![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বসন্ত এসে গেছে কিন্তু মিলির দৃষ্টিতে সেই বসন্তের কোন ছাপ নেই। ঋতু বসন্ত আর জীবনের বসন্ত তো আর এক নয় । জীবন যেখানে চৈত্রের হাহাকার করা রোদ্দুরে হেঁটে যাওয়ার মত ক্লান্তিকর সেখানে বসন্তের আগমন কিংবা বিদায় কতটুকু প্রভাব ফেলতে পারে একজন মানুষের জীবনে ।
সাত বছর বয়সে বাবা কে হারিয়ে মার সাথে সংসারে হাত লাগিয়েছিল ছোট্ট কিন্তু মানসিক পরিপক্কতা সম্পন্ন মিলি । মা ,ছোট ভাই আর তাকে নিয়েই সংসার । মিলির বয়স এখন ২৫ । আর্থিক অনটনের জন্য কাছের আত্মীয়রাও এখন দূরে । দূরে যাবেই বা না কেন,টাকা দিয়ে সাহায্য করতে হয় যদি কিংবা বয়স্ক মেয়ের বিয়ের খরচ আরও কত কি ! খরচের ভয় যতটা না মিলি দের তারচেয়ে বেশী দুরের আত্মীয় দের । তাই হইতো তারা আজ বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মত বসবাস করছে ।
পার্কের বেঞ্চিতে বসে জীবনের নানা রকম কথা ভাবছে মিলি । ছোট ভাই এর পড়াশুনার খরচ,মার শরীর টাও বেশী ভাল না । দিন দিন খরচের হিসাব টা বেরেই চলছে ।টিউশনি করে সংসার চালানো অনেক কঠিন । মামা চাচা নেই যে চাকরি হবে ।রইল বাকি বিয়ে ।এতটা সুন্দর নয় সে এক দেখাতেই পাত্র পক্ষ পছন্দ করে ফেল্বে,যদিও খুব বেশী খারাপ ও নয় দেখতে । আরেকটি কারণ হতে পারে যে,এরকম অথৈ সাগরে জীবন সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া মানুষের সাথে কেই বা সম্পর্ক করবে ! নানা রকম চিন্তা খেলে যায় মিলির মাথায় ।
আজ সে টিঊশনির টাকা পেয়েছে । বাসা ভাড়া ,ছোট ভাইয়ের কলেজের বেতন,মার ওষুধ সব মিলিয়ে এখন হাজার দুয়েক টাকা কম আছে । কি করবে সে,ভেবে পাচ্ছে না । পার্কের চারপাশের সবুজের মাঝেও মিলির মনের হাহাকার টা কেন জানি আরও তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে ।
পার্কের ঢুকার মুখেই একটি জটলা পেকেছে । উৎসুক জনতা গোল হইয়ে দাড়িয়ে আছে । কেউ কেউ বলছে,মার শালা কে,এইটুকু ছেমড়া আবার চুরি করে । মিলি ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলো । ভিড় এর মাছে নীল টি শার্ট পরা এক লোক বলছে,এত কথা কিসের ! ব্যাটা রে পুলিশে দেন ।পাছার উপর কয়েক ঘা পরলেই ঠিক হবো । জীবনে আর চুরি করবো না ।
মিলি কাছে গিয়ে দেখে ১৪-১৫ বছরের এক ছেলে,মুখ টা বেশ মায়া কারা,গায়ের রঙ শ্যামলা, হালকা পাতলা গডনের । একবার দেখায় তাকে চোর মনে হয় না । এত কিছুর পর ও ছেলেটির মুখ থেকে কোন সাড়া শব্দ বের হচ্ছে না । শুধু অঝরে কেঁদে যাচ্ছে । কি আশ্চর্য ! একবার এটাও বলছে না ,আমাকে ছেরে দেন । হইত কোন গোপন অভিমান থেকেই চুপ হইয়ে আছে কিনা কে জানে । অভিমান তো নীরবেই বেশি জমে ।
অবশেষে মিলি বলে উঠলো - থামেন । এই ভাবে ছেলে টা কে মারার কোন মানে হয় না । কি করেছে ও ? একতরফা মেরে যাচ্ছেন ! ওর কথা একটু শোনেন ।
নীল টি শার্ট পরা লোক টি আবার বলে উঠলো- কিছুই বলার নাই এইখানে । পোলা চুরি করতে গিয়া হাতে নাতে ধরা পরছে । এক দুই টাকা না আফা ,তিন হাজার টাকা ।
মিলি বলে-অনেক তো মেরেছেন,ছোট মানুষ ভুল করেছে, এইবারের মত মাফ করে দেন ।
মিলি কথা গুলো এতটা ভরসা দিয়ে বলল যে কেউ আর তার মুখের উপর কিছু বলতে পারল না । ধীরে ধীরে জটলা টা শূন্যতায় পরিনত হল । শুধু দাডিয়ে আছে দুজন মানুষ । মিলি আর নাম না জানা বালক ।
তোমার নাম কি ? মিলি প্রশ্ন করে..
আবির
পডাশুনা করো ?
হ্যাঁ
কিসে পড ?
নাইনে
মিলি অনেক টা অবাক হইয়ে গেল । একদম পড়ালেখা না জানা ছেলে না তাহলে চুরি করলো কেন ! ও তো জানে এটা অন্যায় ! তাহলে !
