![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বাড়ী আখাউড়া। আখাউড়া রেলওয়ে হাইস্কুল থেকে পাস করে সোজা ঢাকায় চলে আসি। কিছুদিন সিটি কলেজে ছিলাম। ছিলাম জগন্নাথেও। তারপর টোকিওতে কাটিয়েছি সাড়ে ছয়টি বছর। দেশে ফিরে এসে চাকুরি আর সংসার নিয়ে আছি। দুটো ছেলে, মাহি আর রাহি। একজনের সাড়ে ছয় আর আরেকজনে সদ্য চার পেরিয়েছে। ওদের নামদুটো জুড়ে দিয়েই আমার নিকের জন্ম। বেশিরভাগ সময়কাটে সন্তানের সান্নিধ্য। ঘরকুনো মানুষ আমি। লেখালেখিতে হাতেখড়ি এই সা ইন বল্গে এসেই। কেউ বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিল ফিরিয়ে দেয়ার মত উদ্ধত্য আমার নেই। সবারই বন্ধু হতে চাই।
ট্রেনে চেপেছি নতুন কাজের জায়গায় যোগ দেয়ার জন্য। কিছু সময় ম্যগাজিন পড়ে কিছু সময় মোবাইলে কথা বলে দীর্ঘ জার্নির ক্লান্তিটাকে ভুলতে চাইছিলাম। হঠাত করেই সামনে বসা লোকটা সালাম দিয়ে হাত বাড়িয়ে দিল।
কাধে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছেলেদের মত বড় কাপড়ের ব্যাগ ঝোলানো।
"আমি কি আপনার হাতটা দেখে দিতে পারি, পেশায় আমি একজন জ্যোতিষি।"
অনিহা সত্তেও হাত গুটিয়ে নিল না, মনে মনে ভাবল একটি পয়সাও দেয়া যাবে না,এসব অকর্মন্য না খেটে খাওয়া মানুষদের। হাত দেখার ফাকে ফাকে নাম আর গন্তব্যের কথা জেনে নিল জ্যোতিষি।
"আপনি একজন ডাক্তার মানুষ,এসবে বিশ্বাস না করাটাই স্বাভাবিক।"
চমকে উঠলাম আমি,ওযে ডাক্তার লোকটা জানল কিভাবে। এসব ঠগেরা অনেককিছুই আচ করতে পারে, নিজেকে বোঝালাম নিজেকে।
হাত নেড়েচেড়ে খুটিয়ে দেখার পর হাতটা ছেড়ে দিল জ্যোতিষি। কাধের ঝোলাটা কাধ থেকে নামিয়ে খুজেপেতে একটা পাথরের আংটি বার করল।
"নতুন সংসার শুরু করতে না করতেই নতুন জায়গায় সংসার পাততে যাচ্ছেন, এটা হাতে পড়লে অনেক ঝুটঝামেলা থেকেই বেচে যাবেন। আংটিটা স্যুট করলেই হল।"
এবার সত্যি সত্যি চমকে উঠলাম আমি। আমাকে কিছু ভাবার সুযোগ না দিয়েই জ্যোতিষি ভদ্রলোক আমার একেবারে কাছে এসে বলল, "গন্তব্যে পৌছেই নতুন বাসায় উঠার আগে ওখানকার মাজারে মান্নত করে নিয়েন, খুবই বিখ্যাত মাজার সহজেই পৌছে যাবেন।" বলেই উঠে দাড়াল জ্যোতিষি কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই হন হন করে হেটে চোখের পলকেই ট্রেনের অন্য কামড়ায় হারিয়ে গেল।
ষ্টেশনে নেমেই চিন্তা করছিলাম সোজা বাসায় যাব নাকি মাজারে। দ্বিধান্বিত মনের সাথে যুদ্ব করতে করতে একসময় রওয়ানা দিলাম জ্যোতিষ বর্নিত পীরের মাজারের দিকে।
পৌছে মন খারাপ হয়ে গেল, জায়গাটা অপরিছন্ন আর ময়লা কাপড় চোপড় পরা ফকিররা ঘুরে বেড়াচ্ছে।
ফিরতে ফিরতে কেবলই মনে হতে লাগল এখানে এসে কাজটা কি ঠিক করলাম। ভাল লাগল পথঘাটের আশপাশে গাছ গাছালির বর্নিল বাহার আর মফস্বল শহরের তুলনামুলক নির্জন পরিবেশটা। নতুন জায়গাটা দেখতে দেখতেই গন্তব্যে পৌছে গেলাম।
রিক্সাওয়ালাকে আমার নতুন ঠিকানায় পৌছে দিয়ে বাসাটিও চিনিয়ে দিল।
ভয়ানক চমকে গেলাম আমি। জ্যোতিষিকে এখানে কোনভাবেই আশা করিনি আমি। বাসা থেকে একটু দুর এগিয়ে দাড়িয়ে ছিল। মনে হল আমার জন্যই অপেক্ষা করছিল। পথ আগলাবার মত করে সামনে দাড়াল সে।
"আর ভয় নাই, পাথরটা তোমাকে স্যুট করছে"
আপনি থেকে তুমিতে নেমে এসেছে জ্যোতিষি।
