নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার পরিচয় লেখার মাঝেই

ঘাসফুল

ঘাসফুল › বিস্তারিত পোস্টঃ

যে গল্পের নাম দেয়া হয়নি

১৮ ই অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ২:১৮

যে গল্পের নাম দেয়া হয়নি
--------------------------
মৌরি বসে আছে। একা। তবে একা না। কারন আরেকজন আছে তারপাশে। সবসময় থাকে। কেউ তাকে দেখেনা। মৌরিওনা। কিন্তু সে অনুভব করে, তার হৃদযন্ত্রএ শব্দ হয়। সে শব্দের উচ্চারণ অন্যরকম।
কি দরকার ছিলো এসময় রাশেদের তার জীবনে আসার। কেন এমন হয়। অনেক যন্ত্রণা থেকে মুক্ত হয়ে সদ্য স্বাভাবিক জীবনে ফিরছে মৌরি। ঠিক এসময় তার জীবনে আসলো রাশেদ। হয়ে গেল মৌরির বন্ধু রাশেদ। কিন্তু এসময় আবার কেন মুজিবের আসতে হবে? কি দরকার ছিল। আর মৌরিও কিনা রাশেদের প্রতি দুর্বলতা সত্ত্বেও মুজিবকে হ্যা বলে দিলো। কেননা রাশেদ তখনো বন্ধু। আর মুজিব হতে চায় বর।
এরকম ট্রাজেডি কি হয়েছে কোন সিনেমায়? কখনো? আগে কিংবা ভবিষ্যতে কি হবে? নাকি এটাই হবে কোন নতুন উপাখ্যান।
বৈশাখে ঋতু বদল হয়। কিন্তু সদ্য বসন্ত পার হয়েই চলে আসে গ্রীষ্ম বর্ষা দুটোই। গ্রীষ্ম আসে তার নিয়মেই। জৈষ্ঠের মধুমাখা ফল খেতে সবাই যখন মুখিয়ে তখনি কাল বৈশাখী সব চূর্ণ করে দেয়।
কিন্তু আমি এসব বলছি কেন? কিসের সাথে কিসের তুলনা। ঋতু পরিবর্তন হয়, এটা ঠিক আছে। কিন্তু গ্রীষ্ম আর বর্ষা, কে কোনটা, তা নিয়ে আমি নিজেইত কনফিউজড।
মৌরি ভালোবাসতে জানে। কিন্তু ভালোবাসা দিয়ে সবকিছু জয় করা গেলেও কখনো কখনো ভালোবাসা নিজেই হয়ে যায় দুর্ভেদ্য। দুর্জেয়। ভালোবাসাকেই জয় করা যায়না।
এখানে সেরকম টা হয়েছে।
মুজিব মৌরির এলাকার পরিচিত ভাই। ছোটবেলা থেকেই পরিচিত। মৌরির আম্মু অসুস্থ। ব্রেইন প্রায় ড্যামেজড। চলাফেরা করাটাও কষ্টের। শেষ ইচ্ছা, একমাত্র মেয়েকে বউ সাজে দেখবেন। সেজন্য পাত্র খুঁজছেন।
এসময় পুর্ব পরিচিত মুজিবের ফোন পেয়ে সে অবাকই হয়। কিন্তু মাথায় কিছু ডুকছিলোনা। সোজা বলে দেয় বাসায় যোগাযোগ করতে। সে ভেবেছিল এতদূর হয়তো আগাবেনা। কারন তারমানে রাশেদের উপর জিদ চেপে আছে। একটা ছেলে এমন কেন হবে। সারাদিন কথা বলতে চায়। সবসময় সাথে ধরে রাখতে চায়। একটু দেরী হলেই রাগারাগি করে। এটা কেমন বন্ধু। নাকি এরচেয়ে বেশী। মুখ ফুটে বলতে পারেনি। মৌরিও এবার ক্ষেপেছে। আর কথাই বলবেনা। এত অত্যাচার কেন করবে।
কিন্তু মুজিবকে হ্যা বলেই ওর সবকিছু অন্যরকম লাগতে থাকে। সেওতো রাশেদের সাথে কথা না বলে থাকতে পারেনা। সবসময় চেক করে অনলাইন আছে কিনা। রাশেদ ফিরে আসে। এ কেমন যেন। নিজে নিজে কথা বন্ধ করে দিয়ে আবার নিজে থেকেই কথা বলা শুরু করে, আর বলে আমি কথা বন্ধ করলাম, তুমি আটকাবেনা?
