নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পাঠক লেখকের ভেদ নেই, তাই পাঠও নেই

মানস চৌধুরী

আমার প্রফাইলের পুরাটাই বৃত্ত। অন্ত নাই। তাই, বছর আষ্টেক পর আবার এসে যাই। পেশা: মাস্টারি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ইমেইল: [email protected]

মানস চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

আলী বিহারীর কম্বল

১৮ ই মার্চ, ২০০৮ সকাল ৭:২০

কম্বলটা গায়ে দিয়ে আমি শুই। অথচ প্রতিবারেই মনে হয় কম্বলটাই আমাকে চাপা দিয়ে পড়ে আছে। এই ভারী অনমনীয় দুর্বিনীত বস্তুপিণ্ডটি বুকের ওপর থাকলে প্রতিরাতেই আমার মাঝপথে ঘুম ভেঙে যায়। আমি হাঁসফাঁস করতে থাকি। এটাকে কম্বল বলে ভাবাই মুস্কিল। এই এতগুলো বছরেও, আমার নানাবিধ আত্মপ্রবোধ রচনা সত্ত্বেও, এটাকে কিছুমাত্র কম্বল হিসেবে নিতে আমি পারিনি।



কম্বলটা কেনা হয়েছিল ৫০ টাকায়।



আলী বিহারী ওর স্ত্রীকে নিয়ে বিকেলে আমাদের বাসায় এসেছিল। বাইরে রকে তখন মাদুর পাতা। বাবা ওদেরকে সেই মাদুরে বসতে দিয়ে মাকে বাইরে আসতে বলেছে। সম্ভবতঃ কম্বলটা সরেজমিনে দেখাতে। আবার এও হতে পারে, দাম-টাম নিয়ে দুরূহ লেনদেনটাতে মা অংশ নিক বাবা তাও চাইছিল। আমরা মাদুরে বসে আলী বিহারীর দিকে তাকিয়ে আছি। সত্যি কথা বলতে ওর চোখের দিকে। ওর স্ত্রী আমাদের Ñ আমি আর আমার বোন Ñ দু’জনকে দেখে কিছু বলবে ভাবছিল বোধহয়। তেমন কিছু বলা হয়নি। কেবল বাবাকে জিজ্ঞেস করল ‘এ দুইটো?’ বাবা জোরাল গলায় বলল ‘এইতো তোমাদের দোয়ায়।’ আলীর স্ত্রী দোয়া করবার একটা বাংলা বাক্য শুরু করেও আগাতে পারল না। মা বাইরে চলে এল।



ভাঁজ-করা কম্বলটা আলীর স্ত্রী সুফিয়ার বাম পাশে রাখা। আলীকে সুফিয়া তার ডান পাশে দেয়াল হেলান দিয়ে বসিয়েছে। আমি মাদুরে আধ-পাছা ঠেকিয়ে রকের বাইরে পা ঝুলিয়ে বসেছি। ঘরে ঢুকবার যে দরজা সেই দরজার জায়গাটুকু ছেড়ে দিয়ে সুফিয়ার মুখোমুখি বাবা দাঁড়িয়ে। তার পাশে রাখা চেয়ারটাতে বসে আছে বোন, পা দোলাচ্ছে। চেয়ারের পাশে দরজার চৌকাঠের সঙ্গে ঠেস দিয়ে আলীর লাঠিখানা রাখা। দরজা দিয়ে বেরিয়ে এসে মাদুরের বাইরে পায়ের পাতার উপর বসে মা কম্বলটা ধরে দেখল। আমাদের সকলের চোখ তখন কম্বলটার দিকে। কেবল সুফিয়া আর আলী ছাড়া। সুফিয়া তাকিয়ে একদম মায়ের মুখের দিকে। ওর ছোট ছোট চোখদুটো গভীর মনোযোগে আরো ছোট হয়ে গেছে। আর আলী কোথাও তাকিয়ে নেই। মা কী বলে তা শোনার জন্য ওকে উদগ্রীব মনে হলো। ওর পিঠ এবং ঘাড় তখন সোজা। মা দুই প্রস্থ ভাঁজ খুলে দেখল। হাতের উল্টো পিঠ কম্বলের গায়ে ঘষল। তারপর সুফিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল ‘৫০ টাকাই দিতে হবে? কম কিছু দিলে হয় না?’ মানে দামের এক রকমের রফা বাবার সঙ্গে আগেই আলীর হয়েছিল। মা’র কথায় সুফিয়া তেমন কোনো উত্তর খুঁজে পেল না। তার আগেই মা উঠে দাঁড়াল। বাবাকে বলল ‘খুলে একটু দেখে নাও।’ আলী হেলান দিয়ে বসল আবার। মা ঘরে গেল। আমি জানি মা সুজি বানাচ্ছে ওদের জন্য।



