নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি হচ্ছি কানা কলসির মতো। যতোই পানি ঢালা হোক পরিপূর্ণ হয় না। জীবনে যা যা চেয়েছি তার সবই পেয়েছি বললে ভুল হবে না কিন্তু কিছুই ধরে রাখতে পারিনি। পেয়ে হারানোর তীব্র যন্ত্রণা আমাকে প্রতিনিয়ত তাড়া করে।

মাহফুজ

তেমন কিছু লিখবোনা নিজেকে নিয়ে কারণ লিখতে গেলে সেটা এতো বিশাল হবে যে কেউ পড়বেনা; অবশ্য লিখলেই যে অনেকে পড়বে তাও না। যাই হোক আসি মূল বিষয়ে, আমি হচ্ছি সেই ব্যক্তি যে জীবনে চলার পথে একটি সুন্দর সেতু পেয়েছিলাম, মজবুতও ছিলো। সেতুটির পাশেই ছিলো একটি বাঁশের সেতু। আমি অনায়াসেই সুন্দর আর মজবুত সেতু দিয়ে ওপারে চলে যেতে পারতাম যেখানে খুব সুন্দর একটি পৃথবী আছে। আমি বোকার মতো নিজের খামখেয়ালিপনার কারণে বাঁশের সাঁকোতে উঠে পড়লাম যেটা ছিলো খুবই ভয়ানক এবং জায়গায় জায়গায় ত্রুটি অর্থাৎ নড়বড়ে আর খুবই গভীর। বাতাস দিলেই সেতুটি দুলতে থাকে ভয়ানক ভাবে।

মাহফুজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

"মা"

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ভোর ৫:২৩

(মাগো তোমরা কেন এতো উদার হও? আসলে এতো উদার হওয়া উচিৎ না তোমাদের। তোমাদের উদারতার সুযোগ নিয়েইতো আমরা অমানুষ হই। বৃদ্ধাশ্রমে থাকা প্রত্যেক দু:খিনী মা আর অসহায় বাবার কাছে ক্ষমা চেয়ে আমার এই গল্প।)

-তুমি তোমার মাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠাবে নয়ত আমাকে বাপের বাড়ী রেখে আসবে। দুইটা অপশন দিলাম। ইউ হ্যাভ টু চুজ ওয়ান। তুমি প্রতিদিন এভাবে এড়িয়ে যেতে পারনা।

-আহ সুমা। আস্তে কথা বলো প্লিজ। মা শুনতে পেলে খুব কষ্ট পাবে।

-পেলে পাবে সেটা আমার দেখার বিষয় না। তোমার মায়ের পেছনে শ্রম দিয়ে মরার জন্য আমি তোমাকে বিয়ে করিনি।

-শ্বশুড় শ্বাশুড়ীর জন্য মানুষ তো খুশী হয়েই শ্রম দেয়, সেবাযত্ন করে।

-আমি সেরকম মানুষ না, ব্যাস।

-আচ্ছা আজ যদি তোমার ভাবী তোমার মাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দিতে বলে তখন তুমি কি করবে?

-আমার মা এতো ঝামেলা করেনা কিংবা এতো আনকালচার্ড না যে ভাবী এমন চাইবে।

শফিকের আর ভাল্লাগেনা। এই বিষয় নিয়ে সুমা তাকে খুব বেশী প্রেসার ক্রিয়েট করছে ইদানীং।

জাহানারা বেগম আচলে চোখ মুছলেন। স্পষ্ট শুনা যাচ্ছে তার একমাত্র ছেলে শফিক আর পূত্রবধূ সুমার বাকবিতণ্ডা। নিজেকে খুব অসহায় লাগছে তার। ছেলের জন্য কষ্ট হচ্ছে। ছেলেটা তাকে ভালোবাসে তিনি জানেন। আর বাসবেই বা না কেনো? সেই ছোটবেলা শফিকের বাবা ফিরোজ সাহেব মারা যান। তখন থেকেই বাবা-মা দুজনের আদর-সোহাগ দিয়ে শফিককে আগলে রেখে বড় করেছেন। শফিক আজ সরকারী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার। তবে চাকরী আর এই আলীশান ফ্লাটের পেছনে শফিকের শ্বশুড়ের অনেক অবদান। সেজন্যই বউয়ের এত তেজ। জাহানারা বেগম ছেলের অবস্থা বুঝতে পারছেন ভালো ভাবেই। মনে মনে নিজেকে দোষারোপ করলেন। "আল্লাহ আমাকে আগেই কেন উঠিয়ে নিলেনা ওর বাবার মতো। মা হয়ে ছেলের বোঝা হয়ে থাকতে কি মন চায়?"

