![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রশ্নত্তোর
১/ প্রশ্নঃ একজন সচ্ছল ও সামর্থবান ব্যক্তির উপর কয়টি কুরবানী করা ওয়াজিব ?
উত্তরঃ সচ্ছল ও সামর্থবান পূর্ণবয়স্ক মুসলমানের উপর একটি কুরবানী করা ওয়াজিব। যদিও সে অধিক সম্পদের মালিক হোক না কেন? তবে যদি কেউ একাধিক কুরবানী করে তাহলে তা হবে নফল ছাওয়াব।
২/ প্রশ্নঃ কতটুকু সম্পদের মালিক হলে কুরবানী ওয়াজিব হয় ?
উত্তরঃ কুরবানী ওয়াজিব হওয়ার জন্য সচ্ছল ও সামর্থবানের পরিমাণ হল, যাকাতের নেছাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়া। তবে যাকাতের জন্য নেছাব সমপরিমাণ সম্পদের এক বৎসর অতিবাহিত হতে হবে। কিন্তু কুরবানীর জন্য ঐ সম্পদের এক বৎসর অতিবাহিত হওয়ার প্রয়োজন নেই। বরং ১০ই জিলহজ্ব ফজর হতে ১২ই জিলহজ্ব সন্ধ্যা পর্যন্ত সময়ের মধ্যে যাকাতের নেছার সমপরিমাণ সম্পদের মালিক হলে তার উপর ঐ সময়ের মধ্যে যে কোন দিন কুরবানী করা ওয়াজিব।
৩/ প্রশ্নঃ সামর্থের অভাবে কুরবানী করা সম্ভব না হলে, ঋণ করে কুরবানী করা যাবে কি ?
উত্তরঃ পয়সার অভাবে কুরবানী করা সম্ভব না হলে, ঋণ নিয়ে কুরবানী করে পরিবার কিংবা ছেলে-মেয়েদেরকে খুশি করা ও আত্মতৃপ্তি লাভ করার মধ্যে কোন ফায়দা নেই। যার উপর কুরবানী ওয়াজিব নয় সে অন্যের থেকে ধার নিয়ে কুরবানী করার কোন প্রয়োজন নেই। কারণ কুরবানী শুধু কোন তৃপ্তিবোধের বিষয় নয়। বরং এটি একটি ইবাদত। ইবাদত করা ওয়াজিব না হলে তা করার প্রয়োজন কি?
৪/ প্রশ্নঃ ঋণী ব্যক্তি কুরবানী করবে নাকি তার ঋণ পরিশোধ করবে?
উত্তরঃ ঋণী ব্যক্তি কুরবানী না করে ঋণ পরিশোধ করাই তার কর্তব্য। ঋণী ব্যক্তির কুরবানী করার অর্থ ফরয নামাজ না পড়ে নফল নামায পড়ার ন্যায়, যার কোন প্রয়োজন নেই।
৫/ প্রশ্নঃ কুরবানী করার সুন্নত নিয়ম কি ?
উত্তরঃ কুরবানী করার সুন্নত পদ্ধতি হলো, যার উপর কুরবানী ওয়াজিব সে নিজের পক্ষ থেকে এবং পরিবারবর্গের পক্ষ থেকে নিজ হাতে কুরবানী করবে। কুরবানীর পশু একটি হোক কিংবা একাধিক হোক অথবা ভাগে করলে একভাগ হোক কিংবা একাধিক ভাগ হোক। একটি পশু বা একভাগ কুরবানী নিজের ও নিজের পরিবারবর্গের জন্য যথেষ্ট।
৬/ প্রশ্নঃ সচ্ছল মুসাফিরের উপর কুরবানী ওয়াজিব হবে কি.?
উত্তরঃ কুরবানী ওয়াজিব হল স্থায়ী অধিবাসীর উপর। মুসাফিরের উপর নয়। যদিও মুসাফির সচ্ছল বা সামর্থবান হয়। তবে কোন মুসাফির যদি সফর থেকে বারোই যিলহজ্ব সূর্যাস্তের পূর্বেই বাড়িতে পৌঁছে তাহলে তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব।
৭/ প্রশ্নঃ যে ব্যক্তির উপর কুরবানী ওয়াজিব সে যদি বিশেষ কোন কারণে কুরবানী করতে না পারে, তাহলে সে কি করবে ?
