নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কারও কাছে আমি ভাল, কারও কাছে খারাপ, কারও কাছে আমি বন্ধু কারও কাছে শত্রু; পরম নয় কোন কিছুই, সব কিছুই আপেক্ষিক

আপেক্ষিক

গতিই জীবন, স্থিতিই মৃত্যু

আপেক্ষিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

সাইকোথ্রিলারঃ অ্যাডাপ্টেশন (বইমেলায় প্রকাশিত)

২৬ শে জুলাই, ২০১৪ সকাল ১১:৪৩


"স্যার,এভাবে ঘটনা ঘটে যাবে বুঝে উঠতে পারি নি। ও আমার খুব কাছের বন্ধু ছিল। আমি ওকে খুন করতে চাইনি।আমি চাই নি"
পুলিশ অফিসার মোঃ সবুর এরকম ঘটনার সম্মুখীন কখনও হননি। একটা ছেলে খুন করেছে বলে স্বীকার করছে,হাত পা ধরে কান্না করছে কিন্তু বাস্তবে কোন এরকম ঘটনাই ঘটে নি। লোকজন পাঠিয়ে খোজ পাঠালেন নাহ,খুনের কোন ঘটনাই ঘটেনি। আবার ছেলেটার কথাও অবিশ্বাস করতে পারছেন না।মনে হচ্ছে সে সত্য বলছে।
সবুর সাহেব মনে মনে ভেবেই নিলেন ছেলেটা পাগল। মাথার স্ক্রু বেশ ঢিলা মনে হচ্ছে। কিন্তু কৌতুহল কাটছে না।তার খুব জানতে ইচ্ছা করছে আসল ঘটনা কি। ছেলের বাসায় খোজ খবর পাঠালেন না এজন্য। সেই সকালে এসেছে ছেলেটা আর এখন বিকেল হয়ে এল।
তার সামনের এই ছেলেটার বয়স ২৫ এর বেশি হবে না। নাম বলেছে মাসুদ। তার ধারণা ২ দিন আগে সে তার এক বন্ধুকে খুন করে পালিয়েছে। পরে নিজেরই অনুশোচনা হচ্ছিল তাই পুলিশ এর কাছে চলে এসেছে।
সবুর সাহেব ছেলেটাকে শান্ত করলেন। নিজের রুমে নিয়ে শান্ত ভাবে একটা চেয়ারে বসালেন। দরজা আটকে দিলেন। মাথার উপর ফ্যানটা ফুল পাওয়ারে ছেড়ে দিলেন। এরপর একটা চেয়ার টেনে এনে খুব কাছাকাছি বসলেন।
-ধীরে ধীরে কি হয়েছে বলো আমাকে।
ছেলেটা বলতে শুরু করলোঃ
"আমি ইউনিভার্সিটিতে ৩ বছর আগে ভর্তি হই। পড়াশোনা ভালই চলছিল ১ম বছরটায় কিন্তু সমস্যার শুরু হল সেকেন্ড ইয়ার থেকে। একটা মেয়েকে আমার যথেষ্ট ভাল লেগে যায় এবং তার প্রেমে পড়ে যাই আমি।ওর নাম নবনী। সেমিস্টার শুরুতেই  আমাদের রিলেশন হয়। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আমার এক বন্ধুর কারনে। খুব সম্ভবতঃ সেও মেয়েটাকে পছন্দ করত। আমার খুব ভাল বন্ধু সে। নাম মিজান। তবুও আমার সাথে কখনও সে এই বিষয় নিয়ে আলোচনা হয় নি। ছেলেটা আমাদের বাসায়ই ভাড়া থাকত সেই ইন্টার থেকে। আমার সাথে একই সাথে একই ইউনিভার্সিটি তে ভর্তি হয় সে।
তো কিছুদিন এভাবেই চলছিল। সেকেন্ড ইয়ারের মাঝামাঝি সময়ে আমি প্রায়ই দেখতাম আমার সেই বন্ধুর সাথে নবনী খুব গল্প করত।হাসাহাসি করত। আমি স্বাভাবিক ভাবেই নিলাম ব্যাপারটা। যদিও মিজান আমার চেয়ে খুবই ভাল দেখতে।স্বাস্থ্য সচেতন এবং যথেষ্ট ভাল। ওকে একটা মেয়ের পছন্দ হওয়া খুবই স্বাভাবিক। তারপরও চুপচাপই ছিলাম আমি।
কিন্তু বাধ ভেঙে গেল যেদিন দেখলাম ছেলেটার বাসা থেকে বের হচ্ছে সে। ওইদিনই সিদ্ধান্ত নিলাম যে এর একটা বিহিত করেই ছাড়ব আমি। নবনীকে জিজ্ঞেস করলে সে কিছুই বলল না। বলে এই নামের কাউকে সে চেনে না। আমি আর ওকে ঘাটাই নি। মিজানের সাথেই ব্যাপারটা মিট করব। কিন্তু তার আর দেখাই পেলাম না। এর কিছুদিন পর আবারো ওদেরকে একসাথে দেখলাম। আমি ওইদিনই ওকে মারার প্লান করি। নবনীকে কিছু বলিনি। সোজা ওর ফ্লাটে যাই। ও বসেই ছিল। হাতে একটা চাকু নিয়ে সোজা ক্যারোটিড আর্টারি বরাবর চালিয়ে দেই।  সেই সময় আমিও গলায় আঘাত পাই।বাসায় ফিরে আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় সাথে সাথেই।আমি সেখান থেকেই পালাই কারন জানিই তো ধরা পড়ব। কিন্তু নিজের ভেতর খুব অনুশোচনা হচ্ছিল তাই ধরা দিতে এলাম।"
মোঃ সবুর ঘটনা শুনে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন। মনে হল সত্যি কাহিনী বলছে এই ছেলে। কিন্তু তিনি জানেন যে এটা সত্যি না। কারণ ও যার কথা বলেছে সেই নামে কারো অস্তিত্ব নেই। কিছুই মাথায় ঢুকছিল না।
বাসায় খবর দেওয়া হল। মা বাবা এসে ওকে নিয়ে গেলেন। সাথে এক ডাক্তার এসেছিলেন। ছেলেটার কিসব পরীক্ষা করে দেখলেন। তারপর নিয়ে গেলেন। যাওয়ার সময় ডাক্তারকে সব ব্যাপার বলে জিজ্ঞেস করলেন যে ছেলেটার কি অসুখ।
ডাক্তার বললেন,"পার্সোনালিটি ডিসর্ডার "
সবুর সাহেব বুঝলেন না কিছু। হা করে তাকিয়ে রইলেন।

