![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
গতিই জীবন, স্থিতিই মৃত্যু
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেলের লাশ কাটা ঘরটা কলেজের পেছনের খোলা মাঠের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে অবস্থিত।এক তলা একটা ভবন,একটু আড়ালে। কেউ প্রথম পেছনের খোলা মাঠে আসলে সহজে চোখে পড়বে না। প্রতিদিনই দেখা যায় লাশ আসে,এম্বুলেন্স এর সাথে সাথে কৌতুহলী মানুষের ভীড়ও দেখা যায় সেখানে। মেডিকেলের ১ম বর্ষে এনাটমি এবং ৩য় ও ৪র্থ বর্ষে ফরেনসিক মেডিসিনের জন্য লাশ কাটা বা তা দেখার অভিজ্ঞতা সবারই আছে। আজ এ নিয়েই লিখছি।কারো কাছে খারাপ লাগতে পারে পড়তে।সরাসরি অনেক কিছু লিখেছি তাই।
লাশ কাটা ঘরের পরিবেশ সাধারনত খুবই শান্ত থাকে।আমাদের যে লাশ কাটা ঘর তাতে দুটো বিশাল রুম রয়েছে। যার একটাতে একটা বিশাল ফ্রিজের মত দেখতে লাশ সংরক্ষণাগার আছে। সেই রুমে আছে একটে টেবিল,চেয়ার,কয়েকটা টুল ও মাথার উপর ফ্যান। ডোমের যাবতীয় কিছু জিনিস এখানে রাখা।আর অন্য রুমটায় কিছুই নেই তেমন শুধু কতগুলো ট্রলি বেড ছাড়া। এগুলাতেই লাশ রেখে কাটাকাটি হয়। আর রুমের সামনে একটা বারান্দা আছে। বারান্দার মাথার উপর এক পাশের কিছু অংশে ছাদ নেই,কারন পোস্টমর্টেম করার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর মধ্যে একটা হচ্ছে যথেষ্ট আলো বাতাসের ব্যাবস্থা থাকতে হবে। ওই পাশটাতেই সাধারনত পোস্টমর্টেম করা হয়। আমাদের দুজন ডোম রয়েছেন। ডোম দুজনকে মনে হয় রোবট। যন্ত্রের মত সবকিছু করল।এর মধ্যে একজন ৬ ফুট ৩ ইঞ্চি লম্বা।ওনাকে দেখলে ভয় লাগে। অন্যজন কেমন টাল মাতাল থাকেন। কারো সাথেই তেমন কথা বলেন না।
১ম দিনের ঘটনা।একটা পঁচা বোটকা গন্ধ সারা ঘরে জমে আছে।নাক মুখ আটকে আমরা সবাই জড়ো হই লাশ কাটা দেখতে।
সুইসাইড এরই কেস হবে।একটা মেয়ে। হ্যাংগিং মানে হচ্ছে গলায় ফাস। প্রথমে জামা কাপড় সরিয়ে নেয়া হল। সেইসময় বুকের ভেতর টাকা পাওয়া যায় মেয়েটির। আমাদের বলা হয়েছিল যে মেয়েটি নাকি টাকার অভাবে আত্মহত্যা করেছে।টাকা পাওয়ার ব্যাপারটার সাথে এর সম্পর্ক থাকতে পারে। এরপর আস্তে আস্তে ডোম দুজন লাশটাকে নিয়মমত কাটা শুরু করলেন। পাশে স্যার ছিলেন একজন।উনি পর্যবেক্ষণ করছেন হ্যাংগিং এর সাইন বা চিহ্নের জন্য। কারন পোস্টমর্টেম রিপোর্ট লেখার সময় এসব বিষয়গুলো লিখে দিতে হবে।
আর একটা স্কালপেল এত ধারালো হতে পারে ধারনাই করা যায় না। একটানে খাচার হাড়গুলি কেটে নিল একজন ডোম। ওহ কড়কড় একটা শব্দ হলো যেন। দেওয়ালে আঁচড়ের সময় যে শব্দ ও অনুভূতি ঠিক সেরকম লাগল আমার কাছে। সবচেয়ে ভয়াবহ দৃশ্য হল যখন মাথার চামড়া ছিলে উল্টো দিকে টেনে এনে মুখ ঢেকে দেওয়া হয়। এটা আমি সহ্য করতে পারছিলাম না। কি বিভৎস। এমনিতে যদিও ১ম বর্ষের ক্লাসে লাশ কাটাকাটি বা দেখার অভিজ্ঞতা আছে তারপরও কেমন লাগছিল যেন। শেষে সব কাজ শেষ,স্যারের সাইন দেখাও শেষ তখন সব কিছু আগের মত রেখে লেপ কাঁথা সেলাইয়ের মত চামড়া সেলাই করে দেওয়া হল।এই পোস্টমর্টেম এর সময় আমার এক বন্ধু মাথা ঘুরে নিচে পড়ে যায়।১ম বর্ষেও এমন কাহিনী অনেক আছে পড়ে যাওয়ার।
