নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

www.maipavel.blogspot.com

এম.এ.আই পাভেল

এম.এ.আই পাভেল › বিস্তারিত পোস্টঃ

কার্টেসি (মালয়শিয়ার দিনগুলি-৩)

২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ৮:১০

মালয়শিয়াতে আসার পর থেকে নানান রকমের অভিজ্ঞতার সম্মূখীন হইতে হইছে। সেসব অভিজ্ঞতার কোনটা বিব্রতকর, কোনটা চাঞ্চল্যকর, আবার কোন কোনটা ভয়ঙ্কর। এখন যে অভিজ্ঞতার কথা বলব সেটা কোন "কর"-এর আওতায় পড়েছে তা আমি নিজেও নিশ্চিত না। সেটা বিবেচনা করার দায়িত্ব আপনাদের উপর ছেড়ে দিলাম।
এখানে আসার মাস তিনেক পরের ঘটনা। ভার্সিটি থেকে ক্লাস করে বাসার দিকে ফিরছি। ভার্সিটি থেকে বাসায় যেতে হলে LRT (Light Rail Transit) দিয়ে যেতে হয়। এখানকার LRT, বাস, মনোরেলগুলোতে প্রায়রিটি সিটিং এর ব্যাপারে একটা কথা লেখা থাকে "Aren't we courteous?" সাথে সিনিয়র সিটিজেন, প্রতিবন্ধি, আন্ডাবাচ্চা ও গর্ভবতী মহিলাদের ছবি দেয়া। যার অর্থ হল এদেরকে আগে বসতে দিন। (বাংলাদেশের বাস গুলাতেও এই কথা লেখা থাকে। তবে তা অন্যভাবে- "মহিলা ও প্রতিবন্ধীদের জন্য বরাদ্দ"। এত সুন্দরে করে ছবি দিয়ে লেখা থাকে না)। তো আমি প্রায় প্রতিদিন ঐ লেখার দিকে তাকিয়ে ভাবতাম কবে কার্টেসি দেখানোর সুযোগ পাব। বিধাতা আমাকে সে সুযোগ করে দিল।
সেদিন কয়েকটা স্টেশন পার হবার পর এক গর্ভবতী মহিলা LRT-তে উঠলো এবং সে আমার সামনেই দাড়ালো। আমি তা দেখে ভাবলাম এইত পাইছি সুযোগ। বাঙ্গালীর কার্টেসি কত প্রকার ও কি কি আজকা হারে হারে টের পাইবা। পুরা জাতির মান সম্মান তখন আমার উপর এমন একটা ভাব। আমিও পুরা জাতির কার্টেসির ব্রান্ড অ্যাম্বাসেডর হইয়া ঐ মহিলারে একটা হাসি দিয়া কইলাম,
"এক্সকিউজ মি, ইউ ক্যান সিট হিয়ার।"
বইলা আমি উইঠা দাড়াইলাম আর তারে বসার সুযোগ কইরা দিলাম। মনে মনে ভাবলাম এখন মহিলা আমারে থ্যাঙ্ক ইয়্যু বলবে। আর আমি গদ গদ একখানা হাসি দিয়া তাকে বুঝাইয়া দিব, এইটা কোন ব্যাপার না, আমরা বাংলাদেশীরা হরহামেশা এইটা করে থাকি। কার্টেসি কিভাবে রক্ষা করতে হয় তা বাংলাদেশীদের চাইতে বেশি কেউ জানে না।
কিন্তু অবাক করা বিষয় হইল সে আমারে থাঙ্ক ইয়্যু বলা তো দূরের কথা, আমার দেয়া সিটটাতে বসল না, উল্টা আমার দিকে কটমট কইরা কিছুক্ষন তাকায়া থাকল, আর বিড় বিড় কইরা মালাই ভাষায় কি কইল তার আগা মাথা গোড়া পাছা কিছুই বুঝলাম না। আমি ভাবলাম আমি কি ভূল কিছু বললাম নাকি। যতদূর মনে পড়ে আমি উলটাপালটা তো কিছু বলি নাই। আমি তারে কার্টেসি দেখায়া বসার সুযোগ কইরা দিছি। সে বসবে না সেটা না হয় মানলাম, কিন্তু রাগার কারণটা কি? মহিলার রিএ্যাকশন দেইখা মনে হইল আমি তারে রেপ করতে চাইছি। যাই হোক আমি ব্যাপারটাকে আর পাত্তা না দিয়া সামান্য দূরে একটা ফাকা জায়গায় দাড়াইলাম। কিছুক্ষন পর এক ভদ্রলোক আমারে জিগাইল,
