![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
গতিই জীবন, স্থিতিই মৃত্যু
সকাল ১০টা বেজে ৭মিনিট।
পোস্ট গ্রাজুয়েশন পরীক্ষা চলছে। বাইরে পরীক্ষার্থীরা অপেক্ষা করছে কখন কার ডাক পরে ভাইভা বোর্ড এ।
পাশাপাশি দুজন পরীক্ষার্থী বসে ছিলেন। তাদের একজন কথা বলা শুরু করলেন
:এই যে ভাই,কি নাম আপনার?
: আমি নাইম। আপনি?
কথা শেষ হওয়ার আগেই অন্যজনের ডাক পড়ল ভাইভা বোর্ড এ। উনি চলে গেলেন। নাইম বসে আছেন।
ভাইভা শেষে অন্যজন বের হয়ে আসলেন। কিন্তু কোথাও নাইম কে খুজে পেলেন না। সে হয়ত ভাইভা দিচ্ছে। অন্যজন চলে গেলেন। যাওয়ার আগে নিজের নাম ও ফোন নাম্বার রেখে গেলেন নাইম এর ব্যাগ এর উপর।
নাইম এর পরীক্ষা শেষ। সে বের হয়ে এসে দেখলেন তার ব্যাগ এর উপর একটা কাগজ। তাতে লেখা:
সৈকত ,এরপর তার মোবাইল নাম্বার ও বাসার ঠিকানা লেখা।
নাইম ফোন দিল সৈকতকে।
:হ্যালো সৈকত।
কথায় কথায় জানতে পারল যে সৈকত ওর ছোটবেলার বন্ধু।
:তোর হাবভাব দেখে কেন জানি তোকে চেনা চেনা লাগছিল। আংকেলের সাথে তোর অনেক মিল আছে।
:হা হা। শোন এখন ও তুই সেই আগের জায়গায়ই আছিস সৈকত ?
:হুম এখানেই রয়ে গেছি।
:বিয়ে শাদি করেছিস কিছু??
:হুম করেছি। তুই??
: নারে। এখনও করি নাই।
:আমিও করতাম না। মেয়ের বাড়ি থেকে জোরাজোরি করলো তাই বাধ্য হয়েই।
:পছন্দ ছিল নাকি?
:হুম। এখানকারই মেয়ে।
: হুম তাহলে ভালই তো।ভাবির সাথে পরিচয় করিয়ে দিস।দেখা হবে দোস্ত।
ফোন রেখে দিল দুজন। বাইরে বের হল নাইম। বিয়ে না করার একটা কারন আছে নাইমের। ছোটবেলায় একটা মেয়েকে খুব ভালবাসত সে। মেয়েটাও ভালোবাসতো ওকে। ওকে কথা দিয়েছে একদিন সে অনেক বড় ডাক্তার হয়ে ওকে বিয়ে করে নিয়ে যাবে। তারপর দেশ বিদেশ ঘুরবে একসাথে। মেয়েটার নাম নিশি। একদিন ওর সাথে ব্যাপারগুলো শেয়ার করবে নাইম।
সৈকত এর কথা শুনে সেই কথাগুলো মনে পড়ল ওর।
:সে এখন কেমন আছে?কোথায় আছে? কে জানে
স্কুলে থাকতে সেই কবে যশোর ছেড়ে এসেছে নাইম ওর বাবার বদলির কারনে। অনেকদিন পর বন্ধু সৈকত কে দেখে মনে মনেই প্লান করে ফেলে যে একবার ঘুরে আসবে যশোর থেকে।হয়ত নিশিকে খুঁজে পেতে সৈকত ওকে সাহায্য করতে পারে।
কথাগুলো ভেবেই আপন মনে হাসতে লাগল । হঠাৎ কে একজন পেছনে চলে এল ওর। পিঠে কিছু একটা ঠেকাল।