এক
মাসুদ নামের ছেলেটা একটা ঘরে আটকানো। তার আশেপাশে অনেক মানুষ ঘোরাঘুরি করছে।তারা ছেলেটার উপর নানারকম পরীক্ষা নিরীক্ষা করে যাচ্ছে। মাথার সাথে বিশাল বিশাল যন্ত্রপাতি লাগানো। কেউ একজন বলে উঠলঃ
-কি পেয়েছ?
-পরীক্ষায় ডুয়াল দেখাচ্ছে।
-তাহলে আর হচ্ছে না।তারউপর অন্য চরিত্রকে মেরে ফেলা হয়েছে। ওকে সরিয়ে ফেল।
-ওকে স্যার।
-ডুয়াল কি স্যার?
-তুমি কি নতুন এসেছ?
-জ্বি স্যার।
-হুম বুঝেছি। কাজ শেষে আমার রুমে এস। বুঝিয়ে দিব।
-আচ্ছা ধন্যবাদ স্যার।
ছেলেটাকে তার বাসায় পৌছে দিয়ে আসা হল।

সেই স্যারের রুমেঃ
-বসো ইয়াং ম্যান।
ছেলেটা ডেস্কের সামনে একটা চেয়ারে বসল। স্যার একটা সিগারেটটা ফেললেন,কালো রঙের একটা নির্দিষ্ট ব্রান্ডের সিগারেট।
- পার্সোনালিটি ডিসর্ডার হল ধরো তুমি একটা নতুন মানুষ বা সত্ত্বা কল্পনা করছ প্রতিনিয়ত। সেই সত্ত্বার বৈশিষ্ট্য গুলো তোমার নিজের বানানো। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই চরিত্রের বৈশিষ্ট্য গুলো হয় যে বানায় তার যেসব গুনের অভাব থেকে। যেমন কেউ খুব ভীতু টাইপ,তার ডুয়াল পার্সন হবে সাহসী। সাধারনত প্রতিকূল পরিবেশে বা প্রতিকূল কোন অবস্থায় এই ধরণের চরিত্র বেশি তৈরী হয়।মেয়েদের ক্ষেত্রে এই ব্যাপারটা বেশি ঘটে। আর "মাল্টিপার্সোনালিটি ডিসর্ডার" পেশেন্টদের ক্ষেত্রে দুইয়ের অধিক কাল্পনিক চরিত্র দেখা যায় এবং একেকজন একেকরকম বৈশিষ্ট্য এর অধিকারী হয়। মিল থাকতেও পারে তবে এদের মধ্যে মিল না থাকার সম্ভাবনা অনেক বেশি। যেমন ধরো,আমি তোমার সাথে কথা বলছি এবং আমার অনেকগুলোর মধ্যে একটা কাল্পনিক চরিত্র হচ্ছ তুমি এবং আমি ছাড়া এ ব্যাপারটা সবাই বুঝতে পারবে।অর্থাৎ আমি মাল্টিপার্সোনালিটি ডিসর্ডার এর রোগী। তোমার অবস্থান তুমি আমার ছাত্র আমি শিক্ষক। আমরা যখন ল্যাব এ কাজ করি তখন তুমি আর আমি একই সত্ত্বা। আমি ভাবছি তুমি আমাকে সাহায্য করছ কিন্তু আসলে আমিই নিজেকে সাহায্য করছি। কিন্তু আমি সেটা বুঝছি না। ওই ছেলেটাও এভাবে একটা চরিত্র বানিয়ে নিয়েছে। সেই চরিত্রকে খুন করতে যেয়ে নিজেই আহত হয়ে যায় কারণ চরিত্রটা সে নিজেই ছিল।আর মাসুদ এর কথায় ছিল যে সে নবনী কে তার সেই বন্ধুর বাসা থেকে বের হতে দেখেছে। আসলে সে নিজের বাসা থেকেই বের হতে দেখেছে নবনী কে।আর ওই সময়টায় ওর পার্সোনালিটি চেঞ্জ হয়ে যায়। এবং মস্তিষ্ক দুটো চরিত্রের স্মৃতিকে একসাথে উপস্থাপন করে বিধায় ওর ভ্রম বা বিভ্রান্তি বা হ্যালুসিনেশন হয়। এরকম বহুদিন চলার পর ওর বাধ ভেঙে যায় ধৈর্যের আর সে তার ওই চরিত্রকে খুন করার চেষ্টা করে। এবং পরে এ কেস নিয়ে যে বিভ্রান্তি ছিল তা দূর  হল। এটা মানসিক সমস্যা।ছেলেটার ইনফিরিওরিটি কম্পলেক্সিটি এজন্য দায়ী। বুঝেছ কি বলেছি?
-জ্বি স্যার ধন্যবাদ। বুঝেছি। অনেক ব্যাপারে ধারণা স্পষ্ট হলো।

বাইরে দাড়িয়ে এতক্ষণ ওই স্যার এর এক সহকর্মী জানালা দিয়ে দেখছিলেন সব। সেই স্যার ল্যাব থেকে শুরু করে এতক্ষণ ধরে একা একাই কথা বলছিলেন কার সাথে যেন। রুমে কাউকে দেখতে পেলেন না সহকর্মী লোকটা।

দুই
মাসুদ নামের ছেলেটার ডুয়াল পার্সোনালিটির ফাইল হাতে গল্প করছেন মিঃ জাহিন এবং ডাঃ ফারজানা। ফারজানাকে সমস্ত ঘটনা বর্ণনা করলেন জাহিন।
-তো ম্যাডাম এই একটা কেস পেয়েছি যাতে ভিক্টিম নিজের ডুয়াল পার্সোনালিটি কে মেরে ফেলে। ২য় চরিত্রের সৃষ্টি হয় তার নিজের প্রতি নিজের সৃষ্ট কিছু ভ্রান্ত ধারণা থেকে।
-ইনফিরিওরিটি কমপ্লেক্সিটি থেকেই এরকম হয় যদিও দেখা যায় আসলে নিজেকে এরকম ভাবার কোন কারণ নেই। সবাই সবার মতই থাকবে,অন্যের মত হতে চাওয়ার কি দরকার, বলুন?
-জ্বি ঠিকই বলেছেন। বেচারা।
-মিঃ জাহিন ছেলেটার রিসেন্ট আপডেট কি?
-এখন সে সুস্থ্য মোটামুটি তার আগের ব্যাপারগুলো ভুলে গেছে সে প্রায় সবই।
-গ্রেট। আমি এখন উঠি বড় স্যারের সাথে একটা ছোট্ট মিটিং আছে।
-আচ্ছা যান। জাহিন একটা সিগারেট ধরালেন।
মিস ফারজানা সেখান থেকে উঠে বড় স্যারের সাথে দেখা করতে রওনা হলেন।
মিস ফারজানা ও মিঃ জাহিন দুজনে একটা ইন্টারন্যাশনাল সংস্থায় কাজ করেন সাইকোলজিস্ট হিসেবে। এদের মধ্যে ফারজানা মনোরোগ বিশেষজ্ঞ এবং জাহিন মনোরোগ গবেষক। তাদের কাজ  হচ্ছে অদ্ভুত অদ্ভুত সব মানসিক রোগ নিয়ে ঘাটাঘাটি করা। সংস্থা সৃষ্টির উদ্দেশ্যই এই। এমন এমন অদ্ভুত মানসিক রোগ নিয়ে এখানে গবেষণা হয় যা না দেখলে বিশ্বাস হবে না। এখানে এই দুজনের মত আরো বহু চিকিৎসক, বিজ্ঞানী অধ্যাপক কাজ করছেন।সবারই উদ্দেশ্য মানসিক রোগ নিয়ে গবেষণা।