এইমাত্র যে কম্বলটা কেনা হলো, যদিও এই কেনায় আমার কোনোরকম কথাবার্তা পছন্দ-অপছন্দের বালাই নেই, সেটা কিন্তু আমার জন্যই কেনা হলো। পুরোটা সময় মাদুরে আধ-পাছা বসে থেকে চোখের কোণা দিয়ে আমি কম্বলটাকে দেখতে থাকলাম। মা উঠে দাঁড়াবার পর, যখন এটা না-কেনার আর কোনো সম্ভাবনাই থাকল না, তখন একটা ছোট দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আমি আমার বোনের দিকে তাকালাম। সমস্ত ঘটনায় সেই একমাত্র নির্লিপ্ত দর্শক। এমনকি এই যে আমার হতাশা সেটাও যে ও খুব একটা ল্য করল তা আমার মনে হলো না। সুজির জন্য অপো ছাড়া আমি আর ভাল কিছু তখন মনে করতে পারলাম না। এই আধা ঘণ্টা আগেও আমি মনে মনে ভেবেছি আলী বিহারী না এলেই হয়। আবার ভেবেছি হতেও তো পারে দারুণ একটা কম্বল। বুকের সাথে একহাতে ঠেসে এই কম্বলটা সমেত সুফিয়াকে ঢুকতে দেখেছি আমিই। তখন থেকে আমার আর মাদুরে আরাম করে বসাই হলো না।



এ কথা বলার আর অপো রাখে না যে কম্বলটা আমার একেবারেই পছন্দ হয়নি।



একজন ধুনকার যেবার আমাদের বাসায় এসেছিল সেবার আমার জন্য লেপ বানানো হয়নি। সে ক’ বছর আগের কথা। বোনটাও তখন বেশ ছোট, ওর জন্য আলাদা করে কিছু করার প্রশ্নই আসে না। আর আমার তখন একটা লেপ ধরনের জিনিস ছিলই। মা-বাবার লেপটা তখন চিমসে গেছে। ধুনকার এল। এসে উঠোনে পেতে দেয়া বড় একটা হোগলায় বসে গম্ভীর মুখে সেই চিমসে লেপের সেলাই খুলতে লাগল। পাশে স্পঞ্জের স্যান্ডেলটা খুলে রেখেছে। স্যান্ডেলটার সাদা বুক জোড়া গোড়ালিতে আর বুড়ো আঙুলের ধারে য়ে গিয়ে উৎকট একটা নীল রঙ বেরিয়ে এসেছে। গোড়ালি দুটোই বেশি য়ে গেছে। তার মধ্যে ডান পায়েরটার খানিক অংশ পাতলা হয়ে ভেঙে গেছে। ওখান থেকে ওর পা বেরিয়ে মাটিতে ঠেকবার কথা। আর বাম পায়ের ফিতেটা সামনের মধ্যখানে বোধহয় ছিঁড়ে গেছিল। সেখানে একটা তার দিয়ে বাঁধা। একটা স্পঞ্জের স্যান্ডেল পরে আমিও তার ধারে কাছে বসে দেখছি। আমার গায়ে হাতা-কাটা একটা স্যান্ডো গেঞ্জি। আমি একবার ওর লেপের সেলাই খুলতে দেখি, একবার ওর স্যান্ডেল দেখি। ধুনকার সেলাই খোলার ফাঁকে ফাঁকে আমাকে দেখছে। লেপের সেলাই খোলা হয়ে গেলে ও বালিশের খোলগুলো খুলতে শুরু করে। বালিশ ছিল চারটা। বাবা কিংবা মা কেউই দুটো করে বালিশ ছাড়া ঘুমাত না। মা কোথায় ছিল খেয়াল করিনি। বালিশ খুলতে লাগার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই আমাকে ডেকে নিয়ে গেল Ñ ‘ভেতরে চল। তুলায় এখনি হাঁচতে শুরু করবি।’ খুব একটা ইচ্ছে আমার হচ্ছিল না, কিন্তু অগত্যা মার সঙ্গে ঘরের মধ্যে যাই। আর একটু পর পর নানান উসিলায় বাইরে এসে ধুনকারের কাজ দেখি। প্রায় বিকেল পর্যন্ত ছিল সে। তুলা ধুনল। তারপর আবার বালিশে ভরে সেগুলো সেলাই করল। এর মধ্যে দেখি লাল রঙের নতুন কাপড়ের খোল বের করে মা তাকে দিল। সেই নতুন লাল রঙের কাপড়ের মধ্যে ধুনে-রাখা তুলা ভরে একদম নতুন-দেখতে একটা লেপ ও বানাল। লেপের সেলাইয়ে অনেক সময় লাগল তার। সে অনেক দিন আগের কথা।



আমি চাই বা না চাই, বোনটা ঘুমাত ওই লেপের মধ্যেই, মা-বাবার সঙ্গে। আর আমার লেপটা আমারই ছিল। ছোট খাট একটা জিনিস। কিন্তু লেপই। সাদা মার্কিন কাপড়ের ঢাকনা লাগানো, ছাপানো কাপড়ের খোল। তার ভেতরে পর্যাপ্ত তুলার একটা পরিষ্কার লেপ। আমি যখন আরো ছোট তখন শখ করে আমার কথা ভেবেই ওটা বানানো হয়েছিল। শীতের সময় লেপের মধ্যে ঢুকেই আমার মাথা মুড়ে ঘুমানোর অভ্যাস। এটা প্রায় নিত্য-নৈমিত্তিক ছিল যে আমি ওভাবে ঘুমাব আর বাবা খানিক পর এসে লেপ নামিয়ে আমার মুখ-নাক বের করে দেবে। বাবা এটা করত আমার দম বন্ধ হয়ে যেতে পারে সেই ভয়ে।



