নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার সীমিত জ্ঞান কারো উপকারে আসলে শান্তি পাই

মায়মুনা আহমেদ

আমার সীমিত জ্ঞান কারো উপকারে আসলে শান্তি পাই...

মায়মুনা আহমেদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

নতুন ডায়েরি (পর্ব ৩)

০১ লা ডিসেম্বর, ২০২২ রাত ৮:২৬




বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

আজ ২৪ অক্টোবর ২০২২, আমাদের ১৬ রাতের উমরাহ সফরের একরাত চলে গেছে। দীর্ঘ সফর, তারপর আবার উমরাহ; বাচ্চাদের উপর খুব ধকল গিয়েছে। তাই, আজকে শুধু হেরেমে সালাত, তাওয়াফ, নিজের মতো করে ইবাদত করে সময় কাটানোর ইচ্ছে। ভোরে বাবা মা হেরেমে গিয়ে মাতাফের গ্রাউন্ড ফ্লোরে নামতে পারেনি। সকালে নাস্তা করতে করতে দুই বেয়াই ফোনে খুব শলাপরামর্শ করছিল, কিভাবে মাতাফের গ্রাউন্ডে যাওয়া যায়। আব্বুর দুইনাম্বারি বুদ্ধিতে বাবা বেশ খুশি। ইহরামের সাদা কাপড় পড়ে চলে গেল হেরেমে। তাওয়াফ করে, সালাত আদায় করে মাশাআল্লাহ বেশ ফুরফুরে মেজাজে হোটেলে ফিরে এলো। দুপুরের খাবার খেতে সবাই আবার একত্র হলাম। এবার বাবা-মা তাদের ঝুলি খুলে বসলো। কিভাবে মাতাফের গ্রাউন্ডে গেলেন, তাওয়াফের ঘটনা, হাজরে আসওয়াদে চুমু খাওয়ার ঘটনা, আরো কতো কি!

আমি তাদের গল্প শুনছি আর ডিউটি করছি। কখনো বাচ্চাদের খাওয়ানো, কখনো পরিষ্কার করা। বাচ্চার বাবা আলহামদুলিল্লাহ যথেষ্ট সাহায্য করেছে কিন্তু আমারও তো তাদের মতো উড়তে ইচ্ছে করছে। সবর!!! তাদের আর আমার অবস্থা একরকম না। ভাবী আসার আগে বলেছিল, বাচ্চাদের রুটিন মতো আমার চলতে হবে। তখন কথাটার মানে বুঝিনি। এখন বুঝতে পারছি। অবুঝ বাচ্চা দুটি আল্লাহর দেয়া বিশাল নেয়ামত, আমার কাছে আমানত। সবার আগে এদের দেখভাল, সুবিধা-অসুবিধার কথা চিন্তা করতে হবে।

ইহরাম ছাড়া মাতাফের গ্রাউন্ডে নামতে দিচ্ছে না, তাই ২য়/৩য় তলায় শুধু সালাত আদায় করে রুমে ফিরে আসলাম। আগামীকাল আমাদের মক্কা জিয়ারা।

২৫ অক্টোবর ২০২২, আমাদের মক্কা জিয়ারা ছিল। জেদ্দা এয়ারপোর্ট থেকে মক্কায় যে গাড়িতে এসেছি, সেই গাড়ি সেই ড্রাইভার আমাদেরকে জিয়ারায় নিয়ে গেল। প্রথমেই গেল জাবালে সাওর এ। ড্রাইভার সাহেব খুব টেনশনে ছিলেন। আমরা আবেগে পাহাড়ে উঠে যাই কিনা। পাহাড়ে যেন না উঠি, ড্রাইভার বারবার মানা করছিল। এই পাহাড়ের ঢালে কিছুটা সময় না দাড়ালে কি হয়! ছোট ছোট পিপড়ার মতো দেখা যাচ্ছে মানুষগুলোকে! হিজরতের সেই রাতে, এই পুরো পাহাড়ি পথ রাসুল সাঃ কে কাধে করে উল্টো হেটে, শুধু আংগুলের উপর ভর করে উল্টো হেটে পাহাড়ের গুহা পর্যন্ত নিয়ে গিয়েছিলেন নবীজী সাঃ বন্ধুসম, বিশ্বস্ত সাহাবী আবু বকর রাঃ!

এরপর মুজদালিফা-আরাফার রোড দিয়ে যাওয়ার পথে গাড়ি থেকে মসজিদে মাশ'আর আল হারাম ও মসজিদে নামিরা দেখলাম। আরাফার ময়দানে গিয়ে গাড়ি থেকে নামলাম। প্রচন্ড রোদ। পাহাড়ে উঠবো। শ্বাশুড়ি মা'র হাত ধরে হাটা দিলাম। সিড়ি খুঁজে উঠে গেলাম জাবালে রহমতে। গরমে বাচ্চারা লাল হয়ে যাচ্ছে। দেরি না করে তাড়াতাড়ি নেমে গাড়িতে উঠে বসলাম। বাচ্চার বাবা আইসক্রিম নিয়ে এলো। এতো দ্রুত গলে যাচ্ছে যে খুব অল্প সময়ের মধ্যে আইসক্রিম হয়ে গেল মিল্কশেক!

