![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জান্নাত আরবী শব্দ। বাংলায় বলা হয় স্বর্গ, বাগান, উদ্যান, সুখময় স্থান, উৎকৃষ্টতম স্থান ইত্যাদি। এবং ফারসীতে বলা হয় বেহেশ্ত। আল্লাহ তা’আলা তাঁর নেক বান্দাহদের জন্য পরকালে যে চির সুখের আবাস স্থলের ব্যবস্থা রেখেছেন আল কুরআনের পরিভাষায় সে স্থানের নাম জান্নাত।
মহান আল্লাহ তা'আলা পবিত্র কুরআনে এরশাদ করেছেন; এবং যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে ও সৎকর্ম করেছে, আমি তাদেরকে জান্নাতে দাখিল করবো যার নিু দেশে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত, তন্মধ্যে তারা চিরকাল অবস্থান করবে। আল্লাহর প্রতিশ্র“তি সত্য। এবং কে আল্লাহ অপেক্ষা বাক্যে অধিকতর সত্যপরায়ণ।” (সূরা নিসা: ১২২)
মহান আল্লাহ তাঁর ইচ্ছানুযায়ী জান্নাত সৃষ্টি করেছেন। এর আয়তন কিংবা চিরশান্তির উপকরণের বর্ণনা দেওয়া মানুষের পক্ষে অসম্ভব। আল্লাহর এ জান্নাত যে কত বড় ও প্রশস্ত সে সম্পর্কে মহান আল্লাহ এরশাদ করেন; তোমরা স্বীয় প্রতিপালকের ক্ষমা ও জান্নাতের দিকে ধাবিত হও। যার প্রসারতা নভোমন্ডল ও ভূমন্ডল সদৃশ, ওটা ধর্মভীরুদের জন্যে নির্মিত হয়েছে। ( সূরা আল ইমরান: ১৩৩) জান্নাতের দৈর্ঘ্য প্রস্থ সম্পর্কে কেউ অবগত নয়। জান্নাতের স্তর একশটি, একটি হতে অন্যটির দূরত্ব আসমান ও জমীনের দূরত্বের সমান। আর জান্নাতুল ফেরদাউসের স্তর সর্বোচ্চে। উহা হতে প্রবাহিত হয় চারটি ঝর্ণাধারা এবং এর উপরেই রয়েছে মহান আল্লাহর আরশ। প্রথম যে দলটি জান্নাতে প্রবেশ করবে, পূর্ণিমার চাঁদের মত সুন্দর রূপ ধারণ করেই প্রবেশ করবে। এর পরবর্তী যে দলটি প্রবেশ করবে তাঁরা হবে আকাশের উজ্জ্বল তারকার ন্যায়। জান্নাতবাসী সকলে এক ব্যক্তির অন্তরের ন্যায় হবে। তাঁদের মধ্যে কোন কোন্দল বা হিংসা বিদ্বেষ থাকবে না। মহান আল্লাহর বাণী; তারা শুনবে না কোন অসার অথবা পাপ বাক্য, সালাম আর সালাম (শান্তির আর শান্তি) বাণী ব্যতিত। (সূরা ওয়াকি'আহ ২৫-২৬) পৃথিবীর মানুষ আস্তে আস্তে বার্ধক্যের দিকে ধাবিত হয় এবং শক্তিহীন হয়ে পড়ে। কিন্তু জান্নাতের ব্যাপারটা ভিন্ন। সেখানে এরকম কিছুই হবে না। চন্দ্র সুর্য উদিত হবে না, দিবা রাত্রির পার্থক্য অনুভূত হবে না। সর্বদাই সর্গীয় আভায় চার দিক ঝলমল করতে থাকবে।
জান্নাতের শ্রেণী বিন্যাস:
জান্নাত আট প্রকার- ১. জান্নাতুল ফেরদাউস ২. দারুল মাকাম ৩. দারুল ক্বারার ৪. দারুস সালাম ৫. জান্নাতুল মাওয়া ৬. জান্নাতুন নাঈম ৭. দারুল খুলদ ৮. জান্নাতু আদ্ন।
