সুখ কি? । মানুষ আজিজ

২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৯:৪৮

আমি রবীন্দ্রনাথ, বাবা অনেক সাদ করে আমার এ নামটি রেখেছিল । ছোটবেলায় এই নামের অর্থ আমি বুঝিনি কেউ যখন নাম জানতে চাইতো তাদেরকে আমার নাম বললে - বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে থাকতো ! এখন বুঝি আমার এই নামের একজন বিখ্যাত বাঙ্গালি কবি আছে । আমার বাবার ইচ্ছেছিল বড় মাপের কবি হওয়ার তার ইচ্ছে পুরন হয়নি তাই আমার নামটিই বিখ্যাত কবির নাম রেখে গেছেন । এবার অন্য কথায় আসি , আমি ছোটখাট এক কেরানীর চাকুরী করি মাইনে তেমন পাইনা উপহার সৌরপ যা পাই কোন রকম দিন চলে যায় , আমার দুইছেলে এক মেয়ে এবং আমার স্ত্রী রমা এই হলো আমার সংসার । সংসারে তেমন মজা আর পাই না আপিস শেষে বাসায় গেলেই সারাক্ষন স্ত্রীর চিৎকার চেচামেচী ভালো লাগে না , ওরা ভাবে আমি ওদের কোন দায়িত্বই পালন করি না ,বড় ছেলে এবার নিয়ে তিনবার ইংলিশে অর্নাসে ফেল করলো, ছোট ছেলে স্কুলপাস করে এখন কলেজে দু'একটা টিউশনি করে ওর নিজেরই চলে যায় আর মেয়েটা ওর মার মত খিটখিটে ! কিছু উঠতি ছেলে মেয়েদের যেমন সখ থাকে বড় হয়ে সিনেমার নায়িকা হবে তেমন ওরও সখ । পাড়ার যতসব বখাটে ছেলেদের সাথে ওর খুব ভাব, কিছু বললেই ও আর ওর মা আমাকে সাশাতে আসে ! তুমি তো কিছুই পারো না এর মধ্য মেয়ের ভবিষৎ নষ্ট করতে চাচ্ছ । আমি আর ওদের সাথে পারি না । একদিন মা ও মেয়ে আমাকে চেপে ধরলো- মেয়ে সিনেমায় নামবে এরজন্য একলক্ষ্য টাকা দিতে হবে, প্রথম নাকি একটু টাকা ঢালতে হয় ! শাকিব খানের বোনের চরিত্রে অভিনয় করবে ! ওর মা তো খুশিতেই লাফাচ্ছে শাকিব খান কত বড় স্ট্রার! ভেবে দেখ একবার মেয়ের নাম হলে আর আমাদের পিছনে ফিরে তাকাতে হবে না ।

আমি মেয়ে ও ওর মাকে বুঝাতে চেস্টা করলাম, আমার হাতে কোন টাকা নেই সবই সাংসারে পিছনেই তো খরচ করলাম তোমাদের দাবী-দাওয়া মিটাতে গিয়েই আর তোমরা ভাব আমি ব্যাঙ্কে কত কত টাকা করেচি ! সবই ভুল ! আমার কোন ব্যাঙ্ক নেই । এটা শুনার পর আমার স্ত্রী আমার উপর চটে গেল, এবং বললো- কি বললে তুমি? টাকা নেই? টাকা তোমাকে দিতেই হবে, তুমি ওর বাবা ,তোমাকেই দিতে হবে এক হপ্তাহের মধ্যই দিতে হবে না হলে তোমাকে বাড়িতে যায়গা নেই আমি আর তোমার জন্য ভাতেঁর চাল দিতে পারবো না , জীবনে তো আমাদের জন্য কিছুই করোনি ! আমার কত সুন্দর চেহারা ছিল কত থিয়েটারে ডাক পেয়েছি একবারও নামতে দিলে না, এখন মেয়ের ভবিষৎ নিয়ে খেলছো তুমি আমি বেচেঁ থাকতে এটা হতে দিব না ।

রাতে দু'মুঠো ভাত খেয়ে একটু বের হলাম । ওরা আমার জীবনটা তচ-নচ করে দিল । সারাক্ষন খাই খাই আর নাই নাই । একসময় সত্যিই ভাবলাম সত্যিই ওদের অনেক সখ পুরন করতে অক্ষম হয়েছি ওরা চারপাশে এত উজ্বল জীবন দেখতো যে ওদের দাবি মিটানো আমার সামর্থ্যর মধ্যছিল না ।সব ওদের পিছন ব্যয় করলাম , কোন টাকাই জমাইনি ওদের ইচ্ছে পুরন করতে গিয়ে ! আমি কি তাহলে একটা মেশিন! বিয়ে করে সন্তান,স্ত্রী হলেই সবার সখ পুরন করাই আমার কাজ শুধু? আমার শরীর বলতে কি কিছু নেই ? অনেকদিন আগে আমার স্কুলের এক পন্ডিত মশায় বলছিল -কিছু কাছের মানুষ তোমার জীবনকে খুব সুন্দর করে দিবে, আর কিছু কাছের মানুষ তোমার জীবনকে একদম নরকে ঢেলে দিবে! এটা সত্যিই , মনের দুঃখ বলবার এখন আর কেউ নেই । আমার সম-মর্যাদার কলিকদের জীবন কত সুন্দর দেখি সব কিছু চলার পরও ওরা টাকা জমিয়ে নিজেদের বাড়ি করছে এটা আমারও হতে পারতো বউটির যদি সাংসারের প্রতি অনুরক্ত হয়তো । ও সব-সময় ভেবে এসেছে স্বামী মানেই নির্যাতন কারী, ওর ইচ্ছে মত করতে না দেয়া মানুষ আর জৈবিকতাকে সব সময় হিংস্রাত্বক মনে করেছে অথচ স্বামী-স্ত্রীর কত সুন্দর সম্পর্ক এটা । ওরা সবাই টাকশালের লোভে পড়েছে আমাদের মধ্যবিত্তদের হৃদয় যেমন হয় , কেউ একটু মানিয়ে নেই কারো যখন তখন চাই আর অভিশপ্ত হয়েছি আমি । সাংসারে সুখ বলে কিছু নেই - আজ টাকার কাছে সব বিক্রি হয়ে যেতে পারে , শুধু তাকিয়ে দেখবো নরকীয়কল্পকাহিনী ।

১ টি +০/-০