![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি বরাবরই একজন আশাবাদী মানুষ , হতাশা সহজে আমাকে স্পর্শ করে না । এই ছোট্ট জীবনটা খুব আনন্দে কাটাতে চাই ।মানুষের জয় হোক,বেঁচে থাকুক চির অম্লান ভালোবাসা ।
( এই লেখাটি বেশ কয়েকবছর আগের, ইসলামিক ফাউন্ডেশন আয়োজিত "' হাদিস পড়ি গল্প লিখি - অনুর্ধ্ব ১৮ "' নামে একটি প্রতিযোগিতায় এটি দিয়েছিলাম। রাসুল সা.কে নিয়ে লেখার যোগ্যতা অধমের নেই। তাছাড়া নিতান্তই কাঁচা হাতের লেখা, তবে কিভাবে যেন এটা বাছাইয়ের ক্ষেত্রে টিকে যায়।)
মদিনা, রাসুলের শহর। প্রতিদিনের মতো আজো এখানে সন্ধ্যা হয়েছে। সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলে পড়েছে বেশ খানিকক্ষণ আগেই। রাসুল সা.'র সাহাবিরা মাগরিবের নামাজের জন্য অপেক্ষমান। উত্তপ্ত মরুভূমিতে এখন কিছুটা শীতল হাওয়া বইছে।
তখন আরবে ইসলামের জয়জয়কার, ইসলাম যেন মরু সাহারার বুকে শীতল ঝর্ণাধারা। বুক উজাড় করা প্রেম দিয়ে সবাইকে আপন করে নিচ্ছে সে। নির্বাসিত মনুষ্যত্ব আবার খুঁজে পেয়েছে ইতিহাস।
সহসা মুয়াজ্জিন বেলালের কণ্ঠে শোনা গেল আজানের সুমধুর সুর, প্রতিধ্বনিত হলো নগরীর অলিতে - গলিতে। অল্পসময়ে মসজিদে নববি ভরে গেল। খেজুর পাতার ছাউনি দেয়া মসজিদ,অথচ নামাজের কাতার পরিপূর্ণ। নামাজ পড়ালেন রাসুল সা .।তখন তিনি মদিনার মুকুটহীন সম্রাট।
এমন সময় মদিনার পথ ধরে এলো একদল পথিক -মুসাফির। লক্ষ্য মদিনার প্রাণকেন্দ্র মসজিদে নববি। এরা যাত্রাবিরতি করলো মসজিদ প্রাঙ্গণে, ক্লান্ত শ্রান্ত দেহ সবার। রাসুল সা. এদের দেখতে পেয়ে নিয়ে গেলেন মসজিদে, সাহাবিদের বললেন, 'যাও তাদের নিয়ে গিয়ে যথাসাধ্য আপ্যায়ন করাও, এরা আমাদের অতিথি। ' রাসুল নিজেও একজন অতিথি ঘরে নিয়ে গেলেন।
এই ঘটনা তখনকার, যখন আরবের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছিলো পাপের বিষবাষ্প, কোন আগন্তুক দেখলেই তার সর্বস্ব কেড়ে নিতো লুটেরা আরব বেদুইনেরা । সেখানে তিনি আগন্তুকদের সাদরে আপ্যায়ন করছেন!! তিনি বিশ্বনবী হবেন না তো কে হবে? এমন মানবতা আর কে দেখাবে?
রাসুল সা. এর সেই অতিথি ছিলো ইহুদি, কিন্তু নবিজী তাকে স্বহস্তে খাওয়ালেন। তবে লোকটি মেহমান হলে কি হবে! সে একটু দুষ্ট প্রকৃতির। সে ভাবল, আজ আমি ঘরের সব খাবার একাই খাব। আর করলো ও তাই। একেবারে পেট পুরে খেলো। রাসুল সা. নিজেই তার জন্য বিছানা করলেন, এবার সে ঘুমাবে।
গভীর রাত, হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেছে অতিথির। একেতো দূরের ভ্রমণে ক্লান্ত, আবার খেয়েছে ও বেশি। পেট এ অত্যাচার সইবে কেন? তার প্রচণ্ড বাতরুম চাপলো। কিন্তু এতো রাতে, অজানা অচেনা জায়গায় কোথায় যাবে সে? এমন সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে বিছানা নষ্ট করে ফেলেছে আগন্তুক। এবার ভয় পেয়ে গেল ইহুদি, মুহাম্মদ সা. মদিনার সম্রাট। তার ঘরে এমন অপকর্ম? লোকটি ভয়ে পালিয়ে গেলো।
ছুটে পালাচ্ছে সে যেদিকে দুচোখ যায়। যদি মুহাম্মদের লোকেরা তাকে ধরে ফেলে - এমন ভয়ে ছুটছে প্রাণপণে। এমনি সময় তার মনে হলো সে তলোয়ার ফেলে এসেছে মদিনায়। সে যুগে তলোয়ার ছাড়া ভ্রমণ কল্পনাই করা যায় না। কি করবে আগন্তুক? সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললো আবার মদিনায় ফিরে যাবে, তলোয়ার ছাড়া একমুহুর্ত কাটানো অসম্ভব।
চুপিচুপি মুহাম্মদ সা. এর ঘরে এসে ঢুকেছে ইহুদি। মনে ভয় কি জানি কি হয়। কিন্তু একি কি দেখছে সে?
সামনের দৃশ্য দেখে মেহমান নিজের চোখকে বিশ্বাস করাতে পারছে না। রাসুল সা. নিজের হাতের লোকটির নষ্ট করে যাওয়া বিছানা ধুয়ে দিচ্ছেন। চেহারায় রাগের চিহ্ন নেই।
রাসুল সা. তাকে দেখে ছুটে এসেছেন তার কাছে। তাকে বলতে লাগলেন, ভাই আমার ভুল হয়ে গেছে, রাতে তোমার খোঁজ নিতে পারিনি, আমার জন্য তুমি অনেক কষ্ট করেছ। আমাকে মাফ করে দাও!
ইহুদি ভাবতে ও পারছে না রক্ত মাংসে গড়া মানুষ এতো ভালো হয়, মানবিক হয়। তার কণ্ঠে উচ্চারিত হলো কালেমা আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ '।রাসুল সা. এর অনুপম চরিত্র দেখে সেও ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হলো।
©somewhere in net ltd.