে গর্ববোধ করি। আগামী কাল তাদের দ্বিতীয় টেস্ট। শুভ কামনা করি। সুদূর শ্রীলংকায় অনুষ্ঠিতব্য টেস্টের সংবাদ আমাকে উদ্বেলিত করে। কিন্তু অসহায় বোধ করি, যখন বাংলাদেশের একপ্রান্তে এক নক্ষত্র আমাদেরকে না জানিয়েই চলে গেলেন। আমি জানতে পারলাম না- আমার প্রিয় মানুষটি আর নেই। বাংলাদেশের বিশ্ববিখ্যাত ভৌত বিজ্ঞানী আর নেই। স্টিফেন হকিং এর বন্ধু আর নেই। যে মানুষটির সাথে অনেকগুলো নোবেলজয়ী বিজ্ঞানীর সখ্যতা। আমি জানতে পারি নি, এই বিশ্ববিখ্যাত মানুষটি মৃত্যু পথযাত্রী। স্যার একটি অখ্যাত হাসপাতালে সয্যাশায়ী। আমরা জানতে পারিনি, প্রতিটি মুহুর্তে স্যারের শারিরিক অবস্থার খবর। আমরা জানতে পারি নি- আমাদের অমূল্য-রতন এই মানুষটির অবস্থা যখন খারাপ হচ্ছিল তখন তার জন্য এয়ার-এম্বুলেন্স অফার করা হয়েছিল কিনা!
বাংলাদেশে যখন তুমুল যুদ্ধ চলছে। বঙ্গবন্ধুকে পশ্চিম পাকিস্তানে বন্দি করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বিচার চলছে। মৃত্যুদন্ড দেওয়া হবে। সুদূর ক্যাম্ব্রিজের এক তরুণ বিজ্ঞানী হাউজ অব কমন্সে একাধিক চিঠি লিখলেন। হাউজ অব কমন্সে বিল উত্থাপিত হলো এবং সেখান থেকে তদানিন্তন পশ্চিম পাকিস্তানে চাপ প্রয়োগ করা হলো। এই তরুণ বিজ্ঞানীই আজকের ঝরে যাওয়া নক্ষত্র। অথচ আজ তাঁর মৃত্যুটা এভাবে আমরা আশা করতে পারি কি?
ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপনা ছেড়ে আসলেন। স্যারের বিজ্ঞ সহধর্মিনীর একটি কথায়। "জামাল, এই দেশের জন্য তো অনেক কিছু করলে, নিজের দেশের জন্য কিছু করো।" মিহুর্তে সিদ্ধান্ত নিলেন। দেশে ফিরলেন। এসে জয়েন করলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। ক্যামব্রিজে থাকলে হয়তো বিশ্ববিখ্যাত পুরস্কারটাও অধরা থাকতো না। তিনি চলে আসলেন। বিনিময়ে আমরা তাঁকে নিভৃতে চলে যেতে দিলাম।
বাংলাদেশে তার গবেষণাগারে বিশ্ববিখ্যাত ব্যক্তিদের নিয়মিত আনাগোনা ছিল। যে কয়েকজন আইনস্টাইন বুঝতেন, তিনি তাদের অন্যতম। একদিনের কথা খুব মনে পড়ছে। স্যারের ফোন আসলো। ১৪ই মার্চ, ২০১২। "হানিফ- আজ পাই দিবস। একটি সেমিনার হবে। ফ্রি থাকলে চলে আসুন।" খুব ভালবাসতেন আমাকে। আমি আমার অভিভাবক হারালাম। আমি এখন গোপালগঞ্জে থাকি। আমাদের সামগ্রিক উদাসিনতায় তাঁকে নিভৃতে হারিয়ে ফেললাম।
আমি একবার দুর্বৃত্তদের দিয়ে আক্রান্ত হলাম। আমাদের মহামান্য প্রক্টর পর্যন্ত আমার সাথে দেখা করতে গড়িমসি করছিল। অথচ আমার পিয়ন হন্তদন্ত হয়ে আমাকে খবর দিলেন। প্রফেসর জামাল নজরুল ইসলাম স্যার এসেছেন। আমি দ্রুত চারতলা থেকে নিচে নেমে গেলাম, যেন স্যারকে উপরে উঠতে না হয়। আমি এই অতি ক্ষুদ্র একটি ব্যক্তিকে উনি শান্তনা দিতে এগিয়ে এসেছিলেন। বলেছিলেন- তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ কর্তাব্যক্তিদের ফোন করে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। কত বড় মানুষ ছিলেন। স্যার, আমরা অকৃতজ্ঞ বাঙ্গালীরা আপিনাকে কিছুই দিতে পারলাম না। আমাদেরকে ক্ষমা করবেন। দোয়া করি, সৃষ্টকর্তা আপনাকে সর্বোচ্চ পুরস্কার দিক।
হানিফ সিদ্দিকী,
ডীন, ফ্যাকাল্টি অফ ইঞ্জিনিয়ারিং,
চেয়ারম্যান, ডিপার্টমেন্ট অফ কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড এঞ্জিনেয়ারিং,
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
কথাগুলির গভীরতা আমাকে বাধ্য করল লেখাটি শেয়ার করতে।লেখকের মত আমারও প্রশ্ন আমরা কি একজন গুণীজনের প্রাপ্য সম্মানটুকু দিতে পেরেছি? তার চিকিৎসার সুব্যাবস্থা করতে পেরেছি? আমি সত্যি লজ্জিত। স্যার, আমরা অকৃতজ্ঞরা না পারলেও মহান সৃষ্টকর্তা নিশ্চয়ই আপনাকে আপনার প্রাপ্য সর্বোচ্চ পুরস্কারটিই দিবেন।
©somewhere in net ltd.
১|
১৬ ই মার্চ, ২০১৩ দুপুর ২:৫৬
ফকির সাইঁ বলেছেন: খুব খুব খারাপ লাগছে ভাই---কাননা পাতছে, এমনিতেই আমাদের দেশে ভালো মানুষ,গুনি মানুষের আকাল, তার উপর তিনি চলে গেলেন । আললাহু তাকে জাননাত বাসী করুন।