নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

www.maipavel.blogspot.com

এম.এ.আই পাভেল

এম.এ.আই পাভেল › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্ট্রেঞ্জ!!!!!!!!

১০ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ১২:২৯

আজকে সকাল থিকাই বাংলাদেশের খেলাটা নিয়ে একটা টেনশন কাজ করছিল। একেতো এই ম্যাচ জিতলে বাংলাদেশের কোয়াটার ফাইনাল নিশ্চিত। তার উপর প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড। বেশ শক্তিশালী দল। বাংলাদেশ আগে দুইটা খেলায় জিতলেও বড় কোন দলের সাথে এখনও জিততে পারে নাই। তাই নিজেদের যোগ্যতা প্রমানের জন্য এই ম্যাচটা ছিল খুবই ক্রুশিয়াল। যাই হোক, বরাবরের মত আমি আমার ক্যালকুটর টাইপ মোবাইল নোকিয়া ১১০ দিয়া লাইভ স্কোর দেখতেসি। বাংলাদেশ ২৭৫ করার পর মনে কিছুটা বল পাইলাম। নাহ একটা ভালো ফাইট দেয়া যাবে। হারুক বা জিতুক সেটা পরের কথা। বাংলাদেশের ইনিংস যখন চলে আমি তখন আমার কর্মস্থলে। কাজের ফাকে ফাকেই খেলার খোজ খবর নিচ্ছি। কাজ শেষ করে যখন বাড়ির দিকে যাচ্ছি তখন ইংল্যান্ডের ৪ উইকেট নাই। আর মাত্র ৬ টা উইকেট নিলেই কাম সারা। তখন বিলাতি কান্না দেখার আজব সৌভাগ্য হইলেও হইতে পারে। বাস স্টেশনে বাস থেকে নেমে দেখি ঝুম বৃষ্টি। বাস স্টেশন থেকে আমার বাসায় যেতে ১০ মিনিটের মত হাটা লাগে। যেভাবে বৃষ্টি নামছে তাতে হেটে যাওয়ার কোন উপায় নেই। খাটি বাংলায় যারে কয় কুত্তা-বিলাই বৃষ্টি। তাই বাধ্য হয়ে বাস স্টেশনে বসে বসেই মোবাইলে লাইভ স্কোর দেখতেছি। আমার চোখ গভীরভাবে আমার ক্যালকুলেটর টাইপ মোবাইল স্ক্রীনে নিবদ্ধ। আমার মত আরো অনেকেই বাস স্টেশনে বৃষ্টির কারণে আটকা পরে আছে। তারাও তাদের মোবইল থুক্কু স্মার্টফোন নিয়ে ব্যাস্ত। তবে তারা ব্যাস্ত ক্যান্ডি ক্রাশ, ভাইবার, হোয়াটস অ্যাপ ইত্যাদি নিয়ে, আর আমি ব্যস্ত বাংলাদেশের খেলা নিয়ে। অনেকক্ষন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে, তাই অনেকেই এর মধ্যে ট্যাক্সি নিয়ে চলে যাচ্ছে। যারা আমার মত কপর্দহীন তারাই শুধু বাস স্টেশনে মোবাইল নিয়ে টাইমপাস করছে। ইংল্যান্ডের একটা করে উইকেট পরে আর আমার বুকের ধরফরানি বাড়তে থাকে। ইংল্যান্ডের যখন ৮ উইকেট তখন আমার উত্তেজনায় কাপাকাপি অবস্থা। শেষ উইকেট পরার পর নিজেরে আর আটকাতে পারলাম না। বাস স্টেশনেই ক্যাঙ্গারুর মত লাফাতে থাকলাম। বারকয়েক ইয়েস ইয়েস বলে চেচিয়েও উঠলাম। বাস স্টেশনের সবাই আমার দিকে হা করে তাকায়া আছে। আমার সেদিকে দেখার সময় নাই। আমি লাফিয়ে যাচ্ছি। একটা চাইনিজ-মালয়শিয়ান মেয়ে (দেখতে কিছুটা রুপসী) না পেরে শেষমেশ জিজ্ঞাসা করে বসল,
-“এক্সকিউজ মি, হোয়াট হ্যাপেন?”
