নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আশাহীনতায় আশাবাদী

মাহমুদা আক্তার সুমা

দেবার মত পরিচয় নেইতো

মাহমুদা আক্তার সুমা › বিস্তারিত পোস্টঃ

রাজকপাল

১০ ই আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১:৫৮

রাজকপাল
মা, আ, সুমা
শরীরটা খুব একটা ভাল লাগছেনা আজকাল। সকাল থেকে মাথা ব্যাথা শুরু হয় সারাদিন কমার কোন নামই নেয়না। হঠাৎ একদিন খুব বাড়াবাড়ি হয়ে গেল। অনেকটা সেনসলেস এর মত সন্ধ্যা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত বিছানায় পড়ে রইল লিজা। বাধ্য হয়ে দোকান থেকে ছুটি নিল সে। বেশ লম্বা ছুটি। ২২ দিনের!!
প্রচন্ড গরমে মাথা ব্যাথাটা বেড়ে যায় তাই ফ্লোরে শুয়ে আছে লিজা। কদিন যাবৎ একটু বেশিই শুয়ে থাকে।
কি ব্যাপার হারামজাদী সারাদিনেই শুয়ে থাকিস কেন? লঙ্গরখানা পাইছস? অত আরাম কিসের,সারাদিন খাস আর ঘুমাস। কাম কাজ নাই? তোর আরামে আমার সংসার ভেসে যাচ্ছে। বুয়া দিয়া কাম করাস, ডিম, দুধ খাস, ভাল ভাল মাছ খাস, একটু কম খাইতে পারস না?

-আব্বা আম্মারে বকবানা। আম্মার অসুখ।

মার পাশে বসে খেলছিল ৩ বছরের ছেলে অন্তর। বাবার মেজাজ আর বকা শুনে লিজা চুপ করে থাকলেও ছেলে আর চুপ থাকতে পারল না। লিজা শহরের বড় একটা দোকনে চাকরী করে, ১২ ঘন্টা ডিউটি করতে হয়। খুব বেশি ঝামেলা হয়, রান্না করার সময় পাওয়া যায়না। মিজান তার স্বামী, গরম ভাত ছাড়া খাবে না। তাই বাধ্য হয়ে একটা বুয়া রেখেছে। ঘরের কাজে সাহায্যের জন্য। এতেও মিজানের বড় আপত্তি। লিজা যদি ১০ টা হাতে কাজ করত সংসারের জন্য তবে বোধ হয় মিজানের ভাল লাগত। এবারের কোরবানীর ঈদে ২০ হাজার টাকা দিয়েছে লিজা মিজানকে, কি যেন দরকার মিজানের। আর কাপড় চোপড় কেনার জন্য দিয়েছে ৩ হাজার। লিজার ভাই ঈদের সময় লিজাকে একটা থ্রিপিছ কিনে দিয়েছে, তাই মিজান আর একবারের জন্যও জিঙ্গেস করেনি লিজাকে যে ওর কিছু লাগবে কিনা।

