নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!
মৃত্যু ব্যাপারটা কি?
সহজ ভাষায়, জীবনের সমাপ্তি। যে নিদ্রা কখনই ভাঙবে না, মৃত ব্যক্তিটির সাথে আর কখনই কথা বলা যাবেনা। দুর্ভাগ্যজনক হলেও, জীবনের পরমতম সত্য ঘটনা হচ্ছে মৃত্যু। আমরা যে যত বড়ই হই না কেন, হই যতই বল, ধন ও ক্ষমতাবান, মৃত্যুকে এড়াতে পারবো না। নির্দিষ্ট স্থানে, নির্দিষ্ট সময়ে মৃত্যু আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে, আমরা যেদিকেই যাই না কেন, মৃত্যুর দিকেই ছুটে চলেছি। আস্তিক হন, নাস্তিক হন কিংবা এগ্নস্টিক, এইতো সবার জন্যই সত্য ও প্রযোজ্য কথা, তাই না?
এখন আসা যাক ইসলাম মৃত্যুকে ঠিক কিভাবে কোন দৃষ্টিতে দেখে। এই ধর্মটাকে বুঝতে হলে এর প্রয়োজন আছে।
ইসলামের মূল ভিত্তির একটি হচ্ছে কেয়ামত দিবস তথা মৃত্যুপরে পুনরুত্থানে বিশ্বাস করা। মানে, এই জীবনই শেষ না, বরং এই জীবনের সমাপ্তি মূলত অন্য জীবনের শুরু। পুরো কুরআন শরীফে এমন সূরা খুব কম আছে যেখানে আখিরাত প্রসঙ্গ আসেনি। সে নিয়ে আলোচনায় যাচ্ছিনা। মোট কথা, শিশুর জন্য যেমন মাতৃগর্ভের জীবন শেষে পার্থিব জীবন শুরু হয়, আখিরাতও তেমনই। সে জীবনের শুরু আছে, কিন্তু শেষ নেই। সে জগতে যাওয়ার একটাই দরজা, মৃত্যু। এইটাও আমরা সবাই জানি, ঠিক না?
এখন ব্যাপারটার গভীরে যাবার আগে ছোট একটি উদাহরণ দেই, তাহলে অতি সহজে বুঝতে পারবেন কি বলতে চাইছি।
আমার জন্ম চিটাগং। আমার বাবা মায়ের বিয়েও সেই শহরে। বাবা মায়ের পড়াশোনাও সেই শহরে। তিরিশ পঁয়ত্রিশ বছর ধরে আমাদের পরিবার সেই শহরে বাস করে আসছে। আমার দাদার শেষ নিশ্বাসত্যাগও একই নগরীতে। কাজেই শহরটিতে আমরা "স্থায়ী" বলাই চলে, তাই না?
এমন সময়ে আমার বাবার চাকরিতে প্রমোশন হলো। কিন্তু একই সাথে তাঁকে বদলি করা হলো। তাঁকে যেতে হবে সিলেটের অফিস বুঝে নিতে। বেতন, ভাতা, দায়িত্ব সব বাড়বে। আমাদের জীবন আগের চেয়ে উন্নত হতে চলেছে। ভাড়া বাড়িতে নয়, নিজের বাড়িতে থাকা হবে এই প্রথম। কিন্তু তারপরেও তিন যুগের আবাসস্থল ছেড়ে আমাদের চলে যেতে হবে নতুন একটি শহরে। স্থানীয় আত্মীয়, স্বজন, বন্ধুবান্ধব সবাইকেই ছেড়ে চলে যেতে হবে। অনেকের সাথেই এই জীবনে আর কখনই দেখা হবেনা। স্বাভাবিকভাবেই আমাদের কষ্ট হচ্ছিল খুব, আমাদের আপনজনদেরও কষ্ট হচ্ছিল। কিন্তু উপায় ছিল না। আমাদের যেতেই হতো। সেখানেই আমাদের অন্যান্য আত্মীয়রা, যাদের সাথে বহু বছর আগে আমাদের বিচ্ছেদ ঘটেছিল, তাঁরা আমাদের স্বাগত জানাতে অপেক্ষমান। এই ছিল বাস্তবতা।