বলল "সামনে হাটুন।আমি চাই না আপনার মত একজন ভদ্র মানুষ এই দিনে দুপুরে প্রান হারাবে। চলুন ভাইয়া সামনে চলুন।কোন চালাকি না করলে খুশি হব।"
তারপর একটু দূরে আরো কয়েকজন কে দেখা গেল। ওদের মাঝখানে পৌছে নাইমের সাথে যা ছিল সব ওরা নিয়ে নিল। নাইম কিছু বলার সুযোগই পেল না। বেচারাকে একটু সামনে ঠেলে দিয়ে ওরা হাওয়া হয়ে গেল।ঘটনার আকস্মিকতায় নাইম কিছু করতেই পারল না। ও দাড়িয়ে ছিল।
হঠাৎ ওর মনে পড়ল সৈকত এর সাথে যোগাযোগ এর আর কোন উপায় আর ওর কাছে নেই। সব সেই ছিনতাইকারীদের হাতে। প্রচন্ড মন খারাপ আর রাগ লাগছে নিজের উপর। রাজপথে এই মধ্যদুপুরে এত মানুষের ভীড়ে নিজেকে খুব একা ও অসহায় লাগছে নাইমের। এতদিন পর পরিচয় তাও কি অদ্ভুত ভাবে। দুজনেই একই পেশা কিন্তু কারো কোন চেনা জানা নেই। আবার হঠাৎ করেই সব শেষ। কি অদ্ভুত!!
এর কয়েকবছর পরের ঘটনা।
নাইম এখন একজন প্রখ্যাত সার্জন। বেসরকারি একটা হাসপাতালে সে কাজ করে।
একদিন একটা কেস আসে। হেড ইঞ্জুরি। ট্রাফিক এক্সিডেন্ট।
ওটিতে ঢুকে নিজের চোখকেই যেন বিশ্বাস করতে পারছিল না নাইম।
"আররে সৈকত!!!"
চোখে পানি এসে গেল নাইমের। কি অদ্ভুত ভাবেই না ওদের দেখা হল আবার। অচেতন অবস্থায় পরে আছে সৈকত। নিজের বন্ধুর অপারেশন আজ ওকেই করতে হবে।
ওটি শেষ। গ্লোভস খুলতে খুলতে আয়নায় নিজের দিকে তাকালো। হাত মুখ ধুতে ধুতে নিজেকে দেখতে লাগল নাইম। কত বড় হয়ে গেছে ও। নিশির কথা মনে পড়ল ওর। সৈকত এর জ্ঞান ফিরলে ওকে আজ সবই খুলে বলবে। অনেক কথা জমে আছে মনে।
পরদিন সকালে নাইম হাসপাতালে আসে। সৈকত এর জ্ঞান ফিরেছে। ওর বউ ও বাচ্চা এসেছে দেখতে। যাক ওর পরিবারের সাথেও পরিচিত হওয়া যাবে।
দরজা নক করে ভেতরে ঢুকল নাইম। বাচ্চা ছেলেটা বিছানায় শুয়ে আছে। বউ পাশের চেয়ারে বসা ছিল। সৈকত নাইমকে দেখেই বলে উঠল
:নাইম আয়।বোস বোস। নার্স এর কাছে জিজ্ঞেস করেই বুঝে ফেলেছি এটা তুই হবি।তোর ব্যাপারেই কথা হচ্ছিল। ওকে তোর কথাই বলছিলাম। আয় পরিচয় করিয়ে দেই তোর ভাবির সাথে।
:বসুন ভাই।
চেয়ারটা এগিয়ে দিয়ে বিছানায় সৈকত এর পাশে বসল ভাবি।
:ওর নাম নিশি। আমাদের পাড়াতেই থাকত। তুই তো চিনতি মনে হয় ওকে।
নিশি শব্দটা শুনে নাইমের বুকটা মোচড় দিয়ে উঠল। এই কোন নিশি? না না এটা সে না!! হতে পারে না!