পরের বছরগুলোতে কখন যেন ওই লেপ থেকে পা বের হয়ে যেতে শুরু করেছিল। লেপ মুড়ি দিয়ে ঘুমাতে গেলেই আমার পা বের হয়ে যায়। ফলে মুড়ি দিয়ে ঘুমানো আমার বন্ধই হয়ে গেছিল প্রায়। সেই হিসেবে বাবা কিংবা মায়ের পে স্বাভাবিক ছিল খুশি হয়ে নতুন কোনো ব্যবস্থার কথা চিন্তা না করা। কিন্তু ঘটেছে উল্টো। আমার একটা লেপ লাগবে Ñ এই চিন্তায় তারা পুরো একটা শীতের মৌসুম কাটাল। তাদের চিন্তা দেখে, পরিবারের একজন বিচণ সদস্য হিসেবে আমিই বরং নানা সময়ে আশ্বস্ত করেছি। আমার সেই আশ্বস্তিতে ওরা স্বস্তি পায়নি। আবার একজন ধুনকারকে বাসায় ডাকাও হয়ে ওঠেনি। বিষয়টা কেবল ধুনকার ডাকার ছিল না। ওই লেপে যদি নিশ্চিন্তে আমার পা ঢোকাতে হয় তাহলে কিছু তুলাও ওতে জুড়তে হবে। সেটা আমি বুঝতাম। মা কিংবা বাবাও বুঝত। আর খোল-নলচে, মানে খোল আর ঢাকনাও বদলাতে হবেই। দু’ চারদিন, আমার মনে পড়ে, বাবা এসে মাকে খবর দিত ‘কাপাশ তুলার শুনলাম ৮০ টাকা সের।’ শিমুল তুলার প্রতি কোনোরকম ভক্তি শ্রদ্ধা বাবার কোনোকালেই ছিল না। কেবল একবার বাবার হাত ধরে বাজারে যাবার সময় পাড়ার শেষ মাথায় মোড়ের ধারে যে পরিত্যক্ত মাঠখানা, তার মধ্যে খেয়ালীর মতো দাঁড়িয়ে থাকা চৈত্রমাসের শিমুল গাছটার পাগল-করা লাল ফুল দেখিয়ে বাবা বলেছিল Ñ

“দেখেছিস বাবা কী সুন্দর ফুল।”

“বাবা ওটা নাকি শিমুল গাছ। তো শিমুল গাছে তুলা হয় না?”

“হয় তো। এই ফুলের পর ফল হবে। সেই ফল পাকলে তুলা হবে। তখন পাকা ফল ফেটে তুলা উড়বে।”

“ফল ফেটে তুলা হবে?” আমি তাজ্জব হয়ে জিজ্ঞেস করি।

“তুই মনে করেছিস তুলাই ফুল।” বাবা আমার মনের কথা ধরে ফেলে।

“তাইলে তুলা ধরে কীভাবে? বিক্রি করে কীভাবে?”

বাবার পান-খাওয়া মুখে তখন কৌতুকের হাসি। কথা শিখতে যে ক’দিন দেরি করেছিলাম, শুনেছি, সেটা বাদ দিয়ে আমার জন্মের পর সারাণ তার এইসব প্রশ্নের মধ্যেই থাকতে হয়েছে Ñ

“ওড়ে তো অল্প কয়েকটা। বাকিগুলা গাছে চড়ে পাড়ে। তুলা উড়বে যখন খুব সুন্দর দেখাবে, দেখিস।”

ব্যাখ্যা করতে করতে রাস্তা দিয়ে আমাকে হাত ধরে নিয়ে চলে। আর তুলা উড়বার মৌসুমের জন্য মনে মনে একটা অস্থির অপো সমেত আমি বাবার হাত ধরে হাঁটতে থাকি। সেসব আরো আগের কথা।



একদিন বাবাই সমাধান নিয়ে বাসায় ফিরল। ফিরেই মা’র সঙ্গে সেই আলাপ Ñ

“রিলিফের কম্বলগুলা তো মোটা মোটা। খুবই গরম। কী বল?”

“রিলিফের কম্বল পাবা কই?”

“কেমন হয় আগে বল।”

“ভালই তো হয়। কে দেবে?” মা তাড়াতাড়ি সমাধানে পৌঁছাতে চায়।

“গণ্ডগোলের পর হলে তো হাত পেতে দাঁড়াই গেলেই হতো। এখন তো আর আমাকে দেবে না।”

এসব আলাপে বাবার রসিকতার জুড়ি নেই। মা বরাবর।

“দাঁড়াও গিয়া।”

“তাইলে কী বল! একটা জোগাড় করি তাইলে।”

“সেইটাই তো জি¹াস করলাম।”

“দেখি আলীকে ব’লে। ও তো দুই তিন সিজনে একটা কম্বল পায়। দেখি কী বলে।”

বাবা এমন একটা ভঙ্গিতে কথাগুলো বলল যে মনে হবে ভীষণ একটা অনিশ্চিত উপায় এটা। কিন্তু বাবাকে চিনলে ঠিকই বোঝা যায় যে আসলে সে নিশ্চিত। মাও তাই বুঝল। বাবার স্কুলে আলী পিয়ন।