ইসলামিক দৃষ্টিতে মৃত্যুর ঘটনাও এমনই। আমরা আমাদের বর্তমান আত্মীয়স্বজন প্রিয়জনদের ছেড়ে এমন এক জগতে যাচ্ছি যেখানে আমাদেরই অন্যান্য প্রিয়জন/আত্মীয়স্বজনরা অপেক্ষমান। শুনতে চমৎকার লাগে, কিন্তু তারপরেও আমরা নার্ভাস থাকি। কারন পুরো ব্যাপারটাই অনিশ্চিত। ওখানে নিজের বাড়িতে থাকবো, নাকি ফুটপাথ বা বস্তিবাড়িতে, আমার কি প্রমোশন হবে নাকি ডিমোশন, সব নির্ভর করবে এই "শহরে" থাকতে আমার কর্মফলের উপর।
তাই আমরা, মানে মুসলিমরা, বিশ্বাস করি, মৃত্যু মানে সাময়িক বিচ্ছেদ। আজকে অথবা কালকে আমাদের সবাইকেই ওপারের ভুবনে যেতে হবে, এড়ানোর উপায় নেই। মজার ব্যাপার হলো, আমরা সবাই বেহেস্তে যেতে চাই, কিন্তু মরতে কেউই রাজি নই। ইসলাম, এবং সেই সাথে অন্যান্য যেসব ধর্ম পরকালে বিশ্বাসী, ওরা মৃত্যুর সময়ে এই সান্তনা পায় যে এই বিচ্ছেদ চিরস্থায়ী নয়।
কিন্তু তারপরেও, যতই ঈমানদার হই না কেন, প্রিয়জনের মৃত্যু মেনে নেয়া কঠিন। আমাদের রাসূলের (সঃ) চাইতে ঈমানদার কেউ নিশ্চই ছিলেন না তাই না? তিনিই নিজের সন্তানের মৃত্যুতে, হজরত হামজার (রাঃ) মৃত্যুতে, মুতার যুদ্ধে নিহত শদীদদের সংবাদ শুনে প্রকাশ্যে কেঁদেছিলেন। তাঁরই যদি আবেগ বাঁধ না মানে, আমরাতো সাধারণ মানুষ। অবশ্যই আমাদের শোক প্রকাশের জন্য, মন হালকা করার জন্য কান্নার অধিকার আছে। শুধু এইটা লক্ষ্য রাখতে এমন কিছু করা যাবেনা যা সীমা লঙ্ঘন করে। বুক চাপড়ে, নিজেকে ও আশেপাশের মানুষকে থাপড়ে "মাতম" করা যাবে না। "আল্লাহ এইটা ক্যান করলা" "আমার কি হবে" জাতীয় কথাও বলা যাবেনা।
এই পর্যন্তও মোটামুটি সবাই সহজেই বুঝতে পারি, তাই না?
এখন অন্যদিক দিয়ে চিন্তা করা যাক। আমাদের কাছে মৃত্যু অবশ্যই একটি যন্ত্রণার নাম। মৃত্যুসংবাদের চাইতে বড় শোক সংবাদ আর কিছুতেই নেই। কোথাও ভয়াবহ ঝড় তুফান বন্যা বয়ে গেল, অথচ একটি মানুষও মরলো না, তখন এটি অবশ্যই কোন দুঃসংবাদ না। লঞ্চডুবির পর যদি আমরা দেখি একজন মানুষও মারা যায়নি, আমরা সাথে সাথে উল্লাস করি, তাই না? শোক সংবাদ হবে তখন যখন সেই সংবাদে কারোর নিহত হবার খবর মিশবে। নিজের কথাই চিন্তা করুন। আল্লাহ না করুন, ভূমিকম্পে বা কোন একসিডেন্টে আপনার বাড়ি/গাড়ি ভেঙ্গে গেল, কিন্তু দেখলেন পরিবারের সবাই বেঁচে আছেন। তখন আপনার কি মনে হবে? বাড়ি ঘর গাড়ি অবশ্যই আবার গড়া যাবে, কিন্তু একজনও পরিবারের মানুষকে হারিয়ে ফেললে তাঁকে কি ফিরে পাওয়া সম্ভব?
তাই আমরা সবসময়ে চিন্তা করি, "আল্লাহ পরম করুনাময় হলে কেন মানুষের মৃত্যু ঘটে?"
