![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমাদের জাতীয়তাবাদের ইতিহাস
জাতীয়তাবাদ হলো একটি আদর্শ যেখানে জাতিকে মানব সমাজের কেন্দ্রীয় অবস্থানে স্থাপন করা হয়, এবং অন্যান্য সামাজিক ও রাজনৈতিক আদর্শকে জাতিগত আদর্শের পরে স্থান দেয়া হয়। ইংরেজীতে একে বলা হয় ন্যাশনালিজম ।ন্যাশনালিজমকে ৫ ভাগে ভাগ করা যায়,
১- সিভিক ন্যাশনালিজম
২- এথনিক ন্যাশনালিজম
৩- রিলিজিয়াস ন্যাশনালিজম,
৪- লিঙ্গুইস্টিক ন্যাশনালিজম এবং
৫- ঔপনিবেশ বিরোধী ন্যাশনালিজম।
বাংঙ্গালী জাতীয়তাবাদের ইতিহাস:
জাতীয়তাবাদ সুপ্রাচীন কাল থেকেই বঙ্গীয় বদ্বীপে ক্রমাগত জনবসতি গড়ে উঠেছে এবং এভাবে পূর্ব ভারতে উদ্ভব ঘটেছে একটি ঘনবিন্যস্ত দেশ ও জনগোষ্ঠীর। রাজা শশাঙ্ক, পাল ও সেন রাজাদের শাসনের পর ত্রয়োদশ শতকের গোড়ার দিকে তুর্কীর সুলতান ইখতিয়ার উদ্দিন বখতিয়ার খলজীর বাংলা জয় এবং বাংলায় মুসলিম শাসন প্রবর্তন জাতি গঠনে এক নতুন মাত্রা যোগ করে। এরপর আফগান শাসনের সময় অসংখ্য ছোট ছোট রাজ্য একত্রিত হয়ে বদ্বীপের এ আঞ্চল ‘বাঙ্গালা’ নামে পরিচতি লাভ করে জাতীয়তাবাদের উত্তরণ ঘটায়।তুর্ক-আফগান শাসকদের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলা ভাষার বিকাশের পাশাপাশি আঞ্চলিক ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয় এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায়। বাংলা ভাষার উন্নয়ন ছাড়াও তাদের অপর বিরাট অবদান ছিল হিন্দু ও মুসলমানদের অংশীদারিত্ব ও সহযোগিতার ভিত্তিতে বাঙালি জাতিসত্তার বিকাশ। মুগল আমলে এ প্রক্রিয়া আরও জোরদার হয়।
এরপর আমাদের জাতীয়তাবাদ বিভিন্ন পর্যায়ের অভিজ্ঞতার সঞ্চার করে বর্তমান রূপ লাভ করেছে।
ঔপনিবেশ বিরোধী জাতীয়তাবাদ:
ভারতীয় উপমহাদেশে এই জাতীয়তাবাদ প্রথমে ব্রিটিশ বিরোধী এ্যান্টি কলোনিয়াল রূপে প্রবেশ করে।জাতি হিসেবে বাংলার নিজস্ব সত্তার অব্যাহত বিকাশের পথে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন প্রবল বাধা হয়ে ওঠে। শিক্ষা, প্রশাসন ও অর্থনৈতিক নানা নীতির মাধ্যমে ঔপনিবেশিক শাসন দেশে সুদূরপ্রসারী পরিবর্তনের প্রক্রিয়া চালু করে। ঔপনিবেশিক পরিবর্তনগুলো বিগত কয়েক শতকে গড়ে-ওঠা সামাজিক কাঠামোকে দুর্বল করছিল, এমন কি কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাকে ধ্বংসও করে দিয়েছিল।এর ফলে ব্রিটিশ বিরোধী মনোভাব থেকে ঔপনিবেশ বিরোধী জাতীয়তাবাদ এদেশে প্রবল আকার ধারন করে।
