নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আধার রাত্রি ভোরের অনেক বাকী স্বপ্ন দেখার সুযোগ এখন তাই

চলে যেতে যেতে বলে যাওয়া কিছু কথা

মাহিরাহি

বাড়ী আখাউড়া। আখাউড়া রেলওয়ে হাইস্কুল থেকে পাস করে সোজা ঢাকায় চলে আসি। কিছুদিন সিটি কলেজে ছিলাম। ছিলাম জগন্নাথেও। তারপর টোকিওতে কাটিয়েছি সাড়ে ছয়টি বছর। দেশে ফিরে এসে চাকুরি আর সংসার নিয়ে আছি। দুটো ছেলে, মাহি আর রাহি। একজনের সাড়ে ছয় আর আরেকজনে সদ্য চার পেরিয়েছে। ওদের নামদুটো জুড়ে দিয়েই আমার নিকের জন্ম। বেশিরভাগ সময়কাটে সন্তানের সান্নিধ্য। ঘরকুনো মানুষ আমি। লেখালেখিতে হাতেখড়ি এই সা ইন বল্গে এসেই। কেউ বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিল ফিরিয়ে দেয়ার মত উদ্ধত্য আমার নেই। সবারই বন্ধু হতে চাই।

মাহিরাহি › বিস্তারিত পোস্টঃ

ওনি আমার চাচা ছিলেন না ত? - ছোট গল্প

৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৮:৩০

আমাদের গায়ের বাড়ির এক আত্মীয় প্রায় ২৫ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া আমার ছোট চাচার সাক্ষাত পান একটি রেলওয়ে জংশনে যেখানে দুজনে দুটি ভিন্ন ট্রেনে চেপেছিলেন।

সামান্য বিরতি পেয়ে দুজনেই ট্রেন থেকে নেমেছিলেন জার্নির ক্লান্তি দুর করতে। একটি চায়ের দোকানে চা পান করতে করতে আমার সেই আত্মীয়ের দৃষ্টি আকর্ষিত হয় চাচার দিকে। তারপর আলাপচারিতায় নিশ্চিত হন এটিই আমাদের সেই হারিয়ে যাওয়া চাচা।

ততক্ষনে একটি ট্রেন গন্তব্যে রওয়ানা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে আবার। চাচা তড়িঘড়ি করে তার মোবাইল নাম্বারটি শুধু দেয়ার সুযোগ পেলেন আমার সেই আত্মীকে।

আমার হাতে নাম্বারটি পৌছা মাত্রই যোগাযোগে করলাম চাচার সাথে। জেনে খুশি হলাম চাচা এই ঢাকা শহরেই থাকেন তবে আমার আবাসস্থল থেকে বেশ কিছুটা দুরে। চাচা বাসার ঠিকানাটা মনে করতে পারছিলেন না। ঠিক হল পরেরদিন আমি রওয়ানা দেব চাচার বাসার উদ্দ্যেশে। একটি নির্দিষ্ট জায়গায় চাচা আমার অপেক্ষায় দাড়িয়ে থাকবেন।

আমার এই সহজ সরল চাচাটিকে মিথ্যে একটি খুনের মামলায় জড়িয়ে গ্রাম ছাড়া করা হয়েছিল প্রায় ২৫ বছর আগে তার একটি জমি হাতিয়ে নেয়ার কুমতলবে। আর এই জঘন্য কাজটি করেছিল আমাদের আর এক কাছের আত্মীয়। বাপ চাচারা দুই ভাই ছিলেন। আমার বাবাও একসময় গায়ের সবকিছু বিক্রি করে দিয়ে ঢাকায় নতুন জীবন শুরু করেন। বাবা মরে গেছেন পাচ বছর আগে, তাই চাচার সাথে পুনর্মিলনের সুযোগ পেয়ে আমি খুবই উল্লসিত হয়েছিলাম। কিছুটা হলেও বাবাকে চাচার মাঝে আবিস্কারের আশায়।

