নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি আমার মত। আমি অনন্য। পৃথিবীতে আমার মত কেউ ছিলনা, নেই আর কেউ আসবেও না। জন্মের আগেও আমি ছিলাম না। মৃত্যুর পরেও এই নশ্বর পৃথিবীতে আমার কোন অস্তিত্ব থাকবেনা। যা থাকবে তা আমার কৃতকর্ম।
সোহেল মামা আম্মার চাচাতো ভাই। আমার সাথে ক্লাসের পার্থক্য ৪ বছর আর বয়সের পার্থক্য ৬ বছরের মতো। সোহেল মামার সাথে শেষ দেখা হয়েছিলো বড়জোর মাস তিনেক আগে। মামা বলছিলো আমাকে নিয়ে ভারত যাওয়ার কথা। তার রোগটা ছিলো অদ্ভুত ধরণের। তার দুই পা সবসময় জ্বালা যন্ত্রণা করতো। এইদেশের সব বড় বড় নিউরোলজিস্ট আর সাইকিয়াটৃস্ট দেখানো শেষ। মাথার এময়ার আই থেকে শুরু করে পায়ের রক্তনালীর কালার ডপলার, নার্ভ কনডাকশন স্টাডি সবকিছুই করেছে নিউরোলজিস্টরা। কোথাও কিছু পাওয়া যায়নি। অবশেষে সাইকিয়াটৃস্টের কাছে পাঠিয়েছে। সাইকিয়াটৃস্ট চিকিৎসা দিয়েছে। কিন্তু কোনকিছুই কাজ করেনি। সব পরীক্ষা নিরীক্ষা নিয়ে আমার কাছে এসেছিলো দুইবছর আগে। আমিও চিকিৎসা দিয়েছিলাম আমার সবটুকু দিয়ে। কিছুদিন আমার চিকিৎসায় ভালো ছিলো। তারপর সেই আবার আগেকার অবস্থায়। পায়ের যন্ত্রণার জন্যে সে ফার্মাসিউক্যাল কোম্পানির রিজিওনাল ম্যানেজারের চাকুরিটাও ছেড়ে দিয়ে এলাকায় এসে ডিস্পেন্সারি দিয়েছিলো। শেষ ভরসা হিসেবে চেন্নাই যেতে চেয়েছিলো। তার দঢ় বিশ্বাস ছিলো সে চেন্নাই গিয়ে সুস্থ হয়ে যাবে। তার হয় চাকরি শুরু করবে আর নয় ভালো করে ডিস্পেন্সারি শুরু করবে। আমার পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হওয়ায় আমাকে পাসপোর্ট নবায়ন করার কথা বলেছিলো। আমারও ইচ্ছে ছিলো। কিন্তু সে আশা আর পূরণ হলো কই? মার্চের ২৮ তারিখে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের ফলে না ফেরার দেশে চলে গেলেন। আর কেউ আমাকে মায়াবি গলায় কখনো ফুরু, কখনো ফুকু, আবার কখনোবা মেশকাত বা ফুরকান নামে আমাকে ওভাবে ডাকবেনা। কান্নায় সবকিছু ভেসে যায়। সোহেল মামাকে আর ফিরে পাবোনা।
আমার নানীর বাড়ি পাশের গ্রামে হওয়ায় যতদিন থেকে আমার বোঝার ক্ষমতা হয়েছে ততদিন থেকেই সোহেল মামা আমাকে প্রচন্ড আদর করতেন, স্নেহ করতেন। সন্ধ্যার পর গল্প বলার আসর বসতো। তিনি অসাধারণ সব গল্প বলতেন। তার জ্ঞানের সীমা ছিলো অগাধ। অসাধারণ কবিতা লিখতেন। বিশেষতঃ প্রেমের কবিতা। সারাক্ষণ হাসিখুশি থাকতেন। তার উপস্থিতিই আমাদেরকে মাতিয়ে রাখতো। ছোটবেলা থেকেই আমাকে ভালো কিছু করার অনুপ্রেরণা দিতেন। আস্তে আস্তে বড় হতে লাগলাম। সোহেল মামা ছিলো অনেকটা মুরুব্বির মতো। প্রচণ্ড আদর করতেন আবার দুষ্টামি করলে শাসনও করতেন। সে ছিল আমার মায়ের একনিষ্ঠ ভক্ত। সোহেল মামা অসাধরণ গান গাইতে পারতো। সে ছিলো প্রচন্ড সংস্কৃতি মনা। তার কাছ থেকেই প্রথম শচীন দেব বর্মনের গান শুনি। “ও কাজলি” শিরোনামে একটা গান গাইতো। গানটা আমার দুলাভাইয়ের কাছ থেকে শুনেছিল। কিন্তু গীতিকার, সুরকার সম্পর্কে কোন ধারণা ছিলোনা।
