![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লেকের ধার ঘেঁসে ছোট্ট একটা বেঞ্চ পাতা, রুনু নামের মিষ্টি একটা মেয়ে তাতে এক ঘণ্টা ধরে বসে আছে। কিভাবে ওর মতো মেয়ে এরকম একটা ইরেস্পন্সিবেল ছেলের প্রেমে পড়তে পারে তা সে অনেকক্ষণ থেকেই মেলাতে চেষ্টা করছে,কিন্তু কিছুতেই মনঃসংযোগ করে উঠতে পারছে না। একটা ঝালমুড়ি ওয়ালা অনেকক্ষণ থেকেই ঘুরঘুর করছে আর ওরে রসিক নাগর তুই আমারে করলি দিবানা নামক একটা গান অনেকক্ষণ থেকেই গুনগুন করে যাচ্ছে। রুনু ঝালমুড়ি ওয়ালা ছেলেটাকে ডাকল...
-এই ঝালমুড়ি???
-আফা ঝালমুড়ি দিমু??ঝাল কম দিমু না বেশি দিমু...?
-বেশি করে ঝাল দিবি... নাম কিরে তোর??
-আফা... আমার নাম রুস্তম...
-রুস্তম তো কসাইদের নাম...তুই কসাই না হয়ে ঝালমুড়ি ওয়ালা কেন হলি বল তো?? রুনু হাসল...
হাসি সংক্রামক।রুনুকে হাসতে দেখে রুস্তমও তার দাঁত বের করল।
-বাপ মায় রাখছে আফা... আমি কি করতাম???
-তোকে কিছু করতে হবে না...আমার জন্য ভাল করে ঝালমুড়ি বানা....মাংসের না কিসের যেন একটা ঝোল দিস তোরা...ওটাও বাড়িয়ে দিবি...
-জি আফা,আপনে জহন বলছেন তহন অবসসই দিমু...
-আফা কি কার জন্য অপেক্ষা করতাছেন...??
-হুম...
-কার জন্য আফা??
-আমার রসিক নাগরের জন্য... হি হি...
-আপনের হাসিডা অনেক সুন্দুর আফা...
-তাই??
-আক্কেবারে হাছা কইতাছি আফা... আফা একটা গান সুনবেন??
-শুনা...
এবার রুস্তম নতুন একটা গান ধরল... ও আমার রসিয়া বন্ধুরে...... তুমি কেন কোমরের বিছা হইলা না...
রুনু খুব সরল মেয়ে। সরল মেয়েরা জটিল ছেলেদের প্রেমে পড়ে।এই জটিল আধুনিক ইও ইও জটিল না অন্য টাইপ এর জটিল। রুনুও পড়েছে। কিসমিসকে ভিজিয়ে রাখলে যেমন মোটাতাজা হয়, রুনুকেও রবি সেভাবেই চোখের পানিতে ভিজিয়ে রাখে। এতে অবশ্য রুনুর ভালবাসার কোন কমতি পরেনি,বরং ওটা আরও স্বাস্থ্যবান হয়েছে। ছেলেটাকে রুনু অনেক ভালবাসে। কিন্তু এসব জটিল টাইপ এর ছেলেরা সরল মেয়েদের মধ্যেও জটিলতা খুঁজে। ভালবাসায় জটিলতা খোঁজা আর ঘি দিয়ে পান্তাভাত খাওয়া একই কথা...
দু'ঘণ্টা হতে চলল রবির কোন ছায়াও দেখা যাচ্ছে না। কেন যেন রুনুর অপেক্ষা করতে ভাল লাগছে। রবির সাথে দেখা হয়না অনেকদিন হল। ছেলেটার মনে হয় মেয়েতে অ্যালার্জি আছে,মোবাইলটাও বন্ধ করে রেখেছে।
টানা ৪ দিনের হরতাল চলছে। এর মধ্যে মায়ের চোখে ধুলা দিয়ে প্রেম করতে আসা চাট্টিখানি কথা নয়। ছেলেটা যদি একটু হলেও ওকে বুঝত।কদিন আগেও ঝগড়া হয়েছে রবির সাথে, রাগে ক্ষোভে রুনু তার সখের মোবাইল সেটটার উপর সব রাগ ঝেড়েছে।মা তার কষ্টে জমানো টাকাগুলো দিয়ে ওকে ওটা কিনে দিয়েছিল।সব কিছুর পরওরুনু নির্লজ্জের মতো আজ ছেলেটার সাথে দেখা করতে এসেছে।
আমি কার জন্য পথ চেয়ে থাকব আমার কি দায় পড়েছে টাইপ এর মেয়ে রুনু নয়।তাই পুরু বিকেলটাই রবির অপেক্ষায় পার্ক এ কাটিয়ে দিল। বাসায় মা কে কি জবাব দিবে তা নিয়ে টেনশন হচ্ছে। পড়ন্ত বিকেলের আলো,লেকের মাঝখানের খুঁটিটায় বসে থাকা মাছরাঙার রঙ্গিন পিঠে প্রতিফলিত হচ্ছে। ওর অনেক স্বপ্ন রবিকে নিয়ে,সেগুলো এই মাছরাঙার রঙ্গিন পিঠে প্রতিফলিত আলোর মতই উজ্জ্বল...রঙ্গিন। ছোট একটা সংসার হবে,অভাব থাকবে কিন্তু ভালবাসার কমতি থাকবে না। কার যেন ডাক শুনে রুনু হঠাৎ সম্বিত ফিরে পেল। একটা বৃদ্ধ ভিখারি চাচা...
