নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার সীমিত জ্ঞান কারো উপকারে আসলে শান্তি পাই

মায়মুনা আহমেদ

আমার সীমিত জ্ঞান কারো উপকারে আসলে শান্তি পাই...

মায়মুনা আহমেদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ডায়েরি থেকে...(৪)

০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১২:৪৭



বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

২৯ নভেম্বর ২০১৮। প্লেন বেলা ১২ঃ৩০ টায় জেদ্দায় ল্যান্ড করার কথা থাকলেও ফ্লাইট ডিলের কারণে দুপুর ১ঃ৩০ টায় ল্যান্ড করলো। প্লেন থেকে নেমে শাটল বাসে করে এয়ারপোর্টের নির্ধারিত অংশে গেলাম। ইমিগ্রেশনে সবাইকে লাইনে দাড় করাচ্ছিল। কোন লাইনে দাড়াবো বুঝতে পারছিলাম না। নানুর অবস্থাও খারাপ। এতো বড় বড় লাইন পার করতে ঘন্টা পেরিয়ে যাবে। হঠাৎ এয়ারপোর্টের এক লোক একটা ফাকা জায়গা দেখিয়ে লাইন করতে বললো। আলহামদুলিল্লাহ! ৫ মিনিটের মধ্যে ইমিগ্রেশনের কাজ শেষ হলো

ফ্রেশ হয়ে বেল্টে ব্যাগ খুজতে গেলাম। আব্বু একপাশে আর আমরা দুই বোন অন্য পাশে ব্যাগ খুজছি। সবার ব্যাগ আসে। নিয়ে নিয়ে চলে যায়, আমাদের ব্যাগ তো আসে না। ৫/৭ মিনিট পর এক লোক উর্দুতে জিজ্ঞেস করলো , "এই ব্যাগগুলো কি আপনাদের?" পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখি আমাদের কাল্লু, লাল্টু, বল্টু, গোল্টু সব একসাথে দাঁড়ানো। কি আজিব! সবগুলো ব্যাগ একসাথে আমাদের পিছনে কতোক্ষন যাবৎ দাড়িয়ে আছে কে জানে!

লোকটা এয়ারপোর্টের কর্মী। ট্রলিতে ব্যাগ তুলে আমাদের এগিয়ে দিলো। আমরা ধন্যবাদ জানিয়ে বাকী সিকিউরিটি প্রোসেডিউর পার করে বাইরে বেরিয়ে এলাম। এবার কোথায় যাবো!? এজেন্সি থেকে বলেই দিয়েছিল, কাগজ /ভিসা দেখালে সরকারি কোন বাসে উঠতে হবে ওরাই দেখিয়ে দিবে। সমস্যা হচ্ছে, এখানে কার সাথে কথা বলবো!? সামনে এগিয়ে গিয়ে, একে ওকে জিজ্ঞেস করে, কখনো ইশারা কখনো উর্দুতে প্রশ্ন করে বাস পর্যন্ত পৌছালাম। বাসে উঠে দেখি, বেশিরভাগ যাত্রীই পাকিস্তানি। একজন যাত্রীর সাথে কথা বলে আব্বু সিম কিনে আনলো। প্রায় আধাঘন্টা হয়ে গেছে! বাস ছাড়ার কোনো নাম নিশানা নেই!
ড্রাইভার পাসপোর্ট নিয়ে নিয়েছিল। কিছুক্ষণ পর ড্রাইভারের সাথে আরেক লোক এসে আমাদের ডেকে বাস থেকে নামালো। জ্বি, আমাদের ভুল বাসে বসানো হয়েছিলো। আবার ব্যাগ-ব্যাগেজ নামিয়ে অন্য বাসে তুলে বাসে উঠে বসলাম । এবারের বাসের সবাই বাঙালি। বাসে উঠার ১০ মিনিটের মধ্যে বাস ছাড়লো।

প্রচন্ড ক্লান্ত! নানুর উপর জমানো রাগ-অভিমানগুলো ক্লান্তিকে বাড়িয়ে দ্বিগুণ করে দিচ্ছিল। উমরাহ-ইহরামের জন্য সবর করতে হচ্ছে। কিচ্ছু বলতে পারছি না। চোখ বন্ধ করে মুড রিফ্রেশ করায় ব্যস্ত হলাম। দোয়া করছিলাম। ধৈর্য ধরার এই কঠিন পরীক্ষায় যেন শুধু পাশ করে যাই।
একই লাইনের পাশের সিটে আব্বু বসেছে। কখনো ছোট খাটো মরু এলাকা বা ঘোড়ার খামার বা উটের খামার পার হলে আমাকে ডেকে ডেকে দেখাচ্ছিল। আমিও ছোট্ট মেয়ে সেজে উপভোগ করছিলাম।