তিন
"ডঃ রিচার্ড
পি এইচ ডি"
বড় স্যারের দরজার সামনে দাড়িয়ে দরজায় নক করলেন ফারজানা। স্যার তাকে ভেতরে আসতে বলল।
বেশ কিছু ফাইল হাতে নিয়ে রিচার্ডের টেবিলে রাখলেন। সবচেয়ে উপরের ফাইলটায় লেখাঃ

"মিঃ জাহিন
ফরমার সাইকোলজিস্ট
মেন্টাল ডিসর্ডার লেভেলঃ ৮.৫"

ফারজানা হাসিমুখে এসে এই ফাইলটা রিচার্ডের দিকে এগিয়ে দেন। সে ফারজানার দিকে ফিরেঃ
-ধন্যবাদ মিস ফারজানা। এই ফাইলগুলোই আমার দরকার ছিল। থ্যাংকস।
-ওয়েলকাম স্যার।
ডাঃ ফারজানা উঠে দাড়িয়ে গেলেন। রিচার্ড ফাইলগুলো দেখছেন। ফারজানা যখন দরজা খুলে বাইরে বের হচ্ছিলেন ঠিক তখন খেয়াল করলেন রিচার্ড একটা সিগারেট ধরাচ্ছেন।ফারজানা সেদিকে এক মুহুর্ত দেখে আস্তে আস্তে দরজা ভিড়িয়ে চলে গেলেন তিনি।

