নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার সীমিত জ্ঞান কারো উপকারে আসলে শান্তি পাই

মায়মুনা আহমেদ

আমার সীমিত জ্ঞান কারো উপকারে আসলে শান্তি পাই...

মায়মুনা আহমেদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ডায়েরি থেকে...(৮)

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৪:০৭



বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

।১০ ডিসেম্বর ২০১৮।

ফজরের নামাজ পড়ে মা নবীজী সাঃ এর রওজা জিয়ারাতে গেলো আর আমরা চারজন রুমে চলে এলাম। বদরে যাওয়া-আসার ক্লান্তি আজকে আমাদের পেয়ে বসেছে। রুমে এসে ঘুমালাম। রেগুলার ইবাদাত আর দুই বোন রাস্তাঘাটে ঘুরে বেড়িয়ে নিজেদের মতো করে সময় কাটালাম। এশার নামাজের পর সবাই যখন সবার সারাদিনের ফিরিস্তি দিচ্ছিলাম, নানু তখন অধৈর্য হয়ে গেল। সবাই রওজা জিয়ারাত করেছে, নানু এখন পর্যন্ত করেনি! আগামীকাল নিয়ে যাবো বলে সান্ত্বনা দিলাম। শুধু গেলেই তো হলো না। রিয়াজুল জান্নাত কি? কোথায়? এর গুরুত্ব কি? ঐখানে গিয়ে কি করতে হয়? কিভাবে নবীজী সাঃ কে সালাম জানাতে হয়? a to z শিখালাম। কি বুঝলো আর কি বুঝলো না, আল্লাহ-ই ভালো জানেন! লেকচার থেকে বাচার জন্য হ্যা তে হ্যা আর না তে না মেলাচ্ছে , এতোটুকু বুঝলাম।

।১১ ডিসেম্বর ২০১৮।

যোহরের সময় আগে গিয়ে A1 এ বসলাম। নানুকে একটু পর পর টুকটাক do & don'ts বলছিলাম। ১ঃ৩০ টায় গেট খুলে দিলো। আমি নানুকে একপ্রকার টেনে-ঠেলে নিয়ে যাচ্ছিলাম। ইন্ডিয়ান আন্টির শেখানো নিয়মে ব্যাগগুলো পল্টু পার্টিশনের ঐ পাশে ফেলে দিলো। সবুজ কার্পেটে গিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। আলহামদুলিল্লাহ! নানুকে নিয়ে আসতে পেরেছি। এক জায়গায় বসিয়ে বললাম, "আগে দুই রাকাআত নামাজ পড়, তারপর একদম সামনে গিয়ে দুই রাকাআত নামাজ পড়বা"। পল্টুকে বলেই রেখেছিলাম ও যেন নিজের মতো করে জিয়ারা করে বাহিরে গিয়ে অপেক্ষা করে। আমিও নানুকে বসিয়ে সামনে চলে গেলাম। পছন্দের জায়গায় লাইনে অপেক্ষা করে নামাজ পড়ে এসে দেখি নানু আগের জায়গাতেই বসা!

নানুকে সামনে নামাজ পড়াবো বলে নিয়ে যাচ্ছিলাম এমনসময় এক ভলিন্টিয়ার বাধা দিল। আমি পিছনে সরে নানুকে সামনে এগিয়ে দিচ্ছিলাম। ভলিন্টিয়ার ঘুরে এসে আবার বাধা দিলো এবং এবার সে সিরিয়াস। আমি উর্দু/ইংরেজিতে বললাম, ইশারায় বুঝালাম, "আমার জন্য না, নানুকে জায়গা করে দিতে যাচ্ছি"। তিনি কোনো কথা শুনতে বা মানতে নারাজ, কেন যেন ক্ষেপে যাচ্ছিলেন! তার আচরণে আমি খুব অবাক হচ্ছিলাম। রিয়াজুল জান্নাতে অনেক ভীড় হয়। সবাই নামাজ পড়তে চায়, দোয়া করতে চায়। এখানে ছোট করে নামাজ পড়ে অন্যকে নামাজের সুযোগ করে দিতে হয়। অন্যদের নামাজের সুযোগ করে দেয়াটাও তো একটা ভালো কাজ। সে উসিলাতেও আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করে দিতে পারেন। আমি তো এসব জানি, আমি তো সতর্ক থাকি। ভলিন্টিয়ার আমার সাথে এমন ব্যবহার করছে কেন!? আশেপাশের ভিনদেশি অন্য মহিলারা আমার সাপোর্টে কথা বলা শুরু করলো। ওরা আমাকে ঠেলে দিচ্ছিল সামনে নামাজের জন্য। খুব অল্প সময়ের মধ্যে মনে হচ্ছে দুইটা গ্রুপ হয়ে গেছে! ভালো লাগছেনা, অস্বস্তি হচ্ছে খুব। আমি চুপ করে আছি। ভলিন্টিয়ার আর অন্যরা একটা-দুইটা কথা ছুড়ছে। জানি না কেন, এতো মানুষ থাকতে ভলিন্টিয়ার আমাকেই টার্গেট করলো! কোরআনের বিভিন্ন আয়াত দিয়ে অনবরত নিজেকে বুঝাচ্ছি। বুঝতে বাকী নেই যে, আল্লাহ আমাকে নতুন পরীক্ষা ক্ষেত্রে ফেলেছেন। আমি জানি আমি সতর্ক, সচেতন কিন্তু ভলিন্টিয়ার তো জানে না। নবীজী সাঃ এর রওজার সামনে দাড়িয়ে বেয়াদবি করবো! অসম্ভব!

