নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

গড়ব মৌলবাদ , জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস মুক্ত দেশ

এম এম রহমান টিয়া

সকল ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল । সবার উপর মানুষ

এম এম রহমান টিয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলাদেশ- ভারত সম্পর্ক

০৮ ই এপ্রিল, ২০১৭ ভোর ৬:৩৮

ভারত নিয়ে কিছু লেখার সমস্যা হলো, আপনি দ্রুত ভারত-বিরোধী বলে চিহ্নিত হবেন। আপনাকে ছাগু বলা হবে। আপনি পাকিস্তানের এজেন্ট হিসেবে পরিচিতি পাবেন। কোনো দেশ নিয়েই আমার দ্বেষ নেই। কলকাতায় পা রাখার পর পুরো শহরটাকে আমার ভীষণ আপন মনে হয়েছে। এ নিয়ে অনেক গল্প বলেছি।
আমার এও মনে হয়, সত্যিকারের সমস্যাগুলোর চেয়ে আমরা বোধ হয় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ভারতে কয়টি ইলিশ নিয়ে গেলেন আর ভারতের প্রধানমন্ত্রী ফুলের তোড়া হাতে বিমানবন্দরে এলেন কি না, এ নিয়েই বেশি আগ্রহী। কূটনৈতিক শিষ্টাচারে ইলিশ আর ফুল দুটোরই গুরুত্ব অনেক; কিন্তু ইলিশ আর ফুল পেতে গেলে যে কিছু কাঁটাও বিদ্ধ করে; আমরা হয়তো ভাবতে চাই না।
ভারত আমাদের এমন এক প্রতিবেশী, যারা তিন দিক থেকে আমাদের ঘিরে রেখেছে। আমরা চাইলেও এই ভৌগোলিক বাস্তবতা বদলাতে পারব না। প্রতিবেশীর সাথে ঝগড়া হয়েছে বলে আপনি অন্য পাড়ায় বাসা ভাড়া নিতে পারেন, কিন্তু এখানে তা সম্ভব নয়। আর এ কারণে ভারতের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক খুব জরুরি। কিন্তু মনে রাখবেন, বন্ধু কখনো প্রভু আর ভৃত্যের মধ্যে হয় না। বন্ধুত্বের সম্পর্ক হয় দ্বিপাক্ষিক শ্রদ্ধাবোধে।
বাস্তবতা হচ্ছে, ভারত বাংলাদেশ সম্পর্ক অনেক বেশি একপাক্ষিক। বাংলাদেশ-ভারত যৌথ বাণিজ্যের বার্ষিক অঙ্কের পরিমাণ ৬৬০ কোটি মার্কিন ডলার। এর ৬১০ কোটি ডলার ভারত বাংলাদেশ থেকে নিয়ে যায়। আমরা ভারত থেকে নিয়ে আসি বাংলাদেশ ৫০ কোটি ডলারেরও কম (সূত্র ভারতেরই ইকোনমিক টাইমস)। কার্যত বাণিজ্যিক দিয়ে বাংলাদেশ হচ্ছে ভারতের একটি দোকান, যেখানে সে পণ্য বিক্রি করে। ভারত এখন বাংলাদেশকে রাস্তাও বানাতে চাইছে। বানিয়ে ফেলেছে আসলে।
আমাদের মধ্যে অভিন্ন ৫৪টি নদী আছে। এর মধ্যে মাত্র একটা নদীর পানি বণ্টন নিয়ে চুক্তি হয়েছে। তিস্তা নদীর চুক্তি এবারও হবে বলে মনে হয় না। এ বিষয়ে কোনো 'মমতা' নেই। পানির ভাগাভাগি নিয়ে আমাদের আমজনতার মধ্যে তেমন কৌতূহল দেখি না। নদীর পানি দিয়া কী হবে!
শুধু একটা কথা বলি, মানবসভ্যতার ইতিহাস আসলে নদীর ইতিহাস। নদীতেই একটা সভ্যতা গড়ে ওঠে, নদীর কারণেই ধ্বংস হয়। আমি উত্তরবঙ্গের মানুষ। আমি জানি, তিস্তার পানি কীভাবে ও কতটা ক্ষতিগ্রস্ত করছে বাংলাদেশের কৃষির অন্যতম ভান্ডার উত্তরাঞ্চলকে। ডেইলি স্টারের প্রতিবেদন অনুযায়ী কৃষিক্ষেত্রে এই ক্ষতির পরিমাণ এখন পর্যন্ত ৮ হাজার কোটি টাকা।
ভারত তার ভৌগোলিক অবস্থানের সুবিধা নিচ্ছে নদীর পানি সরিয়ে নিতে। অথচ বাংলাদেশ তার ভৌগোলিক অবস্থানের পুরো সুবিধা দিয়ে দিচ্ছে ভারতকে। ভারতের ম্যাপ দেখলে বুঝবেন, বাংলাদেশ এমন একটা জায়গায় পড়েছে, ভারত তার একটা বিশাল ভূখণ্ডের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারে না সহজে। ভারতের প্রধান রাজ্যগুলোর উন্নতির সঙ্গে ওই অঞ্চলের উন্নতিতে তাই বিশাল ফারাক। যেটা তাদের মধ্যে এক ধরনের ক্ষোভ, এবং সেখান থেকে বিচ্ছিন্নতাবোধের আকাঙ্ক্ষা জন্ম দিতে পারে বলে গুণীজনেরা বলেন।