মুজিবের কথা শুনে রাশেদও ঠিক থাকতে পারেনা। তার মনে হতে থাকে, সে অনেক বড় কিছু হারাচ্ছে। এমন কিছু, যেটা সারাজীবনের আরাধ্য থাকে। যা হারালে শুধু হতাশায় বাড়ে। এরচেয়ে ভালো কিছু হয়না। খারাপ কিছুওনা। এটা অতুলনীয়। অন্য কিছু দিয়ে এর শূন্যতা পূরণ করা অসম্ভব।
সে ইশারায় বলতে থাকে। কিন্তু সরাসরিও বলতে পারেনা। কারন আরেকজন এসে গেছে। যদি সরাসরি না করে দেয়। পাওয়ার চেয়ে হারানোর ভয় যে বেশী।
কোনদিন মেয়েদের দিকে দুর্বলতা না দেখানো ছেলেটাও আজ কেমন যেন হয়ে গেছে। নিজেকে প্রেমের উর্ধে দাবী করা ছেলেটা আজ প্রেমের জলে ভেসে যাচ্ছে। সবকিছু যে যুক্তি দিয়ে বিচার করে, আজ সে আবেগের কাছে পরাজিত হয়ে যাচ্ছে।
এর আগে মৌরি ওকে অনেকবার জিজ্ঞেস করেছিল, পছন্দের কেউ আছে কি মহাশয়?
মহাশয় উত্তর দিতো, সবার জন্য প্রেম না। প্রেমের উর্ধেই জীবন। সে এসব নিয়ে ভাবেনা।
কিন্তু আজ সে হঠাৎ বলে বসলো, একটা মেয়েকে পছন্দ করতাম। তার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।
এ কেমন কথা? বললেনা তোমার কোন দুর্বলতা নেই। সে বলে ছিলনা। এখন হয়েছে। মৌরি চেষ্টা করে মুখ থেকে বের করার। কিন্তু সে বলেনা । বলে কি হবে? খামোখা কষ্ট বাড়বে। অথচ আজ দেখেন, সে কথাটাই সত্য হতে যাচ্ছে।
মৌরি ধমক দিয়েই বলে, তোমার মতো ছেলেদের কারনে মেয়েরা তার পছন্দের মানুষ্কে পায়না। পেটের মধ্যে ভালো লাগার কথা রেখে দিলে কখনওই কিছু হবেনা। বলে দেখো সেও হয়ত তোমাকে পছন্দ করে। কিন্তু মুখ ফুটে বলতে পারছেনা। সে তবুও বলেনা । ভয় আর শংকা।
কিন্তু মৌরিও বুঝে না বুঝার ভান করে থাকে। নিজেও ভেতর থেকে কান পেতে থাকে। কখন আসবে সে আহ্বান।
অবশেষে আসলো সে। ডাক। একদিন রাশেদ মেসেজ দিয়ে বলে, আয়নার সামনে যেতে পারবে?
- কেন? টেলি কাইকেসিস করবে নাকি?
- না। একটা মেয়েকে দেখাবো।
- কাকে? সেই মেয়েটা?
- হুম
-কিন্তু আমি এখন আয়নার সামনে যেতে পারবোনা। ঘুমাবো।
ধুত। এই মেয়েটা এমন ভেজালে কেন। তাহলে একটা ছবি তোলো। সেল্ফি।
- ওকে। তুল্লাম।
-এবার ছবিটা দেখো।
- দেখলাম। কিন্তু সেই মেয়েটা কই
- এখন যাকে দেখতে পাচ্ছ। সেই
-! কি বলো এসব তুমি? মাথা খারাপ?
হুম্ম। অনেকটাই। কিন্তু বলতে হল। না বলে উপায় নেই।
মৌরি চুপ। পরদিন পরিক্ষা ছিল। ফার্স্ট প্রফের ভাইভা শুরু হচ্ছে। সে পড়তে বসলো।
রাতে একবার কথা হল। রাশেদ জোর দিয়ে কিছু বলল না আর।
পরিক্ষা অনেক ভালো হল। জীবনের প্রথম বড় ধরনের ভাইভা পরিক্ষা।
মৌরি ভালো ছাত্রী। সবই পারে। সব স্যার তাকে পছন্দ করে। কিন্তু সমস্যা হল সে মুখোমুখি কথা বলতে অনেক ভয় পায়। তার ভাষায় হাটু কাপে। রাশেদ তাকে অভয় দেয়।
ভয় কাটানোর সবচেয়ে বড় উপায় হল নিজের সাথে কথা বলা। সবসময় মনে করবে স্যার তোমার সামনে। কিংবা অনেক বড় একটা ক্লাস নিচ্ছ তুমি। তোমার সামনে অনেক মানুষ। তুমি স্টেজে বক্তব্য দিচ্ছ। এভাবে করবে সবসময়। একসময় দেখবে আর ভয় নেই।