দেড় -দুইঘন্টা পর গাড়ি মক্কায় প্রবেশ করলো। আর কতদূর? আর কতোক্ষন? কখনো এই জানালা কখনো ঐ জানালা দিয়ে উঁকিঝুকি মারছিলাম। হঠাৎ আবরাজ আল বাইতকে দেখলাম এক নজর! চলে এসেছি কি!? গাড়ি তো থামে না। একটু পর গাড়ি একটা পয়েন্টে থামলো। একটা লোক উঠলো বাসে। ড্রাইভার তাকে সব পাসপোর্ট দিলেন। তারপর নিজেরা কি সব কথা বললো। দেখে মনে হচ্ছিল ড্রাইভার উনার কাছে পুরো বাসজার্নির রিপোর্ট দিচ্ছিল। আমরা যে অন্য বাসে ছিলাম, এটাও বলেছে! আমি বুঝেছি ;)

লোকটা আবার বাসে উঠে আমাদের পাচজনকে নামতে বললো। একটা ট্যাক্সি ঠিক করে দিলো আর পাসপোর্ট ফেরত দিলো। ট্যাক্সি ড্রাইভার ও পাকিস্তানি। ঠিকমতো হোটেল পর্যন্ত পৌঁছে দিলো। হোটেলে আমাদের বুকিং এর কাগজ দেখানোর পর ব্যাগ ট্রলিতে করে নিয়ে গেল আর আমরা রিসিপশনে অপেক্ষা করছিলাম। এমনসময় মাগরিবের আজান কানে এলো।

হেরেম শরীফের আজান শুনছি! অনুভূতিগুলো লিখে প্রকাশ করা সম্ভব না। শুধু অস্থির লাগছিল। এভাবে আর কতো সময় বসে থাকবো। হেরেমে নামাজ, তাওয়াফ, উমরাহর সুযোগ কখন পাবো! আর কতোক্ষণ?

কে যেন বলে দিয়েছিল, "উমরাহ হচ্ছে পারমিশন। আগে উমরাহ না করে কোনো ওয়াক্তের জামাতে অংশ নেয়া যাবে না। " একথা মেনে চুপ করে বসে থাকতে হচ্ছিল। এতো কাছে থেকেও হেরেমে যেতে পারছিলাম না। সবাই ক্লান্ত তাই মোয়াল্লেমের অপেক্ষা না করে আব্বু নিজেই রিসিপশনে বুকিং নাম্বার দেখিয়ে রুমের চাবি নিলো। রিসিপশন থেকে বের হতেই মোয়াল্লেমের সাথে দেখা হলো। রুম পর্যন্ত এগিয়ে দিলেন। রুমে ঢুকে আমরা speechless!

আলহামদুলিল্লাহ! আলহামদুলিল্লাহ! হেরেম ভিউ রুম! জানালা খুলে দিলো। ওই যে আমাদের হেরেম শরীফ! ঐ যে তিন গম্বুজ! কিং ফাহাদ গেট! হেরেমের মিনার! মন ভরে দেখলাম। তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নামাজ পড়ে নিলাম। ব্যাগে খাওয়ার যা কিছু আছে বের করে খেয়ে আমরা উমরাহর জন্য তৈরি। আর দেরি সহ্য হচ্ছে না। মোয়াল্লেমকে ফোন দেয়ার পর তিনি এশার জামাত হেরেমে পড়তে বললেন এবং এশার নামাজের পর আমরা যে এজেন্সির মাধ্যমে গিয়েছি সেই এজেন্সির অন্যান্য গ্রুপের সাথে একসাথে উমরাহ পালন করা হবে জানালেন।

