নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যাযাবর জীবন আমার , স্বপ্নালু মন

মাহফুজ তানজিল

আমি বরাবরই একজন আশাবাদী মানুষ , হতাশা সহজে আমাকে স্পর্শ করে না । এই ছোট্ট জীবনটা খুব আনন্দে কাটাতে চাই ।মানুষের জয় হোক,বেঁচে থাকুক চির অম্লান ভালোবাসা ।

মাহফুজ তানজিল › বিস্তারিত পোস্টঃ

বোকামির শৈশব -১

০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:২৮

ছেলেবেলায় স্কুলের ইতিহাস বই পড়ে আমি আততায়ী শব্দটির প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম। তখনকার ইতিহাস বইগুলো ভারতীয় রাজা বাদশাহদের কাহিনীতে ভরপুর ছিলো। আমি নয় বছরের বোকা বালক অপার বিস্ময়ে লক্ষ্য করেছিলাম, ইতিহাসের অধিকাংশ ক্ষমতাধর রাজা আততায়ীর হাতে নিহত। চারশো বছর আগের রাজাও আততায়ীর হাতে খুন, আবার চারশো বছর পরেও সেই আততায়ীর হাতেই মারা পড়েছে অন্য রাজা! একজন আততায়ীর কি কোন মৃত্যু নেই? একজন আততায়ীর সেকি দাপট! এই চিন্তা আমাকে অস্থির করে রাখত অনেক সময়।এই ভয়ঙ্কর শব্দটির অর্থ না বুঝলেও আততায়ীর প্রতি আমি বিস্ময় ও মুগ্ধতা অনুভব করেছিলাম ।



ছেলেবেলায় বোকামি করবার, অবাক হবার অপরিসীম শক্তি থাকে মানুষের। আমি এক আকাশ বোকামি নিয়ে মনে মনে ঠিক করে রেখেছিলাম, বড় হয়ে আততায়ী হব। বাঙালির ছেলেবেলার অধিকাংশ স্বপ্ন পূর্ণ হয়না। আমার এই স্বপ্নও ভেঙে গেছে। আমি আততায়ী হতে পারিনি।



স্বপ্নের পাগলামি, পাগলামির স্বপ্ন



আমরা নানারকম স্বপ্ন দেখি। এর অধিকাংশই জেগে উঠে ভুলে যাই। কিন্তু আমার ছেলেবেলার কিছু কিছু স্বপ্ন এখনো মনে আছে। মানুষ অসম্ভব স্মৃতিধর। মানুষের মস্তিষ্কের অজস্র নিউরনে বিচিত্র প্রক্রিয়ায় স্মৃতি জমা হয়।



অথচ কি আশ্চর্য! বড় হওয়ার পর অনেক স্বপ্ন আমি ভুলে গেছি। কিন্তু কৈশোরের কিছু স্বপ্ন চোখের ওপর যেন স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। কোন এক অদ্ভুত কারণে মস্তিষ্ক সেসব স্বপ্ন পুষে রেখেছে। প্রকৃতি বড়ই রহস্যময়।



আমি একটি স্বপ্ন খুব বেশি দেখতাম। সেই স্বপ্নে আমি ছিলাম আগেকার দিনের রাজা। আমার সৈন্য -সামন্ত, হাতি, ঘোড়া সবই থাকত। আমি চড়তাম হাতির পিঠে। রাজা বলে কথা! একজন ছোট্ট বালকের জন্য রাজার ভূমিকায় থাকা অত্যন্ত আনন্দের ব্যাপার। সাধারণত খেলার মাঠে, স্কুলে যেসব গুন্ডা ছেলেদের সাথে মারামারি করে পারতাম না। ওদের এই স্বপ্নের মাঝে শাস্তি দিতাম। কতদিন যে স্কুলের টিচারগুলো আমার হাতে কানমলা খেত তার কোন ইয়ত্তা নেই।



অবশ্য এমন স্বপ্নের একটি সরল ব্যাখ্যা আমি দাঁড় করিয়েছি। আসল ঘটনা হলো আমার আম্মার গল্প বলার অসাধারণ ক্ষমতা ছিল। তিনি তার সেই ক্ষমতার শতভাগ প্রয়োগ রাতের বেলা ঘুমুতে গিয়ে আমার ওপর করতেন।আমি ছিলাম তার বিমুগ্ধ শ্রোতা।



তবে সমস্যা হলো আম্মার গল্পে ঘুরেফিরে সেই রাজা রানীর রূপকথা এসে যেত। সেখানকার নায়ক ছিলাম আমি। ফলে ঘুমের মধ্যে আমার এই স্বপ্নের প্রতিক্রিয়া পড়ত।