ধর্মীয় জাতীয়তাবাদের বিকাশ:
ঔপনিবেশিক শাসনের শেষের দিকে আমাদের জাতীয়তাবাদ তিক্ত আভিজ্ঞতার সঞ্চার করে। বঙ্গভঙ্গের সময় (১৯০৫) হিন্দু ভদ্রলোক এবং মুসলিম আশরাফ শ্রেণীর মধ্যে এক মারমুখী পরিস্থিতি দেখা দেয়। হিন্দু ভদ্রলোকেরা বাংলার অখন্ড সত্তার নামে বঙ্গভঙ্গের বিরোধিতা করে, আর মুসলিম আশরাফ শ্রেণী মুসলমানের কল্যাণের দোহাই দিয়ে বঙ্গভঙ্গ সমর্থন করে। বঙ্গভঙ্গের ফলে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে সৃষ্ট উত্তেজনা আর কখনোই প্রশমিত হয় নি। ১৯৩৫ ও ১৯৪৬ সালের নির্বাচনে মুসলমানরা মুসলিম জাতীয়তাবাদের পক্ষে ভোট দেয়, ভারতীয় বা বাঙালি জাতীয়তাবাদের পক্ষে নয়। বাংলা বিভাগের (১৯৪৭) ফলে অন্তত আঞ্চলিক অর্থে বাঙালি জাতীয়তাবাদের সকল সম্ভাবনাই তিরোহিত হয়।
ধর্মভিত্তিক পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদ:
মুসলিম জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে পাকিস্তানের কাঠামোর আওতায় বাংলা বিভক্ত ও পূর্ববঙ্গ প্রদেশ সৃষ্টির ফলে আপাতদৃষ্টিতে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বিরোধের নিষ্পত্তি ঘটে। কিন্তু অচিরেই পূর্ববাংলার মানুষ ধর্মভিত্তিক পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদের অসারতা বুঝতে পারে। একটি জনগোষ্ঠীর জাতীয়তাবাদ আত্মপরিচয়ের চেতনা থেকে অনুপ্রেরণা ও সংসক্তি আহরণ করে যা ইতিহাস, ভূগোল, জাতিসত্তা, ধর্ম, ভাষা ও কৃষ্টির অভিজ্ঞতার অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে গড়ে ওঠে। দুর্ভাগ্যবশত, ধর্ম ছাড়া পশ্চিম পাকিস্তানের সঙ্গে পূর্ববাংলার (পূর্ব পাকিস্তানের) অভিজ্ঞতার কোনো অংশীদারিত্ব ছিল না। অন্যান্য সমন্বয়কারী উপাদান না থাকলে কিন্তু খোদ ধর্ম জাতিগঠনে বিশেষ কোনো কার্যকর ভূমিকা রাখে না। এবং ধর্মের ভিত্তিতে জাতিরাষ্ট্র গঠিত হওয়ায়, মুসলমান ছাড়া অন্য সবাই রাষ্ট্রটাকে নিজেদের বলে গ্রহন করতে পারলো না। তাছাড়া, ধর্মের জোরে ভাষা এবং জাতিগত পার্থক্যও ঘুচলো না, ব্যাবসা-চাকরীসহ রাষ্ট্রীয় কর্মকান্ডে বৈষম্য তৈরী হলো এবং ফলাফল জাতিরাষ্ট্রে'র পতন!