কম্বলটার রঙ ভালুকের মতো। অমসৃণ রোঁয়াগুলো নারকেলের ছোবড়ার মতো ধারালো হয়ে বেরিয়ে আছে। ওটাতে হাত দিলেই বোঝা যায় ঢাকনা ছাড়া এটা গায়ে চড়ানো অসম্ভব। আর কম্বলে ঢাকনা চড়াতেও আমাদের বাসায় বিশেষ বাধা নেই। ফলে আবারো মার্কিন কাপড়ের একটা ঢাকনা বাসায় এল। কিন্তু সেই কাপড় ভেদ করেও রোঁয়াগুলো খালি গায়ে খোঁচা দেয়। কম্বলটাকে খাড়া করে দাঁড় করিয়ে দিলে অভ্যাগত কারো ঘরের দেয়ালের হার্ডবোর্ডই মনে হবে। বলে না দিলে সেটাকে কম্বল বলে চেনা মুস্কিল। শীতের হাত থেকে বাঁচতে যে মানুষ ওই কম্বলে ঢোকে তার শরীরের ভাঁজ নিয়ে কম্বলের এতটুকু মাথাব্যথা নেই। শরীরের সঙ্গে সে বিশেষ ছুঁয়েও থাকে না। বরং পানি-ভেজানো হার্ডবোর্ড যতটুকু নেহায়েৎ-অনিচ্ছাহেতু মোচড়াবে ততটুকু মুচড়ে ওটা গায়ের ওপর পড়ে থাকে। ফলে ওটাকে গায়ে নিয়ে বড়জোর মনে হয় একটা তক্তার নিচে চাপা পড়ে আছি। দুর্ভেদ্য সেই কম্বল ভেদ করে অনায়াসে যা আসা যাওয়া করত তা হচ্ছে শৈত্য এবং বাতাস। এই এতকিছু আমার কম্বলটা গায়ে দিয়েই বুঝতে হয়েছে। কিন্তু প্রথম দর্শনেও কম্বলটার প্রতি কিছুমাত্র নৈকট্য বোধ করবার হেতু ছিল না। অথচ কম্বলটা আমার জন্যই নেয়া হয়েছিল।



তক্তাটাকে আমার আরেকটা চলনসই লেপের সঙ্গে নিয়ে আসতে হয়েছে ঢাকায়। এর ভিন্ন বিশেষ কোনো উপায়ও ছিল না। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে দুঃসাধ্য একটা ব্যবস্থাপনায় ওই কম্বলের তেমন কোনো বিকল্প আসলে ছিলও না। লেপের সঙ্গে একটা বাড়তি, অথচ প্রয়োজনীয়, ব্যবস্থা রাখবার জন্য কম্বলটাই ছিল সম্বল।



বছরের পর বছর যাচ্ছে। নিয়তির মতো এই কম্বল থেকে গেছে। এই কম্বল আমার হকিকত।



চাকরি করি যখন তখনো এই আলীর রিলিফের কম্বল আমার সঙ্গী। আমি জানি এর হাত থেকে নিস্তার পেতে পেলব তুলতুলে কম্বল একটা আমার কিনতে হবে। নানাভাবে সেটা হয়ে উঠতে পাঁচটা বছর আমার চাকরিতেও কেটে গেল। তারপর গুলিস্তানের ফুটপাত থেকে একদিন রঙিন তুলতুলে একজোড়া কম্বল কিনে আনা হলো। শেষমেশ একদিন জামালের মাকে ডেকে এই কম্বলখানা গছিয়ে দিই। আমার বর্জ্য জিনিসেও ও খুব খুশি। আমি খুশি হই কম্বলটার বিহিত করা গেল বলে। আর জামালের মায়ের মতো নিশ্চিত বর্জ্য নিষ্কাশন ব্যবস্থা আমাদের জীবনে আছে বলে। অনেক দ্বিধা সমেত মাকে চিঠি লিখে জানাই ওই রাতেই। আমি নিশ্চিত মা একদমই খুশি হবে না। কিন্তু আলীর কম্বল থেকে আমি পরিত্রাণ পেলাম।



সারিতা সহ মুরগির টিক্কা কাবাব খেতে গেছি মোহাম্মদপুর বিহারী ক্যাম্পে। এটা আমার অত্যন্ত প্রিয় জায়গা, খাবার জন্য। সাউন্ড বক্স লাগানো ক্যাসেট প্লেয়ারে মেহেদি হাসান বাজছে Ñ ‘মুঝে তুম নজরসে গিরা তো রহে হ্যায়, মুঝে কভি ভি ভুলা না সাকোগি ...।’ শুকনো মুখে রশিদ এসে জিজ্ঞেস করে Ñ

‘ভাল সময়ে আসছেন। কী খাবেন ভাই। আইজকাও মুরগি?’

‘হ্যাঁ। কিন্তু আপনার কী হয়েছে?’

‘মুন্তাকিম ভাইরে মাইরা ফালাইছে।’

চকিতে সামনের দোকানে তাকাই। তখনো কাপড়ে লেখা ঝুলছে ‘বিসমিল্লাহ্ কাবাব’। মুন্তাকিমের ভাই মনোযোগ দিয়ে গোশ্তে মশলা মাখাচ্ছে। উজ্জ্বল দুইশ ওয়াটের আলো ওর মুখে পড়ছে। তবু ওর মুখটা পড়া যায় না।

‘কারা?’