এই স্বপ্নের একটি নিষ্ঠুর পরিসমাপ্তি আছে। সেই গল্পটা বেশ ইন্টারেস্টিং। একদিন স্বপ্নের মধ্যেই হাতিতে করে রাজার বেশে কোথাও যাচ্ছি। পথিমধ্যে বাবাকে দেখতে পেলাম। হাতে খাতা কলম। আমাকে হাতির পিঠে দেখে রাগিরাগি কণ্ঠে বললেন, এই দে তো, এই অংকটি করে দে। আমি স্বপ্নের স্বর্গরাজ্য থেকে নিক্ষিপ্ত হলাম। এতবড় রাজাকে আব্বা সামান্য অঙ্ক কষতে বললেন! তিনি যে তার রাজা ছেলেকে চিনতে পারলেন না এ জন্য সীমাহীন দুঃখ হল।/:) ক্ষোভে দুঃখে ঘুমটাই ভেঙে গেল। সেদিনের পর থেকে আর কোনদিন আর সেই স্বপ্ন দেখিনি।



আমাদের উচ্ছল শৈশব



আমাদের শৈশবটা ছিলো আক্ষরিক অর্থেই বর্ষার শৈশব, কাগজের নৌকা বানানোর মধুময় বর্ণিল শৈশব। বৃষ্টিদিনে গা ভেজানোর বাঁধাহীন, দুরন্ত শৈশব।



এখনকার শিশুদের মতোন গ্রিল -বন্দী জীবন কোনদিন কল্পনাও করিনি। আমাদের কতো রাত কেটে গিয়েছে নানী, দাদীদের কোলে চড়ে। আদরে -আহলাদে।



আজকের শিশুরা কি সেই দুষ্টুমিভরা ছোটবেলা পায়? মনে হয় না। ইট, কাঠ আর কংক্রিট বড়ো নিষ্ঠুর, যান্ত্রিক। এগুলো আমাদের শিশুদের থেকে কেড়ে নিয়েছে অবাধ স্বাধীনতার আনন্দ।আমরা যে এপার্টমেন্ট এ থাকি সেখানকার শিশুদের মাঝে মাঝে দেখি পারকিং লটে শুকনামুখে হাঁটাহাঁটি করতে ,তাদের সাথে খবরদারির জন্য বুয়া থাকে ।বুয়াদের মুখে আনন্দ থাকে , শিশুদের মুখে থাকে না ।



আমাদের ফেলে আসা স্মৃতিগুলো ওদের কাছে রাজা রানীর গল্পের মতোন স্বপ্নের। ওদের শৈশবে বাতাবি লেবু বা খড় দিয়ে বল বানিয়ে খেলা স্বপ্ন -বিলাস। ওদের শৈশবে বৃষ্টির টাপুর টুপুর শব্দের উপাখ্যান নেই। ঐশ্বর্যময় বর্ষাও হারিয়ে গেছে এই নগরী থেকে।



হে উচ্ছল শৈশব,

তুমি আর একবার ফিরে এসো;

তুমি ফিরে আসো এ শহরে

রঙিন স্বপ্নের মতো করে;

সাথে নিয়ে আসো

সুতা ছিঁড়ে যাওয়া ঘুড়ির পেছনে

ছুটে বেড়ানো

একঝাঁক বাল্যবন্ধুর কলরব।

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৫৮

মনিরা সুলতানা বলেছেন: আপনার আততায়ী হতে চাওয়া শৈশবের গল্প ভাল লাগলো

শুভ কামনা :)

০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:১৪

মাহফুজ তানজিল বলেছেন: আন্তরিক ধন্যবাদ আপনাকে।
ভালো থাকুন নিরন্তর।

২| ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:৩২

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: আমাদের ফেলে আসা স্মৃতিগুলো ওদের কাছে রাজা রানীর গল্পের মতোন স্বপ্নের। ওদের শৈশবে বাতাবি লেবু বা খড় দিয়ে বল বানিয়ে খেলা স্বপ্ন -বিলাস। ওদের শৈশবে বৃষ্টির টাপুর টুপুর শব্দের উপাখ্যান নেই। ঐশ্বর্যময় বর্ষাও হারিয়ে গেছে এই নগরী থেকে।

হে উচ্ছল শৈশব,
তুমি আর একবার ফিরে এসো;
তুমি ফিরে আসো এ শহরে
রঙিন স্বপ্নের মতো করে;
সাথে নিয়ে আসো
সুতা ছিঁড়ে যাওয়া ঘুড়ির পেছনে
ছুটে বেড়ানো
একঝাঁক বাল্যবন্ধুর কলরব।


অসাধারন। ++++++++++++++++++++++++

০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:১২

মাহফুজ তানজিল বলেছেন: ভালো লেগেছে শুনে খুশি হয়েছি।
আনন্দে কাটুক মূহুর্ত, কামনা করছি।

৩| ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০:১১

অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: আপনার শৈশবের স্মৃতিচারণা ভালো লাগলো খুব ।


অনেক শুভকামনা থাকলো ভ্রাতা ।

০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:৪৮

মাহফুজ তানজিল বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকেও।
শুভেচ্ছা নেবেন, ভালো থাকুন নিরন্তর।

৪| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ৮:০২

মহামতি আইভান বলেছেন: কিছু কিছু জায়গায় সব শৈশবই কেন যেন একই রকম হয়।

অসম্ভব সুন্দর লিখেছেন ভাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.