-কি কপাল কি কপাল!! সারাদিন শুইয়া থাহে। কামের বুয়া কাম করে খাওয়ায়। সন্তানডা কই থাহে খুজও নেয়না। বড় লোকের বেডি, রুপের দেমাক দেহায়। একটু শিক্ষিত দেইখ্খা অহংকারে মাটিত পাও পড়ে না। রাজ কপাল!! তবুও স্বামী কত আদর করে। কত্ত খাওন যে খাওয়ায়!!
শাশুড়ির কথা গুলো কানে আসছিল লিজার। টিউবওয়েল এর পাড় থেকে বলছিল একা একা। লিজার শাশুড়ি একা একা কথা বলে। কাউকে সোজা করে কোন কথা বলতে পারে না। খোঁচা দেওয়াটা উনার স্বভাবের একটা অংশ। শুধু উনি কেন উনার ৬ ছেলে মেয়ের সবাই একরকম।
লিজা বেশ কয়েকবার এসব সহ্য করতে না পেরে বাবার বাড়িতে চলে গিয়েছিল। কিন্তু মা বাবাও কয়েকদিন পর নানা ধরনের কথা শুনায়। মা বলে তোর সহ্য ক্ষমতা একটু কমই। শ্বশুড় বাড়িতে এসব হবেই । একটু মানিয়ে নিতে হবে। জামাইতো দেখি তোকে অনেক আদর করে। তোকে ছাড়া থাকতে পারে না। মা অবশ্য লিজাকে খুব আদর করে। লিজা মাছ ভাজা খেতে খুব পছন্দ করে। লিজা যখনি বাড়ি যায় মা বড় বড় মাছ ভাজা করে লিজাকে খাওয়ায়। আর বাবা বলে নিশ্চয় তোর দোষ। তুই কি এমন কাজ করস যে জামাই এর সাথে তোর ঝগড়া হয়?? এখন আর ঝগড়া করে মিজান লিজাকে মারলেও লিজা বাবার বাড়ি যায় না। ওর একটা চাচাত বোন ছিল, লিজাকে খুব আদর করত। আগে মাঝে মাঝে ঐ বোনের বাসায় যেত লিজা। কিন্তু মিজানের এমন ধাচের ব্যবহারে বোন খুব কষ্ট পেয়েছে। লিজা বুঝতে পেরেছে আর কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই তার। এভাবেই থাকতে হবে সারাজীবন। তাই ছেলেটার মুখের দিকে তাকিয়ে দাঁত চেপে সহ্য করে সব। মিজান সব সময় এমন করে না মাঝে মাঝে আবার খুব আদর করে লিজাকে। লিজার জন্য সবসময় খেজুর আর মধু ঘরে এনেই রাখে। লিজা বিভিন্ন বই, খবরের কাগজ পড়তে ভালবাসে তাই সে জানে খেজুর আর মধু খেলে কি উপকার হয়। যেদিন মিজানের লিজার কাছে কোন চাহিদা থাকবে সেদিন সকাল থেকেই খুব আদর করবে লিজাকে। গোসলের পানি তোলে দেবে, কাপড় ধুয়ে দেবে, কিছু খেতে মন চায় নাকি জিঙ্গেস করবে। এখন এসব আদরের মানে বুঝে গেছে লিজা। শ্বশুড়বাড়ির সবাই দেখে কত ভাল কপাল এই বাড়ির বউদের । স্বামী গোসলের পানিও তুলে দেয়। রাজকপাল!!

দুপুরের খাবার সময় হয়েছে। মিজান, লিজা আর অন্তর খেতে বসেছে-
-অন্তর খেতে আস বাবা।
-মা আমি কি দিয়ে খাব?
-বাবা তুমি বল কি দিয়া খাবা?
-আমি দুধ দিয়া খাব।
-আচ্ছা বাবা। আমি ভাত মাখিয়ে দিই, তুমি নিজে নিজে খাও?
-আচ্ছা মা দাও। সেই সকালে একটা ডিম পোজ দিয়া রুটি খাইছি। আমার খুব ক্ষুধা লাগছে। তাড়াতাড়ি দাও। মা আমারে একটু খালি খালি দুধ দাও না খাই।
-বাবা দেখনা দুধ শেষ । তুমি ভাত দিয়া খাও। তোমার বাবারে বল দুধ আর ডিম শেষ।
-কি কইলি মাগী একটু কম খাইতে পারস না?
-বাবা ডিম তো তুমি রুটি দিয়া খাও, আর দুধ তো আমি খাই। তাইলে মারে বক কেন?
-বাবা তুমি এত কথা কও কেন? বড়দের কথার মধ্যে কথা বলতে নেই বাবা!!
-মা তুমি ভাত খাবানা?
-হ্যা খাচ্ছি তো বাবা।
-তুমি কি দিয়া খাও মা?
-আমি মাছের তরকারি দিয়া খাই বাবা। তুমি খাবে?
-মা মাছের তরকারি দিয়া খাও তো তোমার পাতে মাছ কই??
-বাবা আমার মাছ খেতে ভাল লাগে না তাই খাইনা।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ২:১১

মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: সুন্দর লাগল। ভালই চালিয়ে এভাবে ই বেরিয়ে আসবে একটা নোবেল।

১১ ই আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ২:০৪

মাহমুদা আক্তার সুমা বলেছেন: ধন্যবাদ মাহমুদুর রহমান সুজন। আমি খুব সাধারন একজন মানুষ। যদি আমার লেখা কারো ভাল লাগে তবে স্বস্তি পাব।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.