-ভাই কি বাংলাদেশী?
আমি হ্যা সূচক মাথা নাড়লাম।
-মালায়শিয়ায় নতুন?
আমি আবারো হ্যা সূচক মাথা নাড়লাম। এরপর সে যেটা বলল সেটা শোনার জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না।
-ভাই একটা কথা বলি, কিছু মনে কইরেন না। মালায়শিয়ান মাইয়া দেইখা সব জায়গায় লাইন মারার চেষ্টা কইরেন না। বুইঝা শুইনা লাইন মাইরেন।
আমি তার কথা শুইনা রাইগা গেলাম। পাগল নাকি লোকটা।
-এক্সকিউজ মি। মাইন্ড ইয়োর ল্যাঙ্গুয়েজ। কি আবোল তাবোল বলতেছেন। আমি মালায়শিয়ান মেয়ের সাথে লাইন মারতে যাব কোন দুঃখে।
-তাহলে ঐ মেয়ের সাথে কি করতাছিলেন।
-কেন আপনি দেখেন নাই? ঐ মহিলা গর্ভবতি, আমি ভদ্রতা করে তাকে বসার জন্য আমার সিটটা ছেড়ে তাকে বসতে বলেছি। দ্যাটস ইট। এখানে লাইন মারার কি হইল।
লোকটা তখন কিছুটা হাসি দিয়ে বলল।
-তাইলে আর কখনো এই ভদ্রতা দেখাইয়েন না। আপনার এই ভদ্রতা মালায়শিয়ান মাইয়ারা বুঝবে না। তারা মনে করবে আপনি তার সাথে লাইন মারার চেষ্টা করতাছেন। এখন বসতে বলছেন, তারপর আলাপ জমানোর চেষ্টা করবেন।
আমি কিছুটা বিরক্ত হয়ে বললাম,
-আরে ভাই লাইন মারার জন্য তো কোন একটা কারন লাগবে। প্রথমত, সে গর্ভবতী, দ্বিতীয়ত সে মালায়শিয়ান আর আমার মালায়শিয়ান মেয়েদের ভালো লাগে না, তৃতীয়ত শুধু চেহারা ছাড়া তার আপাদমস্তক ঢাকা, ইনফ্যাক্ট আমি তার চেহারাও দেখি নাই, শুধু...
বইলা আমি থাইমা গেলাম, তার চেহারা দেখি নাই সত্যি, কিন্তু আমি যে তার পেট দেইখাই তারে বসার জন্য সিট ছাইড়া দিছি সেটা বলা ঠিক হবে বলে মনে হল না। সে বলল-
-সেটা না হয় আমি বুঝলাম। কিন্তু তাদেরকে সেটা বোঝাবেন কি করে? বাঙ্গালীরা তাদের হেল্প করার জন্য এগিয়ে আসলেই ভাবে এইবুঝি তাদের সাথে লাইন মারতে আসছেন। তারপর তাদেরকে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে তার সাথে প্রেম করার চেষ্টা করবেন।
-অদ্ভুত তো। একটা ছেলে একটা মেয়েকে হেল্প করবে এতে এতদূর ভাবার কি আছে। আর প্রেম করতে গেলে তো আগে তাকে পছন্দ হইতে হবে। আমি এখন পর্যন্ত এমন কোন মালায়শিয়ান মেয়ে দেখি নাই যাকে দেখলে মনে হয় প্রেম করি। তাদের চেহারার মধ্যে কিছু নাই। শুধু চামড়াটাই সাদা।
-তাদের চেহারায় কিছু থাক বা না থাক তাদের যা আছে সেটার জন্যই কত বাংলাদেশী ছেলে মালায়শিয়ান মেয়েদের পিছে ঘুর ঘুর করে।