উত্তরঃ কুরবানী ওয়াজিব হলে, বিশেষ কোন কারণে কুরবানী করতে না পারলে , এই অবস্থায় যদি সে পূর্বেই কুরবানীর উদ্দেশ্যে কোন পশু খরিদ করে থাকে, তাহলে সেই পশু জীবিত অবস্থায় কাউকে দান করে দেবে। আর কোন পশু খরিদ না করে থাকলে তার কুরবানীর বিনিময়ে একটি ছাগলের মূল্য দান করে দেবে।
৮/ প্রশ্নঃ মৃত ব্যক্তির নামে কুরবানী করা যাবে কি?
উত্তরঃ মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকেও কুরবানী করা যায়। অবশ্য মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে সদকা করাই উত্তম। এমনিভাবে রাসূল (সঃ) এর পক্ষথেকেও কুরবানী করা যায়।
৯/ প্রশ্নঃ- কয় প্রকারের প্রাণী দ্বারা কুরবানী করা বৈধ, জানাবেন।
উত্তরঃ- ছয় প্রকারের প্রাণী দ্বারা কুরবানী করা যায়। যথা- উট, মহিষ, গরু, দুম্বা, ছাগল ও ভেড়া। এগুলো ছাড়া অন্য পশু দিয়ে কুরবানী করা জায়েয হবে না।
১০/ প্রশ্নঃ- কুরবানীর পশুর বয়স সম্পর্কে জানতে চাই।
উত্তরঃ- দুম্বা, ছাগল, ও ভেড়া কুরবানীর জন্য পূর্ণ এক বৎসর বয়সের হতে হবে। তবে এসব পশু এক বৎসর বয়সের আদৌ পাওয়া না গেলে, তাহলে দেখতে এক বৎসর বয়সের মত লাগে এমন ছয় মাসের পশু দিয়েও কুরবানী করা যাবে। গরু ও মহিষ পূর্ণ দু’বছর বয়সের হতে হবে। আর উট হতে হবে পাঁচ বছর বয়সের । তার কম বয়সের হলে কোনটির কুরবানী জায়েয হবে না।
১১/ প্রশ্নঃ- কুরবানীর পশুর চামড়ার বিধান কি ? বিস্তারিত জানতে চাই।
উত্তরঃ- কুরবানীর পশুর চামড়া নিজেরাও ব্যবহারের উপযোগী করে ব্যবহার করতে পারবে। অথবা কুরবানীর চামড়া সরাসরি গরীব-মিসকীনদের সদকা করে দেওয়া যায়। কিংবা বিক্রয় করে তার মূল্যও খয়রাত করে দেওয়া যায়।
১২/ প্রশ্নঃ- কুরবানীর গোশ্ত বানাবার মজুরী স্বরূপ পশুর চামড়া, রশি , গোশ্ত দেওয়া জায়েয আছে কি ?
উত্তরঃ- মজুরী স্বরূপ কুরবানীর পশুর চামড়া, গোশ্ত, রশি , দেওয়া জায়েয নেই। মজুরী পৃথকভাবে দিয়ে চামড়া বা রশি ও গোশ্ত হাদিয়া দেওয়া যায়।
১৩/ প্রশ্নঃ- কুরবানীর গোশত বন্টনের পদ্ধতি কি? কুরবানী দাতা সম্পূর্ণ গোশ্ত খেতে পারবে কি না ? জানতে চাই।
উত্তরঃ- কুরবানী দাতা সম্পূর্ণ গোশত খেতে পারবে। তবে মুস্তাহাব হচ্ছে; কুরবানীর গোশ্ত নিজেরা খাবে এবং আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের এবং গরীব-মিসকীনদের মাঝে বন্টন করবে। নিয়ম হলো; এক তৃতীয়াংশ গরীব-মিসকীনদের মাঝে বন্টন করে বাকিটুকু নিজেদের জন্য ও আত্মীয়-স্বজনদের মাঝে বন্টন করা উত্তম। কিন্তু এটা অপরিহার্য নয় যে, এক তৃতীয়াংশ গরীবদের মাঝে বন্টন করতেই হবে, এক তৃতীয়াংশের কম গরীবদের মাঝে বন্টন করলেও কোন দোষ নেই।
১৪/ প্রশ্নঃ- কুরবানীর গোশত অমুসলিমদেরকে দেওয়া জায়েয আছে কি?