পরেরদিন বিকালে অফিসের কাজ শেষে সোজা রওয়ানা দিলাম চাচার নির্দেশিত জায়গাটির উদ্দ্যেশে। মাঝপথে একবার বাস বদলাতে হল। ২য় বাসটিতে যখন চেপে বসেছি মনে তখনও ফুরফুরে ভাবটি বজায় আছে। চাচার সাথে সাক্ষাতের উত্তেজনায় অফিসের ক্লান্তিটুকুও বেমালুম ভুলে বসে আছি। কিন্তু কিছুক্ষন পর ছোট্ট একটি অনাকাংখিত ঘটনায় মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল। দুসারি সামনে বসা বয়স্ক ব্যক্তিটি এর কেন্দ্রবিন্দু। বাসের কন্ডাক্টর তার কাছে বাস ভাড়া চাইতে গেলে তিনি জানালের তার সব খোয়া গেছে, মানিব্যাগ এবং সাথের মোবাইলটিও। কন্ডাক্টর ছেলেটি ক্ষিপ্ত হয়ে প্রশ্ন ছুড়ে দিল, তাহলে বাসে উঠছেন কেন?

বয়স্ক ভদ্রলোক এই বলে আর্তি জানালের তার খুব জরুরি একটা কাজ আছে। না হয় তিনি সম্মানহানির ঝুকি না নিয়ে হেটেই বাসায় ফিরতেন। সে যত ঘন্টাই লাগুক না কেন।



এরিমধ্যে পাশের জন কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলল, সব মিথ্যা কথা, বাস ভাড়া না দেওয়ার ফন্দি এটা। এরা দুটো পয়সা বাচাতে শুধু শুধু বাসের পরিবেশ নষ্ট করে।

আমি প্রথমে নিজের থেকে বাস ভাড়াটি দেওয়ার চিন্তাভাবন করছিলাম, ভদ্রলোকের কথায় চুপসে গেলাম। বাদানুবাদের একপর্যায়ে ভদ্রলোকটিকে একপ্রকার জোড় করেই বাস থেকে নামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করল কন্ডাক্টর আর তার সহযোগী মিলে। ভদ্রলোক কোনভাবেই নামবেন না। ঠিক তখনই ঘটল অঘটনটা। চলন্ত বাসটি থেকে অনেকটা ছুড়ে ফেলা হল সেই অসহায় মানুষটিকে। তারপর বিকট শব্দে ব্রেক কষার শব্দ আর মানুষের হৈ চৈ। কি ঘটেছে আর বোঝার বাকি রইলনা। আমাদের গাড়িটিকেও একসময় থামতে বাধ্য করা হল। দেরি হয়ে যাওয়ার আশংকায় আমি তড়িঘড়ি করে বাস বদলালাম। অন্যবাসটিতে চড়ে কিছুটা হাফ ছেড়ে বাচলাম। এইধরনের অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে আমি সাধারনত খুবই নার্ভাস হয়ে পড়ি।

গন্তব্যে যখন পৌছলাম তখন খুব একটা দেরি হয়নি বলে মনটা আবার হালকা হতে শুরু করল। চাচার নির্দেশিত বড় একটা মলের সামনের একটা টেলিফোন বুথের সামনে এসে দাড়ালাম। মনে হল এই বুঝি চাচা দৌড়ে এসে আমায় গলায় জড়িয়ে ধরবেন। কিছুটা আমি উত্তেজিতও বৈকি। তেমন কিছু ঘটলনা। আমি দমে না গিয়ে ঠায় দাড়িয়ে রইলাম সেই বুথের সামনে। কিছুক্ষন পর মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টাটুকু বৃথা গেল। প্রতিবারই যন্ত্রটি থেকে আপাত মধুর কন্ঠে বলা হল "এই মুহুর্তে আপনার কাংখিত নম্বরটিতে সংযোগ দেয়া যাচ্ছে না।"

দেখতে ঘন্টা অতিবাহিত হল। প্রতিটা মুহুর্তেই আশা করছিলাম চাচা আমায় চিনতে পেরে দৌড়ে ছুটে আসবেন। কিন্তু চাচার কোন দেখা নেই। মোবাইলের সংযোগটিকে পাওয়া গেল না আর। ভেতরে ভেতরে কিছুটা ঘাবড়ে যেতে শুরু করলাম আমি। তার আরও দুটো ঘন্টা অতিবাহিত হলে নিশ্চিত হলাম কোন একটা অঘটন ঘটেছে হয়ত।