-সেটা আবার কি?
-কেন আই.সি.। কোনমতে ফুসলাইয়া একটা মালায়শিয়ান মাইয়া বিয়া করলেই তো আপনি আই.সি.র মালিক। তখন আর আপনাকে পায়কে। অন্যান্য মালায়শিয়ানরা এখানে যেসব সুযোগ সুবিধা পায় আপনিও পাবেন। (এখানে বলে রাখি আই.সি. হল মালয়শিয়ানদের জাতীয় পরিচয়পত্র। এখানে ব্যাবসা, ব্যাঙ্ক লোন, ক্রেডিট কার্ড, ভালো চাকরী সবকিছুতেই আই.সি. লাগে। অর্থাৎ মালায়শিয়ান ছাড়া এইসব সুবিধা অন্যকেউ পায় না। এইকারণে অনেক বাংলাদেশী মালায়শিয়ান মেয়ে বিয়ে করার জন্য মুখিয়ে থাকে।) অবশ্য আগে মালায়শিয়ান মাইয়ারাই বাংলাদেশী পোলা দেখলে নিজে আগায়া আইসা কথা বলত। কিন্তু বাংলাদেশীরা নিজেরাই নিজেদের নাম নষ্ট করছে। এইখানে বিয়ে করে কয়েক বছর থেকে টাকা পয়সা নিয়ে বাংলাদেশে গিয়া আবার আরেকটা বিয়ে করে। ভুলেও এইদেশের বউয়ের কোন খবরাখবর রাখে না। তাই এখন মালয়শিয়ানরা বাংলাদেশীদের সহজে বিশ্বাস করে না। একারনেই আপনি যখন ঐ মেয়েটাকে বসার জন্য সিট ছেড়ে দিলেন তখন সে রাইগা গেছে। সে তখন কি বলছে জানেন, বলছে "মাইয়া দেখলে হুশ থাকে না"। সে হয়ত ভাবছে আপনি তাকে বসতে বলে তার সাথে গল্পগুজব করে খাতির জমাবেন। সেজন্য তার কষ্ট হওয়া সত্যেও সে দাড়ায়া আছে কিন্তু বসতেছে না। ভাই কিছু কনে কইরেন না। এটা তার বা আপনার কারো দোষ না। দোষ আমাদের দেশের কিছু আবালদের। ঐ আবালদের কারণে সব বাংলাদেশীদের তারা একই রকম ভাবে। তবে আপনি যদি একবার ওদের বিশ্বাস অর্জন করতে পারেন তবে দেখবেন ওরা আপনার জন্য জান দিয়া দিব।
লোকটার কথা শোনার পর আমি মনে মনে ভাবতে লাগলাম, হায়রে বঙ্গসন্তান, তোমাদের কয়েকজনের জন্য আজকে আমি সামান্য ভদ্রতা দেখাতে গিয়ে তাদের সন্দেহের বস্তুতে পরিনত হয়েছি। এটা একটা জাতির জন্য কতবড় অপমানের সেটা কতজন বাংলাদেশী বুঝবে তা আমার জানা নাই।

পুনশ্চঃ এরপর থেকে আমি কখনো অন্তত মালায়শিয়ান মেয়ে দেখলে সিট ছেড়ে দেই না। (তবে হ্যা বয়স্ক বা প্রতিবন্ধি কাউকে দেখলে ছেড়ে দেই।) বলা যায় না, আবার যদি সন্দেহ করে বসে যে আমি তার সাথে প্রেম করতে চাই। সন্দেহর বস্তুতে পরিনত হওয়ার চাইতে সাময়িক অভদ্রতা অনেক ভালো।


maipavel.blogspot.com

মন্তব্য ২ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:৫৮

ইমরান আশফাক বলেছেন: সন্দেহর বস্তুতে পরিনত হওয়ার চাইতে সাময়িক অভদ্রতা অনেক ভালো।

ভালো বলেছেন।

২| ০১ লা মার্চ, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৫৮

প্রাকৃত বলেছেন: কঠিন সত্য

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.