নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি মানুষ, এটাই আমার সবচেয়ে বড় পরিচয় ।

মাহমুদ পিয়াস

মানুষ হবার চেষ্টা করছি ! পারছি কই !

মাহমুদ পিয়াস › বিস্তারিত পোস্টঃ

একজন পতাকাওয়ালা

১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ৮:৩৩

চাচা, এই পতাকাটার দাম কতো ?
৩০ টাকা !
একটা পতাকার দাম কি আসলেই ৩০ টাকা ?
পতাকাওয়ালা চাচা এবার একটু থমকে দাড়ালেন ! তারপর আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বললেন, একটি পতাকার দাম, ৩০ লক্ষ শহীদের প্রান ! টাকা দিয়ে তো পতাকা কেনা যায় না মামা, আমি শুধু এই কাপড়টার দাম নিই !
চাচার কথা শুনে আমার ব্যস্ততা ভুলতে হলো ! তাকে বললাম, চাচা আপনার সাথে একটু হাঁটি ?
উনি জোর করে হেসে বললেন, সারাটা কাল তো একাই হেঁটে চলেছি ! এই শেষ বয়সে আর কারো দরকার হবে না, তবে আপনি আমার পাশ ধরে হাটতেই পারেন ! এই দেশটা স্বাধীন করেছি আপনাদের জন্যই তো !
চাচা কী মুক্তিযোদ্ধা, দেখে তো মনে হয় না ?
হা হা ! কেনো, পতাকা বিক্রেতাদের মুক্তিযোদ্ধা হতে নিষেধ আছে নাকি ?
না ঠিক তা নয় ! আজকাল তো মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সরকার অনেক কিছু করেছে, তাই বললাম !
এবার উনি একটা গাছের ছায়ায় বসে কপালের ঘাম মুছলেন ! তারপর বললেন, ৭১ এ আমার ছেলেটার বয়স ৩ বছর ! মুজিবের ৭ই মার্চের ভাষণ শুনেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলাম, কিছু একটা গণ্ডগোল ঘটবেই ! যদি সেরকম কিছু ঘটে তাহলে আমি যুদ্ধে যাবোই ! এপ্রিলের ২ তারিখে বর্ডার পার হয়ে চলে গেলাম হলঘরে ট্রেনিং নিতে ! তারপর ট্রেনিং শেষ করে যোগ দিলাম ২ নং সেক্টরে ! তখন খালেদ মোশাররফ আমাদের সেক্টর কমান্ডার ! কি চৌকশ বুদ্ধি তার ! যাই হোক তার অধীনে যুদ্ধ করাটাও আমার সৌভাগ্যই ! কখনো খেয়ে, কখনও না খেয়ে কতো অভিযানে গেলাম ! একবার তো শত্রুদের একটা গুলি আমার কানের ৩ সেন্টিমিটার দূর দিয়ে চলে গেছিলো !
তারপর মিলিটারিরা আমাদের গ্রামে আসলো ২৭শে আগস্ট ! গ্রামের মাতব্বর তখন কাশেম দফাদার ! আমরা তাকে কাশেম রাজাকার বলতাম ! এই কাশেম গিয়ে মিলিটারির কাছে খবর দিয়ে দেয় যে, আমি যুদ্ধে গেছি ! কয়দিন পরে মিলিটারিরা আমার বাসায় এসে আমাকে না পেয়ে আমার ছেলেটাকে পাশের বিশাল মেহগনি গাছের সাথে আছড়ে মেরে ফেলল ! তারপর ওর মাকে...... ! নাহ মেরে ফেলা বাদে যা যা করা যায়, তার সবই করেছিলো ! আমি সেদিনই খবর পাই কিন্তু নিজের স্ত্রী-সন্তানকে দেখতে আসতে পারি নি ! একেবারে বাসায় আসি ১৯শে ডিসেম্বর ! ততদিনে সবাই ধরেই নিয়েছিলো, আমি হয়তো কোথাও মরে পড়ে আছি, আমার লাশ হয়তো কুকুর শেয়ালে খেয়ে ফেলেছে !
আচ্ছা চাচা, তারপর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নিজের নাম রেজিস্ট্রেশন করেন নি ?
চাচা হেসে বললেন, এই একটা সার্টিফিকেট নেওয়ার জন্য তো যুদ্ধে যাই নি ! দেশকে স্বাধীন করে নিয়ে এসেছি, তার বিনিময় যদি আমি নিই, তাহলে কোথায় থাকলো আমার আদর্শ ? তবে.........
তবে কি চাচা ?
আমাদের গ্রামের কাশেম মাতব্বর ঠিকই মুক্তিযুদ্ধের খাতায় নাম লিখিয়ে ফেলেছে ! আজ আমাদের গ্রামের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি এই কাশেম রাজাকার ! জদিও তার নাম এখন, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল কাশেম চৌধুরী ! যে দেশে কাশেম রাজাকার মুক্তিযোদ্ধা হতে পেরেছে, সেখানে আমার জীবন থাকতে আমার নিজের জন্য মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেটের আবেদন আমি করবো না ! সরকারের দেওয়া সুযোগ-সুবিধা গ্রহন করবো না !
আজ আমার স্ত্রীর চোখে লাখ পাওয়ারের ভাঙ্গা ফ্রেমের চশমা ! সেটাতেই জোড়া তালি দিয়ে ২ বছর ধরে সেলাই মেশিনে এই পতাকা বানাচ্ছে ! আমি ইসলামপুর থেকে কাপড় কিনে আনি, আর সে পতাকা বানায় ! আর কয়েক বছর হয়তো বাঁচবো ! কিন্তু এই যে, লাল-সবুজকে সারাজীবন আঁকড়ে ধরে স্বাধীন মাটিতে মরতে পারছি, এর চেয়ে পবিত্র আনন্দ আর কিছুতেই হতে পারে না !