চার
"এতক্ষণ আপনারা যে ভিডিও ফুটেজ দেখলেন তা আমাদের সংস্থার কিছু গবেষণার। এখানে দেখানো হয়েছে একজন "মাল্টিপার্সোনালিটি ডিসর্ডার" এর পেশেন্ট কে কিভাবে বিভিন্ন ভাবে কাজে লাগানো যায়। যেমন রিচার্ড নামের যে লোকটিকে দেখলেন তিনি একজন বিখ্যাত প্রফেসর। তার কাজ ফিজিক্স পড়ানো। তিনি খুব সুন্দর করে ছাত্রদের বুঝিয়ে দিতে পারেন যত বড় কঠিন জিনিসই হোক। বিশ্বাস করবেন না এই রিচার্ডই একদিকে যেমন প্রফেসর অন্যদিকে চিত্রশিল্পী, গবেষক,সাইকোলজিস্ট, একটা সংস্থার পরিচালক। সে নিজেও জানে না সে একসাথে এতকিছু করেন।"
বলেই একটু মুচকি হাসলেন বিজ্ঞানী নাফিসা আবেদীন। সম্প্রতি সামনের সারির বিজ্ঞানীদের মধ্যে তার নাম বেশ শোনা যাচ্ছে। সে একজন ভাল উপস্থাপিকা ও।আজকে তার সামনে বসে আছে বেশ কিছু নামকরা বিজ্ঞানী।
"আপনারা দেখুন এই কনফারেন্স রুমে যে ছবি আকা আছে তা মনে হবে বিখ্যাত আর্টিস্টদের হাতে আঁকা। কিন্তু না। এটাও সেই রিচার্ডের আকা। একটা বিশেষ ব্যাবস্থার মাধ্যমে আমরা রিচার্ডের চিত্রশিল্পী পার্সোনালিটি কে বানিয়েছি মেগা চিত্রশিল্পী। বানানো হয়েছে মেগা অধ্যাপক। অর্থাৎ সে যেকোন বিষয় পড়াতে পারবেন। শুধুমাত্র মাল্টিপার্সোনালিটির ক্ষেত্রেই এটা করা সম্ভব হয়েছে কারণ তানা হলে মস্তিষ্কের উপর যথেষ্ট চাপ পড়ত। একটা পার্সোনালিটি উপযুক্ত পরিবেশে যখন ফিরে আসে তখন অন্যগুলোর কোন স্মৃতি মস্তিষ্কে থাকে না। তারমানে মস্তিষ্কে চাপ কম পড়ে। যেমন যখন রিচার্ড চিত্রশিল্পী তখন তার অধ্যাপনার বিষয় কিছুই মাথায় থাকে না। এভাবেই ব্যাপারগুলো কাজ করে।"
কিছুক্ষণ থেমে আবার,
"বলতে পারেন সাধারণ মানুষের উপর এসব এপ্লাই কেন করছি না আমরা? আসলে যাদের মস্তিষ্ক একসাথে মাল্টিপার্সোনালিটি ধরার ক্ষমতা রাখে তাদের মস্তিষ্কই এই চাপ ধরে রাখতে পারে অন্যরা না। আমরা পরীক্ষা করে দেখেছি। কিন্তু ফলাফল খুবই খারাপ এসেছে। তাই সিংগেল সুস্থ্য মানুষের জন্য এটা উপযুক্ত নয়। আর এই ব্যাপারটা আমরা অতি গোপনীয়তার সাথে করছি। বাইরের পৃথিবীর মানুষের এসম্পর্কে ধারনা নেই বললেই চলে।"
বিজ্ঞানীরা করতালি দিলেন। স্টেজে মিস ফারজানা এসে নাফিসার গবেষণার জন্য বক্তব্য রাখলেন। তাকে বিজ্ঞান একাডেমী থেকে ইনভাইটেশন পাঠান হয়েছে সেই খবরও দিলেন।শেষে খাওয়া দাওয়ার আয়োজন করা হল। হালকা পাতলা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এর মাধ্যমে কনফারেন্স শেষ হয়ে গেল।