বিশেষ করে শিশুদের মৃত্যু, যুবক যুবতীর মৃত্যু, মধ্যবয়সীদের মৃত্যু, এমনকি সুস্থ সবল বৃদ্ধের মৃত্যুও আমরা মানতে পারিনা। ঠিক না? আমরা অবাক হয়ে চিন্তা করি, আল্লাহ, যিনি তাঁর বান্দাদের ভালবাসেন, তিনি কিভাবে তাঁদের মৃত্যু দেন? অনেক নবী রাসূলেরই উদাহরণ আছে যাদেরকে উনাদের ফলোয়াররা পিস্ পিস্ করে কেটেছেন, অথচ আল্লাহ প্রাণে বাঁচাননি। আমাদের নবীর নিজের প্রায় প্রতিটা সন্তানই মারা যান তাঁর জীবিতাবস্থায়, তাঁকেও এত কষ্ট কেন পেতে হলো? কারনটা কি?
তাহলে চিন্তার লেন্সকে একটু জুম আউট করে বিগার পিকচারে দেখা যাক। আমাদের দৃষ্টিতে আমরা কেবল ইহকাল দেখছি, আমরা জানিনা পরকালে কি ঘটছে। কিন্তু আল্লাহর দৃষ্টিতে তিনি দুইকালই দেখেন। তাঁর কাছে মৃত্যু কোন ঘটনাই না, বরং ওটাই ওপারের ভূবনে যাবার একমাত্র মাধ্যম। অথবা, আরও সুন্দর করে বললে, তাঁর কাছে যাবার একমাত্র মাধ্যম। ইসলাম আশ্বস্ত করে, ঈমানদারের মৃত্যু যন্ত্রনা কম হয়, শহীদ নিজের মৃত্যুদূতকে দেখে এই কারণেই হাসে। আমরা যে ঘটনাকে "শেষ" মনে করে আক্ষেপ করে ভাবি আল্লাহ কেন এমনটা করলেন, তিনি সেই ঘটনাকে "শেষ" বলছেন না। ওটা কেবল সাময়িক বিচ্ছেদ, বরং অন্য ভুবনের প্রারম্ভ। তাঁর কাছে ওটাই শুরু।
আপাতত তাহলে ক্লিয়ার হলো, ইসলামে, বিশেষ করে আল্লাহ বা ফেরেস্তাদের বা ওপারের ভুবনের বাসিন্দাদের কাছে মৃত্যু কেবলই একটি ট্রানজিশন। "ভয়াবহ ট্র্যাজিডি" কিনা, সেটা নির্ভর করবে কোন অবস্থায় বান্দা মরেছে, সেটার উপর। নাহলে টেনশনের কিছু নেই। আমরা সবাই মরতে চলেছি।
প্রশ্ন উঠতে পারে, জালিমদের কেন তিনি এত সুযোগ দেন? ফিলিস্তিনের কথাই ধরা যাক। রকেট হামলায় মানুষ মরছে, শিশু মরছে, অথচ আল্লাহ ওদের কিছুই করছেন না।
এইটা বুঝতে হলে কয়েকটি হাদিস ও কুরআনের আয়াত জানতে হবে। যেমন প্রথমটি হচ্ছে, "প্রতিটা সৃষ্টি আল্লাহর প্রিয়জন।" একটি পিঁপড়া পর্যন্ত আল্লাহর সৃষ্টি এবং প্রিয় জন। তাহলে মানুষের কথা চিন্তা করুন। সে আল্লাহবিরোধী হলেও, আল্লাহ ঠিকই ওর খাওয়া খাদ্যের ব্যবস্থা করেন।
কুরআন (সূরা দাহর ও অন্যান্য সূরা) থেকে আমরা জানি আল্লাহ বলছেন ক্ষুধার্তকে খাদ্য দিতে, বস্ত্রহীন বস্ত্র, আশ্রয়হীন আশ্রয় ইত্যাদি দিতে। এবং তিনিই নিষেধ করে দিয়েছেন এখানে ধর্ম বিবেচনায় আনা যাবেনা। এই সাহায্য হতে হবে আনকন্ডিশনাল। "আমার খুৎবা শুনলে/কলিমা পাঠ করলে খাবার দিব" টাইপ কথাবার্তা বললে উল্টা আপনার কঠিন শাস্তি হবে। কারন আল্লাহ নিষেধ করে দিয়েছেন ধর্মে কোন জবরদস্তি করা চলবে না (বাকারা)। কারন মন থেকে কেউ ইসলাম গ্রহণ না করলে মুনাফেকের জন্ম হয়। মক্কায় যে কারনে মুনাফেক ছিল না, মুনাফেক সম্প্রদায় ছিল মদিনায়। বুঝতে হবে। গভীরভাবে এই সহজ কথাটা বুঝতে হবে। যে কারনে আমাদের সমাজেও মুনাফেক জন্ম নিচ্ছে। অন্তর থেকে যদি কেউ বিশ্বাস না করে, তাহলে আপনি এটম বোমার সাথে বেঁধে রাখলেও ওর মন পরিবর্তন করতে পারবেন না। সহজ এই কথাটাই লোকে বুঝেনা।
কুরআনের আয়াত "যে একটি মানুষ হত্যা করলো সে যেন গোটা মানবজাতি হত্যা করলো, এবং যে একটি প্রাণ রক্ষা করলো, সে পুরো মানবজাতি রক্ষা করলো" - এসব থেকে আমরা বুঝে নিলাম আল্লাহর কাছে প্রতিটা মানুষই প্রিয়। ঘটনাকে আরেকটু গভীরতা দেয় হুনাইনের যুদ্ধের একটি ঘটনা, যখন এক মা রণভূমিতে নিজের সন্তানের খোঁজ করতে এসে উন্মাদিনীর মতন তাঁকে খুঁজতে থাকেন, এবং তারপরে সন্তানকে জীবিত পেয়ে জড়িয়ে ধরে চুমুতে চুমুতে তাঁকে সিক্ত করে তোলেন। নবী (সঃ) তাঁর সাহাবীদের দিকে ফিরে বলেন, "তোমাদের কি মনে হয় এই মা তাঁর এই সন্তানকে আগুনে ঠেলে দিতে পারবে?"
সাহাবীগণ প্রত্যেকে বলে উঠেন, "মোটেই তা সম্ভব না।"
নবীজি (সঃ) বলেন, "তবে জেনে রাখো, আল্লাহ তাঁর বান্দাদের এরচেয়েও বেশি ভালবাসেন।"
ধরেন আপনার দুইটি সন্তান আছে। একটি আপনার একান্ত বাধ্যগত, এবং দ্বিতীয়টি আপনার কোন কথা শোনেনা। আপনার অবাধ্য হতেই থাকে, হতেই থাকে, হতেই থাকে। আপনি কি সেই সন্তানটিকে প্রথম অবাধ্যের ঘটনাতেই ত্যাগ করে "ত্যাজ্যপুত্র/কন্যা" ঘোষণা দিয়ে দেন? যদি দেন, তাহলে আপনার সমস্যা আছে। কারন কোন সাধারণ বাবা মাই নিজের কলিজার টুকরাকে এত সহজে ত্যাগ করতে পারেনা। সুযোগের পর সুযোগ দিতেই থাকেন, ক্ষমার পর ক্ষমা করতেই থাকেন। বৃদ্ধাশ্রমে পরিত্যক্ত বাবা মা সিজদায় গিয়ে আল্লাহর দরবারে সেই সন্তানের মঙ্গল কামনা করেন। নিজের চোখে দেখা। তাঁরা দোয়া করেন সেই সন্তান যেন সুখে থাকে। কি অদ্ভুত বাবা মায়ের ভালবাসা। আর আল্লাহ যদি বাবা মায়ের চেয়েও বেশি ভালবেসে থাকেন, তাহলে তিনি কিভাবে এত সহজে ওদের ধ্বংস করে দিবেন? তিনি সুযোগের পর সুযোগ দেন, এইবার যদি শুধরে! এইবার যদি শুধরে! একবার অনুতপ্ত হয়ে তওবা করে ফেললেই তিনি ক্ষমা করে দিবেন। আবু জাহেল, ফেরাউন এমনকি ইবলিস পর্যন্ত যদি একবার তাঁর কাছে ক্ষমা চাইতো, তিনি অবশ্যই তাদের ক্ষমা করতেন। অবশ্যই। কারন কোন পাপই আমার আল্লাহর ক্ষমার চাইতে বড় হতে পারেনা।