: ভাইর সাথে তো অনেকদিনের পরিচয় ছিল আমার। না চেনার তো কোন কারন নেই।
নাইমের মাথা ঘুরছে। বুকের ভেতরটা এতটা ভারী হয়ে আসছে কেন।ও নিশির দিকে তাকায়। নিশিকে দেখে ও কথা শুনে নাইমের বিশ্বাস হয়না যে এই মেয়ে,ও চলে যাওয়ার সময় ওকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে বলেছিল,"আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করব নাইম। তুমি আসবে তো? আমার হাতে হাত রেখে বলো তুমি আসবে?"
নাইম প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সে আসবে। অনেক বড় একজন মানুষ হবে। আর কখনই নিশিকে একা থাকতে দিবে না।
ওদের দিকে তাকায় নাইম। নিশি ও সৈকত পাশাপাশি বসে আছে। সুন্দর মানিয়েছে ওদের।
নাইম ওর মনের অবস্থা প্রকাশ করল না।
:কি ভাবছিস নাইম। চিনতে পেরেছিস তো?
:ভাবছি মানুষ এর কতোটা পরিবর্তন হয়। সেই ছোট্ট নিশি আজ তোর বউ। কত বড় হয়ে গেছে ও।
বাচ্চাটা উঠেছে ঘুম থেকে। নিশি তাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ল।
:কিভাবে হল এক্সিডেন্টটা?
সৈকত কাহিনী বলতে থাকল। নাইমের সেদিকে খেয়াল নেই। সে একধরণের ঘোরের মধ্যে আছে। কল্পনায় বসবাসরত মানুষেরা যখন বাস্তবতার ভয়াবহতার সম্মুখীন হয় তখন তার সাথে সে সহজে মানিয়ে নিতে পারে না। মস্তিষ্ক তখন আর কাজ করে না। নাইমের ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার টা হয়েছে। মানিয়ে নিতে পারছে না সে।
:দোস্ত এখন আসি। পরে আসবনে দেখা করতে।
:ওকে যা। আসিস।
নাইম নিশির দিকে তাকাতে পারছে না।
কেবিন থেকে বের হয়ে সোজা ওয়াশরুমে গেল ও। মুখে চোখে পানি দিচ্ছে।পৃথিবীটা ওর কাছে খুব অপরিচিত মনে হচ্ছে।
কয়েকদিন নাইমের কোন দেখা নেই। হসপিটাল থেকে চলে যাওয়ার দিন ও ওকে পাওয়া যায়নি। ওর নাম্বারটাও বন্ধ।
এর কিছুদিন পর নাইম আবার কাজে যোগ দেয়। স্বাভাবিক হয়ে আসে হয়ত সব।
সবকিছুই ও ভুলে যেতে চায়
ভুলে যেতে বাধ্য হয়; হয়ত ভুলেও যাবে একসময়।
২| ২৭ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ৮:২২
আপেক্ষিক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই। হুম
৩| ২৭ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ৮:৩৯
প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: গল্পই হয়েছে। বিষাদের গল্প।
ভালো লাগল।
৪| ২৭ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ৮:৪৭
আপেক্ষিক বলেছেন: ধন্যবাদ প্রফেসর
৫| ২৭ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ১১:৫৬
আহমেদ নিশো বলেছেন: ++++++++++++++++++
৬| ২৮ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ১২:২৬
মৌমিতা আহমেদ মৌ বলেছেন: এমনই হয়। কেউ কারো নয়।
২৮ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ৮:৫৫
আপেক্ষিক বলেছেন: হুম সেটাই
৭| ২৮ শে আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৩:৪৮
আমিনুর রহমান বলেছেন:
মন খারাপের গল্প +++
৮| ২৮ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ৮:৪৬
আপেক্ষিক বলেছেন: হুম
©somewhere in net ltd.
১|
২৭ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ৮:০৯
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: ফুল ফোট ঝড়ে যায়
এইতো রীতি
আমি নিজে নিজে জ্বলে পুড়ে
পাষানে বেঁধেছি এ হৃদয়!!!
............................................+++