আর বাধা নেই। মোয়াল্লেম বলেছে হেরেম শরীফে জামাতে নামাজ পড়তে পারবো। তাড়াতাড়ি রুম ছেড়ে বেরিয়ে গেলাম। এশার আযান হচ্ছে। হেটে যাচ্ছি। আশে পাশে আরো কতো রঙের, কতো ঢঙের মানুষ! সবাই চলছি হেরেমের উদ্দেশ্যে। হেরেমের টাইলসে প্রথম দাড়িয়ে... বোবা হয়ে গিয়েছিলাম। হাটতে হাটতে কিং ফাহাদ গেটের কাছে পৌছালাম কিন্তু গেট বন্ধ! ভলিন্টিয়াররা অন্য রাস্তা দেখাচ্ছে। এই রাস্তা দিয়ে গেলে কোথায় পৌছাবো জানি না। সবার সাথে শুধু ছুটছিলাম। escalator এ করে দোতলায় পৌছালাম। তাড়াতাড়ি জায়গা খুজে নামাজে দাড়ালাম। ইকামাত হলো। জীবনে প্রথম জামাতে নামাজ আদায় করলাম। কেন যেন কাপছিলাম! কেমন যেন ঘোরের মতো লাগছিল সবকিছু! আমি কি স্বপ্নে না বাস্তবে!

শায়খ আবদুর রহমান আস-সুদাইসী, টিভিতে তার ইমামতির জামাত দেখার জন্য কতো অপেক্ষা করেছি। এই ওয়াক্তে না হলে অন্য ওয়াক্তে খোঁজ রেখেছি, কে ইমামতি করছেন! আজ তার পিছনে দাড়িয়ে জামাতে নামাজ আদায় করছি, আলহামদুলিল্লাহ!

নামাজ শেষে সামনে এগিয়ে গেলাম। আমার সামনে কা'বা! কা'বা আমার সামনে! দোয়ার জন্য হাত তুললাম। আব্বুটা মাঝেমধ্যে খুব অবুঝ হয়ে যায়। আমার মোনাজাত করা দেখে কানের কাছে টেপরেকর্ডারের মতো বাজতে শুরু করলো। কেন রে বাবা! আর জায়গা নাই! আমার কাছে এসেই জোরে জোরে দোয়া পড়তে হবে! সরে গিয়ে দোয়া করলাম। আবার এসে তাগাদা দিতে শুরু করলো, সবাই আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। আগে তো উমরাহ করা দরকার। দোয়ার তো আরো সময় পাবা। সংক্ষিপ্ত করো।

সবর...সবর...সবর...!

কোনোরকম মোনাজাত করে গেলাম, সবাইকে(এজেন্সির গ্রুপমেট) যেখানে দাড়াতে বলেছে, সেখানে গেলাম। সবাই একসাথে হয়েছি এমনসময় একজন অজুর কথা বললো। ব্যাস! মোয়াল্লেম গেল গ্রুপের কিছু মেম্বারদের নিয়ে অজু করাতে আর আমরা অপেক্ষা করতে থাকলাম। আমরা ৮৪ নং গেটের কাছে ছিলাম। এই গেটের নাম "বাব -এ- নিসা"। বড় বড় সেলফ দিয়ে ঘেরাও করা, মহিলাদের জন্য রিজার্ভ জায়গা।

সবাই অজু করে আসার পর শুরু হলো মাতাফের উদ্দেশ্যে হাটা। মাতাফে যাওয়ার সময় মোয়াল্লেম বিভিন্ন দিক-নির্দেশনা দিচ্ছিল। কা'বা শরীফ দেখে মোনাজাত করে আমার তৃপ্তি হয়নি। আমি শুধু দোয়া করছিলাম, উমরাহ পালন শেষে যেন আমার এমন অতৃপ্তি না থাকে। কা'বার কাছে যাচ্ছি! নানুকে আমি ধরে, আমার সাথে করে নিয়ে যাচ্ছি। সিড়ি দিয়ে নেমে মাতাফে দাড়িয়ে তার প্রথম কথা ছিল, "চল, যাই, কা'বা শরীফ ধরে আসি"।

ফাহাদ গেটে যাওয়ার সিড়ি দিয়ে মাতাফে নামলাম। প্রতিটা সিড়ির সামনে বড় বড় করে গেটের নাম লেখা আছে। যে যেই গেট দিয়ে বের হবে বা ঢুকবে সেই নামের সিড়ি দিয়ে উঠানামা করলে আসা-যাওয়া সহজ হবে। হাজরে আসওয়াদ থেকে তাওয়াফ শুরু হয়। তাই মাতাফে নেমে আমাদের কিছুটা হেটে গিয়ে তাওয়াফ শুরু করতে হবে। মাতাফে নেমেই বুঝেছি, এতোকিছুর খেয়াল রাখতে গেলে আমি আমার মতো করে ইবাদাত করতে পারবো না। এছাড়া আমাদের গ্রুপে নানু সবচেয়ে বয়স্ক তার উপরে অসুস্থ মানুষ। সবার সাথে নানু তাল দিয়ে চলতে পারবে না। আব্বুকে ডেকে বললাম, "আমাদের যদি খুঁজে না পাও, চিন্তা করো না। কাজশেষে আমরা(আমি আর নানু) রুমে চলে আসবো। " আব্বু বললো, "সবাই একসাথেই থাকবো, অসুবিধা নেই।"