সবর...সবর...সবর...!

ভলিন্টিয়াররা আমার নবী সাঃ এর মসজিদের খাদিম। প্রতিদিন শত শত মানুষকে ঠান্ডা মাথায় ওরা ম্যানেজ করে। একটা-দুইটা ব্যতিক্রম তো হতেই পারে। ওরাও তো মানুষ, ফেরেশতা নয়। আমার সাপোর্টারদের বাড়াবাড়ির সুযোগ দিলাম না। ভলিন্টিয়ারের কথা মেনে নানুকে নিয়ে বেরিয়ে এলাম। বাহিরের দিকে দাড়িয়ে নানুকে নবীজী সাঃ এর রওজার দেয়াল ও সবগুলো পয়েন্ট দেখালাম। আর শক্ত থাকতে পারলাম না। ভলিন্টিয়ারের ব্যবহারে আমি সত্যি খুব কষ্ট পেয়েছি। বাহিরে দাড়িয়ে কাদছিলাম আর দোয়া করছিলাম। আল্লাহ যেন আমাদের সবাইকে মাফ করে দেন। সে তো জেনে-বুঝে আমাদের সাথে এমন ব্যবহার করেনি। মাঝেমধ্যে ভুলেও তো ভুল হয়ে যায়।

রুমে এসে নানুকে রিমান্ডে নিলাম। এসব কথাবার্তা-কান্নাকাটির মাঝে চললো দুপুরের খাওয়া এবং আসরের নামাজে যাওয়ার প্রস্তুতি। আব্বু বিকেলে রওজা জিয়ারাতে যাবে তাই নামাজ শেষে আর অপেক্ষা করিনি। আমরা চারজন ঘুরতে বের হলাম। পার্ক আর হকার্স মার্কেটে নানু আগে আসেনি। নানু টুকটাক কেনাকাটা করবে, একথা আগেই বলে রেখেছে। বেশি কিছু না, খুব সামান্য কিছু কেনাকাটা। মার্কেটে ঢোকার পর তার সেই অল্প জিনিসের পাল্লা ভারী হয়ে দ্বিগুণ-তিনগুণ হয়ে গেল। কিনে দিলাম এবং টেনে টেনে মসজিদ পর্যন্ত এলাম। এতো ভারী বোঝা টেনে ২৫নং পর্যন্ত যেতে পারবো না। ১২ নং গেটের কাছে মহিলাদের ঘেরাও দেয়া জায়গায় নামাজের জন্য গেলাম।

মাগরিবের নামাজে দাড়িয়েছি। পুতুলের মতো ছোট্ট বাবুটাকে নামাজের কার্পেটে রেখে আম্মুর পাশে এক এরাবিয়ান দাড়ালো। নামাজ শুরু হতেই সে হামাগুড়ি দিয়ে সামনে-পিছনে আসা-যাওয়া শুরু করে দিলো। শেষ রাকাআতে তাশাহুদ-দরুদ শরীফ-দোয়ায়ে মাসূরা পড়ে ইমাম সাহেবের সালাম ফেরানোর অপেক্ষা করছি, এমনসময় বাবুটা আমার সামনে এসে বসলো। কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থেকে এগিয়ে এসে আমাকে ধরে দাড়ানোর চেষ্টা করলো কিন্তু পারলো না। ঠাস করে বসে পড়লো। আবার চেষ্টা করে, কাধ ধরে দাড়ালো। সালাম ফিরিয়ে দেখি সে বিজয়ীর হাসি হাসছে। কোলে নিলাম। কোলে উঠেই আমার চশমা নিয়ে গবেষণা শুরু করলো। এদিকে ওর মা নাম ধরে ডাকছে "ইয়াহিয়া", তার যাওয়ার কোনো ইচ্ছেই নেই। মায়ের দিকে একনজর তাকিয়ে আবার আমার দিকে ফিরলো। গলা জড়িয়ে ধরছে, আদর করছে, যেন আমি ওর কতোদিনের চেনা!

মদিনায় মসজিদের এক্সটেনশন বিকেল থেকে পার্কের মতো হয়ে যায়। মূল মসজিদে ছোট ছোট গ্রুপে ছোট-বড়দের মক্তব/কোরআন-হাদীসের ক্লাস হয়। আর বাহিরে বাচ্চাদের মা-বোনেরা অন্য বাচ্চাদের নিয়ে অপেক্ষা করে। স্থানীয় বাসিন্দারা মসজিদ চত্বরে ইবাদাত বা গল্প-গুজব করে সময় কাটান। দেখতে ভালোই লাগে।


ছবি- নেট

বি. দ্র. ছবি দেখে দরুদ শরীফ পড়তে ভুলবেন না।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৫১

রাজীব নুর বলেছেন: ভালো লাগে আপনার পোষ্ট।

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১০:০৮

মায়মুনা আহমেদ বলেছেন: জাজাকাল্লাহ খাইরান!

২| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১১:২৬

মাহমুদুর রহমান বলেছেন: মহান স্রষ্টা আপনার মঙ্গল করুন,বোন।

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সকাল ১১:২৯

মায়মুনা আহমেদ বলেছেন: জাজাকাল্লাহ খাইরান!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.