| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রেক্ষাপটঃ ১৯৭৮ সালে শুরু হওয়া আফগান গৃহযুদ্ধের জের ধরে রাশিয়ান আগ্রাসন শুরু হয়। প্রতিপক্ষের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেশ হটালেও অন্তঃদ্বন্দ্ব পুনরায় মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। নিজেদের মধ্যে ক্ষমতার ভাগাভাগি নিয়ে মধ্যে শুরু হয় ভ্রাতৃঘাতী সিভিল ওয়ার। সেই অরাজকতা এবং আত্মঘাতী যুদ্ধ বন্ধ করার নিমিত্তে গড়ে উঠে নতুন প্রজন্মের মুজাহেদ্বীন, তালিবান। আফগানিস্তানের আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের পরিসমাপ্তির সাথে সাথে বহিঃশত্রুর হাত থেকে দেশ রক্ষার জন্য তাদের যে সংগ্রাম তারই প্রেক্ষাপটে আসমান বইটি রচিত হয়েছে।
সারসংক্ষেপঃ ‘ হৃদয়টা আল্লাহ্র ঘর। সেখানে অন্য কারো বসবাস চলেনা।’ জীবনের অনেকটা পথ অন্ধকারে হাঁটার পর আলো হাতড়ে ফেরা হাজারও মানুষের যখন অনুভব হয় হৃদয়ের ঘরটায় নানারকম হারামের সমাবেশ ঘটেছে, তখন তাদের অনেকেরই জীবন নতুন গল্পের জন্ম দেয়। এই গল্পটা তেমনই এক ভবঘুরের, যার কাছে জীবন মানে ছিল মৌজমাস্তি। ওমর রিজওয়ান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনের ছাত্র। প্রেমে ব্যর্থ হয়ে সে এখন দিশেহারা। অশান্ত হৃদয়টাকে শান্ত করার জন্য তার দরকার নির্ভরযোগ্য অবলম্বন। বন্ধু রুশোর কাছে গেলে তার নিজেকে নির্ভার মনে হয়। গাঁজা, ফেন্সিডিল এখন তার মন ভালো করার রসদ। এসব গ্রহণে বাস্তবতা থেকে হারিয়ে যাওয়া যায় দূরে বহু দূরে। শিরা উপশিরা জুড়ে লামিয়ার অবাধ বিচরণকে হটানোর জন্যই সে নেশায় বুঁদ হয়ে থাকে সারাদিন। মায়ের পরামর্শে ধানমন্ডি মসজিদের ইমামের সাথে দেখা করে একসময়। অদ্ভুত জীবনবোধ মানুষটার। জীবনের সব জটিল বিষয়কে সহজপাঠ্য করতে পারার অনবদ্য ক্ষমতা আছে তাঁর।
রুশো এবং ইমাম, দুই মেরুর দুজন মানুষের সাথে সমান্তরালভাবে বন্ধুত্ব। একজন যখন নেশার মাধ্যমে কষ্ট ভুলে থাকতে শেখায়, অন্যজন তখন জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্যর পাঠ শেখায়। দুই বিপরীত দর্শন। অস্থির জীবনকে স্থীর করার মহৌষধ খুঁজে পেতে ওমারকে খুব বেশি বেগ পেতে হয়নি। তাওহীদের পরশপাথরে খুব সহজেই সে খুঁজে পায় হৃদয়ে চির বসন্তকে ধারণ করার দীক্ষা। মসজিদ এখন তার সুখের আস্তানা। এভাবেই একদিন তার দেখা মেলে তাবলীগের দলনেতা আনোয়ারের সাথে।
শুরু হয় নতুন জীবন। তাবলীগের দলের সাথে ইজতেমায় বেরিয়ে পড়ে। নানা দেশের নানা মানুষের মধ্যে যে মানুষটা ওমারের নজর কেড়েছিল সে একজন বলিষ্ঠ যুবক, খালিদ ইবনে হিশাম, একজন আরব আফগান। যার ধ্যান জ্ঞানই ছিল জিহাদ ফি-সাবিলিল্লাহ। জিহাদের বাসনা ওমারকে কাবুল পর্যন্ত যাওয়ার অনুপ্রেরণা যোগায়। সেখানে আসমা নামক এক নারীর সাথে তার পরিচয়, পরিণয় এবং পরিশেষে বিয়ের মাধ্যমে সম্পর্ক নামক পরিণতি ঘটে।