দূর থেকে সবুজ রঙের লাইট দেখা যায়। আমরা লাইট পর্যন্ত পৌঁছে কা'বার দিকে ফিরলাম। কা'বার এই অংশে হাজরে আসওয়াদ বসানো। তাওয়াফের নিয়ত করে তাকবীর পড়ে তাওয়াফ শুরু করলাম। আমি নানুকে ধরে রেখেছিলাম। আমাদেরকে কেউ ধরে রাখেনি আর আমি চেষ্টাও করিনি অন্য কাউকে ধরে রাখার। কালেমা, দরুদ শরীফ, টুকটাক দোয়া পড়তে পড়তে সামনে এগিয়ে যাচ্ছি। আমার চোখের সামনে সবাই হারিয়ে গেল মানুষের সমুদ্রে !

অঘোষিতভাবে নানুকে আমার দায়িত্বে ছেড়ে সবাই আলাদা হয়ে গেল! সে মুহূর্তে একটু রাগ-অভিমান হচ্ছিল ঠিক কিন্তু নিজেকে বোঝাচ্ছিলাম আল্লাহ আমাকে সম্মানিত করতে চাচ্ছেন, আমি কেন পালাই পালাই করছি!? আর আমি তো আমার মানুষগুলোকে চিনি, এরা জেনেবুঝে আমাকে কষ্ট দিবে না। কোরআন শরীফের ঐ আয়াতটা মনেপড়ে গেল, "And they plan, Allah plan; Allah is the best of planners." আলহামদুলিল্লাহ! আমি নতুন পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত।

নানুকে বললাম, "চল, আবার নতুন করে শুরু করি। আমি যা যা বলবো, তুমি তা-ই করবা। " নানু সায় দিলো। হাজরে আসওয়াদের সামনে এসে আবার নতুন করে নিয়ত করে তাওয়াফ শুরু করলাম। প্রতি চক্করে নানুকে শিখিয়ে দিচ্ছিলাম, "নানু এই দোয়া পড়, ঐ দোয়া পড়, নিজের মনে যা আসে বলতে থাকো, চাইতে থাকো, আল্লাহর প্রশংসা কর, দরুদ পড়"। প্রতি চক্করে নানুকে গাইড করছিলাম। তৃতীয় কি চতুর্থ চক্করের সময় নানু আবার বললো, " কা'বা ঘর ধরবা না? চল যাই, কা'বা ঘর ধরে আসি "। আব্বুর সাহায্য ছাড়া কা'বা ঘর ধরবো! কিভাবে সম্ভব!? চট করে মাথায় এলো, কেন সম্ভব না!? আমি তো কারো সাহায্য ছাড়াই উমরাহ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং করছি। এতো বড় কাজে যিনি আমাকে সাহায্য করছেন তিনিই সব কাজে সাহায্য করবেন!

নানুকে বললাম, " চল যাই"। হাটতে হাটতে প্রথম পৌছালাম মাকামে ইবরাহীমের কাছে। আলহামদুলিল্লাহ! নিজে দেখলাম, নানুকে দেখালাম। পাথরে হযরত ইব্রাহিম আঃ এর আঙুলের কয়টা ছাপ আছে? কোনটা বড়, কোনটা ছোট? নানু দাড়িয়ে দাঁড়িয়ে এতোটা গভীরভাবে মাকামে ইবরাহীম দেখলো।

