![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মোনুষের নেশা আর আমার নেশার মধ্যে এই পার্থক্য যে আমি পেশাকে নেশা করে নিয়েছি। আমার নেশা হচ্ছে সাংবাদিকতা। খুব কম বয়স থেকে নেশার টানে ছোটে চলছি। স্বপ্ন দেখি পরিবর্তনের, স্বপ্ন দেখি এক নতুন বাংলাদেশের তাই সমাজের জন্যও কাজ করি বিভিন্ন সংগঠনের হয়ে। আমি যুক্তিতে মুক্তি খোজি আর এই সমাজে এখনও মানুষ যুক্তির পরিপন্থি একতরফা চলছে তাই নানা বিষয়ে বিতঙ্গ শুরু হয় আমার সাথে অনেকের তবে আমি এসবে না জড়িয়ে নিজেকে ঘুছিয়ে বাচি। এই আমি।
গাড়ির ইঞ্জিনের শব্দ বন্ধ করার আগেই কানে আসল হাউমাও কান্নার আওয়াজ সাথে কিছু আর্তধ্বনিও তৎক্ষনে বুমবুম শব্দের ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে গেছে, ওপাশ থেকে চিৎকার আর আর্তনাদ শুনা যাচ্ছে আমারা নিশ্চিত হলাম মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার মুন্সিবাজার ইউনিয়নের রুপসপুরের শোকপল্লীতে এসে গেছি তাহলে। আওয়াজ আন্দাজ করে নুয়ে পড়ার মতো ছোট একটি ঘরের দিকে এগিয়ে গেলাম এবার শুনছি স্পষ্ট কেউ একজন বলছে আলি আইছে আমার, ঢাকা থাকি মনেহয় আমার আলি আইছে,ওবাবারে তুই-নু কইলে সকালে প্রাইভেটে পড়াত যাইতে তে ঢাকাত গিয়ে এতদিন কিতা খরছ? আমরা তারই মধ্যে ঘরের ভেতরে প্রবেশ করি। গত ১৬ সেপ্টেম্বর ব্রাক্ষনবাড়িয়ায় সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত আটজনের তালিকায় আলির নাম খুজে পেয়ে বুঝতে পাররাম উনি হয়ত আলির মা। পঞ্চম শ্রেণীতে পড়–য়া আলি চাচাত ভাইয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানে যাওয়ার পথে সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত হয়। তার সাথে বর সহ একই গ্রামের আরো ৭জন নিহত হন
বাড়িতে এস যে সকালে বই খাতা নিয়ে প্রাইভেট পড়তে যাওয়ার কথা সে লাশ হয়ে বাড়ি ফিরেছে আর কাফন পরে কবরে চিরতরে চলে গেছে।যে বিয়ে করে বধূ আনার কথা সে লাশ হয়ে ফিরেছে। যে গ্রামের একটা শালিশের তারিখ পিছিয়েছে গ্রামের ভাতিজার বিয়ের জন্য সে শালিশ করা আর তার হয়ে ওঠেনি। যিনি চায়ের দোকান থেকে উপার্জিত টাকা দিয়ে সংসার চালাতেন তিনি একদিন দোকান বন্ধ রেখেছিলেন ভাতিজার বিয়ে বলে কথা, একদিন নাহয় রোজগার করব না। তিনি আর ফিরে এসে দোকান খুলতে পারেননি। এভাবে আক্ষেপের আর্তনাদের সাথে স্মৃতিচারন করছেন তাদের আত্মীয়-স্বজনরা।
আমাদের দেখতে পেয়ে আলির মা বলেন- বাবারে তুমরা কিতা আমার আলিরে ফিরাইয়া দিতায় আইছনি? আমরাতো আর ফিরিয়ে দিতে পারবনা কিন্তু মিথ্যে সান্তনা দিতে হবে। কিন্তু আর কতকাল এভাবে আলিদের প্রান যাবে আর আমরা সান্তনা দিতে গিয়ে মিথ্যুক সাজব? কতকাল এভাবে সোনারাদের মত মায়েরা আশার পুত্রকে নিজের চোখে মৃত দেখবেন? যিনি নিজের জীবনের সমস্ত কিছু দিয়ে ছেলেকে লেখাপড়া করিয়েছেন। না খেয়ে ছেলের জন্য খরছ করেছেন শিক্ষিত করেছেন ছেলেকে। সেই মা যখন তার সন্তানের এমন মর্মান্তিক মৃত্যু নিজ চোখে দেখেন তখন? যখন তার উপার্জনক্ষম স্বামীও মারা যায়? আরেক ছেলে একই দূর্ঘটনায় পঙ্গু হয়ে যায় তখন সেই শোকে উনি পাগল হয়া সাভাবিক ভাবলে ভূল হবে কি?