‘এই তো মাস্তানেরা।’

‘কবে?’ আমি ঝড়ের মতো প্রশ্ন করতে থাকি।

‘চাইর তারিখ। আমরা এক সপ্তাহের এস্ট্রাইক করলাম। আইজগাই খুলছি আবার।’

‘কিছু হলো?’

‘এস্ট্রাইকের মইধ্যে আবার আইল। পিডাইল কয়জনরে এইহানে। তারপর জোর কইরা দোকান খোলাইল। মুরগি ভাইজা খাওয়াইতে হইল।’

সামনের টেবিলে দুইটা ছেলে সরু চোখে রশিদের কথা শুনছে। আমি আর সারিতা হতভম্ব হয়ে বসে। কী খাব আরেকবার আর রশিদ জিজ্ঞেস করল না। মাটির দিকে তাকিয়ে ও। খুব আস্তে আস্তে বলল Ñ

‘আমাদের আর এইহানে থাকা সম্ভব না।’



তাই তো! এখানে তো আর থাকা সম্ভব নয়। কিন্তু যাওয়াই বা সম্ভব কোথায়! আমরা রাখতে চাই না। আর পাকিস্তান নিতে চায় না। বিহারী ক্যাম্পের প্রাত্যহিক জীবন এত আটপৌরে হয়ে গেছে যে হয়তো আমার আর খেয়ালও পড়ে না। নাহলে গতমাসেই তো রশিদ দুজন মেয়ের ধর্ষণের খবর জানাল। সারিতা আর আমি ওখানে আর খেলাম না। খাবার প্যাকেট করে বাসায় নিয়ে এলাম সেই রাতে।



মৃত আলী বিহারী আবার ফিরে এল আমার মনে। এ দফা কম্বল ছাড়াই।



আলী বিহারী কেন অন্ধ সেই প্রশ্ন কখনো মাথায় এল না! দীর্ঘ কৃশকায় আলী বিহারীর লাঠিটা ওর প্রায় অর্ধেক সুফিয়া সামনে সামনে বয়ে নিয়ে যেত। সেভাবেই আমরা আলীকে শৈশব থেকে চিনতাম। ...



নিশ্চয়ই অন্ধ আলী আর স্কুলের পিয়ন ছিল না। সেই পরিচয় তাহলে ওর আগে-থেকে-পাওয়া পরিচয়। তাহলে কী খেয়ে বাঁচত আলী বা সুফিয়া! ...



পৌরসভার কলোনিতে থাকত। কিন্তু সেই কলোনি তো সেই কোন কালেই ভেঙে ফেলা হয়েছে! তাহলে ওরা থাকত কোথায়! ...



আর আলী তো অন্ধ হলো স্বাধীনতার পর! ওর কোটরে চোখ ছিল না। আগে ছিল, উপড়ে ফেলা হয়েছে। ...



আচ্ছা আলী কি কখনো পাকিস্তান যেতে চেয়েছিল? কিন্তু তা চাইবে কেন! পাকিস্তান থেকে তো সে এখানে আসেনি! ...



আলী মারা গেছে সেই কবে! বাবাই বলছিল। সুফিয়াকে নিশ্চয়ই রিলিফের কম্বল দেয়া হয়। কিন্তু ওই বা কোথায়! ...



এইসব আপাতঃ জ্ঞাত বিচ্ছিন্ন তথ্যগুলো জটিল এক ডিডাকশনে নিয়ে যেতে থাকে আমাকে। আমি আলীকে ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ি। মধ্যরাতে আমার আবার ঘুম ছুটে যায়। দম বন্ধ হয়ে আসে। আমি ঘেমে নেয়ে হাঁসফাঁস করে উঠি। বুকের ওপর থেকে কম্বল সরিয়ে ফেলতে চাই। কিন্তু আমার গায়ে তো তখন তুলতুলে একটা কম্বল।



প্রতিটি রাত আমি তুলতুলে কম্বলের নিচে ঘুমাই। অথচ মধ্যরাতে ধড়মড় করে উঠি। মনে হয় একটা তক্তার নিচে চাপা পড়ে আছি। জগে রাখা পানি খেয়ে লালটা বদলে নীলটা টেনে গায়ে দিই। সেই একজোড়া গুলিস্তানের কম্বলের পর লাল টুকটুকে সার্টিনের কাপড়ের একটা লেপ হয়েছে আমার। বিদেশ যাবার সময় রুমা রেখে গেছে। ঘন নীল একটা কম্বল এসেছে তারও পরে। বাড়ি থেকে মা আমার জন্যই আলাদা করে একটা লেপ বানিয়ে পাঠিয়েছে। আমার এখন পাঁচখানা তুলতুলে লেপ কিংবা কম্বল। ষষ্ঠটা কিনে দেবে বলে আদৃতা দু’ দু’ বার আমাকে নিয়ে বাজারে গেছে। কিন্তু লেপ-কম্বলগুলো আমাকে ত্রস্তই করে রেখেছে। এর একটাও আলীর কম্বলের বেষ্টণী থেকে আমাকে মুক্তি দেয় না।



