নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম মঈনুল হক মাহি। আমি বর্তমানে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে যন্ত্রকৌশল বিভাগে প্রথম বর্ষে অধ্যয়নরত আছি।

আলোর পথিক মাহি

আলোর পথিক মাহি › বিস্তারিত পোস্টঃ

গণিত বই

০২ রা জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৫:৪৪

-আমি যাব না।
-কেন যাবি না? তোকে এত টাকা দিয়ে পড়ালাম, আর তুই এখন এসব কথা বলছিস?
- বললাম তো !যাব না!
- তুই জানিস আমি কয়েকদিন পর রিটায়ার করব। এখন তো আমাদের ঘাড়ের উপর বসে আছিস। এরপর কি করবি?

তমাল কোন কথা বলল না। কেন বলল না সে নিজেও জানে না। একদিকে তার বাবা তাকে বকেই যাচ্ছে।আর সে দিকে তার কোন খেয়ালই নেই। সে ভাবছে শুধু সেই দিনের কথা। তমাল হয়তবা সেই দিন ঐ কাজটি করলে আজকে তার জীবন অন্যরকম হত।

এক সময় তমালের দিনগুলো অনেক ভালো যেত। হ্যা ! তমালের কলেজ লাইফের কথা বলছি। ছেলেটা এত উৎফুল্ল ছিল। ছেলেটাকে দেখলে এখন কষ্ট লাগে। একসময় আমিই তাকে এত কিছু শিখিয়েছি। আর এখন সে আমাকে ভুলেই গিয়েছে।

আপনারা ভাবছেন তমালের কি হয়েছে? হ্যাঁ, আমি আজকে তার কথাই বলব।

তমাল ছেলেটার সাথে আমার দেখা ও যখন কলেজে পড়া শুরু করল। এরপর থেকে আমার সাথেই থাকত। আমাকে সব জায়গাতেই নিয়ে যেত। যতটুকু জানি ও কলেজে অনেক ভালোই করত। ও যখন চলে যেত সবাই বলত, এই তমাল ছেলেটা এত কিছু জানে কিভাবে? শুনে খারাপ লাগত না। এভাবে দেখতে দেখতে কলেজের লাইফ শেষ করে ফেলল। শুধু ছিল বাকি এইচ, এস, সি। ছেলেটাকে খুব উৎফুল্ল লাগছিল। কিন্তু কে জানত এইচ, এস, সি পরিক্ষায় এরকম হবে। প্রথম পরিক্ষা দিয়ে আসার পর কেমন যেন করছিল। তারপর শুনলাম প্রশ্ন নাকি অনেকে আগেই পেয়েছে। দেখে মনে হল, সে এই বেপারটি নিয়ে একটু ইতস্ততবোধ করছে। এভাবে অনেকগুলো পরিক্ষা হয়ে গেল। তারপর সেইদিন আসল যেদিন তার পছন্দের সাবজেক্টের প্রশ্ন আগের রাতে বের হল।
রাতে তাকে মনে হয় কেউ ফোন করল । সে বলল," দেখ, দোস্ত এসব প্রশ্ন শুনতে পারব না। আর তুই যেটা বললি সেটা সঠিক না। আরো কিছু থাকার সম্ভবনা আছে। যাই হোক, আমাকে এসব বলে লাভ নেই। আমি প্রশ্ন এখন শুনতে পারব না। তুই অন্য কেউকে দিয়ে সল্ভ করিয়ে নে!"
এসব বলে তমাল রেখে দিল। এরপর পরিক্ষা দিয়ে তাকে আবার ইতস্থত মনে হল। এরপর ওর আম্মুর কাছে বলতে শুনলাম প্রশ্ন নিয়ে নাকি অনেকেই ভালো পরিক্ষা দিয়েছে এই প্রশ্ন নিয়ে। এভাবে এইচ, এস, সি পরিক্ষা শেষ হয়ে গেল।
তারপর আবার সে ব্যস্ত হয়ে গেল অ্যাডমিশন নিয়ে। কিন্তু হটাৎ সে একদিন তার রুমের দরজা বন্ধ করে দিল। এরপর বিছানায় শুয়ে কেমন যেন করছে। এরপর দেখি আধা ঘন্টা পর বিছানা থেকে উঠে চোখের পানি মুছল। দেখে মনে হল এই পানি সে কেউকে দেখাতে চায় না। এরপর রুম থেকে বের হয়ে তার আম্মুকে সান্তনা দিচ্ছে। আবার সে রুমে এসে পড়ল। এবার টেবিলে বসে কাঁদছে। সে কাঁদছিল কিন্তু সেই কাঁদার কোন শব্দ ছিল না। এবার আমি তাকে ঠিক মত দেখতে পাচ্ছিলাম। এরপর জানতে পারি ,তার এইচ, এস, সি পরিক্ষার রেজাল্ট দিয়েছে এবং সে তার পছন্দের সাবজেক্টে আশা অনুযায়ী ফলাফল করতে পারে নি। এই শুনে আমার অনেক কষ্ট লাগল। কারন সে তো আমার কাছে থেকেই শিখেছিল। আমার কথা বাদ দেই, কিন্তু তমালের তারপর থেকে চেহারা কেমন জানি হয়ে যায়। দেখলেই খারাপ লাগত। এরপর শুনলাম সে কোন পাবলিক ভার্সিটিতে চান্স পায় নি। এরপর থেকে তমাল আমাকে ভুলে যেতে শুরু করে।
আমি শুধু তাঁকে দেখেই যেতাম। এই ঘটনার পর থেকে তাঁকে একটি বারের জন্য ভালো করে কথা বলতে দেখতাম না। সব সময়ই মনমড়া হয়ে থাকত। এরপর শুনলাম, একটা প্রাইভেট ভার্সিটিতে ওর আব্বু ভর্তি করিয়ে দিয়েছে। কিন্তু এরপরও সে তার অতিতের কষ্ট কাটিয়ে উঠতে পারে নি। একটা সময় সে ভার্সিটি পাশ করে । শুনতাম সে নাকি খুব একটা ভালো রেজাল্ট করতে পারে নি। এভাবে করে তমালের দিনগুলো চলে যায় কিন্তু কেন যেন সেই উৎফুল্ল তমালকে কোথায় যেন হারিয়ে ফেলেছি।
---
কয়েকদিন ধরে শুনছি, তমালের বাবা তাকে কোথায় যেন পাঠানো চিন্তা করছে। আর ঐটা নিয়ে সে ও তার বাবার ঝগড়া হচ্ছিল। তমাল কেন যেন যেতে চাচ্ছিল না। কথা শুনে মনে হল সে তার কনফিডেন্স পুরোপুরিভাবে হারিয়ে ফেলেছে।