আমার লাফালাফির মাঝে আতকা এমন বাধা পাওয়ায় কিছুটা বিরক্ত লাগল। নিজেরে সামলানোর চেষ্টা করলাম। আর বোঝার চেষ্টা করলাম কথাটা কি আমাকেই বলল কিনা। আমি আশে পাশে তাকালাম, নাহ আর তো কেউ নেই। আমাকেই মনে হয় বলতেছে। আমি কনফার্ম হওয়ার জন্য তারে জিজ্ঞাসা করলাম,
-“আমাকে কিছু বলছ?”
-“হ্যা।”
-“কি?”
-“তুমি এমন লাফালাফি করছ কেন?”
-“কারন আমি ভীষণ এক্সাইটেড।”
সে তখন চোখ বড় বড় করে বলল (এমনিতে ওরা যতই চোখ বড় করার চেষ্টা করুক তা বড় হয় না কোনমতে চোখের কালো অংশটাই দেখা যায়)-
-“কেন? তুমি কি টোটো জিতেছ?”
(সবার জ্ঞাতার্ধে জানিয়ে দিচ্ছি টোটো হলে এই দেশের লটারী। মালয়শিয়ানরা ইহা অনেক আগ্রহের সাথে খেলে থাকে) আমি এবার অবাক হয়ে তারে বললাম-
-“নাতো।”
-“তাহলে তুমি এত এক্সাইটেড কি কারণে?”
আমি এবার গর্বের সাথে বললাম-
-“কারন আমরা ইংল্যান্ডকে হারিয়েছি, ১৫ রানে।”
সে ব্যাপারটার আগামাথা কিছুই বুঝল না তাই পুনরায় জিজ্ঞাসা করল-
-“মানে কি?”
আমি এবার তাকে আগ্রহ নিয়ে ব্যাপারটা বোঝানোর চেষ্টা করলাম। কিন্তু খুব বেশি সফল হলাম বলে মনে হল না। কারণ সে হা করে আমার দিকে তাকিয়ে থাকল। তাকে শুধু এই জিনিসটা বোঝাতে পারলাম যে ক্রিকেট নামক একখান খেলায় (ক্রিকেট খেলা কি জিনিস তা সে জানে না) বাংলাদেশ নামক এক দল ইংল্যান্ড নামক এক শক্তিশালী দলকে পরাজিত করেছে ১৫ রানের ব্যাবধানে।
সে এবার আমার কাছে জানতে চাইল,
-“রান কি?”
আমি তখন ভাবলাম এ তো মহাবিপদ। রান কি বোঝাতে হইলে তো তারে ক্রিকেট কি তা বোঝাইতে হবে। বাইরে তাকিয়ে দেখলাম তখনো বৃষ্টি পরতেছে। ভাবলাম কি আর করা মেয়েটার সাথে এই সুযোগে গল্প করে টাইম পাস করি। তাই আমি বুক ভরা আগ্রহ নিয়ে মেয়েটাকে ক্রিকেট খেলা সম্পর্কে প্রায় আধা ঘন্টার জ্ঞানগর্ভ লেকচার দিলাম। আধাঘন্টা পর মেয়েটা আমাকে যা বলল তাতে বুঝলাম সে ক্রিকেট খেলার ‘ক’ও বুঝতে পারে নাই। অগত্যা আমি হাল ছেড়ে দিয়ে বললাম-
-“এইটা একটা আজব খেলা। তুমি এই খেলা না দেখলে এই খেলা সম্পর্কে কিছুই বুঝবা না।”
সে বলল-
-“যেই খেলা সম্পর্কে বুঝতেই মানুষের এত কষ্ট লাগে সে খেলা মানুষ খেলে কিভাবে?”
আমি এর কোন উত্তর দিতে পারলাম না। চুপ করে থাকলাম। এরপর সে আমারে বলল-
-“তুমি যে দল সাপোর্ট কর সে দল জিতেছে তাতেই তুমি এত উত্তেজিত?”
আমি তখন তারে বললাম, যে দল জিতছে দেটা শুধু আমার পছন্দের দল না, আমার দেশ। আমার মাতৃভূমি। তাই আমি এত উত্তেজিত। ধর তোমার দেশ মালয়শিয়া যদি কোন খেলায় ধরা যাক ফুটবল বিশ্বকাপে কোন বড় দলকে হারায় তাহলে তুমি উত্তেজিত হবানা?
সে বলল-
-“এতে উত্তেজনার কি আছে। ভালো খেললে জিতবে। পছন্দের দল জিতলে আনন্দ হবে। দ্যাটস ইট।”