সারাটা শীত ধরে আমি গ্রীষ্মের স্বপ্ন দেখতে থাকি। তারপর গ্রীষ্মের পর যখন প্রথম শীতে আমার লেপ-কম্বলের সংগ্রহে হাত দিই, দীর্ঘদেহী আলী আমার নৈমিত্তিক সঙ্গী হয়ে আছে। গোলকবিহীন তার অেিকাটর আমাকে স্পষ্টভাবে এফোঁড় ওফোঁড় দেখে। আর আমি আগামী ভরন্ত শীতে সপ্তম কম্বল যোগাড়ের কথা ভাবি।



একেক বার আমার মনে হয়, হয়তো জামালের মা আমাকে উদ্ধার করতে পারবে। হয়তো ওর কাছ থেকে আলীর কম্বলটা আমার ফিরিয়ে নেয়াই কাজের হবে। হয়তো আলীর আমানত এখন এখানে থাকলে আমার আর হাঁসফাঁস লাগবে না। আমি জানি না। আমার মনে হয়। কিন্তু তা করতে হলে জামালের মাকে আমার তুলতুলে একটা কম্বল দিয়ে দিতে হবে। আর তা করতেও আমি এখন রাজি।



কিন্তু জামালের মা যে কোথায় তা তো আমি জানি না!



(২৪ এপ্রিল ২০০৫ -- ৭ই মে ২০০৫। হিগাশি-হিরোশিমা)

প্রকাশ: ইমেইলগ্রপ কবিসভা; ঈদসংখ্যা, একাত্তর ২০০৬

মন্তব্য ২৪ টি রেটিং +১০/-০

মন্তব্য (২৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই মার্চ, ২০০৮ সকাল ৮:৪২

কৃষ্ণচূড়া বলেছেন: ভাল লেখা।

২| ১৮ ই মার্চ, ২০০৮ সকাল ৮:৫৯

মানস চৌধুরী বলেছেন: ধন্যবাদ কৃষ্ণচূড়া। লেখাটা প্রায় তিনবছর পুরনো। কিন্তু ব্লগের ফ্রি জায়গা। দিতে ইচ্ছে করল।

৩| ১৮ ই মার্চ, ২০০৮ সকাল ১১:২১

কৌশিক বলেছেন: আহার করলাম।

৪| ১৮ ই মার্চ, ২০০৮ দুপুর ১২:০৮

অচেনা বাঙালি বলেছেন:
কি বলব এক কথায় অপূর্ব। এক টানে পড়লাম। ঝকঝকে সাবলীল লেখা.
এই ব্লগে পড়া অন্যতম শ্রেষ্ঠ গল্প। আমি তো আপনার পাঙখা হয়ে গেলাম ভাই। এরকম গল্প আরো আরো চাই।

১৯ শে মার্চ, ২০০৮ সকাল ১১:১০

মানস চৌধুরী বলেছেন: হা হা হা পাঙ্খা। দারুণ! কিন্তু দেখেন অনেকেই বিহারীকে নায়ক বানিয়ে লেখা গল্প পড়ে ইয়ে মেরে দিতে চাইবেন। আপনি তা নন। আবার অন্য থ্রেড-এ আমার চিন্তাপদ্ধতির জন্য কিন্তু গাইল দিয়ে দিলেন। আসলে আমি এভাবে ভাবি বলেই এই গল্পটা দাঁড় করানো সম্ভব হয়েছে।

অনেক ধন্যবাদ অচেনা বাঙালি। আমার গল্পচর্চার জন্য এই মন্তব্য অনুপ্রেরণা হবে।

৫| ১৮ ই মার্চ, ২০০৮ বিকাল ৩:৫৬

সাধক শঙ্কু বলেছেন: আবার পড়লাম। ভাল্লাগলো।

রাইসুর পোস্ট থিকা বিদায় নিছেন বইলা এইখানে লিঙ্ক দিতাছি। লিঙ্ক দিতে বাধ্য হইলাম কারণ আমি প্রথম পাতায় ব্যান।এই গুস্তাখি ক্ষমা করবেন

৬| ১৮ ই মার্চ, ২০০৮ বিকাল ৪:৩৮

বাউণ্ডুলে বলেছেন: খুবই ভালো লাগলো। প্রিয় পোস্টে যোগ করলাম

৭| ১৮ ই মার্চ, ২০০৮ রাত ৯:৩৩

শরৎ চৌধুরী বলেছেন: চমৎকার, অনবদ্য

৮| ১৯ শে মার্চ, ২০০৮ রাত ১:৫৭

জাহিদ সোহাগ বলেছেন: আমার ডিজিটাল খাতার ব্যারাম হইছে। শ্যাওড়া গাছ থিকা কি এক ফন্টের-মুখোশ পইড়া রইছে র'র পুন্ডলি দেখিনা, যুক্তাক্ষর আড়াই প‌্যাচ। তাই অনেকখানি পইড়া হাফাই গেছি। মনে হইল ব্লগ থুইয়া কাগজই ভাল।

আপনার কবিতা পড়তে চাই। ব্লগে না দিলে আমাকে মেইলও করতে পারেন।

[email protected]