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত: রাসূল (সঃ) এরশাদ করেন; এমন একদল লোক জান্নাতে প্রবেশ করবে, যাঁদের অন্তর পাখীদের অন্তরের ন্যায় হবে। এ ছাড়া সায়হান, জায়হান, ফোরাত ও নীল এ নদীগুলো জান্নাতের নহর হবে। (মুসলিম) আসলে পাখীদের অন্তর খুবই কোমল ও ভীতু এবং পরস্পরের প্রতি শত্রুতা বিদ্বেষ হতে পবিত্র। অন্য দিকে আল্লাহর উপর পূর্ণ নির্ভরশীল। আর এ রকম গুণবিশিষ্ট লোকেরাই জান্নাতী হবে। 'সায়হান' ও 'জায়হান' অধিকাংশ ওলামাদের মতে মধ্য এশিয়ার খোরাসান এলাকায় অবস্থিত। ফোরাত ইরাকের কুফা নগরীর পাশ দিয়ে প্রবাহিত এবং নীল মিশরের প্রসিদ্ধ নদী। নবীগণ এ সমস্ত নদীর পানি পান করেছেন। এ সমস্ত নদীর পানি জান্নাতের নহরসমূহের মত বরকতময় ও কল্যাণকর। তাই এগুলোকে বেহেশতের নদী বলা হয়েছে।
পৃথিবীর বাস্তব সত্যগুলোর মধ্যে 'মৃত্যু' হচ্ছে একটি। জন্মিলেই মৃত্যু অনিবার্য। অথচ আমরা সবসময়ই এই মৃত্যু হতে নিজেদেরকে দূরে সরে থাকতে চাই। কিন্তু জান্নাতীদের কখনও মৃত্যু হবে না। মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে ঘোষণা করেন; যারা তাদের প্রতিপালককে ভয় করতো তাদেরকে দলে দলে জান্নাতের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। যখন তারা জান্নাতের নিকট উপস্থিত হবে ও এর দ্বারসমূহ খুলে দেয়া হবে, এবং জান্নাতের রক্ষীরা তাদেরকে বলবে; তোমাদের প্রতি সালাম, তোমরা সুখী হও এবং জান্নাতে প্রবেশ কর স্থায়ীভাবে অবস্থিতির জন্যে। (সূরা যুমার: ৭৩)
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সঃ) বলেছেন; মহান আল্লাহ এরশাদ করেন; 'আমি আমার আল্লাহভীরু বান্দাদের জন্যে জান্নাতে এমন সব সামগ্রী তৈরী করে রেখেছি যা কোন চোখ কখনও দেখেনি, কোন কান কখনও শুনেনি, এবং কোন অন্তর অনুভব ও কল্পনা করেনি। (হাদীসে কুদসী বুখারী )
জান্নাতবাসীদের খাদ্য ও পানীয়:
এ সম্পর্কে আল্লাহ তা'আলা এরশাদ করেন; আমি তাদেরকে দিব ফল-মূল এবং গোশ্ত যা তারা পছন্দ করে। সেখানে তারা একে অপরের নিকট হতে গ্রহণ করবে পান-পাত্র, যা হতে পান করলে কেউ অসার কথা বলবে না এবং পাপ কর্মেও লিপ্ত হবে না। (সূরা তূর: ২২-২৩) আল্লাহ তা'আলা সূরা দাহরে বলেন; সৎকর্মশীলরা পান করবে এমন পানীয় যার মিশ্রণ হবে কর্পুর। (সূরা দাহর: ৫) সূরা মুতাফ্ফিফীন এ শরাবের আরো দু'টি বৈশিষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে; তাদেরকে উত্তম উৎকৃষ্ট ও মুখবন্ধহীন শরাব পান করানো হবে। এবং এর উপর কস্তুরির মোহর লাগানো থাকবে। (সূরা মুতাফ্ফিফীন ২৫-২৬)
জান্নাতীদের শয়ন ও বিছানা:
এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন; তারা হেলান দিয়ে বসবে সবুজ তাকিয়ায় ও সুন্দর গালিচার উপরে। (সূরা আর রহমান: ৭৬) হযরত জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সঃ) বলেন; জান্নাতবাসীরা জান্নাতে খাবার খাবে এবং পানীয় বস্তু পান করবে, সেখানে তাদের পেশাব পায়খানার দরকার হবে না। এমন কি তাদের নাকে ময়লাও জমবে না। ঢেকুরের মাধ্যমে তাদের পেটের খাদ্য-দ্রব্য হজম হয়ে সুগন্ধির ন্যায় বের হয়ে যাবে। শ্বাসপ্রশ্বাস গ্রহণের মতই তারা তাসবীহ পাঠে অভ্যস্থ হয়ে যাবে। (মুসলিম)
জান্নাতীদের সেবা করার জন্য অসংখ্য গিলমান (সেবক) থাকবে। এ সেবকগণ হবে চিরন্তন বালক, এরা সে সমস্ত বালক যারা বালেগ হওয়ার পূর্বেই মৃত্যুবরণ করেছিল। মহান আল্লাহ ঘোষণা করেন; “তাদেরকে পরিবেশন করবে চির কিশোরগণ, তাদেরকে দেখে মনে হবে যেন ছড়িয়ে থাকা মুক্তা।' (সূরা দাহ্র: ১৯) পৃথিবীতে কোন মানুষই চিরসুখী নয়। সবার মাঝেই একটি অতৃপ্ত বেদনা থাকেই। কিন্তু জান্নাতবাসীরা এ রকম কোন দিন অনুভব করবে না।
মহান আল্লাহ তা'আলা এরশাদ করেন; (জান্নাতীরা এমন উদ্যানে থাকবে) সেখানে আছে কন্টকহীন কুলবৃক্ষ, কাঁদি ভরা কদলী বৃক্ষ, স¤প্রসারিত ছায়া, সাদা প্রবাহমান পানি, ও প্রচুর ফল-মূল, যা শেষ হবে না এবং নিষিদ্ধও হবে না। (সূরা ওয়াকিয়াহ: ২৮-৩৩) মহান আল্লাহ অন্যত্র আরো বলেন; সেখানে তোমাদের জন্যে রয়েছে যা কিছু তোমাদের মন চায়, এবং সেখানে তোমাদের জন্যে রয়েছে যা তোমরা ফরমায়েশ কর। এটা হলো ক্ষমাশীল পরম দয়ালু আল্লাহর পক্ষ হতে আপ্যায়ন। (সূরা হা-মীম আস্ সাজদাহ: ৩১-৩২) কিন্তু আল্লাহর এই নেয়ামতে ভরা জান্নাত কি এমনিতেই পাওয়া যাবে? যদি পাওয়া যেত তাহলে নবী রাসূলগণকে কেন এত জুলুম অত্যাচার নির্যাতন নিপীড়ণ সহ্য করতে হয়ে ছিলো ? রাসূলে কারীম (সঃ) মদীনায় যে একটি কল্যাণময়ী ইসলামী মডেল রাষ্ট্র উপহার দিয়েছিলেন এর জন্য কত ত্যাগ তিতিক্ষা নির্যাতন নিপীড়ণের শিকার হতে হয়েছে তা ইতিহাস সাক্ষী। আল্লাহ তা'আলা এরশাদ করেন; তোমরা কি মনে করেছো যে, তোমরাই বেহেশতে প্রবেশ করবে? অথচ তোমরা এখনও তাদের অবস্থা প্রাপ্ত হওনি যারা তোমাদের পূর্বে বিগত হয়েছে; তাদেরকে বিপদ ও দুঃখ স্পর্শ করেছিল এবং তাদেরকে প্রকম্পিত করা হয়েছিল এমন কি রাসূল ও তৎসহ বিশ্বাস স্থাপনকারীগণ বলেছিল, কখন আল্লাহর সাহায্য আসবে?” সতর্ক হও, নিশ্চয় আল্লাহর সাহায্য নিকটবর্তী। ( সূরা বাকারা: ২১৪) এ আয়াতে এটাই আমাদেরকে শিক্ষা দিচ্ছে যে, আল্লাহর জান্নাত সহজে পাওয়া যাবে না। এর জন্য রীতিমত চেষ্টা সাধনা করতে হবে। মূলত এটাই ঈমানের দাবী। মনে রাখতে হবে দুঃখের পরই সুখ আসে। তাই এই কষ্ট-সহিষ্ণু লোকদের সংগে আল্লাহ জান্নাতে দেখা করবেন। রাসূল (সঃ) এরশাদ করেন; জান্নাতীগণ যখন আনন্দ উৎসবে মেতে থাকবে এমন সময় হঠাৎ তাদের উপর একটি আলো চমকিত হবে। তখন তারা মাথা উঁচু করে সে দিকে তাকিয়ে দেখবে যে, মহান রাব্বুল আলামীন তাদের দিকে তাকিয়ে আছেন। সে সময় আল্লাহ বলবেন; হে জান্নাতীগণ! আচ্ছালামু আলাইকুম (তোমরা আরাম ও নিরাপদে থাক) আল্লাহ জান্নাতীদের প্রতি আর জান্নাতীরা আল্লাহর প্রতি তাকিয়ে থাকবে, তখন আল্লাহর দর্শন হতে চোখ ফিরিয়ে অন্য কোন নেয়ামতের দিকে তাকাবে না, যতক্ষণ না আল্লাহ আড়াল হয়ে যাবেন। অবশেষে আল্লাহর নূরই বাকী থাকবে। (তিরমিযী)