আপনার সবগুলা পতাকা আমাকে দেবেন চাচা ? আমি কিনতে চাই... !
হা হা, আপনাদের মতো কিছু ছেলে-পেলে রাস্তায় পাই, তাদের সাথে কথা বলতে, মেলাঘরের গল্প বলতে, মিলিটারির গল্প করতে আমার ভালো লাগে, তাই গল্প করি ! তার মানে এই না, আপনার কাছে আমার সব পতাকা বিক্রি করতে হবে ! আমি তো ৯ মাস যুদ্ধ করে ১টা পতাকা অর্জন করেছি, আপনাদের তো যুদ্ধ করতে হবে না, রক্ত ঝরাতে হবে না, আপনারা শুধু এই পতাকাটারে রক্ষা করবেন ! পারবেন না আংকেল ?
এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া কি এতই সোজা ! তবুও কথা দিলাম, আমাদের জন্য দোয়া করবেন চাচা ! আপনাদের স্বপ্ন যেন আমরা পূরণ করতে পারি !
একগাল হেসে পতাকাওয়ালা চাচা বললেন, শুধু দোয়ায় কাজ হয় না আংকেল, যদি কাজই হতো তাহলে তো জায়নামাজে বসে আল্লাহর কাছে দুহাত তুলে দোয়া করেই দেশ স্বাধীন করে ফেলতাম, অস্ত্র হাতে নিলাম কেনো ? তারপর চাচা বিদায় নিলেন, আমি তার চলে যাওয়া দেখতে থাকলাম, যতক্ষণ তাকে দেখা গেলো ! তারপর আমার মনে হলো, দিনের সূর্যটা যেন নিভে গেলো আজকের মতো !

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ৮:৪৫

স্বপ্নের শঙ্খচিল বলেছেন: পতাকা বিক্রেতাদের মুক্তিযোদ্ধা হতে নিষেধ আছে নাকি ?
........................................................................................
আমি তাদের কথা বলতে চাই,
আমার কবিতায় তাদের চীৎকার শুনতে পাই ।

২| ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ সকাল ৯:৫৫

রাজীব নুর বলেছেন: আসলেই দোয়ায় কাজ হয় না।
তবে ---- না থাক কিছু না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.