আমার হাইস্কুল আমার নানীর বাড়ির গ্রামে হওয়ায় কয়েকদিন পরপরই নানির বাড়ি যাওয়া হতো। সোহেল মামার সাথে অনেক গল্প হতো সবসময়।
আমি যখন মেডিকেলে উঠলাম তখন ধীরে ধীরে মামা আমার বন্ধুতে পরিণত হলো। তখন থেকে একসাথে অনেক ঘুড়ে বেড়িয়েছি। অনেক আড্ডা দিয়েছি। মনে হয় সেদিন আমরা একসাথে আড্ডা দিতাম লম্বা সময়। তার অতীত জীবনের অনেক স্মৃতিচারণ করতো। হতাশা ছিলো জীবনে ভালো করতে না পারার জন্যে। স্কুল জীবনে ছাত্র হিসেবে অনেক ভালো ছিলো। রেজাল্ট খারাপ হবার পরেও স্টারের কাছাকাছি নাম্বার ছিলো। কিন্তু ইন্টারমিডিয়েট ক্রমাগতভাবে ফেল করতে করতে অবশেষে চারবারের প্রচেষ্টায় পাশ করে। সবসময় ফিজিক্সেই ফেল হতো। পাশের পর প্রথমে বিএসসি ভর্তি এবং তারপর ইউডাতে ফার্মাসিতে ভর্তি হয়ে কমপ্লিট করেন। ঢাকায় নুরজাহান রোড়ের পাঁচতলার উপরে চিলেকোঠার রুমে থাকতেন। মনে হয় সেদিন সর্বশেষ গিয়েছি। অথচ একযুগ পার হয়ে গেছে। সে উস্তাদ গোলাম আলীর কনসার্টে যেতে চেয়েছিলো। কিন্ত টাকার অভাবে যেতে পারেনি। তার কাছ থেকেই ‘চুপকি চুপকি রাত দিন’ গজলটা আমার প্রথম শুনা। একসাথে ঢাকায় থেকেছি তার চিলেকোঠার মেসে অনেকবার। আমাদের সারারাত গল্প হতো। গল্প ফুরোতেই চাইতোনা।
কখনো ভাবিনি মাত্র ৪২ বছর বয়সে মামা আমাদের ফেলে না ফেরার পথে চলে যাবেন। বিষয়টা বিন্দুমাত্র প্রত্যাশিত ছিলোনা। তার কোন শারীরিক রোগ ছিলোনা। পায়ের সমস্যাটা মনোদৈহিক। আমি প্রস্তুত ছিলাম। ইন ফ্যাক্ট এই অপরিণত বয়সের মৃত্যু কারো কাছেই প্রত্যাশিত ছিলোনা। মাত্র ১ বছর আগে তার মা মারা যান; সেটাও পরিণত বয়স বলা যায়না। নানা মারা যান আট বছর আগে। সেটাও তার অন্য সব ভাইদের আগেই। সোহেল মামা চার ভাইবোনের মধ্যেও সবার ছোট ছিলেন। ইদানিং কমবয়সে মৃত্যুর হার আগের চেয়ে অনেক বেড়ে গেছে। এর সবচেয়ে বড় কারণ স্ট্ররেস। জানিনা কেন এমন হয়। কেন প্রকৃতির এই নিষ্ঠুর খেলা। সোহেল মামা, তোমাকে মিস করবো আজীবন। অবশেষে বলতে চাই, “ জীবন এতো ছোট কেনে, এ ভুবনে।"
১০ ই এপ্রিল, ২০২৩ রাত ১২:৪৬
প্রজ্জলিত মেশকাত বলেছেন: ধন্যবাদ।।
২| ১০ ই এপ্রিল, ২০২৩ রাত ১২:৩০
শায়মা বলেছেন: মামা ভালো থাকুন না ফেরার দেশে।
এই অসুখের নাম কি?