আমরাতো এমনটা চাইনা। এই নিহত আটজনের গ্রামে যাওয়ার সুযোগ হয়েছে তাদের পরিবার আর স্বজনের কান্না দেখতে পেয়েছি কি›তু এমন ঝড়ে সাম্প্রতিক সময়ে যে আরো শত মানুষ নিহত হয়েছে তাদের মায়ের আর্তনাদ নাজানি আরো কত বিদারক হবে। সড়কে নয় দূঘটনা ঘটছে নৌপথেও কেন ঘটছে এমন, কারা এর জন্য দায়ি? এমন প্রশ্নের উত্তর সবার কাছে আছে, সোজা বলে দেবে গাড়ি চালকরা বা এনা পরিবহন ইত্যাদি। কিন্তু না তার জন্য আমরা আর সরকার দায়ি। প্রথম দায়টা আমাদের সব শেষে সরকার। হ্যা অবশ্যই আমরা দায়ি।
দুর্ঘটনায় কারো মৃত্যু হলে আমরা গাড়ীর চালককে মৃত্যুদন্ড দিতে উঠে পড়ে লাগি। অনেকটা সামযয়িক মনের ঝাল মেটানো গনপিঠুনীও দেই বিবেকহীন ভাবে। কিন্তু একবারও ভাবি না, এর জন্য প্রকৃত দায়ি কে? দূর্ঘটনায় যিনি মারা গেছে, দোষতো তারও থাকতে পারে? তিনি কি জানেন ট্রাফিক আইন? আমরা ফুটওভার ব্রিজের নীচ দিয়ে দৌড়ে রাস্তা পার হচ্ছি। এ কাজের জন্য সেই পথচারীকে কেন শাস্তি দেয়া হচ্ছে না? যদি দোষ ড্রাইভারের হয়ে থাকে, তবে বিটিআরই কে সর্ব প্রথম ফাঁসিতে ঝোলানো উচিত কিনা? কেন তারা টাকা খেয়ে অবৈধ লাইসেন্সগুলো দিচ্ছেন , যাদের ড্রাইভিং করার কোন যোগ্যতা নেই তাদের আমরা গাড়ি চালাতে চাবি তুলে দিচ্ছি। একই রাস্তায় আমরা সব ধরণের গতির যান্ত্রিক এবং অযান্ত্রিক বাহন চলতে দিচ্ছি? এই ধরণের ব্যবস্থাটনা কি মানুষ হত্যার একটি কারণ নয়?
ড্রাইভার হঠাৎ গাড়ির গতি বাড়িয়েছে আমরা চুপ করে বসে আছি। আপনি সচেতন, ড্রইভার ট্রাফিক আইন মানছেনা আপনি চুপ করে আছেন। চালক ফোনে কথা বলে গাড়ি চালাচ্ছে আপনিও উপভোগ করছেন তার অসচেতনতাকে।
আপনি বিআরটি কর্মকর্তা টাকার বিনিময়ে ড্রইবিং লাইছেন্স দিয়ে দিলেন ইন্টারভিউ ছাড়া। ফিটনেস ছাড়া গাড়ি চলছে দিনের পর দিন আপনিও তা ব্যবহার করছেন। বড় বড় পরিবহন কোম্পানির গাড়িগুলো চলছে যেমন খুশি আপনি সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। প্রতি বছর হাজারেরও বেশি মানুষ মারা যায় এই বড় গাড়িগুলোর দাপটে চলার কারনে তখনও আপনি সাবধান হচ্ছেন না।
তাহলে কি হবে? যা হবার তাইতো হচ্ছে! মারা যাবে লোক কান্নাকাটি করবে সরকার বা তার প্রতিনিধি অথবা বড় কোন নেতা এসে একটা অংকের টাকা দিয়ে যাবে তাদের দূর্ণীতির কামানো থেকে নিজেদের নামফুটানোর জন্য আবার কখনও কেউ তাদের দু:খে দু:খী হয়ে। তবু দূর্ঘটনা ঘটবে? আমরা কি এর মুক্তি খোজতে পারিনা?