আবার হাটতে হাটতে কা'বার কাছাকাছি চলে গেলাম। এই পাশ দিয়ে ধরবো!? মানুষ তো! অসুবিধা নেই, মহিলা মানুষ। তাদের উপর দিয়ে মাত্র একটা বারের জন্য কা'বার গিলাফে হাত লাগালাম, নানুকে ব্যবস্থা করে দিলাম। আমি তখন বোবা, অনুভূতি শূন্য! কি হলো এটা!? আল্লাহ এটা কি প্ল্যান করলো! আমি এতোটা সৌভাগ্যবতী! ঘোরের মধ্যে ছিলাম। দেয়ালের ঐ পাশটায় একটু ভীড় বেশি ছিল। নানুকে বললাম, "চল সামনে যাই"। সামনেই রুকুনে ইয়েমেনি! আমি আর নানু তাড়াতাড়ি এগিয়ে গেলাম। এবার আমি মনভরে কা'বা স্পর্শ করলাম। কা'বার গিলাফ, রুকুনে ইয়েমেনির শুরু থেকে শেষ ধরে দেখলাম, চুমু খেলাম। আমরা নানী-নাতনী কান্নায় ভেঙে পড়লাম। এছাড়া স্রষ্টার কাছে নিজেকে মেলে ধরার আর কোনো ভাষা আমার জানা নেই।

আমাদের কান্না দেখে পাশে যারা ছিল তারাও হুমড়ি খেয়ে পড়তে লাগল। সবার একটাই চাওয়া, একটাই প্রার্থনা। মাফ করে দাও, ক্ষমা করো তোমার এই গুনাহগার বান্দাকে...

আবার হাটতে হাটতে দেখি হাজরে আসওয়াদের জন্য পুরুষ-মহিলা লাইন করে দিয়েছে। আশায় ভর করে লাইনে দাড়িয়ে গেলাম। কিছুক্ষণ পর মনে হলো, আগে উমরাহর কাজ শেষ করা দরকার। তাই লাইন থেকে বেরিয়ে বাকি চক্কর পুরা করে দুই রাকাআত নামাজের জায়গা খুজে নিলাম। জানি না কেন, কা'বা শরীফের গেট বরাবর নামাজে দাড়ানোর প্রতি আমার একটু দুর্বলতা আছে। এবারও আল্লাহ সহজ করে দিলেন, আলহামদুলিল্লাহ!

নামাজ ও মোনাজাত শেষে জমজমের পানি পান করলাম। খাদিমদের জিজ্ঞেস করে সাফা পাহাড়ে গেলাম। নিজে দেখলাম, নানুকে দেখালাম। নানুকে ইতিহাস-ঘটনাগুলো বললাম। সা'য়ীর নিয়ত করে, আল্লাহর সাহায্য চেয়ে, নিয়ম মেনে সা'য়ী শুরু করলাম। সাফা-মারওয়া পাহাড় টাইলসে মোড়া থাকলেও পাহাড়ের উঁচু-নিচু ঢাল বুঝা যায়। উঠতে -নামতে নানুর কষ্ট হচ্ছিল। একে তো বয়স্ক মানুষ, দ্বিতীয়ত অসুস্থ! নানুর মধ্যে ঠান্ডার ঔষধের প্রতিক্রিয়া চলছে। ক্লান্তি এবং ঔষধের প্রতিক্রিয়ার জন্য তার শরীর ছেড়ে দিচ্ছিল। আমিও বিশিষ্ট ভালো মানুষ, সাথে পার্স নেইনি। তাই নানুকে হুইল চেয়ারে বসাতে পারছিলাম না। কিছু করার নাই! আল্লাহর সাহায্যের উপর ভরসা করে সা'য়ী শুরু করলাম।

নিয়ম নিয়ে কোনো জায়গায় দ্বিধাদ্বন্দে পড়লে মালয়েশিয়ান বা ইন্দোনেশিয়ান বড় গ্রুপগুলোর সাথে মিশে যেতাম। ওরা কি করছে না করছে খেয়াল করে আবার আলাদা হয়ে যেতাম। চতুর্থ সা'য়ীর সময় নানুর এনার্জি লেভেল এক্কেবারে কমে গেছে। আমাকে বলছিল, "আর কতো বাকী? বাকীটা কালকে করা যায় না?" বাকী সা'য়ীগুলোতে নানু হাটতে হাটতে ঘুমিয়ে যাচ্ছিল৷ কষ্ট হলেও আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লার দয়ায় বাকীটা কমপ্লিট করে মারওয়া পাহাড়ে গিয়ে বসলাম। নানুকে বললাম, "তোমার উমরাহ প্রায় সম্পন্ন, এখানে দোয়া করে নাও। রুমে গিয়ে আমরা চুল কাটবো।"