আমার তখন তাকে কইস্যা থাবরা দিতে ইচ্ছে করছিল। কয় কিনা পছন্দের দল জিতলে শুধু আনন্দ হবে। কিন্তু তাদের দোষ কি। তারা তাদের কাজ আর উপার্জনের পেছনে এতটাই ব্যস্ত থাকে যে খেলাধুলার মধ্যে যে উত্তেজনা আছে তা তারা ভুলেই গেছে। এইদেশে খুব বেশি খেলাধুলার চলন নেই। তাই খেলা নিয়ে তাদের তেমন কোন আগ্রহও নেই। তবুও আমি তাকে বোঝাবার চেষ্টা করলাম, আমাদের দেশের ক্রিকেট খেলায় জিতলে আমরা কি কি পাগলামি করি। যখন আমরা প্রথম বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ পাই ১৯৯৯ সালে সাতদিন যাবত আমরা শুধু উৎসব করেছি। ২০১১ সালে আমাদের দেশে ক্রিকেট বিশ্বকাপ হয়েছে আমরা মাসব্যাপি উৎসব করেছি। যদিও সেবার বাংলাদেশ খুব একটা ভালো করতে পারে নি। আজকে এই খেলায় জেতার কারণে আমরা কোয়াটার ফাইনাল খেলব। সেটা এক বিশাল ব্যাপার। কিন্তু সে বোধহয় ব্যাপারটা তখনো বুঝতে পারে নি। তাই শেষ চেষ্টা করার জন্য তাকে বললাম, যখন বাংলাদেশ কোন খেলায় জিতে তখন আমরা দলবেধে আনন্দ করি, পাগলামি করি। আমরা খুব ইমোশোনাল জাতি।
সে তেমন কিছু বলল না। শুধু বলল- স্ট্রেঞ্জ।
আমার তখন বলতে ইচ্ছে করছিল, জ্বী ম্যাডাম। স্ট্রেঞ্জ। আমরা সেই অর্থে স্ট্রেঞ্জ একটা জাতি। তাইতো আমরা অল্পতে হাসতে জানি। অন্যের দুঃখে কাদতে জানি। তোমাদের মত টোটো নিয়ে পরে থাকি না (অনেক মালায়শিয়ানরাই তাদের আয়ের বেশ বড় অংশ ব্যয় করে টোটোর পিছনে)। পরিশ্রম করি, যদিও তোমরা সেই পরিশ্রমের ন্যায্য মুল্য দাও না। তারপরও আমরা খুশি থাকি কারণ তোমরা যাকে রিঙ্গিত বল বাংলাদেশে যখন সেটা টাকা হয় তখন সেটার অংক অনেক বড় হয়ে দাঁড়ায়। আমরা স্ট্রেঞ্জ বলেই তোমার দেশের এম.আর.টি. বা কন্সট্রাকশনের কাজে কোন এক্সিডেন্টে যখন কোন বাংলাদেশী মারা যায় আমার দেশ থেকে কোন প্রতিবাদ জানানো হয় না। তাই তোমরাও নামমাত্র একটা ক্ষতিপূরন দিয়ে কোনমতে ব্যাপারটা সামলে নাও। আমার দেশের মত কিছু দেশের মানুষের পরিশ্রমের কারণেই আজ তোমাদের দেশের অর্থনীতি এত সচল। বাংলাদেশ নামক স্ট্রেঞ্জ একটা দেশের স্ট্রেঞ্জ মানুষদের অক্লান্ত পরিশ্রমের কারণে আজ তোমার দেশের রাজধানীতে শোভা পায় ৮৮ তলা পেট্রনাস টুইন টাওয়ার সহ শত শত বহুতল ভবন, হাজার হাজার কিলোমিটার হাইওয়ে। তুমি কিভাবে জানবে এর মর্ম, যখন সারাবছর দুইভাগে ভাগ হয়ে থাকা জাতি শুধু এই ক্রিকেট খেলার সময় এক হয়ে যায়। সারা মাস জলন্ত আগুনে পুরতে থাকা জাতি একটি জয়েই পোড়ার গন্ধ থেকে রেহাই পায়। সারাদিন অক্লান্ত পরিশ্রম করতে থাকা জাতি তার ক্লান্তি ভুলে যায় যখন শুনতে পায় “বাংলাদেশ বিট সামওয়ান।” দুঃখিত ম্যাডাম, আমরা স্ট্রেঞ্জ কিন্তু তোমাদের মত রোবট নই।
কিন্তু এই কথাগুলো বলতে পারিনি। কারণ ততক্ষনে বৃষ্টি থেমে গেছে। আমাকেও বাসায় যেতে হবে। অনেক দেরী হয়ে গেছে।

পুনশচঃ অসাধারন একটি জয় উপহার দেয়ার জন্য বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে সকল প্রবাসী বাংলাদেশীদের পক্ষ থেকে প্রাণঢালা অভিনন্দন। এগিয়ে যাও টাইগার। সকল বাংলাদেশী তোমাদের সাথে আছে। জয় বাংলাদেশ।

maipavel.blogspot.com

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.