মিনার রাস্তা ধরে যাওয়ার সময় আবরাহার হস্তিবাহিনী ধ্বংসের স্থান, মসজিদে খাঈফ, মসজিদে বাইয়াত, পাথর মারার জামারাহ দেখালো। ফেরার পথে জাবালে নূর দেখালো। মক্কায় হেরেমে ফেরার পথে জান্নাতুল মুআল্লা, জ্বীন মসজিদ, ফাতাহ মসজিদ দেখলাম।

আজকে মক্কায় আংশিক সূর্যগ্রহণ। দুপুর ১ঃ৪৫ এ সালাতুল কুসুফ বা গ্রহণের সালাতের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। রুমে ফিরে গেলে যোহরের জামাতে আমার আর আসা হবে না। তাই, গাড়ি হেরেমের কাছে রাখতে বললাম। গাড়ি থেকে নেমে সবাই ২য় তলায় সালাতের জন্য অপেক্ষা করতে থাকলাম। আমার ছোট কন্যা আলহামদুলিল্লাহ, মাশাআল্লাহ খুবই সামাজিক কিন্তু সালাত শুরু হলে তিনি মা ভক্ত হয়ে যান। যাই হোক, সালাত শেষে বাবা-মা, বাচ্চার বাবাকে সালাতুল কুসুফ সম্পর্কে জানালাম। সবাই যেন যার যার মতো করে সালাতে চলে আসে, সালাত আদায় করে নেয়। রুমে ফিরে আমরাও দ্রুত নিজেদের কাজগুলো গুছিয়ে নিয়ে ১ঃ৪০ এর মধ্যে হেরেমে চলে গেলাম।

আমি নিসা বা মহিলাদের সেকশনে ঢুকে দুই বাচ্চা নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকলাম। কে, কোথায় গিয়েছে জানি না। দোয়া করছিলাম যেন সালাতুল কুসুফ আদায় করতে পারি। ভলিন্টিয়ারদের জিজ্ঞেস করেছিলাম, কোথায় জামাত হবে? বলেছে, "কুল্লু মুসাল্লা" অর্থাৎ সবগুলো সালাতের স্থানে জামাত অনুষ্ঠিত হবে।

১ঃ৪৫ এ জামাতের কথা, প্রায় ২টা বাজে। সালাতের কোনো নাম-গন্ধ নেই। সবাই যার যার মতো ইবাদত করছে। আমি বাচ্চাদের মুখে ফিডার ধরে রেখেছি। হয়তো অন্য জায়গায় সালাত হচ্ছে, আমি হয়তো ভুল জায়গায় বসেছি। নসীবে হয়তো সালাত নেই। কি করবো! বসে থাকবো নাকি চলে যাবো। জিয়ারা করে এসেছি, বাচ্চারা ক্লান্ত। এরকম নানান প্রশ্ন মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। দুইটার দিকে শুনি মাইকে সালাতের আহ্বান! আলহামদুলিল্লাহ। ট্যাপাকে বুঝিয়ে কার্পেটে শুয়ে ফিডার খেতে দিয়েছি, ট্যাপি নাছোড়বান্দা -কোলে নিয়েই সালাত শুরু করলাম। ইমামতি করলেন আমাদের সবচেয়ে প্রিয় ইমাম, প্রিয় শায়খ। শায়খ বন্দর বলীলাহ। পুরো একঘন্টার সালাত। কি সুন্দর সেই তিলাওয়াত! দুই রাকাআত সালাতে চারটি রুকু, চারটি সেজদা। ট্যাপি একবার ঘুমায়, একবার জাগে। একবার কার্পেটে রাখি, কিছুক্ষণ পর জেগে উঠে, কান্না করে, আবার কোলে তুলি। এতো কাহিনির পরেও যে আমি সালাতুল কুসুফ আদায় করতে পেরেছি, তাতেই আমি খুশি আলহামদুলিল্লাহ!

সালাতের চিন্তায় হুশ ছিল না, ট্যাপাট্যাপির বাবাকে বলেছিলাম "রুমে চলে যেও, আমি বাচ্চাদের নিয়ে রুমে চলে আসবো ইনশাআল্লাহ"। সালাত শেষে এখন দুইটা ঘুমন্ত বাচ্চাকে নিয়ে কিভাবে রুমে ফিরবো!? সেই চিন্তায় পড়ে গেলাম। আসরের ওয়াক্ত প্রায় হয়ে এলো। সালাত আদায় করে ট্যাপাকে ঘুম থেকে জাগালাম। বুঝিয়ে সুঝিয়ে আল্লাহর নামে হোটেলের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম। নাক-মুখ বন্ধ করে শুধু দরুদ ইব্রাহিম পড়ছিলাম। আলহামদুলিল্লাহ, ট্যাপা দৌড়ে দৌড়ে হেরেমের আংগিনা পার হয়ে গেল। ক্লান্ত হলে হাটুভেংগে বসে একটু জিরিয়ে নিতো। কোলে উঠার জিদ তো করেনি, এ-ই অনেক, আলহামদুলিল্লাহ! ফেরার পথে বাচ্চাদের কবুতর দেখালাম। গল্প করতে করতে হোটেলে পৌছে গেলাম। লিফটের লাইনে বাচ্চাদের বাবার সাথে দেখা! আবার বের হয়ে সিম কিনে নিলাম। রুমে ফিরে নতুন এই সালাত নিয়ে সবার অভিজ্ঞতা শেয়ারিং চললো। ডিউটির ফাঁকে ফাঁকে আমিও সুন্দর একটা দিন, নতুন কিছু স্মৃতির জন্য রবের দরবারে কড়া নাড়তে থাকলাম। আলহামদুলিল্লাহ!

ছবি - নেট

জাজাকুমুল্লাহ খাইরান

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২২ দুপুর ২:৫৬

রাজীব নুর বলেছেন: লিখতে থাকুন। পড়তে থাকি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.