সন্ধে নিমন্ত্রন্য । মানুষ আজিজ

০১ লা জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১:৩৮

কিছুদিন আগে বন্ধু নীলের বাসা থেকে ওর সদ্যকেনা " অন্নদাশঙ্করের, অপসারনটা" নিয়ে আসলাম । ও, আমার মত প্রতিমাসে প্রচুর বই কেনে কিন্তু সবই সোপিস আকাড়ে ডয়িংরুমে সাজিয়ে রাখে । বইটি নিয়ে আমার বাসায় উঠছিলুম, এমন সময় সিড়িঁ থেকে এক নারী বলে উঠলো, আপনি অন্নদার বই পড়েন? আমি নারীটির দিকে তাকিয়ে বললুম-, তার ছোটগল্প পড়েছিলুম, উপন্যাশ একদম পড়া হয়নি ।

নারীটি হেসে বললো, আমি সুর । আপনাদের উপরতলায়ই থাকি, আসেন না আজ সন্ধ্যার পর এক পেয়ালা কফি খেতে, সাহিত্য আড্ডাও দিলাম । আমি,রাজি হলাম । আজকাল-সাহিত্য আড্ডাই কম হচ্ছে ।

সন্ধের পর সুরদের বাসায় গেলাম । পুরো বাসা আমার বাসা থেকে ও গোছানো, শাদা ক্যানভাস আর রঙতুলির মিলন মেলা যেন ওর বাসায়, আর বই পত্রর এলোমেলো ! টয়লেও বইয়ের মহা-সমারহ । আমি সুরকে বললুম-, আপনি এত পড়েন? কি পড়েন এত? আমি তেমন পড়ি না আর, কোনদিন একটা বইও শেষ করতে পারি না, কেনা হয় প্রচুর -কিন্তু শেষ হয় না ।

সুর বললো-, আমি একা থাকি এখানে । নিজের মত । সেই কবে হারিয়ে গেছিলাম । জানেন ,ফ্রান্স থেকে চলে এলাম , ছোট্ট গায়ের ছোট্ট নদীটির জন্য কিন্তু নদী কি হারাতে বসেছে ?কত পরিবর্তন দেখি ! শীত আসলে আর হেমন্তকাল দেখি না ।

শীতে হেমন্তকাল ?পৌষের শীতে? জানেন -সুর , আমার বাবাও প্রচুর পড়াশুনা করে । সে কি জানি পড়ে, সেকালের দলিল পত্রর !,প্রায়ই তাকে দেখতাম -সারাদিন কি সব পুরনো কাগজ পত্রর পড়ছে ? এমন বদিঘুটে বাংলা অক্ষর জীবনে দেখিনি, পড়তে গিয়ে দাত ভেঙ্গে যায় । লেখাগুলো চর্যাপদের যেয়ে আগের হবে সম্ভবত ।

সুরঃ শিল্পের পিছে পিছে ছুটতে ছুটতে জীবনে বিয়েটাই হয়নি । কতজনাই তো চেয়েছিল । যখন ছোটছিলাম, আমার জানালায় এক ছোট্ট ছেলে আমার জানালায় প্রতিদিন ফুল রেখে যেত । একদিন ফুল পাইনি, একদিন,দুইদিন এভাবে হারিয়েই গেলে সে ।

আমিঃ হয়তো হারায়নি, পৃথিবীতেই বেচেঁ আছে, আপনাকেও সে মনে করে । সব, ভালোলাগা কেন কাছে পেতে হবে? সব -ভালোলাগা যদি কাছে পেতে চাই, পুরো মহাকালটাই আমার । আচ্ছা জানেন -তো মাটির জীবন আছে?

সুরঃ কিসে,লালমাটির?
আমিঃ সব মাটির ,জীবন ছাড়া তো কেউ জন্মাতে পারবে না ।
সুরঃ আছে তাহলে ।
আমিঃ ক্যানভাসে আকবেন?
সুরঃ কি?
আমিঃ মাটি ফেটে শিশু জন্মনিচ্ছে ।
সুরঃ আচ্ছা আকঁবো, কচুপাতায় চিত্রায়িত মানুষের ছবি । জানেন, জলরঙে আকাঁ রাজ কন্যারা হারিয়ে যাচ্ছে, প্রাণ কোথায় যেন ।
আমিঃ তুমি রুপকথা বললেই, তাতেই গল্পরটে যায় । চাদরে মুটি করে ধরে বলি, শীত আরেকটু বেশি পড়ো ।
সুরঃ কোথাও পাইনি, তাহাকে ।
আমিঃ তাহারা , সব বয়সে আসে না । আসবে হয়তো ।
সুরঃ আজ বিকেলে বের হয়ে , মুঠোকরে বিকেলের রৌদ্দুর নিয়ে এসেছি নেবেন ?
আমিঃ মুঠ খুললেই হারিয়ে যাবে যে ?
সুরঃ কেন বার বার হারিয়ে যায় ?
আমিঃ মৃত্যুই সে গন্তব্য মানুষের ।
সুরঃপরকাল বলে কিছু সত্যিই আছে?
আমিঃ আমি নিজেও চাই,সেটা থাকুক ।
সুরঃ কেন ?
আমিঃ আমার জন্মের আগে , আমার এক নানু মারা যায় । অথচ সে আমার অস্তিত্ব নিয়ে বেশি আশাবাদী ছিল,কত ছোট ছোট লেখা ছিল আমাকে নিয়ে, তার ডাইরীতে পাই । অথচ -কি অভাগ! সে আমাকে চোখেই দেখিনি তার আগেই --মহাপ্রয়াণ । এই মানুষের হাত ছুয়ে দেখতে চাই তাই পরকাল বলে কিছু চাই ।
সুরঃ আমি ছোট্ট নদীটির তীর চাই, যেখানে আমার শৈশব কেটেছিল । আমার -বাবা মা আমাকে নিয়ে পালালো বিদেশ ।আর কারো সাথে যোগাযোগ হলো না, আজ এত বছর পর এসে দেখি ছোট নদীটি আজ এক মহাসাগর । জলের তলে সব কিছু । কে কোথায় জানি না । হয়তো সবাই মারাই গেছে ,বা বেচেঁ থাকলেও ওরা ভালো নেই । ওদের কোলে পিঠেই তো শৈশব কেটেছিল ।

-সুর কফি খাওয়াবেন না ?
সুরঃ ওহ, ভুলেই গেছিলাম । একটু বসুন ।

০ টি +০/-০