| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এম এম রহমান টিয়া
সকল ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল । সবার উপর মানুষ
ছোটবেলায় যখন সিনেমা সম্পর্কে কিছুই জানতাম না, বুঝতাম না, তখন ভাবতাম নায়ক-নায়িকা নিজেই বুঝি গান করেন। যে কারণে কোনো নায়ক/নায়িকার গান ভালো লাগলে বলতাম অমুক নায়ক/নায়িকার কণ্ঠ ভালো, ভালো না লাগলে বলতাম অমুক নায়ক/নায়িকার কণ্ঠ ভালো না। বড় হয়ে যখন জানলাম গানগুলো নায়ক-নায়িকারা নয়, বরং গায়ক-গায়িকারা গেয়ে থাকেন, তখন নিজের আহাম্মকির জন্য নিজের কাছেই লজ্জিত হয়েছি। কিছু লোক আছে, যারা সমাজে জ্ঞানী-গুণী হিসেবেই পরিচিত। কিন্তু যে আহাম্মকিটা আমি ছোটবেলায় করতাম, সেটা তারা এখনও করে। তাদের কথা হচ্ছে, শাকিব খান লিপস্টিক মাখে। আমার খুব অবাক লাগে তাদের কথা শুনে। এখনও মানুষ এত নির্বোধ কীভাবে থাকে? আরে বাপুরে, সিনেমার গানগুলো যেমন নায়ক-নায়িকারা গায় না, আপনার তো বোঝা উচিত শাকিব খান কীভাবে সাজবেন, কী পোশাক পরবেন-এই সিদ্ধান্তটাও তিনি নিজে নেন না। এই সিদ্ধান্তগুলো আসে পরিচালকের পক্ষ থেকে। একটা সেটে পরিচালক হচ্ছেন সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। তিনি যেকোনো আর্টিস্টকে যেকোনোভাবে সাজানোর নির্দেশ দিতে পারেন। সে-ই বড় আর্টিস্ট, যে পরিচালকের সব নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করে। শাকিব খান কেন লিপস্টিক মাখেন, কেন তার পোশাক আশাক ভালো না, কেন তিনি ‘তুই আমার বাবাকে খুন করেছিস’ টাইপের ছবিতে অভিনয় করেন-এই কৈফিয়ত চাইলে পরিচালকের কাছে চাওয়া যেতে পারে। একজন অভিনেতাকে যদি এইসব ব্যাপারে দোষারোপ করা হয়, তাহলে বুঝতে হবে যে দোষারোপটা করছে, সিনেমা সম্পর্কে তার কোনো জ্ঞানই নেই। কেউ কেউ শাকিব খান সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে প্রথমেই বলে বসবেন-শাকিব খান ফাঁকা মাঠে গোল দিচ্ছেন। আফসোস হয় এই মানুষগুলোর জন্য। ভাইরে, আপনার কি মনে হয় চলচ্চিত্রে অভিনয়ের যে লোভ, এই লোভ বর্তমান যুগের ছেলে-মেয়েদের মধ্যে নেই? এই লোভ আছে এবং অনেকেই আসছে অভিনয় করার জন্য। কিন্তু টিকতে পারছে না। তার মানে তারা নিজেদের অযোগ্যতার কারণেই হারিয়ে যাচ্ছে এবং শাকিবের মাঠ ফাঁকা হচ্ছে। আপনি কি জানেন মান্না মারা যাওয়ার আগে কমপক্ষে তিন বছর তার কোনো ছবি সেভাবে হিট হয়নি? তার মানে মান্নার ক্যারিয়ার ভাটার দিকে ছিল এবং তিনি বেঁচে থাকলে এতোদিনে তার অবস্থানও রুবেল, ইলিয়াস কাঞ্চনদের পর্যায়ে চলে যেত। আর এর