ভেতর ভেতর ঘামতে শুরু করেছি আমি। মন দুর্বল হতে শুরু করেছে আমার, হঠাত করে মনে হতে লাগল সত্যিই কোন বিপদে পড়তে যাচ্ছি না ত আমি।
"পাথর জোগাড় করতে বেশ খাটা খাটনির প্রয়োজন পরে, তারপরও তোমার মনে কোন সন্দেহ থাকলে, ঐটা তোমারে এমনিতেই দিলাম। তবে সবসময় হাতে দিয়া রাইখ বিপদ কাইট্যা যাইব।"
ঘুরে ধীর পদক্ষেপে হাটা ধরল জ্যোতিষি।
অজান্তেই হাত চলে গেল আমার পকেটে, মানিব্যাগ থেকে ৫০০ টাকার নোট বের করে দৌড়ে গেলাম জ্যোতিষির কাছে, হাতে গুজে দিয়েই আবার দৌড়ে ছুটে গেলাম নতুন ঠিকানার বাসার দিকে।
বাসায় ঢুকতে না ঢুকতেই বাড়িওয়ালা চাচা হই হই করে ছুটে আসলেন, "আরে মিয়া গিয়েছিলেন কোথায়, আমরা ত খুজে হ্য়রান। ট্রেন ত এসেছে মেলা আগে।"
মাজারে গিয়েছিলাম শুনে বিস্মিত হলেন। জানালেন অনেকে মাজারের পীরের অস্তিত্বেই বিস্বাস করেন না। আর মাজারটা এমন বিখ্যাত কিছু না।
জ্যোতিষির কথা খুলে বললাম তাকে।
চক্ষু ছানাবড়া হওয়ার জোগাড় তার।
"কতটাকা হাতিয়ে নিয়েছে ব্যাটা তোমার কাছ থেকে?"
চাচাও আপনি থেকে তুমিতে নেমে এলেন হঠাত করেই।
"কেন চিনেন নাকি ওকে"
"ওকে উতখাত করেই ত তোমাকে ঘরটা ভাড়া দেয়ার ব্যবস্থা করেছি। সর্বসাকুল্যে তিনমাস থেকেছে, ভাড়া দিয়েছে কেবল এক মাসের। নতুন ভাড়াটিয়াকে নিয়ে গর্ব করতে গিয়ে তোমার অনেক কথাই জ্যোতিষি ব্যাটাকে বলেছিলাম তাই তোমার ব্যাপারে সে অনেক কিছুই জানে।"
"আমাকে এখান অব্দি অনুসরন করেছিল জ্যোতিষি" চাচার অবগতির জন্য জানালাম।
"ভাড়া দেয়নি বলে কিছু মুল্যবান জিনিষ আটকে দিয়েছিলাম ঠগটির। কিছুটা পরিশোধ করে কিছুক্ষন আগে জিনিষগুলো ছাড়িয়ে নিয়ে গেছে।"
এবার উচু স্বরে হেসে উঠলাম আমি।
মনা খারাপ না করে হাসতে দেখে প্রশ্নবিদ্ধ চোখে তাকালেন বাড়িওয়ালা চাচা আমার দিকে।
"চাচা মাজারে যাওয়ার আসল কারনটা ছিল নতুন জায়গাটা ঘুরে দেখা, কিন্তু দ্বিতীয়বার জ্যোতিষিকে দেখে আমার যুক্তিশীল পরিস্কার মনটাতে কিছুটা হলেও অযৌক্তিক কিছুর মিথ্যা আবরনে অন্ধকার হয়ে এসেছিল, এখন মিথ্যা অপসৃত হওয়াতে মনটা হালকা লাগছে, এরজন্য যে ক্ষতিটুকু স্বীকার করতে হয়েছে তা খুবই সামান্য।"
নতুন ভাড়াটিয়ার দিকে প্রসন্ন দৃষ্টিতে তাকালেন চাচা, ভাবলেন ভাল একজন ভাড়াটিয়া পেয়েছেন।
রিপোষ্ট
৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৮:০২
মাহিরাহি বলেছেন: Thank you for the comment
২| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৮:১৬
ইলুসন বলেছেন: চমৎকার গল্প। ভাল লাগল।
৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৮:১৬
মাহিরাহি বলেছেন: ধন্যবাদ
৩| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:০৮
আবু সালেহ বলেছেন: শিরোনামেই কিছুটা আঁচ করতে পেরেছিলাম.....................গল্পের মাঝে তারই প্রতিচ্ছবি পেলাম....
৪| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:১৩
মাহিরাহি বলেছেন: ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১|
৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৫১
রিওমারে বলেছেন: জ্যোতিসীপীরফকিরওঝা এইসব পেশায় যারা আছে তারা নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারে না কেন? আপনারআমার পকেটের টাকা না হলে শালাদের ভাত জোটেনা।।এই বার বোঝেন শালারা কত টাউট বাটপার।।