নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আধার রাত্রি ভোরের অনেক বাকী স্বপ্ন দেখার সুযোগ এখন তাই

চলে যেতে যেতে বলে যাওয়া কিছু কথা

মাহিরাহি

বাড়ী আখাউড়া। আখাউড়া রেলওয়ে হাইস্কুল থেকে পাস করে সোজা ঢাকায় চলে আসি। কিছুদিন সিটি কলেজে ছিলাম। ছিলাম জগন্নাথেও। তারপর টোকিওতে কাটিয়েছি সাড়ে ছয়টি বছর। দেশে ফিরে এসে চাকুরি আর সংসার নিয়ে আছি। দুটো ছেলে, মাহি আর রাহি। একজনের সাড়ে ছয় আর আরেকজনে সদ্য চার পেরিয়েছে। ওদের নামদুটো জুড়ে দিয়েই আমার নিকের জন্ম। বেশিরভাগ সময়কাটে সন্তানের সান্নিধ্য। ঘরকুনো মানুষ আমি। লেখালেখিতে হাতেখড়ি এই সা ইন বল্গে এসেই। কেউ বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিল ফিরিয়ে দেয়ার মত উদ্ধত্য আমার নেই। সবারই বন্ধু হতে চাই।

মাহিরাহি › বিস্তারিত পোস্টঃ

একজনের ঠগের কাহিনী

২২ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:০১

"ভাবী ঘরে অচেতন অবস্হায় পড়ে আছেন, ঘরের দরজা খোলা"

পাশের ফ্লাটের ভাবীর টেলিফোন যখন পেলাম তখন দুপুর পেরিয়ে বিকেলে গড়িয়েছে।

তড়িঘড়ি করে রাস্তায় নামলাম।

বাসায় যখন ফিরলাম তখন আমার স্ত্রীর জ্ঞান ফিরে পেয়েছে।

দুর্বল শরীর নিয়ে বসে আছে বিছানায়। পাশের ফ্লাটের ভাবীরা বিদায় নিলে স্ত্রী কনার পাশে গিয়ে বসলাম। হাতে মৃদু চাপ দিয়ে আস্বস্থ করে বললাম সব ঠিক হয়ে যাবে।



দুর্ঘটনার শুরু সেই প্রত্যুষে, যখন কথিত এক গ্রামের বাড়ির আত্মীয় আমার অতিথি হলেন। বয়োবৃদ্ধ আত্মীয়রা সব মারা গেছেন আর অন্যরা শহরে পারি জমিয়েছেন ভাল জীবনযাপনের তাগিদে। তাই গ্রামে যাওয়া হয়না অনেক বছর। মধ্যবয়স্ক এই আত্মীয়ের বর্ননায় নিশ্চিত হলাম সে আমাদের গ্রামেরই লোক, কিন্তু আত্মীয়তার সুত্রটার ব্যপারে নিশ্চিত হতে পারলাম না। ভদ্রলোকের ভাষ্যমতে উনি দুরারোগ্য এক ব্যধিতে আক্রান্ত তাই স্থানীয় চিকিতসকরা উপদেশ দিয়েছেন যথোপযুক্ত ডায়াগনোসিসের এবং এই উদ্দ্যেশই তার রাজধানী শহরে আগমন। শহরে আত্মীয়দের সন্ধান করতে গিয়ে শেষপর্যন্ত উনি সনাক্ত করতে সমর্থ হলেন আমাকে যাকে তার কাছে মনে হয়েছে সাহায্য প্রার্থনার জন্য সবচাইতে উপযুক্ত মানুষ।

গায়ের আত্মীয়কে ফিরিয়ে দেয়ার মত যথেষ্ট অভদ্র ছিলাম না আমি এছাড়া আমার কথিত আত্মীয়টিকে কিছুটা অসুস্থও মনে হচ্ছিল। অতিথি আপ্যায়নের প্রাথমিক কাজগুলো সেরে নিয়ে ভদ্রলোককে নিয়ে গেলাম পরিচিত এক ডায়াগোনষ্টিক সেন্টারে।

আত্মীয় ভদ্রলোকের প্রয়োজনীয় চেকআপের ব্যবস্থাদি সেরে নিয়ে দৌড়ালাম আবার অফিস পানে। ডায়াগোনষ্টিক সেন্টারের ডাক্তার বন্ধুবর আশ্বস্হ করল প্রয়োজনীয় রিপোর্ট সন্ধ্যা অব্দি পেয়ে যাব।



ঘরের দামী জিনিষ সব নিয়ে গেছে। দুর্বল গলায় বলল কনা।  আন্দাজ করতে আর কষ্ট হলনা যে আমার সকাল বেলার অতিথিই নাটের গুরু।

আলমারীর দরজা খোলা, ঘরের জিনিষপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে, বেছে বেছে দামী দামী জিনিষগুলো নিয়ে পালিয়েছে ঠগটা।

উঠে বসে পানি চাইল কনা।

"দুপুরবেলা ফেরার সময় এক প্যাকেট মিষ্টি নিয়ে এসেছিল লোকটা" এক ঢোকে পানিগুলো খেয়ে কথাগুলো বলল কনা।

আমায় উদ্বিগ্ন হতে দেখে আস্বস্থ করল কনা কথা বলতে তার কষ্ট হচ্ছেনা, বুঝলাম সুস্হ্য হতে শুরু করেছে ও।

আবার কথা শুরু করল কনা।

"দুপুরে একসাথে খাবার খেতে বসেছিলাম আমরা। খাবারশেষে লোকটা বায়না ধরল কিনে আনা মিষ্টির কিছুটা যেন ওর সামনে বসে খাই। নিজের মরে যাওয়া মেয়েটাকেও নাকি সে এভাবে সামনে বসে খাওয়াতো। পীড়াপীড়িতে একটুকরা মিষ্টি মুখে দিয়েছিলাম তারপর আর কিছুই মনে নেই।"

