নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি হচ্ছি কানা কলসির মতো। যতোই পানি ঢালা হোক পরিপূর্ণ হয় না। জীবনে যা যা চেয়েছি তার সবই পেয়েছি বললে ভুল হবে না কিন্তু কিছুই ধরে রাখতে পারিনি। পেয়ে হারানোর তীব্র যন্ত্রণা আমাকে প্রতিনিয়ত তাড়া করে।

মাহফুজ

তেমন কিছু লিখবোনা নিজেকে নিয়ে কারণ লিখতে গেলে সেটা এতো বিশাল হবে যে কেউ পড়বেনা; অবশ্য লিখলেই যে অনেকে পড়বে তাও না। যাই হোক আসি মূল বিষয়ে, আমি হচ্ছি সেই ব্যক্তি যে জীবনে চলার পথে একটি সুন্দর সেতু পেয়েছিলাম, মজবুতও ছিলো। সেতুটির পাশেই ছিলো একটি বাঁশের সেতু। আমি অনায়াসেই সুন্দর আর মজবুত সেতু দিয়ে ওপারে চলে যেতে পারতাম যেখানে খুব সুন্দর একটি পৃথবী আছে। আমি বোকার মতো নিজের খামখেয়ালিপনার কারণে বাঁশের সাঁকোতে উঠে পড়লাম যেটা ছিলো খুবই ভয়ানক এবং জায়গায় জায়গায় ত্রুটি অর্থাৎ নড়বড়ে আর খুবই গভীর। বাতাস দিলেই সেতুটি দুলতে থাকে ভয়ানক ভাবে।

মাহফুজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভালোবাসা এবং লাইডিটেক্টর

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ভোর ৪:৫৫

২০৫৭ সাল, এক দুপুর বেলা।

একটা লাই ডিটেক্টর শপের সিকরেট
চ্যাম্বারে লিসা মেজাজ খারাপ করে বসে আছে সাথে ভীষণ মন খারাপ। অনেক কষ্টে জমানো টাকা দিয়ে আজ রিয়াদকে এই লাই ডিটেক্টর শপে নিয়ে এসেছিলো। রিয়াদের না আসার জন্য নানা টালবাহানা দেখে আগেই
বুঝে গিয়েছিলো ডাল ম্যা কুচ ডার্টি হ্যা। তার সামনে লাই ডিটেক্টর চেয়ারে কাচুমাচু
মুখে বসে আছে লিসার জীবনের প্রথম প্রেমিক রিয়াদ। রিয়াদ আজ ধরা পড়ে গেছে। লিসা যে তার একমাত্র প্রেমিকা না তা এখন লিসার কাছে প্রকাশিত সত্য। ফুঁপিয়ে, ফুপিয়ে কাঁদতে, কাঁদতে লিসা জিজ্ঞেস করলো-

তুমি মিথ্যা বলেছিলে কেন রিয়াদ?

-লিসা প্লিজ ট্রাই টু আন্ডার্সস্ট্যান্ড, হয়তো আমার প্রেমিকা আছে কিন্তু আমি তোমাকেই
সবচাইতে বেশী ভালবাসি।

পিপ পিপ পিপ করে লাই ডিটেক্টর মেশিনের লাল বাতিটা আবার জ্বলে উঠলো রিয়াদের কথা শেষ হবার আগেই। এর আগে যতোবারই রিয়াদ কথা বলেছে তার ৯০% লাই ডিটেক্টর নেগেটিভ আইডেন্টিফাই করেছে। রিয়াদ লাই ডিটেক্টর শপে আসতে রাজি হয়নি এতোদিন। আজ এসেছে লিসার অতিরিক্ত চাপাচাপিতে আর লাইডিটেক্টর একটি ভুয়া মেশিন এই ভেবে।

পিপ পিপ শব্দে আবার অপ্রস্তুত হয়ে গেল রিয়াদ।

-ছিঃ রিয়ায়াদ। তুমি এখনো মিথ্যা বলে যাচ্ছ! তোমাকে না আমার ঘৃণা করতেও ঘৃণা হচ্ছে। বেরিয়ে যাও এখান থেকে। জীবনে আর আমার সামনে আসবেনা।
-লিসা প্লীজ, বি কুল। এই যুগে এত ইমোশনাল হলে চলে? জীবনটাকে এতো সিরিয়াস আর বোর করার কোনো মানে নেই। ইনজয় করো।

লিসা এইবার নিজেকে সামলাতে পারলোনা রিয়াদের নির্লজ্জতা দেখে।
-ঐ কুত্তার বাচ্চা যাবি এখান থেকে!