উত্তরঃ- কুরবানীর গোশত অমুসলিমদেরকেও দেওয়া জায়েয আছে, এবং রান্না করে খাওয়ানোও জায়েয আছে।
১৫/ প্রশ্নঃ- কুরবানীর দাতা কুরবানীর গোশ্ত তিন দিনের বেশী খেতে পারবে কি না ?
উত্তরঃ- কুরবানীর গোশ্ত তিন দিনের চেয়ে বেশী দিন খাওয়া কিংবা পরবর্তীর জন্য জমা করে রাখা জায়েয। তবে যে এলাকায় কুরবানী দাতার সংখ্যা কম হওয়ার কারণে সব গরীব-মিসকীন যদি কুরবানীর গোশ্ত পাবে না বলে আশংকা হয়, সেখানে কুরবানীর গোশ্ত তিন দিনের চেয়ে বেশী রাখার জন্য জমা করা কুরবানী দাতাদের জন্য উচিত নয়।
(সংগ্রহে ঃ ফিকহুস সুন্নাহ. ফতওয়ায়ে আলমগীরি. আসান ফিক্বাহ. নুরুল হেদায়া।)
১৬/ প্রশ্নঃ- বর্তমানে মুরগী আধুনিক যন্ত্র দ্বারা যবেহ করা হয়, এর বিধান সম্পর্কে জানতে চাই।
উত্তরঃ- আধুনিক যন্ত্র দ্বারা মুরগী যবেহ করার তিনটি জায়েয পদ্ধতি রয়েছে। ১. বৈদ্যুতিক মেশিনে মুরগী যবেহ করার পূর্বে কারেন্টের হিটযুক্ত ঠান্ডা পানিতে চুবানো যাবে না এবং এই ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যে কারেন্টের হিট মুরগীর প্রাণ নাশের কারণ হবে না। কেননা কোন কোন বিজ্ঞ ফিকহ্ গবেষকের মত ইলেকট্রিক হিটের কারণে মুরগীর ৯০% প্রাণ স্তিমিত হয়ে যায়। ২. ঘুর্ণয়মান ছুরি দ্বারা যবেহ করা যাবে না। আর যবেহ করার সময় মুসলমান বা আলহে কিতাবের কেউ উúস্থিত থাকতে হবে। আর তার সম্মুখে যে সব মুরগী আসবে তা পালাক্রমে দেবে এবং প্রত্যেকটির ক্ষেত্রে বিসমিল্লাহ বলবে। ৩. এটা নিশ্চিত হতে হব যে, যবেহকৃত মুরগী যে গরম পানিতে দেওয়া হয় তা অত্যন্ত ফুটন্ত না হওয়া। (সংগ্রহে ঃ বুহুসুন ফী কাযায়া ফিক্বহিয়্যা মুআসারাহ্ পৃ.৪২৮)
১৭/ প্রশ্নঃ- বৈদ্যুতিক মেশিনে গরু, ছাগল প্রভৃতি যবেহ করার বিধান জানতে চাই।
উত্তরঃ- এ ক্ষেত্রে দু’টি নিন্দনীয় বিষয় রয়েছে। যথা- ১. গরু এবং ছাগল জাতীয় জন্তুকে অবশ করার জন্য রিভলবার বা পিস্তল, গ্যাস, কার্বনঅক্সাইড, কারেন্টের সঙ্ঘর্ষ এগুলোর সাহায্য নেওয়া হয়। যার কারণে জন্তু যবেহ হওয়ার পূর্বে মারা যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। সুতরাং এ পদ্ধতি পরিবর্তন করা অত্যাবশ্যক। এমন বিষয়ে যাতে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, উল্লিখিত বিষয়গুলোর দ্বারা জন্তুর মৃত্যু হবে না, তাহলে জায়েয হবে। ২. জন্তু যবেহ করার সময় যবেহের রগগুলো যথাযথভাবে কাটা হয় না। উল্লিখিত বিষয়গুলোর প্রতি পূর্ণরূপে লক্ষ্য রেখে যথাযথভাবে যবেহ করলে উন্নত রাষ্ট্রের যবেহপদ্ধতিগুলো শরয়ী যবেহ হিসাবে পরিগণিত হবে এবং তা ভক্ষণ করা হালাল হবে। (সংগ্রহে বুহুসুন ফী কাযায়া ফিক্বহিয়্যা মুআসারাহ্ পৃ.৪৪৪)
©somewhere in net ltd.