মানুষকে বিস্বাস করে বাচতে পারাটা খুবই আনন্দের কিন্তু এই বিস্বাসটাকে কেউ খুন করে ফেললে মনটা খুব বেশি রক্তাক্ত হয়। মনটা খারাপ হয়েছিল প্রথম দৃশ্যপটেই। কিন্তু কনার বর্ননায় কেন জানি কিছুটা ভয়ের অনুভুতিও মনকে গ্রাস করল।

কিন্তু পাশাপাশি কনার ক্রমাগত সুস্হ্য হয়ে উঠাটা মনে প্রশান্তি বয়ে আনল।

"কনা বলত চা বানিয়ে নিয়ে আসি।" আমি উতসাহ দেখিয়ে বললাম।

"তুমি ত খুব বেশি মন ভাল থাকলে চা বানাও" কনাটা কিছুটা অবাক গলায় বলল।

"দেখি উল্টাটা হয় কিনা, চা বানালে হয়ত মনটা ভাল হয়ে যাবে" হেসে বললাম আমি।

চা বানিয়ে এসে কনার পাশে বসলাম। ছোট ছোট কথা বলতে বলতে চা খেলাম দুজন।

চা খাওয়া শেষ হলে একসময় আমার বুকে মাথা এলিয়ে দিল কনা। একসময় লক্ষ্য করলাম দুচোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে ওর। কিছু না বলে কাদতে দিলাম ওকে। মনটা হালকা হবে।

ঠিক ঐসময় মোবাইলে বেজে উঠল আমার।

কনা মাথা সরিয়ে নিলে কল রিসিভ করলাম আমি। ডাক্তার বন্ধুবরের কল।

"কি ভাই তোমার না অফিসে ফেরার পথে রিপোর্ট নিয়ে যাওয়ার কথা।"

"একটা বড় ঝামেলায় পরে গেছিরে ভাই"

"তোমার আত্মীয়ের রিপোর্টাও কিন্তু খুব খারাপ"

"কিরকম?" আমি কিছুটা আগ্রহী হলাম।

"কঠিন ব্যাধি বাধিয়ে বসেছেন, খুব অল্প দিনই বাচবেন। উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করলে হয়তবা কয়টা দিন বেশি বাচানো যেত"



ডাক্তার বন্ধুবরের সাথে কথা শেষ করে কনাকে সব জানালাম। কনার মধ্য কোন ভাবান্তর লক্ষ্য করলাম না।

"লোকটা যদি জানত কয়দিনের মধ্যে মারা যাবে ও তাহলে কি অতবড় অন্যায় করতে পারত সে।" কনার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলাম আমি।

উত্তর না দিয়ে মাথা নিচু করে বসে রইল আমার স্ত্রী।

বিছানা থেকে উঠে এসে জানালার পাশে দাড়ালাম আমি। বাইরের ঝলমলে ব্যস্ত শহরের দিকে তাকালাম যেখানে উচু উচু ইমারতগুলো মাথা উচু করে দাড়িয়ে আছে। এই শহরের কোথাও আত্মগোপন করে আছে লোকটি অন্যায়ভাবে হস্তগত করা সম্পদগুলো আকড়ে ধরে রেখে। অথচ জানেনা সে মৃত্যু তার দুয়ারে দাড়িয়ে। সম্পদগুলো ভোগের সুযোগও পাবেনা সে।

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:০৭

শায়মা বলেছেন: এইভাবেই মানুষ না জেনে বুঝে দুদিনের দুনিয়ায় অন্যায় করে ফেলে।

২২ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:১০

মাহিরাহি বলেছেন: Thank you for the comment

২| ২২ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:১৭

লুকার বলেছেন:
এই শহরে অনেক লোক বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে অন্যায়ভাবে হস্তগত করা সম্পদগুলো আকড়ে ধরে রেখে। অথচ জানেনা যে মৃত্যু দুয়ারে দাড়িয়ে।

২২ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৮:০২

মাহিরাহি বলেছেন: ধন্যবাদ পড়ার জন্য

৩| ২২ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:২২

দেবদাস. বলেছেন: :| :| :| কি বলব বাকরুদ্ধ হয়ে গেছি পড়তে পড়তে । ভাবছি কি পড়লাম ।


+

২২ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৮:০৩

মাহিরাহি বলেছেন: ধন্যবাদ

৪| ২২ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৪৯

বিষন্ন একা বলেছেন: বিশ্বাসের যে করুন পরিনতি ঘটে তার সে ক্ষতি চিরটাকলই মানুষকে তাড়া করে ফিরে :( :( :(

২২ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৮:০২

মাহিরাহি বলেছেন: ঠিকই বলেছেন।

৫| ২২ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:০৭

টাইটান ১ বলেছেন: কাহিনী হলেও বাস্তব। মৃত্যুর কথা ভাবলে পাপ থেকে বেঁচে থাকা যায় অনেকটা।

২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৩ ভোর ৬:৫৯

মাহিরাহি বলেছেন: ধন্যবাদ

৬| ২২ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:২৮

এম আর ইকবাল বলেছেন: বিশ্বাস মাঝে মাঝে এভাবে ঝাকি থায় । তার পর ও বিশ্বাসের হাত ধরে চলতে হয় । সবাই ঠগ নয় ।

২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৩ ভোর ৬:৫৯

মাহিরাহি বলেছেন: Thank you

৭| ২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৭:০৮

খেয়া ঘাট বলেছেন: Is it just a made up story or real? Sorry to comment in english..as using cell phone.

৮| ২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৪০

মাহিরাহি বলেছেন: Made up story

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.