৯| ১৯ শে মার্চ, ২০০৮ রাত ৯:১৩

বোঘদাদি হেকিম বলেছেন: মাচৌ আপনে এতো টাকা দিয়া কি করেন একলা মানুস । আমি জেলাস

১৯ শে মার্চ, ২০০৮ রাত ৯:১৯

মানস চৌধুরী বলেছেন: বোঘদাদি হেকিম, বাহ। এই প্রথম কেউ একটা সমাজতত্ত্বীয় প্রশ্ন করলেন। তাও ইয়ে মারার পরদিন। থ্যাংকু।
বাড়িভাড়া (বাড়ি মানে কবরের থেকে বড়) ৮০০০ + নেট ১০০০ + সিগারেট ২২০০ + টেলিফোন ১৩০০ ... বাকি ৮,৫০০ দিয়ে কীভাবে নিজের পেট ও আমার উপর ডিপেন্ডেন্টদের নিয়ে চলব এই চিন্তা করতে করতে চুল ফেলি। আমি মীন নাপিতগিরি না, চুল চিন্তায় পড়ে যায়। তখন একটা খ্যাপ মারার কাজ খুঁজি। লোকে যেহেতু বিশেষ সুবিধাজনক মনে করে না ফলে খ্যাপের কাজ পেতে সমস্যা হয়। এই তো ... পুরা হিস্ট্রি জেনে গেলেন ...

১০| ১৯ শে মার্চ, ২০০৮ রাত ৯:৪৫

বোঘদাদি হেকিম বলেছেন: আপনে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোয়ার্টারে থাকেন না

১১| ১৯ শে মার্চ, ২০০৮ রাত ৯:৫৩

মানস চৌধুরী বলেছেন: উঁহু হেকিম। থাকি না। থাকলেও ৭৫০০ লাগত। ফলে ৫০০ বেশি দিয়ে সাভার না থেকে ঢাকা থাকি। রাস্তায় হাঁটা এবং রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে চা-সিগারেট খাবার এই বিনোদনটুকু ঢাকায় সম্ভব।

১২| ২০ শে মার্চ, ২০০৮ রাত ১২:৩১

ফাহমিদুল হক বলেছেন: আলী বিহারীদের আইডেন্টিটি ইস্যুটির ওপর আরেকটু আলো ফেলার সুযোগ ছিল কিনা? নাকি জাতিগত সংখ্যাগরিষ্ঠতার বাস্তবতায় এসব বিষয় তাকে পূর্ণভাবে স্পর্শ করেনা বলেই কথক তার বাল্যকালের কম্বল/লেপভাবনায় বেশি মগ্ন ছিলেন?
বর্ণনভঙ্গি অসাধারণ।

১৩| ২০ শে মার্চ, ২০০৮ রাত ১২:৫৩

মানস চৌধুরী বলেছেন: বাউণ্ডুলে, শরৎ, কৌশিক সবাইকে ধন্যবাদ।

ফাহমিদ বর্ণনভঙ্গি (মানে কথন) আপনার মনোপূত হয়েছে জানতে পারা খুশির বিষয়। ...জাতিগত সত্তা নিয়ে আমি ন্যূনতম সুতো রেখেছি রশিদের কাছ থেকে খবর পাবার পর। এর বাইরে আলীর নাম আর মোহাম্মদপুর ক্যাম্প এবং মুক্তিযুদ্ধের পর তাঁর চোখ হারানো। ব্যস। এই বিষয়ে গল্প লেখা যে একদম সজ্ঞানে সেটা তো নিশ্চয়ই পরিষ্কার। তবে এমনিতে ফাহমিদ আমি প্রবন্ধের দায় গল্পে গ্রহণ করি না। একভাবে বলা যায়, এই ফিকশনে আমার অন্যতম উদ্দীষ্ট বিহারী সত্তা/আইডেন্টিটি এবং বাংলাদেশে এর প্রান্তিকতা। ফলে ওটা উপায় নয়। অনেক ধন্যবাদ ফাহমিদ।

১৪| ২০ শে মার্চ, ২০০৮ রাত ১:২৯

অমিত বলেছেন: ভাল লাগল

২০ শে মার্চ, ২০০৮ সকাল ১১:২১

মানস চৌধুরী বলেছেন: ধন্যবাদ অমিত। ...আমার ধারণা প্রযুক্তিগতভাবে আরেকটু ইন্টারাক্টিভ হলে এই ধন্যবাদগুলো মানুষজন পেতেন। নাহলে তো আপনার এই পর্যন্ত আবার আসা লাগবে।

১৫| ২০ শে মার্চ, ২০০৮ ভোর ৪:২৮

মিরাজ বলেছেন: একটি জাতিগোষ্ঠীর বাস্তবতা রূপকের মাধ্যমে খুব অল্প কথায় হলেও খুব চমৎকার ভাবে তুলে এনেছেন গল্পে । আলী বিহারীদের কথা আজকাল কেউ মনে করতে চায়না, অবশ্য আগেও যে খুব একটা মনে করতো ব্যাপারটা তাও নয় । একটি জাতির মুক্তিসংগ্রাম আর একটি জাতির (অবশ্য আলাদাভাবে জাতি বলা যায় কিনা সেটা প্রশ্নসাপেক্ষ) জীবনযাত্রা এবং সামাজিক অবস্থানে কতটা পরিবর্তন আনতে পারে সেটা দেখতে হলে এই বিহারীরা একইসাথে আদর্শ এবং নির্মম উদাহরণ । শেকড়হীন ক্যাম্পে আবদ্ধ একটি জাতি....