-একলা একলা বইসা কি কর গো মা???তোমারে তো সকাল থেইকা দেখতাছি... দেশের অবস্থা ভালানা... বাড়িতে জাওগা...মা...
-রুনু হাসল... ওর বোধহয় সত্যি এখন বাসায় চলে যাওয়া উচিৎ... অপেক্ষা করে আর লাভ নেই... সন্ধ্যা হয়ে গেছে...
**************************
অন্ধকার গলিটা থেকে রবি ধুম করে বেরিয়ে এলো।ওর এক হাতে মশাল অন্য হাতে একটা কেরোসিন এর গ্যালন। রাস্তার একপাশে একটা টায়ার পুড়ছে। ওটার পাশে কেরোসিন এর গ্যালনটা রেখে রবি মশালের আলোয় সিগারেট ধরিয়ে কষে একটা টান দিল। একটা দুতলা বি আর টি সি বাস আসছে। ।কোত্থেকে যেন একটা ককটেল উড়ে এসে বাসটার সামনে পড়তেই বাসটা থেমে গেল। রবি দ্রুত বাসটায় কেরোসিন ছড়িয়ে দিয়ে লম্বা লম্বা কটা টান দিয়ে সিগারেটটা শেষ করল।তারপর ঠাণ্ডা মাথায় নিরাপদ দুরত্তে দাড়িয়ে মশালটা ছুরে দিল বাসটার দিকে।
ক্লান্ত হয়ে গভীর রাতে যখন রবি বাসায় ফিরল মা তখনও জেগে বসে টিভিতে খবর দেখছিল। মতিঝিলে বাসে ভয়াবহ অগ্নিসংযোগে মৃত ৩ এবং ১৫ জন গুরুতর ভাবে আহত।রবি কোন গুরুত্ত দিল না। হঠাৎ রুনুর নাম শুনে রবি সম্বিত ফিরে পেল,দৌড়ে এলো টিভির সামনে । কাল রঙের একটা মাংসপিণ্ড ছাড়া কিছুই দেখাচ্ছে না টিভিতে,কিন্তু লাল রঙেরশাড়িটা দেখেই রবি স্তব্ধ হয়ে মেঝেতে বসে পড়ল । ওর সবথেকে পছন্দের শাড়ি পড়ে আছে রুনু নামের এই মিষ্টি মেয়েটি। এটা পরেই আজ ওর সাথে দেখা করার কথা ছিল।আর ও নিজ হাতে তাকে জ্যান্ত পুড়িয়েছে!!!
২ দিন মৃত্যুর সাথে ঝগড়া করে রুনু মারা গেছে।সারাশরীর ভয়াবহ ভাবে পুড়ে গেলেও ওর ব্যাগটা আশ্চর্যজনক ভাবে পুরটা পুড়েনি,ওটা রুনু বুকের সাথে চেপে ধরে রেখেছিল।ওখানে একটা গোলাপ,এক প্যাকেট বেনসন সিগারেট, একটা আধপোড়া চিঠি আর কটা খুচরা টাকা পাওয়া গেছে পাওয়া গেছে।একটা মেয়ের ব্যাগে কেন বেনসন & হেজেস এরপ্যাকেট থাকবে সেটা নিয়ে তার মৃত্যুর পর কারও মাথা বেথা না হলেও একজনের ঠিকই হয়েছিল,এখনও হয়।চিঠিটা প্রায় ছাই হয়ে গেছে......কিন্তু ওটা পড়তে রবির খুব একটা অসুবিধা হয়নি,কারন পুরো চিঠিতে কেবল একটা লাইনই লিখা ছিল...... আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি।
২| ১১ ই জানুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৫:৩৬
মাইরালা বলেছেন: আমার ব্লগে আসার পর ৭ দিন কেটে গেছে।প্রথম পাতায় লেখা পোষ্ট করার সুবিধা এখনও পাইনি। ঠিক বুঝতে পারছি না নিয়ম কানুন গুলো কীভাবে ফলো করতে হবে। কোথাও ভুল হলে দেখিয়ে দেয়া উচিৎ। অ্যাডমিনের পরামর্শ কাম্য। ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১|
১০ ই জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১০:২৪
অপ্রচলিত বলেছেন: বাহ, দারুণ লিখেছেন তো। গল্পে ১ম ভালো লাগা।
ভালো থাকুন নিরন্তর।