বাঙালি জাতীয়তাবাদ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা:
পূর্ববাংলার লোকদের মধ্যে বঞ্চনা ও অবদমনের বোধ থেকে একটি নতুন সচেতনতা সৃষ্টি হয়। সকল রাজনৈতিক দল, বিশেষত আওয়ামী লীগ ধর্মভিত্তিক পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদের অসারতা বুঝতে পারে। ষাটের দশক থেকে পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতারা বিশেষত ছাত্র সংগঠনগুলো পাকিস্তানের সঙ্গে একটি নতুন সম্পর্কের কথা ভাবতে শুরু করেন, যার লক্ষ্য ছিল পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে বা এমনকি ফেডারেল সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে হলেও পূর্ব পাকিস্তানে একটি নতুন জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। ষাটের দশকের শেষদিকে এ চেতনা বাঙ্গালি জাতীয়তাবাদের রূপ পরিগ্রহ করে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে এ অঞ্চলের জনগণ তাদের নতুন চেতনা ও সংহতির পরিচয় ব্যক্ত করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর দল আওয়ামী লীগ এ নতুন জাতীয়তাবাদের মুখ্য প্রবক্তা হয়ে ওঠে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর ফেডারেল ধারণার সঙ্গে কেন্দ্র একমত হতে পারে নি এবং এরই ফলে সংঘটিত হয় বাঙালি জাতীয়তাবাদভিত্তিক মুক্তিযুদ্ধ।
মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গণহত্যা ও নির্যাতন বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিকে আরও সুদৃঢ় করে।
স্বাধীনতা পরবর্তী জাতীয়তাবাদ:
সাধারণ বাঙালির কাছে ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র এ দুটি ধারণাই ছিল সম্পূর্ণ নতুন ও অগ্রহণযোগ্য। স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম বঙ্গবন্ধু'র নেতৃত্বে এথনো-লিঙ্গুয়াল ( ভাষা-জাতিভিত্তিক) ন্যাশনালিজম করা হয়েছিল, যার ভিত্তি ছিল এথনিক বাঙ্গালি ও বাংলাভাষী জাতিরাষ্ট্র।কিন্তু জাতীয়তাবাদের সঙ্গে ‘বাঙালি’ শব্দটি ব্যবহার কঠোরভাবে সমালোচিত হতে থাকে যখন সরকার ও এর সমর্থকরা বাঙালি জাতীয়তাবাদের পরিবর্তে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ বলাই সঙ্গত বিবেচনা করেন।সমালোচকদের দৃষ্টিতে বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের মধ্যে গুণগত পার্থক্য রয়েছে। বাঙালি জাতীয়তাবাদের বদলে বাংলাদেশী বা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদ বলায় সুবিধা হলো এ যে, এতে একদিকে যেমন দেশের অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর মানুষ অন্তর্ভুক্ত হতে পারে, আবার অন্যদিকে ভারতের অন্তত একটি রাজ্যের বাঙালি নাগরিকদের এর আওতার বাইরে রাখা যায়।এরপর প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান আসার পর, ধর্ম-ভাষা বা বর্ণে'র মত কোন প্রাকৃতিক জাতিগত বৈশিষ্ট ধারনের বদলে সিভিক ন্যাশনালিজম সূচনা করেন, যার ভিত্তি হচ্ছে, রাষ্ট্রে'র বর্ডারের ভেতর বসবাসরত বর্তমান সব নাগরিক মিলে জাতিরাষ্ট্র। এরফলে ধর্ম-ভাষা বা বর্ণ'র ভিত্তিতে সবাই একটা কমন প্ল্যাটফর্ম খুঁজে পেল।
কিন্তু সাধারণ লোকের কাছে তর্কটি শুধুই একটি তত্ত্বীয় ব্যাপার, কেননা জাতীয়তাবাদের নাম বাঙালি বা বাংলাদেশী যাই হোক, তারা বাংলাদেশের বাসিন্দা হিসেবে নিজেদের ঐতিহ্য বৈচিত্র্যের মধ্যেও ঐক্যের আদর্শবাহী একটি জনগোষ্ঠী, একটি জাতি ও একটি জাতীয়তা নিয়ে বসবাস করতে গর্ববোধ করে।
____ মাহতাব উদ্দিন___
২| ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:১৯
মাহতাব উদ্দিন বলেছেন: ধন্যবাদ।
৩| ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:২৭
ডক্টর ওসমান বলেছেন: আপনার প্রেসক্রিপশন টা ভালো হয়েছে।
৪| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৫:৪২
মাহতাব উদ্দিন বলেছেন: ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১|
২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ২:৪৮
রেজওয়ানা আলী তনিমা বলেছেন: তথ্যসমৃদ্ধ পোস্ট । ধন্যবাদ।