মোস্তাকিমের ঘটনাটি যখন ঘটে তখনো ঢাকায় । বড় ধরনের একটি নাড়া খেয়েছিলাম । প্রথমে মোহাম্মদপুর, পরে ধানমন্ডি থাকার সময়ে প্রতি মাসে কমপক্ষে একবার যেতে যেতে পরিচিতির পর্বটা শুধু হাসি বিনিময়ের চেয়ে কিছুটা বেশীই ছিলো । ক্যাম্পের ভিতরের জীবনটা দেখার সৌভাগ্য কিংবা দুর্ভাগ্য দুটোই হয়েছে । দুটো খুপড়ির মত ঘরের ভিতর তিন প্রজন্মের সপরিবার অবস্থান... আর কোথাও সম্ভব কিনা জানিনা ।

একটু বোধ হয় অপ্রাসংগিক হয়ে গেলো মন্তব্যটা । গল্পটা অনেক ভালো লেগেছে । এ পর্যন্ত এখানে পড়া সবচেয়ে ভালো গল্পের একটি ।

২০ শে মার্চ, ২০০৮ সকাল ১১:২৪

মানস চৌধুরী বলেছেন: একেবারেই অপ্রাসঙ্গিক মনে হয়নি আমার মিরাজ। বরং খুবই প্রাসঙ্গিক মনে হয়েছে। আমি বিহারী জাতিই বলি। অন্যান্য কারণ নিশ্চয়ই আছে কিন্তু আমার উদ্বাস্তুপ্রায় জীবনের কারণেই প্রান্তিক জাতি ও মানুষের প্রতি তাকানোর চোখ তৈরি করতে আমার হয়তো কিছু কম বেগ পেতে হয়েছে।

অনেক ধন্যবাদ।

১৬| ২০ শে মার্চ, ২০০৮ রাত ৮:২৯

জাহিদ সোহাগ বলেছেন: চৌধুরী কোথায় থাকবেন না থাকবেন তার পরামর্শদাতা কে আপনি হেকিম? আপনিও আবার বলে ফেলবেন নাকি 'কম কম খেতে বা আলু/কপি খেতে'? আমার মতে জ্ঞান চর্চার সাথে যুক্তদের মাসে ৫০ হাজার টাকাও নিতান্তই কম। আর যে উপার্যন করে সে একা বাঁচে না, অনেকরে নিয়ে বাঁচতে হয়।

১৭| ২২ শে মার্চ, ২০০৮ সকাল ৯:০৮

সুলতানা শিরীন সাজি বলেছেন: ভালো লাগলো..............।লেখার সাবলীলতায় পড়েই গেলাম।
আজ আপনার সবগুলো লেখাই পড়লাম ।এর পরের দুইটা পোস্ট বাদে।
নিয়মিত পড়ার অপেক্ষায় থাকলাম............।
আপনার রবীন্দ্র সংগীত ও শুনতে ইচ্ছা করতেছে।
ভালো থাকবেন।
অনেক শুভেচ্ছা।

২২ শে মার্চ, ২০০৮ বিকাল ৩:২৩

মানস চৌধুরী বলেছেন: সুলতানা শিরীন সাজি (আপনার নামের তিনটার যে কোনো এক অংশ দিয়েই ডাকা যায়, কিন্তু কোন টা?) ... অনেক ধন্যবাদ। আপনার নিয়মিত পড়ার আগ্রহ অন্ততঃ আমাকে নিয়মিত লেখার অভ্যাস দিক।
:-)

আমি ঠিক জানি না কালপুরুষের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক কেমন বা আছে কিনা আদৌ। না থাকলেও আপনি "গায়ক"-এর মেহমান হয়ে তো যেতেই পারেন। কিন্তু অনুষ্ঠানটা সন্ধ্যাকাল থেকে রাত্রি গড়াবে ... :-(
আপনার সময়সূচিতে কি মিলবে?

শুভেচ্ছা

১৮| ২৩ শে মার্চ, ২০০৮ রাত ৮:০১

সুলতানা শিরীন সাজি বলেছেন: আমি সাজি নামে পরিচিত.........
আপনার নিমন্ত্রন পেয়ে চুপ থাকলাম........ভালোই লাগছিলো ভাবতে ঢাকায় থাকলে একদিন কালপুরুষ দার বাড়ীতে ছাদের আড্ডায় যাওয়া যেতো!
রবীন্দ্র সংগীত আমি ও গাই....।চেষ্টা করি আর কি!

তবে সম্ভাবনাকে বাদ দিলাম না........দেশে আসলে একদিন হয়তোবা এক আসরে এসেই পড়বো।যদি নিমন্ত্রন এর তারিখ expire না হয়।
স্হানটা নাহয় এক ই থাকলো।কালপুরুষ দার বাড়ী।

ভালো থাকবেন।
শুভেচ্ছা......।

১৯| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০০৯ রাত ১:১১

লাবণ্য প্রভা গল্পকার বলেছেন: গল্প পড়লাম। সঙ্গে করে নিয়েও গেলাম।
ভাল থাকুন।

লাবণ্য প্রভা
যদিও নামের শেষে গল্পকার শব্দটি আছে উহা দেখিয়াও না দেখার ভাণ করবেন। না হলে আবার উহার ইতিহাস বলতে হবে। ভাল থাকুন। মঙ্গলে থাকুন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.