![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ওয়াদা
//মা, আ, সুমা//
মোটা গ্লাস পড়া সাজেদা ছল ছল চোখে দেখছে তার ফেইসবুক বন্ধু মাহমুদ কে।
আজ তার মাথার চুল আর একটাও কাঁচা নেই।
যখন মাহমুদের সাথে প্রথম পরিচয় তখন তার বয়স ছিল ৩০ ।
আর আজ ৫৫। কেমন করে আর কাঁচা থাকে চুল!
-কখনও ভাবিনি তোমার সাথে সত্যিই দেখা হবে বেয়াই!
-আমিও ভাবিনি সাজেদা তোমার সাথে দেখা হবে এই জীবনে!
- কেমন আছ তুমি মাহমুদ?
- আমি ভাল আছি সাজেদা, তুমি কেমন আছ?
-আর ভাল থাকা।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে অবনত চোখে মেঝের দিকে চেয়ে রইল সাজেদা।
নিজেকে আজ বড় অপরাধী ভাবছে সে।
কথা দিয়ে কথা না রাখার কষ্ট তো সে সহ্য করতে পারে না।
তবে কেন কথা দিয়ে ছিল সাজেদা।
সন্তানের মতামত ছাড়াই কেন ঠিক করেছিল সে এই বিয়ে।
বন্ধুত্বের মর্যাদা আজ তার পায়ে দলিত হল, তারই বোকামীর জন্য!!!
-কি ভাবছ সাজেদা? হতচকিত সাজেদা মাহমুদের ডাক শুনে ওর দিকে ফিরে তাকাল।
- না কিছু না।তুমি আমাকে মাফ করে দাও মাহমুদ।
কথা ছিল আমার ছেলেকে নিয়ে আসব তোমার কাছে।
আমার বউ মাকে আশির্বাদ করব। বোকা আমি !!
যে সন্তান কে আমি জানতামই না, তখনও জন্মই হয়নি যার, তার বিয়ে ঠিক করলাম নিজের ইচ্ছায়।
কি বলে ক্ষমা চাইব আমি তোমার মা মরা মেয়ের কাছে?
অনেক ইচ্ছা ছিল বেয়াইনের সাথে দেখা হবে। ওনি
বোধ হয় আগেই জেনে গিয়েছিলেন আমি ওয়াদা ভঙ্গকারী।
তাই আমার সাথে আর দেখা করলেন না।
পায়ে মৃদু স্পর্শ পেয়ে নিচে তাকাল সাজেদা।
নানজীবা! আমার দেয়া নাম। আমার ছেলের বউ। না না কথা ছিল, হল না।
যখন নানজীবা ওর মায়ের গর্ভে, মাহমুদ প্রথম এই সুসংবাদ সাজেদাকে দেয়।
সাজেদা পুত্রবধুর নাম আগেই ঠিক করে রেখে ছিলেন।
তখন সাজেদার ছেলে পিয়ালের বয়স ৫ বছর। ছেলে আজ বড় হয়েছে।
মায়ের ওয়াদা রাখতে গিয়ে কি নিজের জীবন নষ্ট করবে।
সে তার পছন্দ মত মেয়েকেই বিয়ে করবে বলে জানিয়ে দিয়েছে মাকে।
দুচোখ বেয়ে পানি নামল সাজেদার । দুহাত ধরে কাছে টেনে নিলেন নানজীবাকে।
-কেমন আছ মা তুমি? -জ্বী ভাল । আপনি কেমন আছেন?
- মারে আমি আর কেমন আছি। হ্যা ভালই আছি। এই বলে সাজেদা জড়িয়ে ধরল নানজীবাকে ।
আর অঝোরে কাঁদতে লাগল। নানজীবা খুবই বুদ্ধিমতি মেয়ে । ও নাকি ওর মায়ের মত হয়েছে।
মাহমুদ প্রায় সময় সাজেদাকে বলত। জানো বেয়াইন আমার বউটা না খুব বুদ্ধিমতি আর লক্ষি।
সাজেদার চোখের জল মুছিয়ে দিল নানজীবা। আর বলল.
. -কাঁদবেন না আন্টি। ভাল ই হল। আমি ও এই বিয়েতে রাজি ছিলাম না।
মাহমুদ অবাক হয়ে মেয়ের দিকে তাকিয়ে আছে। এই মেয়ে কি বলে!
এত ছোট বেলা থেকে যাকে মাহমুদ পিয়ালের কথা গল্প শুনিয়ে বড় করেছে, সাজেদার ঘরের যোগ্য বউ বানানোর জন্য যা যা করার তাই করেছে।
আর বাবা হয়ে পিয়ালের জন্য যে ভালবাসা মেয়ের মনে দেখেছে , সে নাকি বিয়েতে রাজি না!
সাজেদা অবাক হয়ে তাকিয়ে নানজীবাকে প্রশ্ন করল।
-কি বল মা ?
- হ্যা আন্টি । আসলে আপনি শুধু শুধু নিজেকে অপরাধী ভাবছেন।
যাকে কখনও দেখিনি । তাকে বিয়ে করার জন্য আমিও প্রস্তুত ছিলাম না।
আমাকে ক্ষমা করে দিন আর পিয়াল ভাইয়াকেও।
আর এই বিয়ে হয়নি বলে আপনার মনের মধ্যে যে অপরাধ বোধ তা ঝেড়ে ফেলে দিন।
যা হয়েছে তা ভালর জন্যই হয়েছে। আপনার আর বাবার বন্ধুত্ব অটুট থাকুক।
কবে কখন একটা সাধারন ওয়াদার জন্য আপনারা কেন যে এত কষ্ট পাচ্ছেন আমি বুঝিনা ।
নানজীবার কথায় মনটা হালকা হল সাজেদার ।
নানজীবার হাতের তৈরী হরেক রকমের খাবার খেয়ে খুশিতে ভরে উঠল সাজেদার মন।
একটা পাপবোধ নেমে গেল তার মাথার উপর থেকে।
মন ভরে দোয়া করলেন তার আদরের নানজীবাকে।
বিকেলের ট্রেনে চলে গেলেন সাজেদা।
মাহমুদের চোখের সামনে নিজের ঘরে দৌড়ে পালাল নানজীবা।
অঝোর ধারায় কান্নার ঢল নামল নানজীবার জীবনে।
মাহমুদ অপলক চোখে চেয়ে রইল মেয়ের দিকে।
মাহমুদ বুঝল, আন্টির পাপবোধ আর কষ্ট কমাতেই তার মেয়ের এই ভূমিকা।
মাহমুদ মনে মনে বিড় বিড় করে বলতে লাগল- -মারে আজ তোর চোখে আমি বড় অপরাধী হয়ে গেলাম ।
বাবা হয়ে মেয়ের জীবনে এত বড় কষ্টের কারন কেন হলাম আমি? কিভাবে নিজেকে ক্ষমা করব আমি......
১১ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ৯:৪৭
মাহমুদা আক্তার সুমা বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ মন্তব্য করার জন্য।
২| ১৫ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ২:৫৫
রাজিব ওয়াহিদ বলেছেন: অনেক ভালো লাগলো
১৫ ই আগস্ট, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:১৬
মাহমুদা আক্তার সুমা বলেছেন: জেনে আমারও ভাল লাগল।
©somewhere in net ltd.
১|
১১ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ৯:৪৩
প্রামানিক বলেছেন: ভাল লাগল। ধন্যবাদ