জন্য আমি ব্যক্তিগতভাবে খুব কষ্ট পেতাম। কারণ, মান্না ছিলেন আমার প্রিয় নায়ক। এবার আসি সালমান শাহ প্রসঙ্গে। আমি জানি সালমান শাহ ভক্তরা তথ্যটা জেনে খুব কষ্ট পাবেন এবং আমাকে গালাগাল করবেন। কিন্তু তথ্যটা খুব বিশ্বস্ত জায়গা থেকে আমি সংগ্রহ করেছি। সেটা হচ্ছে, সালমান শাহ মারা যাওয়ার আগে (বছর দুয়েক) তিনি খুব হতাশায় ভুগতেন। কারণ, তার বেশ কিছু ছবি ফ্লপের কাছাকাছি চলে যাচ্ছিল এবং নতুন ছবিগুলোতে তার বদলে ডাকা হতো ওমর সানীকে। কিন্তু তার মৃত্যুর পর ‘সত্যের মৃত্যু নেই’ ছবিটা আকাশচুম্বি ব্যবসা তো করেছেই, ফ্লপের কাছাকাছি সিনেমাগুলোও পেয়েছে নতুন জীবন। সালমান শাহ’র ক্ষেত্রেও সেই একই কথা, তিনি এখন পর্যন্ত বেঁচে থাকলে অামরা তাকে ফ্লপ নায়কের আওতায় ফেলে দিতাম। কিন্তু শাকিব খান দীর্ঘদিন ধরে শীর্ষস্থান ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছেন। এমনকি এখন তিনি আরো ভালো ভালো কাজ করছেন। বাংলা সিনেমার একজন শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে আমি মনে করি, চলচ্চিত্রের ভেতরের খবর তথা গভীরে খবর না জেনে শুধুমাত্র ব্যক্তিগত অপছন্দের কারণে দর্শকনন্দিত একজন সুপারস্টারকে মনগড়া অপবাদ দিয়ে ছোট করার চেষ্টা করা উচিত নয়। শাকিব খান এখনও দর্শককে হলে টানছেন, এর মানে হচ্ছে তিনি মান্না, সালমান শাহর চেয়েও বড় দায়িত্ব পালন করছেন। কারণ, মান্না সালমান শাহ’র আমলে তাও মানুষ হলে গিয়ে সিনেমা দেখত। এখন বলতে গেলে হলে যায়ই না। এই অবস্থায়ও শাকিব খান একটা শ্রেণীকে হলে নিতে পারছেন, এর জন্য তাকে সম্মানিত করা উচিত। একজন চলচ্চিত্রাভিনেতা হিসেবে যা যা যোগ্যতা থাকা দরকার-সৌন্দর্য, শুদ্ধ উচ্চারণ, অভিনয় দক্ষতা; সব তার আছে। হয়তো তার এইসব যোগ্যতাকে সঠিকভাবে কাজে লাগানো হচ্ছে না, এই দোষ তো আর তার না। এই দোষ পরিচালক, প্রযোজকের। তাহলে কেন একজনের দোষ আরেকজনের ঘাড়ে চাপানো হবে? আপনি শাকিব খানকে পছন্দ না-ই করতে পারেন, দরকার নেই তার সিনেমা দেখার। এড়িয়ে যান। তাই বলে উদ্ভট সব দোষ চাপিয়ে পুরো বাংলা সিনেমাকে তো অপমান করতে পারেন না। হঁ্যা, গঠনমূলক সমালোচনা চলতে পারে। কীভাবে নকলের প্রবণতা কমানো যায়, কীভাবে আরো ভালোমানের ছবি বানানো যায় ইত্যাদি ইত্যাদি। সবশেষে কথা এটাই-আসুন বাংলা সিনেমাকে ভালোবাসি। ভালো বাসতে না পারলে অন্তত নিন্দা না করি। আর আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি-শাকিব খানের হাত ধরে বাংলা সিনেমা এগিয়ে যাবে বহুদূর
"ইকবাল খন্দকার"
©somewhere in net ltd.