ভারত সেই অঞ্চলে যাওয়ার রাস্তা হিসেবে ব্যবহার করছে বাংলাদেশকে। যেটাকে বলে ট্রানজিট। কার্যত আপনার-আমার টাকায় যে হাইওয়েগুলো নির্মিত ও রক্ষণাবেক্ষণ হয়; তার ওপর দিয়ে চলছে ভারী ভারী ভারতীয় ট্রাক। এরপর চলবে ট্রেন। আর এই বিশাল সুবিধা ভারত পাচ্ছে নামমাত্র খরচে। প্রতি টনে ১৯২ টাকা করে মাশুল দেয় ভারত, অথচ বাংলাদেশ সরকারের গঠিত ট্রানজিট-সংক্রান্ত কমিটির প্রস্তাব ছিল প্রতি টনে ১ হাজার ৫৮ টাকা মাশুল আদায়ের।
পার্থক্যটা বুঝুন।
ট্রানজিট-সংক্রান্ত অবকাঠামো উন্নয়নে ১০ বছরে ৪৭ হাজার ৩৫ কোটি ৯৩ লাখ ২০ হাজার টাকা প্রয়োজন হবে। বাংলাদেশ অংশের অবকাঠামো বাংলাদেশকেই তৈরি করতে হবে। নিজস্ব অর্থায়নে। ভারত 'সহজ শর্তে ঋণ' দেবে আমাদের। ভারত তো বলবেই, ভাই, আমি তো তোমাকে রাস্তার ভাড়া (ট্রানজিট মাশুল) দিয়েই ওদিকে যাচ্ছি। ওটা দিয়েই রাস্তা ঠিক করো।
অথচ আমরা বলতে পারতাম, ট্রানজিট নাও, পানি দাও। আগে পানি, তারপর ট্রানজিট। এই অঞ্চলগুলো বাংলাদেশি পণ্যের বড় বাজার হয়ে উঠতে পারত। সেটার পাশাপাশি আমরা ভারতের সঙ্গে যেকোনো ইস্যুতে দর-কষাকষির ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছি।
ভারত কি আমাদের কিছুই দেয় না? দেয় অবশ্যই। যেমন বিদ্যুৎ। কিন্তু দুই দেশের বাণিজ্য ঘাটতির দিকে তাকালেই বুঝবেন, আমরা ইলিশ দিয়েছি, কাঁটা পেয়েছি। ভারত আমাদের ফুল দিয়েছে, পাপড়ি ঝরে গিয়ে আমাদের ভাগ্যে থেকেছে কেবল কাঁটা।
বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে ভারত-বিরোধী একটা হিস্টিরিয়া আছে। আপনি যদি ভারতকে ঘৃণা করেন তার পরও এই বাস্তবতা স্বীকার করতে হবে, বাংলাদেশ নামের রাষ্ট্রটির দাইমা হচ্ছে ভারত। মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারতের কূটনৈতিক, সামরিক অবদান যদি ভুলেও যান; এই দেশের শরণার্থীদের তারা যেভাবে অকাতরে গ্রহণ করেছে, সংখ্যা বিবেচনায় তা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। তবু কেন এই দেশের একটা বড় অংশ ভারত ঘৃণা করে?
ভারত বিদ্বেষের কারণগুলো ভারতের বিদ্ব্যসমাজ খুঁজতে শুরু করেছেন। সরকারকে তারা চাপ দিচ্ছেন বাংলাদেশ প্রশ্নে আরও উদার দৃষ্টিভঙ্গি নেওয়ার। অথচ ভারতীয় পত্রপত্রিকায় এই একপাক্ষিক, অসম সম্পর্ক নিয়ে যত লেখালেখি হয়েছে; বাংলাদেশেই তেমন হয়নি। বাংলাদেশের টিভি বুদ্ধিজীবী থেকে শুরু করে ফেসবুক-বিপ্লবীদের খুব সামান্য অংশ এ নিয়ে কথা বলেন।
প্রতিবেশীর বাড়ি থেকে রাতের বেলা উঁচু আওয়াজে গান বাজলে, কাপড় ধোয়া পানি চলে এলে আমরা বলব না? অভিযোগ করব না?
ভারত নিশ্চয়ই বুঝতে পারবে, বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক করতে হলে ফুলের তোড়ার পাশাপাশি ফুলটাকে সতেজ রাখতে পানিও দরকার। 'বন্ধুত্ব সত্যিই বহতা নদীর মতো'
আর আমাদের বোঝা উচিত, অতিমাত্রায় ভারত প্রেমে কিংবা ভারত বিদ্বেষে অন্ধ হওয়ার কারণেই অনেক কিছু আমাদের চোখের সামনে ঘটে যায় আমরা দেখি না। অন্ধত্ব জিনিসটা কোনো অর্থেই ভালো নয়।


সংগৃহীত পোস্ট

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.