আমাদের কর্তা ব্যাক্তিরা প্রচুর বিদেশ ভ্রমন করেন তারা কি জানেন না সে দেশগুলোর যোগাযোগ ব্যবস্থা কেমন? সেই দেশগুলোতেও যানযট হয়, কারণ গাড়ীর সংখ্যা অনেক বেশী। তাদের অধিকাংশ রাস্তাই একমুখী। সড়কের এক পাশ শুধু মাত্র বাস, পুলিশের গাড়ী এবং এম্বুলেন্স এর জন্য বরাদ্দ। আরেক পাশে ব্যাক্তিগত বা ছোট গাড়ী চলে। রাস্তা পারাপারে জন্য জেব্রা ক্রসিং আছে। শুধুমাত্র ব্যবস্থাপনার কারণেই এখানে চাইলেও দুর্ঘটনা ঘটানো খুবই কঠিন। এখানে সবাই ট্রাফিক আইন মেনে চলছেন। কেউ যদি মাতাল হয়ে ইচ্ছে করে কোন দুর্ঘটনা না ঘটায়।
তবে সেখানের সড়ক সবসময় নিরাপদ। সেখানে আপনি রাস্তা পার হতে চাইলে ড্রাইভার গাড়ীর গতি কমিয়ে দেবে, বাংলাদেশের ড্রাইভারদের মত গতি বাড়িয়ে আাপনার গায়ের উপর তুলে দিয়ে বাহাদুরী প্রদর্শন করবেনা। এছাড়া তাদের পাতাল রেল আছে, যেটা আরেকটি নিরাপদ বাহন। মহা সড়কে গতির সীমা দেয়া আছে, আছে সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে চিত্র তোলার ব্যবস্থা। আপনি বেশী গতিতে গাড়ী চালালে বাড়িতে টিকেট পৌছে যাবে জরিমানার অংকসহ। এ সব ব্যবস্থাই সে দেশগুলোর সরকার কিন্তু করেছে, জনগণের জীবনকে নিরাপদ করার জন্য। আমার দেশে কেন সেটা সম্ভবনা?
যদি কেউ অর্থের অভাব আছে বলেন, সেটা আমি বিশ্বাস করি না। দুর্নীতিটা একটু কম করে করলেই যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেক উন্নত করা সম্ভব। কিন্তু তারা এটা করেন না, শুধু মাত্র সদিচ্ছার অভাবের কারণে। ক্ষমতায় এসেই তারা নিজের আখের গোছাতে বা দলীয় মিশন বাস্তবায়নে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। অন্যান্য দেশে দুর্নীতি নেই তা নয, কিন্তু তারা নিজের দেশের জন্য কিছু করছে আগে, পরে দুর্নীতি বা অন্যান্য ব্যক্তিগত স্বার্থ।
আমরা যদি আমাদের দেশকে ভালবাসতে না জানি,দূর্ণীতি কমাতে না পারি, আমাদের চিন্তা-চেতনা, জীবনাচারন, কর্মপন্থায় আমূল পরিবর্তন না আনতে পারি, যদি আমরা সচেতন হতে না পারি তাহলে এ ধরণের সমস্যা কখনোই দূর হবে না।
লেখক: সাংবাদিক ও সমাজিক সংগঠক
©somewhere in net ltd.
১|
২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৮:১৭
ঢাকাবাসী বলেছেন: যে দেশে পৃথিবীর সবচাইতে নিকৃস্টতম ট্রাফিক ব্যাবস্হা, সবচাইতে দুর্ণীতিবাজ নিয়ন্ত্রক সংস্হা, চরম অদক্ষ অশিক্ষিত অযোগ্য ট্রা. পু., শ্রমিক নেতা কাম মন্ত্রীরা নামে খুনী ড্রাইভারদের বাঁচাতে, ৮০ঁ% ড্রাইভার ভুয়া লাইসেন্স নিয়ে শত শত মাইল গাড়ি চালায়, খুন করার জন্য কোন ড্রাইভারের আজ পর্যন্ত একদিন জেল হয় নি যে দেশে, সে দেশে তখন প্রতি বছর ২০০০০ লোককে তো অবশ্যই মরতে হবে।