-লিসা!! তুমি গালি দিলা আমারে!

-ঐ ব্যাটা গালি দিতে পারছি বলেই আমার পায়ের স্যান্ডেল এখনো আমার পায়েই আছে। তুই কি যাবি না কি স্যান্ডেল খুলে হাতে নিতে হবে?

বেরিয়ে গেল রিয়াদ। কারণ নিজেকে নির্দোষ প্রমানের কোনো কিছু তার নেই।

যেতে যেতে ভাবছে তাকে আসলে কি কি প্রশ্ন করেছিলো?
আমি তোমার কতো নাম্বার গার্লফ্রেন্ড, সত্যি আমাকে বিয়ে করতে চাও, আজ পর্যন্ত কতজনের সাথে বিছানা শেয়ার করেছো, তুমি কি করো?

রিয়াদ এই প্রশ্নগুলির যতোগুলো উত্তর দিয়েছে সেগুলোর প্রায় উত্তরই মিথ্যা হিসেবে লাইডিটেক্টর জাস্টিফা করেছে।

ঘটনার সূত্রপাতঃ

কফিশপে বসে আড্ডা দেয়ার সময় রিয়াদের সাতে লিসার পরিচয় হয়েছিলো। পরিচয় থেকে প্রেম আর সেই প্রেম থেকে পরিণয়ে
যাবার আগেই কিছুদিন আগে পরিণত সম্পর্ক (ফিজিকেল রিলেশন)স্থাপনের
প্রস্তাব আসে রিয়াদের কাছ থেকে। লিসা রাজি হয়নি। সম্পর্কের ভিত্তি কতটুকু কিংবা সবকিছুর সত্যতা যাচাই না করে আজকাল খুব কম মেয়েই তাদের ভার্জিনিটি শপে দেয় অন্যের কাছে। একটু আর্থিক
স্বচ্ছলতা থাকলেই যে কাউকে এনে বসিয়ে দেয়া যায় লাই ডিটেক্টর মেশিনের সামনে।
রিয়াদকে প্রায় জোর করে লাই ডিটেক্টর শপে নিয়ে এসেছিলো লিসা।

শেষ দৃশ্যঃ

রিহাব বেরিয়ে যাবার ৫মিনিট পরে প্রায়
কাঁদতে কাঁদতে বিল কাউন্টারে আসল লিসা।
কাউন্টারে বসা শপের মালিক সিয়াম। একটা চেয়ারটা টান দিয়ে বসলো লিসা। সিয়াম টিসু
বক্সটা এগিয়ে দিলো সাথে সাথেই। এসব দৃশ্য সিয়ামের খুব পরিচিত। সিকরেট চ্যাম্বার
থেকে হাসি মুখে বেরিয়ে আসার দৃশ্য খুবই
রেয়ার। হয়ত শ'তে মাত্র দুইটা। তবে সবাইযে প্রেম ঘটিত সমস্যায় আসে তা না; ব্যাবসায়ীক লেন দেনের মত বিষয়েও আসে। আবার বড়লোকেরা অতি ছোট খাট কাজেও আসে। ঘর থেকে ৫০০ টাকা খোয়া গেলে গৃহিনী ৫০০০ টাকা খরচ করে কাজের
মেয়ে/ ছেলেকে নিয়ে আসেন লাই ডিটেক্টরে বসাতে। অতি বড়লোক স্বামী স্ত্রীরাই আসেন বেশী। সিয়ামের এলাকায় এটাই একমাত্র লাই ডিটেক্টর চ্যাম্বার তাই তার ব্যাবসা এখানে একচেটিয়া। অনেক সময় অবশ্য অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়। ঝামেলাটা আসে সিক্রেট চ্যাম্বারে দোষী কিংবা মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত হওয়াদের কাছ থেকে। প্রশাসনের কঠোর নজরদারিতে বারবারই সিয়াম সেসব ঝামেলা থেকে রক্ষা পায়। সরকার লাইডিটেক্টর শপ কিংবা স্পটে কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে।