চুরি করেছো কেন ? জানো না এটা অন্যায় ।
জানি ।
আবিরের চোখ মুখে রাগ ও কষ্ট দুটই ফুটে উঠেছে । ক্ষণিকের মধ্যে মায়াকাডা চোখ দুটো পানিতে অথৈ হইয়ে গেলো । মনে হচ্ছে এখনি ভাসিয়ে নিয়ে যাবে সব কিছু । এবার আবির আর প্রশ্নের অপেক্ষা করলো না । নিজেই বলা শুরু করলো ।
স্কুলের তিন মাসের বেতন বাকি,ছোট ভাইটার জন্দিস,মা এক সময় সেলাই করতো, এখন চোখে ভাল করে দেখে না, ডাক্তার দেখানোর টাকাও নাই ।সব কিছু এখন আমার উপর নির্ভর করছে । এত অল্প সময়ে এত টাকা আমার পক্ষে যোগাড় করা সম্ভব না । তাই চুরি করছি । জীবনের প্রথম চুরি তো তাই ধরা পরা গেছি ।
কত নির্মম বাস্তবতা আর কত নির্মম সত্য । অনায়াসে বলা গেলেও এর গভীরতা কতটুকু সেতা বুঝতে মিলির দেরি হল না । আবিরের কথা শুনে মিলির মেরুদণ্ড বেয়ে শীতল একটা ধারা নেমে গেলো ! মুহূর্তেই শিরশির করে উঠলো তার শরীর । তারও তো ছোট ভাই আছে । যদি অভাবের তাডনায় সেও এরকম ভয়ংকর কাজ করে বসে তখন ! না না এরকম হতে দেওয়া যাবে না । অভাব তো বাস্তবতা । একে মেনে নিতে শিখতে হবে ,আর শিখতে হবে একে জয় করার সঠিক ও নৈতিক কোশল ।
মিলি শুধু একটা কথাই বলল -অন্যায় ভাবে কখনই কিছু হয় না,আর যা হয় সেটা সময়িক ।
ব্যাগ থেকে এক হাজার টাকার তিনটি নোট বের করে এগিয়ে দিল আবিরের দিকে । আবিরের চোখে রাজ্যের বিস্ময় । সে কি করবে আর কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না । এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মিলির দিকে । সেই দৃষ্টিতে কিছু না বলেও যেন সকল কষ্ট ,অভিযোগ জানাচ্ছে মিলির কাছে ।
টাকা গুলো রেখে দাও । মা আর ভাই কে ডাক্তার দেখাও,নিজের স্কুলের বেতন দিও আর পাশাপাশি একটা কাজ খোঁজ । জীবন মানে যুদ্ধ । তোমার যুদ্ধে তুমি সেনা প্রধান । আর সেনা প্রধান যদি হেরে যায় তাহলে সৈনিক রা যুদ্ধ না করেই হেরে যায় । আলতো করে আবিরের মাথায় হাত বুলালো মিলি । আবির টাকা গুলো রেখে দিলো । নিবো না বলে ভণিতা করে লাভ নাই । বাস্তবতার মঞ্চে ভনিতা চলে না ।
মিলি চলে যাচ্ছে । মনে মনে হিসাব কষছে আরো ৩ হাজার টাকা জোগাড় করতে হবে । কিন্তু কিভাবে হবে সেটা সে জানে না ।আবির তাকিয়ে আছে নির্বাক দৃষ্টি তে মিলির দিকে । জীবন কেন এত অসহায় ! আবির মনে মনে ভাবে ঋণ রাখবে না সে । জীবনের কোন একদিন এই টাকা শোধ করে দিবে । পরক্ষনেই আবিরের মনে আরেকটি কথা উঁকি দেয় -সত্যি কি এই ঋণ শোধ করা সম্ভব !অনেক সময় টাকার ঋণ শুধু টাকাতে নয়, জীবনের ঋণে পরিণত হয় ।
২| ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১২:৪২
মাহমুদা তাসলিম নিপা বলেছেন: ধন্যবাদ আপু
৩| ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ২:১০
মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: ব্লগে সু-স্বাগত। পোষ্ট পাঠে ভাল লাগল। লিখে যান।
৪| ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৪২
মাহমুদা তাসলিম নিপা বলেছেন: ধন্যবাদ ভাইয়া
৫| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১১:৫৫
কালীদাস বলেছেন: লেখাটা মুটামুটি লাগল। প্লটটা নতুন না, ডায়লগে নতুনত্ব আনার সুযোগ ছিল আরও।
ব্যাপার না, চালিয়ে যান চেষ্টা
৬| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:২৫
মাহমুদা তাসলিম নিপা বলেছেন: ধন্যবাদ ভাইয়া । আপনার উপদেশ মনে থাকবে । ইনশাল্লাহ সামনে কাজ গুলো আরো ভাল করার চেষ্টা করবো ।
৭| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৪৬
ওমেরা বলেছেন: অভাবে স্বভাব নষ্ট হয় । ভাল লাগল ধন্যবাদ আপু ।
৮| ০১ লা মার্চ, ২০১৭ রাত ১১:৩৭
মাহমুদা তাসলিম নিপা বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে
৯| ১৫ ই মার্চ, ২০১৭ বিকাল ৫:৫১
বিজন রয় বলেছেন: ব্লগে স্বাগতম। দেরীতে দিলাম।
শুভকামনা রইল।
শুভব্লগিং।
১০| ১৫ ই মার্চ, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:০৮
মাহমুদা তাসলিম নিপা বলেছেন: ধন্যবাদ বিজয় ভাইয়া
©somewhere in net ltd.
১|
২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১২:০৪
টুনটুনি০৪ বলেছেন: স্বাগতম আপনাকে আপু। পোষ্ট ভালো লেগেছে।