এরপর নাইন ইলেভেনের ঘটনায় পরিস্থিতি ভয়াবহতার দিকে মোড় নিতে থাকে। ওমার বন্দী হয়। অ্যামেরিকার কুখ্যাত জেল গুয়ানতানামো বে তে বিনা বিচারে ১২ বছর জেল খেটে তবেই ছাড়া পায়।
ফিরে এসে দেখে তার জন্য সব দরজা বন্ধ হয়ে গেছে। এমন কুখ্যাত সন্ত্রাসীর জায়গা হবেনা তার নিজের দেশের মাটিতেও। সব দরজা বন্ধ হয়ে গেলেও একটা দরজা থাকে তার জন্য চির উন্মুক্ত। ফিরে পায় তার অস্তিত্বের সাথে মিশে থাকা আসমা এবং তার সন্তানকে।
চরিত্রায়নঃ উপন্যাসটির মূল চরিত্র ওমার। উপন্যাসের প্রথমদিকে চরিত্রটি সঠিকভাবে চিত্রায়িত হলেও শেষের দিকে দ্বিচারিতা পরিলক্ষিত হয়। পরিবর্তিত জীবনে একজন নারীর কাছ থেকে চিকিৎসা সেবা নেওয়াটা তার দ্বীনদার চরিত্রের সাথে মানানসই হয়নি। শুধু চিকিৎসা নেওয়া পর্যন্ত হলে তবুও হতো। তাদের দুজনার মধ্যে প্রেমের যে রসায়ন এখানে বর্ণিত হয়েছে তা ওমারের ব্যক্তিত্বকে কলুষিত করেছে।
তবে রুশর চরিত্র চিত্রায়নে লেখক শতভাগ সফল। নেশায় বুঁদ হয়ে থাকা, ঢুলু ঢুলু চোখ, অসংলগ্ন কথাবার্তার মধ্যে দিয়ে এলোমেলো জীবনের যে চিত্র বিম্বিত হয়েছে তা রুশরই চরিত্রের নানারকম রূপ। উপন্যাসের যে দুটি চরিত্র শৌর্যে বির্যে অনন্যতা পেয়েছে তারা হলেন খালিদ ইবনে হিশাম এবং ইমাম। এখানেও লেখক শতভাগ সফল। একজন দায়ীর যেসকল গুণ থাকে উচিৎ ইমাম তার প্রতিটাই ধারণ করে। দ্বীনের পথে আহ্বানের ক্ষেত্রে তার প্রজ্ঞা, হিকমা এবং সবরের যে মিলনমেলা ঘটেছে যা সত্যিই বিরল। এমন দায়ী আমরা শুধু বইয়ের পাতায় নয়, বাস্তবেও কামনা করি। অপরদিকে খালিদ ইবনে হিশামের ব্যক্তিত্বও কম মুগ্ধকর না। জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ তার অন্তরের তামান্না।
আসমা চরিত্র চিত্রায়নেও একই ভুল ধরা পড়েছে। দ্বীনদারিতা এবং হারাম সম্পর্কের সংমিশ্রণ একদিকে যেমন চরিত্রগুলোর স্বকীয়তাকে বিনষ্ট করেছে অন্যদিকে উপন্যাসের স্বাভাবিক গতিকে করেছে অবদমিত।
উপন্যাসের ভালো দিকঃ গল্পটা ইতিহাসভিত্তিক এবং কাহিনী নির্মাণে লেখক শতভাগ সফল। দেশের গণ্ডী পেরিয়ে সুদূর কাবুল যাওয়ার পথে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের যে দিকটা বর্ণিত হয়েছে তা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবী রাখে।
উপন্যাসের খারাপ দিকঃ প্রথম এবং শেষে ওমারের প্রেমঘটিত কাহিনী উপন্যাসের গতিরোধ করেছে এবং স্বচ্ছতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। লেখকের দাবী অনুযায়ী এটাকে ইসলামি জনরার উপন্যাসের কাতারে রাখতে হলে এসব হারাম রিলেশানসহ যাবতীয় হারাম সম্পর্ক এবং কাজকে উপন্যাসের মূল চরিত্র ধারণ না করে সমাজের সমস্যা হিসাবে চিত্রায়িত করাই যৌক্তিক ছিল। অকারণ প্রেমের দৃশ্য উপস্থাপন গল্পের মানকে সমুন্নত রাখতে ব্যর্থ হয়েছে।
জনরাঃ উপন্যাসটাকে আসলে কোন জনরাতে ফেলা যায়, সেটা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় আছে।
বইঃ আসমান
লেখকঃ লতিফুল ইসলাম শিবলী
রেটিংঃ৩/১০ 
©somewhere in net ltd.