স্মৃতির পাতা ঘেটে অনেক পেছনে চলে গেলেন তিনি। শফিক তখন প্রাইমারীতে পড়তো। ফিরোজ সাহেব চাকরী করতেন একটি বীমা অফিসে। একদিন শফিক পাশের বাসার জানালার থাই গ্লাস ভেঙ্গে ফেলে ঢিল ছুড়ে। তারপর বাবার ভয়ে মাকে জড়িয়ে ধরে খুব কান্নাকাটি করে। ফিরোজ সাহেব অত্যন্ত রাগী মানুষ ছিলেন। তিনি আসতেই পাশের বাসা থেকে কাঁচ ভাঙ্গার নালিশ আসে শফিকের নামে। সারাদিন কাজ করে এমনিতেই ক্লান্ত ছিলেন ফিরোজ সাহেব, তার উপর ঘরে ঢুকার আগেই প্রতিবেশীর এমন নালিশ শুনে রেগেমেগে আগুন। শফিককে ঢেকে আনলেন তিনি। কোমড় থেকে আগেই বেল্ট খুলে রেখেছিলেন। শুরু করলেন মার, জাহানারা বেগম তখন দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরেছিলেন শফিককে। বেল্টের দু -তিনটা ঘা তার শরীরেও লেগেছিল সেদিন। তীব্র ব্যথা সহ্য করেও প্রাণের প্রিয় সন্তানকে সেদিন আড়াল করে রক্ষা করেছিলেন জাহানারা বেগম। আরেকবার স্কুল পালিয়েছিলো শফিক। সেদিন বাবা তাকে সারারাত বারান্দায় থাকার শাস্তি দেন।
ফিরোজ সাহেব খুবই কড়া প্রকৃতির মানুষ ছিলেন। তার কথা অমান্য করার সাহস দেখাতনা কেউ। জাহানারা বেগম সেদিন স্বামীর কথা উপেক্ষা করে মাঝরাতে উঠে গিয়ে শফিকের সাথে বারান্দাতেই রাত কাটিয়েছেলেন। এইভাবে জীবনে বহুবার ছেলের ত্রাণকর্তা হয়েছিলেন তিনি। স্মৃতির মণিকোঠা চোখ রেখে নীরবে অশ্রু বিসর্জন দিতে দিতে আবার বাস্তবে ফিরে এলেন জাহানারা বেগম। সেই ছেলে আজও বিপদে পড়েছে আর তিনি সাহায্য করবেননা তাতো হয়না। তিনি ছেলেকে ডাকলেন। স্বামী স্ত্রীর ঝগড়া চলছিলো তখনো।
মায়ের ডাকে ঝগড়ার মাঝপথে ছুটে আসে শফিক আর সুমা এসে আড়ি পাতে দরোজার ওপাশে।

-মা ডেকেছো আমাকে? মাথা নীচু করে প্রশ্ন করে শফিক।

-এদিকে আয় বাবা। আজকাল তোকে তো পাওয়াই যায়না। তোর কাজের এত চাপ। মায়ের পাশে একটু বস দুটো কথা বলি।

শফিক মায়ের দিকে চোখ তুলে তাকাতে পারছেনা। সে স্পষ্ট বুঝতে পারে মা তাদের ঝগড়া শুনেছেন। না শুনার কথাও না। সুমাতো প্রায় চেঁচামিচিই করছিলো।

- আসলে মা ব্যাংকের কাজ খুব ঝামেলার। সময় দিতে পারিনা তোমাকে।

-সেসব আমি বুঝিরে বাবা। তা খাওয়া দাওয়া করেছিস?

-করেছি মা।

-শুন বাবা‚তোকে কিছু কথা বলার ছিলো।

-কি মা?