জান্নাতে পবিত্রা রমণীগণ থাকবে। মহান আল্লাহ তাদের মুখমন্ডল লোহিত, সাদা, সবুজ ও হলুদ রং এর সংমিশ্রণে তৈরী করেছেন। তারা নিজ নিজ স্বামী ব্যতীত অন্য কারো দিকে তাকাবে না। মহান আল্লাহ এরশাদ করেন; আমি জান্নাতী রমণীগণকে বিশেষরূপে সৃষ্টি করেছি, তাদেরকে করেছি কুমারী, সোহাগিনী ও সমবয়স্কা। (সূরা ওয়াকিয়াহ: ৩৫-৩৭)
যদি জান্নাতবাসীনি কোন নারী (হুর) পৃথিবীর পানে উঁকি দেয়। তবে সমস্ত জগৎটা আলোকিত হয়ে যাবে। এবং আসমান ও যমীনের মধ্যবর্তী স্থানসমূহ সুগন্ধিতে মোহিত হয়ে যেত। এমন কি তাঁদের মাথার ওড়নাও গোটা দুনিয়া ও দুনিয়ার সম্পদরাজি হতে উত্তম। (বুখারী)
আর যারা জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নির্ধারিত সীমা রেখার মধ্যে চলাফেরা করে তাঁদের পরকালীন নেয়ামত সম্পর্কে আল্লাহ বলেন; যারা আল্লাহর সাথে কৃত অংগীকার পূরণ করে এবং প্রতিজ্ঞা ভংগ করে না, আর আল্লাহ যে সম্পর্ক অক্ষুন্ন রাখতে আদেশ করেছেন যাঁরা তা অক্ষুন্ন রাখে, ভয় করে তাদের প্রতিপালককে এবং ভয় করে কঠোর হিসাবকে। আর যারা তাদের প্রতিপালককে সন্তুষ্টি লাভের জন্যে ধৈর্য ধারণ করে, নামায সুপ্রতিষ্ঠিত করে, আমি তাদেরকে যে জীবনোপকরণ দিয়েছি তা হতে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে এবং যারা ভাল দ্বারা মন্দ দূরীভূত করে, তাদের জন্যে শুভ পরিণাম। জান্নাতু আদন তথা স্থায়ী জান্নাতে তারা প্রবেশ করবে এবং তাদের পিতা-মাতা, পতি-পত্নি ও সন্তান-সন্ততিদের মধ্যে যারা সৎকর্ম করেছে তারাও এবং ফেরেশ্তাগণ তাদের কাছে হাজির হবে প্রত্যেক দরজা দিয়ে। চার দিক থেকে ফেরেশ্তাগণ তাদেরকে খোশ-আমদেদ করতে থাকবে এবং বলবে তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক , তোমরা ধৈর্য ধারণ করেছো বলে তোমাদের প্রতি শান্তি! কতই না ভাল এই পরিণাম। (সূরা রা'দ: ২০-২৪)
অনন্ত জীবনের সুখী হওয়ার অর্থ হচ্ছে জান্নাতের অধিকারী হওয়া। আর এ জান্নাত পেতে হলে বসে থাকলে চলবে না, বরং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আল কুরআনের বিধান আর রাসূলে কারীম (সঃ) এর বাণী মোতাবেক নিজে প্রথমে আমল করতে হবে পরে পরিবার থেকে আরম্ভ করে সমাজ তথা রাষ্ট্রের সকলকে আমল করার ব্যবস্থা করতে হবে। আল্লাহ আমাদের সকলকে জান্নাতে যাওয়ার উপযোগী আমল করার তাওফীক দান করুন। আমীন
©somewhere in net ltd.