আমার দোয়া-মোনাজাত শেষ করার পর দেখি নানু ঘুমিয়ে গেছে! নানুকে ডেকে তুললাম। এবার গেট খুঁজে হোটেলে ফেরার পালা। আমার স্যান্ডেল আমার সাথেই ছিলো, নানুরটা আম্মুর কাছে। কি করবো? কিভাবে যাবো? নানুকে আমার স্যান্ডেল পড়তে দিয়ে আমার খালিপায়ে হেটে যেতে হবে! হোটেল কাছেই আবার মক্কা পরিষ্কার শহর, তবুও... এসব হাবিজাবি ভাবতে ভাবতে ফাহাদ গেট পর্যন্ত চলে এলাম। কি ভেবে ফাহাদ গেট দিয়ে না বের হয়ে বাবে নিসার(৮৪নং) দিকে হাটা দিলাম। গেটের কাছে গিয়ে দেখি, আম্মু আর পল্টু দাড়ানো। আমার খালিপায়ে হেটে যেতে হবে না! তাই, মনে মনে আল্লাহকে অনেক শুকরিয়া জানাচ্ছিলাম কিন্তু প্রকাশ্যে এমন পার্ট নিচ্ছিলাম যেন তাদেরকে আমার কোনো দরকার-ই নেই।

রাত ১২ঃ৩০ বেজে গেছে। রুমে এসে দেখি আব্বু তখনো ফেরেনি। ১০ মিনিটের মধ্যে আব্বুও চলে এলো। রুমে ঢুকে আমরা চুল কেটে, গোসল করে নিলাম। আলহামদুলিল্লাহ! আমাদের উমরাহ সম্পন্ন। আব্বু খাবার নিয়ে এলো। খাওয়া দাওয়া করলাম আর সবার অনুভূতির কথা শুনলাম। আমি আর নানু কিন্তু পার্ট নিতে উস্তাদ! কা'বা / হেরেম শরীফের এটা ধরেছ? ঐটা ধরেছ? এটা দেখেছ- ঐটা দেখেছ? প্রশ্ন করে খুব পার্ট নিচ্ছিলাম।


ছবি- নেট

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১২:৫৭

রাজীব নুর বলেছেন: ভাগ্যিস ডায়েরী লিখে ছিলেন। তাই আমরা পড়তে পারছি।

০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৪:২৯

মায়মুনা আহমেদ বলেছেন: কি যে হাবিজাবি লিখছি, আল্লাহ-ই ভালো জানেন! সব সময় প্রশংসা করার জন্য ধন্যবাদ

২| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:০১

সৈয়দ তাজুল ইসলাম বলেছেন:
ব্লগে স্বাগতম

আপনার লেখা অনেকটাই ভাল। লেখে যান....



উমরাহে আপনার কান্না ফজিলতপূর্ণ হোক।


আপনি কিন্তু আমাদের জন্য কাঁদেননি(!)

০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ভোর ৬:৪৩

মায়মুনা আহমেদ বলেছেন: কে বললো কান্না করিনি! হাতিমে দাড়িয়ে সবার জন্য দোয়া করেছি, আল্লাহ সবাইকে কবুল করে নিক। লেখাগুলো কারো উপকারে আসলে লিখে যাওয়া সার্থক হবে। জাজাকাল্লাহ খাইরান।

৩| ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সকাল ১১:২৫

সৈয়দ তাজুল ইসলাম বলেছেন:

শুনে ভাল লাগলো আপু। আল্লাহ যেন আপনার দু'আ কবুল করুন।

আপনি লিখে যান, একটা কথা বলি কিছু মনে করবেন না (!)। আপনি যে বিষয়ে নিয়ে লেখবেন সে বিষয়ে যেন আপনার পূর্ণ জ্ঞান থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন। কারণ, আপনার থেকে প্রকাশিত বিষয়ে পাঠিকেরা আপনাকে উন্মুক্ত প্রশ্ন করবে, তখন আপনাকেই তাদের উত্তর দিয়ে যেতে হবে।
আরেকটা কথা, আপনার লেখাকে এতো বেশি দীর্ঘ করবেন না, যেন পাঠককে তার ধৈর্য ধরে রাখতে রাখাল খোঁজতে হয় ;) আবার ফেসবুকিয়ানকদের মত খুব অল্পতেই গুনীবানী প্রকাশ করবেন না! আর কেউ আপনার লেখা কপি পোস্ট করে কিনা সেদিকে লক্ষ রাখবেন। ব্লগের মোডারেট কপিপেস্ট সহ্য করতে পারে না ;)



আপনার জন্য অসংখ্য শুভেচ্ছা ও শুভকামনা।

১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৪:০৪

মায়মুনা আহমেদ বলেছেন: জাজাকাল্লাহ খাইরান!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.