এভাবে দাড়িয়ে থাকা বৃথা। ধৈর্যের সাথে আর কিছু সময় কাটিয়ে দিয়ে পাশের এক দোকানির দিকে এগুলাম। অনুরোধ করলাম আমার মোবাইল নাম্বারটি রেখে দেয়ার জন্য, যদি কখনো কেউ আমার মত একজনের খোজ করে যদি। দোকানি আশ্বস্ত করল এই বলে যে সে আশেপাশের অন্য দোকানিদেরকেও নাম্বারটি দিয়ে রাখবে।

তারপর বিধ্বস্ত শরীর আর ভগ্ন হ্রদয়ে ফেরার পথ ধরলাম।

ততক্ষনে রাতের ঝলমলে আলোতে শহরটি নতুন রূপে রূপান্তরিত হয়েছে। চলন্ত বাসের জানালা থেকে আমি কেবলই তাকিয়ে রইলাম দুরের অন্ধকার আকাশের দিকে।

মনে কস্টের একটা কাটা খচখচ করছে তখন। কেন জানি আশংকা হল আমি ২৫ বছর পর আমার চাচাকে আরেকবার হারিয়ে ফেলেছি। আর হয়ত কোনদিনই তার দেখা মিলবে না। গুমোঢ় অব্যক্ত একব্যথায় আমার মনটা মোচড়াতে থাকল।

আমার চোখে কেবলই ভাসতে থাকল বাসে বসে থাকা বয়স্ক একজন সহজ সরল মানুষের অবয়ব। একসময় বাসায় যখন ফিরলাম তখন সেই ভয়ংকর আর অসহনীয় প্রশ্নটি আমার মাথায় ঠায় করে নিয়েছে আর আমায় অসহায় করে দিয়ে বার বার এই প্রশ্নবানে বিদ্ধ করছে "ওনি আমার চাচা ছিলেন না ত?"

কেননা এরপর আর কখনো আমি আমার চাচার কোন খোজখবর পাইনি।

মন্তব্য ১৭ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (১৭) মন্তব্য লিখুন

১| ৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৯:৪৪

সাদা মাটা গরীব ছেলে বলেছেন: খুবই করুণ ঘটনা :(( প্লাস

০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ ভোর ৬:৩৮

মাহিরাহি বলেছেন: ধন্যবাদ

২| ৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৯:৫৫

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: পেয়েও হারানোর করুন কাহিনী!!!!

০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ ভোর ৬:৩৮

মাহিরাহি বলেছেন: ধন্যবাদ

৩| ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ ভোর ৬:৪৩

অন্ধকারের রাজপুত্র বলেছেন: মোবাইল থেকে পড়েছিলাম...
এখন পিসিতে বসে কমেন্ট করলাম...
খুবই দুঃখজনক ঘটনা... এ ধরণের ঘটনায় সারাটা জীবন একটা অনুশোচনা থেকে যায় !

০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৫:০৭

মাহিরাহি বলেছেন: Thank you

৪| ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৭:১৪

দি সুফি বলেছেন: অনেক করুন কাহিনী :(

০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৫:০৮

মাহিরাহি বলেছেন: Thank you

৫| ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৯:৫৩

ছোট নদী বলেছেন: :( :( :(

৬| ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৯:৫৫

ছোট নদী বলেছেন: +++++++++

০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:০২

মাহিরাহি বলেছেন: ধন্যবাদ

৭| ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:০৮

খেয়া ঘাট বলেছেন: দারুন লিখেছেন, স্বার্থক ছোট গল্প। গল্প পড়ে কত কিছু যে ভাবলাম।

০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৯:২৭

মাহিরাহি বলেছেন: Thanks

৮| ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১২:৫৬

আরজু পনি বলেছেন:

চোখের পানি সামলাতে পারলাম না :(

আপনমানুষগুলো ভালো থাকুক :(

আত্মার আত্নীয়রা ভালো থাকুক :(

০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৫:৩২

মাহিরাহি বলেছেন: ধন্যবাদ

৯| ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ২:৩৮

মাজহার_২৫ বলেছেন: অসাধারণ।

১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:১৮

মাহিরাহি বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.