এরপর রুমের ভেতরে আরো তিনটা লাশ রাখা।একটা ড্রোওনিং মানে পানিতে ডোবা লাশ। তার সারা শরীর থেকে "ম্যাগোট" সম্ভবতঃ মাছির লার্ভা, সেগুলো জোকের মত বের হচ্ছিল। আর প্রচন্ড গন্ধ বের হচ্ছিল। শরীর ফুলে আছে। ওহ কি ভয়াবহ।
আরেকটা ট্রাফিক এক্সিডেন্ট এর কেস ছিল এক বাচ্চার। আমি দেখলাম হাড়গোড় কিছুই আর বাকি নেই সব জয়েন্ট ভেঙে গেছে।মাথার হাড় ভাঙা।জামাকাপড় রক্তে ভিজে চুপচুপ হয়ে আছে।চেহারার দিকে তাকানো যাচ্ছে না। হাড্ডি মাংসের স্তুপের মত লাগছিল। এগুলো সাধারণ মানুষের পক্ষে সহ্য করা সম্ভব না। আমি নিজেও মাঝে মধ্যে অন্য রুমে গিয়ে বসে ছিলাম।
সেদিনের মত সব শেষ হলে আমি রুমে ফিরে আসি। কিন্তু রাতে কয়েকদিন ঠিকমত ঘুমাতে পারিনি। কিসব বাজে বাজে যে স্বপ্ন দেখতাম।ঘুমের মধ্যে লাশগুলো যেন আমার স্বপ্নে এসে হানা দিত বারবার।কতদিন যে ঘেমে প্রচন্ড তৃষ্ণা নিয়ে ঘুম ভেঙেছে হিসেব নেই। এখন আর তেমন হয় না।
এরপর আরো বহু পোস্টমর্টেম দেখেছি। ওইদিনের মত আর কখনই খারাপ লাগে নাই।নার্ভ শক্ত হয়ে গিয়েছে হয়ত।
১ম বর্ষের এনাটমি ক্লাসের একটা ঘটনা বলিঃ
নতুন ফ্রেস বডি এসেছে। বেওয়ারিশ। এক জোয়ান লোকের। মাথায় একটা বিশাল আঘাত। সম্ভবত এর জন্যই মরে যায়।তার গলায় একটা "আল্লাহু" লেখা তাবিজ ছিল। তার ডিসেকশন এর সময়ে ঘটা ঘটনাটা একটু ভৌতিক হয়েছিল সেদিন।
আমরা আমাদের বিশাল ক্লাশ রুমের উত্তরে জানালার কাছে নিয়ে লাশ কাটা আরম্ভ করি।সোজাসুজি উপরে একটা লাইট জ্বলছিল। আমরাও সবাই জড়ো হয়ে ডিসেকশন দেখছিলাম। কিছুক্ষণ পর আমি ও বন্ধু সাব্বির খেয়াল করলাম যে লাইটটা জ্বলছে আর নিভছে। হয়ত টেকনিকাল সমস্যা ছিল যেভাবেই হোক। আমাদের কাছে ব্যাপারটা যথেষ্ট ভৌতিকই লেগেছিল তখন। দেখলাম একবার জ্বলছে একবার নিভছে। এরকম কেন হয়েছিল সেদিন জানি না। যা হোক সত্যি বলতে কি এরপর বা এর আগে আমরা কখনই লাইটটা ওভাবে জ্বলতে নিভতে দেখি নাই। শুনেছি লাশ এর সৎকার যতক্ষণে না হয়,ততক্ষণ নাকি আত্মাও পাশে পাশে ঘোরে? সত্যি কিনা জানি না। যদি সেরকম কিছু হয় তাহলে ওই আত্মাই দায়ী এই লাইটের সমস্যার জন্য।
হা হা মজা করলাম ভয় পাবেন না।এরকম কোন ব্যাপার নেই বাস্তবে।ব্যাপারটা কাকতালীয় ছিল শুধু।
এভাবেই প্রতিদিন যাচ্ছে।মর্গে লাশ আসা বন্ধ হয় না কখনও।
০২ রা জুন, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৩৭
আপেক্ষিক বলেছেন: ধন্যবাদ ভয় ও মজা পাওয়ার জন্য। দেখি আরো কিছু ঘটনা দিতে পারি কিনা যখন বলেছেন ই।
২| ০২ রা জুন, ২০১৪ বিকাল ৪:৪৬
দেশ প্রেমিক বাঙালী বলেছেন: ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা। বর্ণনা সাবলীল। সবমিলে ভীতিকর এক অবস্থা।
০২ রা জুন, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৩৮
আপেক্ষিক বলেছেন: ধন্যবাদ পড়ার জন্য।নিজের অভিজ্ঞতা তো,গুছিয়ে সাবলীল ভাবে লেখা টা সহজ ছিল।ধন্যবাদ
৩| ০২ রা জুন, ২০১৪ বিকাল ৪:৪৬
is not available বলেছেন: পড়ে অনেক কিছু জানলাম! এসব লাশ কাটাকাটি,চোখের সামনে মানুষ মরে যাওয়া দেখতে পারবনা বলেই পরিবারের ইচ্ছা সত্তেও ডাক্তার হওয়ার ইচ্ছা বাদ দিয়েছি অনেক আগেই!