..........এতক্ষণ ধরে কনফারেন্সের ভিডিও দেখছিল দুজনঃ
-মিস ফারজানা সব ঠিক আছে তো?
-জ্বি স্যার সব ঠিক আছে। ওদের কারোরই কিছু মনে নেই।
-হাহা হা হা হা!!! এতটা সঠিকভাবে অ্যাডাপ্টেশন করতে পারবে ওরা জানতাম না। ওরা বুঝতেই পারেনি কনফারেন্সে রাখা ছবি গুলা ওদেরই আকা। কনফারেন্সের জন্য যে রান্না করা হয়েছিল তাও তাদের নিজের হাতের। এটা সম্ভব হয়েছে তাদের পার্সোনালিটি গুলোর উপর দখল নিয়ে। এরা একসময় নিজেকে বিজ্ঞানী,এরপর রাঁধুনি এবং একসময় চিত্রশিল্পী এরকম ভাবে। এই ব্যাপারটাকেই কাজে লাগিয়েছি এখানে।  যাদের রাঁধুনি পার্সোনালিটি আছে তারা ছিল রান্নার দায়িত্বে। যারা ছবি আকার, তাদের কে ছবি আকতে বসিয়ে দিয়েছি। ছবিগুলো বিজ্ঞানীরা অনেকেই কিনে নিলেন।ভাল একটা প্রচারণা হল।নাফিসা কথাগুলো সুন্দর ভাবেই বলেছেন। এরকম মাল্টিপার্সোনালিটি ডিসর্ডার পেসেন্ট গুলো দিয়ে একটা বিজনেস করব ভাবছি। এরা যেন একেকজন সুপারহিউম্যান। এদের বেশ কাজে লাগানো যাবে। একেকজনকে একেক কাজে বসিয়ে দেওয়া যাবে সরি একেকটা পার্সোনালিটি কে। আমাদের ল্যাব টা সত্যিই অসাধারণ।
অলরেডি এই ভিডিও দেখে কিছু কন্ট্রাক্ট এসেছে। ব্যাপারটা যথেষ্ট গোপনীয়তার সাথে করতে হবে। মানসিক চিকিৎসার নাম করে এরকম বিজনেস কেউ বুঝে ফেললে আর আগানো যাবে না। তুমি বিষয়টা খেয়াল রাখবে ফারজানা।"
কথাগুলো বলে হাসতে হাসতে চলে যেতে লাগল রিচার্ড।
মিস ফারজানা জানেন রিচার্ডই একমাত্র মানুষ যে এই সংস্থার মধ্যে একাই সিগারেট খান। তার সিগারেট এর মধ্যে ব্যবহৃত কেমিকেল টার ব্যাপারে কেবল ফারজানাই জানে। উপযুক্ত পরিবেশে এই সিগারেটে একটা টান দিলেই তার মস্তিষ্ক নতুন পার্সোনালিটির ব্যাপারে সতর্ক হয়ে ওঠে। এমন অবস্থায় তাকে সেই পার্সোনালিটির সাথে সম্পর্কিত কিছু বললে সেটা "key" হিসেবে কাজ করে এবং তার পার্সোনালিটি সেই অনুযায়ী চেঞ্জ হয়। ফারজানা কাজটা জাহিনের সাথে করেছে। স্যারের রুমের কথা বলেছে কারণ সে জানত সে সিগারেট ধরাবে কিছুক্ষণের মধ্যে। তারমানে জাহিন,রিচার্ড, সেই স্যার একই মানুষ। ব্যাপারটা সে কখনই ধরতে পারবে না। কি দারুণ তার এক্সপেরিমেন্ট। নিজের উপরই নিজের প্রচন্ড গর্ব হচ্ছে ফারজানার। হাহাহা!!!
এসব ভাবতে ভাবতে ফারজানার মনে আরেকটা শঙ্কা কাজ করলো, আচ্ছা তার উপরও কি কেউ এরকম এক্সপেরিমেন্ট করছে না তো??