-আমারনা এই বাসায় ভাল্লাগেনা। ভীষণ একা লাগে। তুই চলে যাস অফিসে আর বৌমা থাকে তার কাজ নিয়ে। আমি একা একা পড়ে থাকি। রাতুলটারও পড়ার অনেক চাপ। ক্লাস ফাইভে পড়ে। চাপতো থাকবেই। সেও আর আমাকে সময় দিতে পারেনা।

শফিক মায়ের চোখের দিকে এতক্ষণে তাকালো। ওখানে জল টলমল করছে বুঝতে পারে সে। মায়ের কথার উত্তরে কি বলবে খোঁজে পাচ্ছেনা। মা আবার শুরু করলেন;

-শুনেছি আজকাল বৃদ্ধাশ্রম না কি যেন বের হয়েছে। যেখানে আমার বয়সী অনেক মানুষ একসাথে থাকে। দলবেঁধে আড্ডা দেয়, কতো আনন্দ ফূর্তি করে। আমাকে বাবা তুই ওরকম কোন জায়গায় পাঠিয়ে দ্যা। আমার সত্যিই এখানে আর ভাল্লাগছেনা। মাঝে মাঝে না হয় সময় সুযোগ পেলে তোরা যাবি আমাকে দেখতে বা আমাকে নিয়ে আসবি দুই একদিনের জন্য।

-কিন্তু মা... কিছু বলতে চাইছিলো শফিক।

-কিন্তু ফিন্তু না বাবা। কদিন আর আছি বল? একটু হইহুল্লোড়ের মাঝে থাকি না। তুই ব্যবস্থা কর। আমার জন্য একদম ভাবিসনা। আমি ভালোই থাকবো দেখিস। আর এখন আমি অজু করবো, তুই ঘরে যা। বউ মা হয়ত অপেক্ষা করছে।

কথাগুলো বলে শফিককে আর কিছু বলার সুযোগ দেননা জাহানারা বেগম। বাথরুমের দিকে হাটা ধরেন। মার চলে যাওয়ার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে শফিক। ভালবেসে বিয়ে করেছিলো সুমাকে। সুমার বাবার অবদানেই আজ সে ভালো একটা চাকরি আর এই ফ্লাটে থাকছে। ফ্লাটের মেক্সিমাম টাকাই দিয়েছেন সুমার বাবা। সবকিছু মিলিয়ে সুমার কাছে সে বাধা পড়ে আছে ভালোবাসা‚ ভালবাসা এবং ক্যারিয়ার সবকিছুতেই। এক মন বলছে মা নিয়ে কোন আপোষ না অন্য মন বুঝাচ্ছেন মাতো আর খারাপ থাকবেনা। সবাই যদি শান্তিতে থাকি আর মাও ভালো থাকেন তবে বৃদ্ধাশ্রমে গেলে ক্ষতি কি? তাছাড়া বৃদ্ধাশ্রমতো খোলাই হয়েছে এজন্য। মানুষইতো থাকে সেখানে।

মা বাবাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠানোর আগে সাধারণত এই কথাগুলো ভেবেই নিজের উপর থেকে দোষ নামায় নিষ্ঠুর সন্তানেরা। শফিকও ব্যাতিক্রম নয়। কেউ কেউ নিজেই বয়োবৃদ্ধ মা বাবাদের উপর বিরক্ত হয়ে এই কাজ করে আর কেউ করে প্রিয়তমা স্ত্রীর সন্তুষ্টির জন্য। তবে এরকম সন্তানের স্থান জাহান্নামের কোন ভয়াবহ পর্যায়ে হবে তা আল্লাহই ভালো জানেন। আমি মনে প্রাণে দোয়া করি এইরকম পরিস্থিতির সামনে ফেলার আগে যেনো আল্লাহ আমাকে পৃথিবী থেকেই উঠিয়ে নেন আর যারা এমন করে তারাও যেনো বৃদ্ধাশ্রমের হাওয়া বাতাস আর অসহায় মূহুর্তগুলির স্বাদ ভোগ করে তবেই পৃথিবী ছাড়ে।

এদিকে জাহানারা বেগম বাথরুমে গিয়ে পানির টেপ ছেড়ে কাঁদতে লাগলেন। আনন্দের কান্না। তার আবার কষ্ট কিসের? ছেলের কি সুন্দর একটা সমস্যার সমাধান করে দিলেন। মায়েরাতো এমনই হয়। জগতের সকল কষ্ট‚অবহেলা আর অবজ্ঞা হাসিমুখে সহ্য করে যান সন্তানদের জন্য।

তিনি হয়ত ভাবছেন‚এ আর এমন কি? প্রসব বেদনার চাইতে তো আর বেশী যন্ত্রণাদায়ক হবেনা বৃদ্ধাশ্রম যাত্রা কিংবা বৃদ্ধাশ্রমে বসবাস। তবুও আমার সন্তান সুখে থাক, ভালো থাক।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.