যাই হোক সিয়াম, লিসাকে সিয়াম জিজ্ঞেস করলো -কি আপু রেজাল্ট নেগেটিভ?
-হু।
-জানি মন খারাপ, তবুও বলি, যা হয় ভালোর জন্যেই হয়। বাড়ী যান, বিশ্রাম নিন
-হু ভাইয়া। আপনার বিলটা? -
সাড়ে সতের মিনিট চালু ছিলো চেয়ার। আপনার বিল আসে ২৩
হাজার ৭০ টাকা। আপনি ২১ হাজার টাকাই দিন। যেহেতু আজকের প্রথম কাষ্টোমার আপনি। লিসা অনেক কষ্টের
জমানো টাকা গুলো ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে পে করল।
-আসি ভাইয়া। ধন্যবাদ।
-হু বেস্ট অফ লাক নেক্সট টাইম আপু।
লিসা চলে গেলো।

একটা তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠল সিয়ামের চোখে মুখে। সে লগ ইন করল ফেবুতে। ষ্ট্যাটাস দিল "দিনের শুরুতেই আরেকটি ব্রেকাপ ঘটালো আমার লাই ডিটেক্টর বাবা"

সাথে কিছু অট্টহাসির ইমো।
হাসির ইমো দেয়াই স্বাভাবিক। কারণ এটা তার বিজনেস।
আর এই বিজনেস রিয়াদকে অনেকটাই ফিলিংসলেস বানিয়ে দেয়েছে।
আর সিয়াম এমন ফিলিংসলেস হবেই বা না কেন? সে নিজেও তো এরকম এক নির্মম সত্যের সামনে পড়েছি লো ৩বছর আগে! তার প্রায় সাড়ে চার বছর সম্পর্কের প্রেমিকা জেবুনকে লাই ডিটেক্টর চ্যাম্বারে নিয়ে গিয়ে যেদিন জানতে পেরেছিলো,জেবুন এই সাড়ে চারবছরে ৫টা ছেলের
সাথে নিয়মিত চ্যট, প্রেম করে যাছে। এদের একজনের সাথে আবার রুম শেয়ারও করেছে। সেটা অন্য গল্প।

যাই হোক জেবুনের সাথে ব্রেকাপ হবার পর থেকে সিয়াম এই বিজনেস
শুরু করে। নেগেটিভ রেজাল্ট বিশেষ করে ব্রেকাপ গুলাতে সে এক পৈশাচিক আনন্দ পায়। জীবনে প্রতারণা কিংবা মথ্যা ও লাই ডিটেক্টরে নেগেটিভ মানুষ আইডেন্টিফাই
কাউকে দেখলে সে যতটা আনন্দ তার চাইতে তিন গুণ
বেশী কষ্ট পায় কোন কাপল সিক্রেট চ্যাম্বার থেকে হাসি মুখে বেরিয়ে আসলে কিংবা সম্পর্ক টিকে যেতে দেখলে। ব্যবসাটা শুরুর প্রধান উদ্দেশ্যটাই
ছিলো খুব কাছ থেকে প্রতারিত হওয়া মামুষগুলোর ছবি? উদ্দেশ্যটা পুরোপুরি সফল বলা যায়। মাসে কম পক্ষে ২০ টা কেইস আসে তার দপ্তরে। মেশিনটা শিগগির অফিসিয়ালি এলাউ করার কথা ভাবছেন অনেকেই।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.