তমাল তার বাবার বকাবকি শোনার পর নিজের রুমে চলে আসল। টেবিলের কোনায় এ দিকে তাকিয়ে আছে। দেখি কিছুক্ষন পর এদিকে হাত দিয়ে সবার নিচে ধুলায় চাপা পড়া একটা বই বের করল। সেই বইটাই ছিলাম আমি। হ্যাঁ, আমি তমালের গণিত বই। তমাল অনেক দিন পর আমাকে পড়া শুরু করল যদিও এখন আমি তার কাজের না। পড়ার পর হটাৎ করে টেবিল থেকে উঠে আমকে হাতে নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে আসল। বারান্দার দিকে যেতে লাগল। আমি ভাবলাম, এটাই আমার শেষ পরিণতি। এতদিন আমাকে ধুলার মধ্যে রেখেছিল। কিন্তু আমি খুশি ছিলাম কারন এত বইয়ের ভিতর নীলক্ষেত থেকে কিনা আমার মত একটা বইকে জায়গা দিয়েছিল। এখন হয়তবা সে তার পছন্দের জিনিসটিকে আর তার কাছে রাখতে চায় না।
বারান্দায় দেখি তার বাবা দাঁড়িয়ে আছে। সে গিয়ে বাবার পিছনে দাড়ালো।

-বাবা!!
- কি??? আবার কি জন্য এসেছিস?
-বাবা! আমি এত বছর অনেক কষ্ট দিয়েছি। আমাকে পারলে মাফ করে দিও। আমি এত বছর অন্ধ ছিলাম।
আমি কি করব নিজেও বুঝতে পারছিলাম না। আমি রাজি, আমি যাব। কিন্তু আমি অস্ট্রেলিয়ায় যেয়ে গ্র্যাজুয়েট করব।

তমালের বাবা অনেকদিন পর তাঁকে এভাবে বলতে দেখে কিছু না বলে শুধু জড়িয়ে ধরে। আর একটা কথাই বলে," বাবা, তুই অনেক বড় হও! এখনো অনেকটা জীবন পড়ে আছে।"

এরপর মনে পড়ল, যখন আমাকে হাতে নেয় তখন তার চোখে একবিন্দু জল চলে এসেছিল। হয়তবা তার সেইদিনগুলোর কথা মনে পড়ে গিয়েছিল। যাক, এরপর থেকে সে আমাকে তার সাথেই রাখত। একটাই কথা বলতে পারি, সেইদিনের একটা ছোট জিনিসই তাকে আবার ফিরিয়ে এনেছিল। এরপর থেকে তাকে দেখলেই ভালো লাগে।
সে এখন জীবনের প্রত্যেক মুহূর্তকে এনজয় করে।


*শেষ*

এই গল্পটি লেখার পিছনে আসলে কারন তেমন নেই। কিন্তু আমিও একইভাবে তমালের মত একটা সময় আশা অনুযায়ী নিজের প্রিয় সাবজেক্টে ফল করতে পারি নি। কিন্তু আমি ঠিকই আমার মত চলেছি। কিন্তু কয়েকদিন আগে মনে হল। আমি যদি খুব ডিপ্রেসড হয়ে যেতাম বা আমি আমার যেটা ভালো লাগে সেটাকে ছেড়ে দিতাম। তাহলে আসলে কি হত?
আর আমার ভালো লাগার যে বইটা যাকে আমি একসময় অনেক কাছে রাখতাম। তার কেমন লাগত? যদি তার চিন্তা শক্তি থাকত। আমি দর্শক হিসেবে মা অথবা বাবা আবার অন্য কোন থার্ড পারসনকে রাখতে পারতাম। কিন্তু রাখি নি এই কারনে যে, আমাদের জন্য আমাদের প্রিয় জিনিসটি বসে আছে, তাকে যদি নিয়ে আমি না চলতে পারি তাহলে তো আমরা খারাপ থাকবোই। তাই আমি মনে করি, যে যেটা পছন্দ করে করতে, তাঁকে সেটাই করা উচিত। কারন জীবন এখনো শেষ হয়ে যায় নি!

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.