মৌরি সেটা করে। ভালোই করে।
দিন শেষে আবার রাশেদের সাথে কথা হয়। ৮-৫ পর্যন্ত পরিক্ষা ছিল। প্রত্যেক্টা প্রহর যেন অসহ্য ছিল রাশেদের।
মৌরি ভালো খবর দেয়। তার কৌশল কার্যকর।
অন্যদিনের মতই স্বাভাবিক কথা হয়। এভাবেই আরো একটা পরিক্ষা হয়ে যায়।
কিন্তু এভাবে কত? কিছু একটা উত্তর দেয়া উচিৎ মৌরির।
সে এবার জোর করে। কিন্তু সমস্যা একটা। মৌরিকে বিয়ে করতে হবে তাড়াতাড়ি। তার আম্মুর হাতে সময় বেশী নেই।
এটাতে রাশেদের প্রব্লেম আছে। এখনো মাত্র সেকেন্ড ইয়ার। এখনো তিনবছর অনার্স এর। কিন্তু তবুও বলে ফেলে।
মৌরি কিছু বলেনা। কেননা অনিশ্চয়তা আর অজানা আশংকা তারও আছে। না পাওয়ার চেয়ে পেয়ে হারানোর বেদনা আরো বেশী।
এদিকে মুজিবের ফ্যামিলি মৌরির আম্মুর সাথে যোগাযোগ করে। সব বলে। উনিও খুশী হন। আগে থেকে পরিচিত।
কিন্তু মৌরির মনে মুজিবের জন্য কোন ফিলিংস নেই। সেতো ভাই। সবসময় ভাই ডেকে আসছে।
ভাই কে বর বানানো যায় নাকি?
ভাবতেও কেমন লাগছে। কিন্তু তারমানে এখন শুধুই রাশেদ। তার বিশ্বাস তার বাবা মা নিশ্চয় জোর করে তার উপর চাপ দিবেনা।
তাই সে হ্যা বলে দেয়।
কিন্তু সবকিছু তো ঠিকমতো হবেনা। মুজিবের ফ্যামিলি ওর পেছনে লেগে আছে। তখনো সে ওদেরকে কিছু বলেনি। কারন, ভেবেছিল এতটা প্রকট হবেনা তারা।
সে তার মনের মানুষ্কেই পাবে । ওদিকে তাই মুজিবকে নানাভাবে বোঝাতে চেষ্টা করে যে পছন্দ করছেনা। কিন্তু সরাসরি মুখেও বলে দিতে পারছেনা। কারন ফ্যামিলি জড়িয়ে গেছে ।
মৌরির অনেগুলা সমস্যা আছে। সমস্যা মানে রোগ। তার বুকে প্রচণ্ড ব্যথা হয়। মায়ের মতো ব্রেইন এও প্রব্লেম হতে পারে শেষ বয়সে। পেটেও প্রব্লেম। ছোটবেলায় গ্যাস্ট্রিক ছিল। যেটা এখন আলসারে পরিণত হয়েছে।
যখন বুকে ব্যথা হয়, কোন হুশ থাকেনা। প্রচণ্ড খারাপ লাগে। এতো যন্ত্রণা।
কোন ঔষধএ হয়না। কিন্তু কেন যেন রাশেদের সাথে তখন কথা বললে, সব ব্যথা কোথায় যেন হারিয়ে যায়। তার অন্যকিছু মনে থাকেনা।
পেট ব্যথার একটা প্রব্লেম আছে ওদের ফ্যমিলিতে। ওর এর আত্মীয়া মারা গেছে পেট ব্যথায়। মাঝরাতে প্রচণ্ড পেটে ব্যথা হয়, এরপর ডাক্তার আসার আগেই মারা যান।
মৌরিরও সম্ভবত এ রকম কিছু হবে।
মুজিব যখন প্রথম বলে, রাশেদ ভেবেছিল এসব কারনে মুজিব রাজি হবেনা। তাই সে বেশি কিছু বলেনি।
কিন্তু কে জান্তো তখনকার নিরবতাই এখন সবচেয়ে বড় বিপদ ডেকে আনবে।
মৌরির অনেক স্বপ্ন ছিল। ও বলে ওর বাচ্চা লাগবে চারটা।
- কেন?
- কারন তাহলে আমার নাতি নাত্নিরা চাচা ফুফু মামা খালা সব পাবে ।
রাশেদ হাসে। কেমন অদ্ভুত চিন্তা। ব্যাপার না। কষ্ট করবেতো তুমি। আমার কি?
- যাহ!

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.