০২ রা জুন, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৪০
আপেক্ষিক বলেছেন: ধন্যবাদ।যা ই পড়ুন বা করুন ভালভাবেই করবেন করছেন। ভাল থাকবেন। আমার নিজেরও এখনও কাটাকাটি দেখলে মাথা ঘুরায়।
৪| ০২ রা জুন, ২০১৪ রাত ১০:২৬
স্বপ্নছোঁয়া বলেছেন: ভয়ঙ্কর তবে মজা লেগেছে |লাশ ঘরে কখনো যাওয়া হয়নি আপনার লিখাটা পড়ে একটু অভিজ্ঞতা হল|
১১ ই জুন, ২০১৪ সকাল ১০:১০
আপেক্ষিক বলেছেন: হা হা ধন্যবাদ
৫| ০২ রা জুন, ২০১৪ রাত ১১:০১
সুমন কর বলেছেন: নিজের বড় বোন ডাক্তার, তাই এ কাহিনীগুলো শোনা। আপনার কাহিনীও ভাল লাগল।
১১ ই জুন, ২০১৪ সকাল ১০:১০
আপেক্ষিক বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে পড়ার জন্য
৬| ০২ রা জুন, ২০১৪ রাত ১১:১৬
অঘটনঘটনপটীয়সী বলেছেন: মেডিকেলে পড়া আমার বান্ধবীদের থেকে শোনা একটা ঘটনা মনে পরলো। এরকম লাশ কাটা দেখতে গিয়ে হঠাৎ এক মেয়ে নাকি চিৎকার দিয়ে মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছিল। পরে তার জ্ঞান ফিরলে জানা গেল লাশ কাটা দেখে না, বরং একটা তেলাপোকা উড়তে দেখে সে জ্ঞান হারিয়েছিল।
ঘটনার সত্য-মিথ্যা জানি না অবশ্য।
১১ ই জুন, ২০১৪ সকাল ১০:১২
আপেক্ষিক বলেছেন: আপনার সাহসী বান্ধবীকে অতিসত্বর আমার সহিত যোগাযোগ করিতে বলিবেন।
৭| ০২ রা জুন, ২০১৪ রাত ১১:৩০
হাসান মাহমুদ তানভীর বলেছেন: ভালো লাগলো
১১ ই জুন, ২০১৪ সকাল ১০:১৩
আপেক্ষিক বলেছেন: ধন্যবাদ
৮| ০৪ ঠা জুন, ২০১৪ রাত ১২:৪১
মামুন রশিদ বলেছেন: ৯১ এ ফজলে রাব্বি হলে আমার বন্ধুর রুমে উঠেছিলাম, সে একদিন নিয়ে গিয়েছিল লাশ কাটা ঘরে ।
১১ ই জুন, ২০১৪ সকাল ১০:১৬
আপেক্ষিক বলেছেন: বাপরে বাপ!!!! এত আগে। যদিও এখন আগের চেয়ে অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়েছে ধন্যবাদ
৯| ০৯ ই জুন, ২০১৪ দুপুর ২:৪৭
নিভৃত নিঃশব্দ বলেছেন: ভাল লাগলো.....
১১ ই জুন, ২০১৪ সকাল ১০:১৭
আপেক্ষিক বলেছেন: ধন্যবাদ
১০| ২০ শে জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১:৫৯
চড়ুই বলেছেন: রাতে ঘুমান কিভাবে????
সবচেয়ে বড়কথা ওই হাত দিয়ে আবার ভাত খান কিভাবে???
১৫ ই আগস্ট, ২০১৪ সকাল ৯:৩৩
আপেক্ষিক বলেছেন: এইটা কি বললেন!!! হাহা.... ঘুমাই লাইট বন্ধ করে পরীক্ষা না থাকলে আর পরীক্ষা থাকলে ঘুমাই না
আরেকটা ঘটনা বলি যা শুনে আপনি খেতে পারেন কি না দেখুন। একদিন আমি আর আমার বন্ধু মামুন লাশ কাটাকাটি করে ডক্টরস ক্যান্টিনে যেয়ে নাস্তা করলাম। নাস্তা শেষ এর পথে এমন সময় খেয়াল হল আমরা হাত ধুতে ভুলে গেছি তাড়াহুড়ো করে। কি আর করা খাবার শেষ করে এরপর হাত ধুয়ে বিল দিয়ে চলে এলাম।.... ;-) কি আর করব বলুন এগুলা কোন ব্যাপারই না।
©somewhere in net ltd.
১|
০২ রা জুন, ২০১৪ বিকাল ৪:৩৮
আদম_ বলেছেন: ওরে বাপরে..........। ভয়ংকর তবে মজাদার । আরও পোস্ট চাই।