[প্রকাশঃ গল্পের হাট ২, বইমেলা'১৫]

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১২:৩৬

লেখোয়াড় বলেছেন:
ভাল লাগল।
++++++++++++++++

শুভকামনা।

২৬ শে জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১:৩৬

আপেক্ষিক বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে :) ভাল থাকবেন :)

২| ২৬ শে জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১:৩৬

মামুন রশিদ বলেছেন: গল্পটা কয়েকদিন আগে পড়েছিলাম । কিছু পরিবর্তন ভালো হয়েছে ।

২৬ শে জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১:৪৫

আপেক্ষিক বলেছেন: জ্বি আগের গল্পটা অনেক বেশি জটিল ছিল। পরে আপনি এবং আরো কয়েকজন বলেছেন পরে সময় নিয়ে গুছানোর চেষ্টা করেছি। ধন্যবাদ আপনাকে :)

৩| ২৭ শে জুলাই, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৩০

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: ওরে বাপস!

দারুণ গল্প।

২৮ শে জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১:০২

আপেক্ষিক বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে। গল্পটা লিখে যদিও আমি খুবই হতাশ। মনে হচ্ছে কিছুই লিখাি হয় নাই।

৪| ৩১ শে জুলাই, ২০১৪ সকাল ১১:২৪

জাহাঙ্গীর.আলম বলেছেন:
ভাল লাগল ভিন্নভাবে আবার আনার জন্য ৷ তবে আপনার গল্পের প্রেক্ষাপট বা আঙ্গিকটি অনেক বিস্তৃতির আশা করে ৷ শুধু নিরেট ঘটনা বর্ণনা না করে একই সাথে পরিবেশ ও দৃশ্যায়নের পরিবেশনা আনতে পারেন ৷ দীর্ঘ হওয়া দরকার পরিপূর্ণতার জন্য ৷ হতে পারে বড় গল্প বা সিরিজ বা পর্ব ভিত্তিক ৷ ভাল লাগল আপনার প্রয়াস ৷

ভাল থাকুন ৷

০৬ ই আগস্ট, ২০১৪ সকাল ৮:৩৪

আপেক্ষিক বলেছেন: ওয়াও!!! ধন্যবাদ। অনেক ভাল একটা আইডিয়া দিয়েছেন। হুম ব্যাপারটা আমার মাথায় আসে নি। :) চেষ্টা করে দেখব এরকম কিছু করা যায় কিনা। :D :D অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

৫| ১৯ শে আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ২:৪০

ডি এইচ খান বলেছেন: তুখোর!

১৯ শে আগস্ট, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:০৬

আপেক্ষিক বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে :D

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.