১০ ই এপ্রিল, ২০২৩ রাত ১২:৪৬
প্রজ্জলিত মেশকাত বলেছেন: স্ট্রোক।
৩| ১০ ই এপ্রিল, ২০২৩ রাত ১২:৫৮
শূন্য সারমর্ম বলেছেন:
পায়ের জ্বলন নিয়ে একটু বিস্তারিত বলুন।
১০ ই এপ্রিল, ২০২৩ সকাল ১১:৪৪
প্রজ্জলিত মেশকাত বলেছেন: পায়ের কালার ডপলার, নার্ভ কনডাকশন স্টাডি সবকিছুই স্বাভাবিক ছিলো। কোথাও কোন শারীরিক ভিত্তি পাওয়া যায়নি। ইদানিং অল্প বয়সে মৃত্যুর হার অনেক বেড়ে গেছে। এটার কারণ সম্ভবতঃ স্ট্রেস।
৪| ১০ ই এপ্রিল, ২০২৩ রাত ১:৫৮
কামাল১৮ বলেছেন: পায়ে যদি রক্ত চলাচল ঠিক মতো না হয় তবে এমন একটা সমস্যা হতে পারে।যেটা আমার হয়।আমার ২৪ বছর আগে বাইপাস সার্জারি হয়।হার্টের অবস্থা খুবই খারাপ।পায়ের শিরা চিকন হয়ে গেছে।রক্ত চলাচল ঠিক মতো হয় না।এমন কিছু একটা ছিলো আপনার মামার।আমাকে ডাক্তার বললো হাটাহাটি ছাড়া আর কোন চিকিৎসা নাই আপনার।কারন বয়স একটা সমস্যা।
আপনার মামার বয়স কম ছিলো।সঠিক চিকিৎা পেলে সেরা উঠার সম্বাবনা ছিলো।সহমর্মিতা জানাই।
১০ ই এপ্রিল, ২০২৩ সকাল ১১:৪১
প্রজ্জলিত মেশকাত বলেছেন: পায়ের রক্তনালীর কালার ডপলার করা হয়েছিলো। ডপলার স্টাডি স্বাভাবিক ছিলো। প্রচণ্ড মেন্টাল স্ট্রেস ছিল। এটাই মৃত্যু ডেকে আনার জন্যে যথেষ্ট।
৫| ১০ ই এপ্রিল, ২০২৩ দুপুর ১:১১
কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: আপনার মামাকে আল্লাহ জান্নাতে স্থান দিন
১৩ ই এপ্রিল, ২০২৩ রাত ১০:১৪
প্রজ্জলিত মেশকাত বলেছেন: দোয়া করবেন আপু।
৬| ১০ ই এপ্রিল, ২০২৩ দুপুর ২:১২
রাজীব নুর বলেছেন: মামার জন্য মায়া লাগছে।
দীর্ঘদিন ধরে আমার পা চাবায়। ডাক্তারের গেছে গেলে ক্যালসিয়া খেতে দেয়। তাতে পা চাবানো বন্ধ হয়নি।
১৩ ই এপ্রিল, ২০২৩ রাত ১০:১২
প্রজ্জলিত মেশকাত বলেছেন: ওটা কিছুনা রাজীব ভাই। তবে ১০মিগ্রা এমিট রাতে ১ টা করে ট্রাই করতে পারেন।
৭| ১০ ই এপ্রিল, ২০২৩ বিকাল ৩:৫৫
আমি সাজিদ বলেছেন: সোহেল মামার জন্য সমবেদনা। পরপারে স্রষ্টার সান্নিধ্যে ভালো থাকুন উনি, এই কামনাই করি। জীবন কতো ছোট আর অনিশ্চয়তায় ভরা , আহা !
১৩ ই এপ্রিল, ২০২৩ রাত ১০:১৩
প্রজ্জলিত মেশকাত বলেছেন: জীবন অতিক্ষুদ্র আর সবচেয়ে বড়কথা একেবারেই ভংগুর।
©somewhere in net ltd.
১| ০৯ ই এপ্রিল, ২০২৩ রাত ১১:৪৩
অর্ক বলেছেন: কষ্ট পেলাম জেনে। সমবেদনা জানাচ্ছি। ভালো থাকুন।