হ্যা, বান্দার উপর করা জুলুম ক্ষমার দায়িত্ব ও ক্ষমতা সেই বান্দার হাতে, সেটা আল্লাহ বিচার করবেন না। যেমন ধরা যাক কেউ খুন করেছেন। আল্লাহ বলছেন, খুনের বদলে খুন (ফাঁসি/শিরোচ্ছেদ/ফায়ারিং স্কোয়াড) জায়েজ। তবে, সেই একই আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, নিহতের পরিবার যদি ক্ষমা করেন, তবে সেটা তাঁদের জন্য উত্তম! "আল কুরআন ও এর রত্নভাণ্ডার" সিরিজে এই নিয়ে আলোচনা করেছি, তাই এই প্রসঙ্গ এখানে আর টানছি না। শুধু চিন্তা করুন, আল্লাহ বান্দাকে অনুরোধ করছেন, যদি সম্ভব হয়, তবে অনুতপ্ত খুনিকেও যেন ক্ষমা করেন। তাহলে তিনি এই লোকটাকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাতে পারবেন। ভাল কথা, আল্লাহর নিজেরই কোড অফ কন্ডাক্ট আছে। তিনি নিজেও কিছু নিয়ম মেনে চলেন। যার একটি হচ্ছে, তিনি কোন অবস্থাতেই কারোর প্রতি অবিচার করবেন না। এবং তিনি নিজেই ঘোষণা করেছেন, বান্দাদের জাহান্নামে দিয়ে তাঁর কি কোন লাভ হবে? তাহলে তিনি সেটা কেন করবেন? কাজেই যে জাহান্নামে যাবে, বিনা কারনে যাবেনা এইটা নিশ্চিত থাকতে পারেন।
এখন ইসলামের দৃষ্টিতে, জুলুমের শিকার হয়ে যে মরে, সে বাস্তবে মরে গিয়ে বেঁচে যায়। যে মারে, ওর জীবনের পুণ্যগুলো নিহতের পাল্লায় তুলে দেয়া হয়। নিহতের পাপগুলো জুলুমকারীর পাল্লায় তুলে দেয়া হয়। তারপরেও আল্লাহ জুলুমকারীকে সুযোগ দেন, যদি সে অনুতপ্ত হয়ে ফিরে! যেন সে কেয়ামতের দিন বলতে না পারে, "আমাকে আরেকটু সময় দিলেই আমি অনুতপ্ত হয়ে ফিরতাম। সেই সুযোগটাইতো পেলাম না।"
আল্লাহ তখন দেখাবেন কোথায় কোথায় ওকে সুযোগ দেয়া হয়েছিল, সে তারপরেও ফিরেনি। তারপরে নির্দিষ্ট সময়ে ওর ছুটির ঘন্টা বেজেছে। এখন কিছু করার নেই।
তারপর আল্লাহ ওর জুলুমের শিকার লোকজনদের একত্রিত করে বলবেন "তোমাদের এই পরিস্থিতির জন্য কে দায়ী ছিল?"
এবং সেই সাথে আরও জানতে চাইবেন, কারা তোমার পক্ষে ছিল, কারা বিপক্ষে? ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিচার হবে কে কি করেছে তা নিয়ে। সেই ভীষণ দিবসে কারোর সুপারিশ কাজে আসবে না যদি আল্লাহ না চান।
*ভিডিওতে দেখানো ফিলিস্তিনি এই যুবকের বিয়ে হবার কথা ছিল ঈদের পরে। মেয়েটিকে সে ভালবাসতো। আমরা জানি এই বয়সের ভালবাসা কতটা গভীর ও পবিত্র হয়ে থাকে। এই বয়সেই প্রেমিকার মুখে হাসি ফোটাতে বিশ্ব সংসার তন্ন তন্ন করে প্রেমিক খুঁজে আনে একশো আটটি নীল পদ্ম। এই বয়সেই প্রিয় মানুষটিকে বিয়ে করতে ছেলেমেয়েরা বাবা মায়ের ভালবাসার বন্ধন ছিন্ন করে ফেলে। অথচ বিয়ের আগেই ইজরাইলিরা ওর প্রেমিকাকে পরিবারসহ হত্যা করলো। যুবকটিরও মাথা নষ্ট হয়ে গেল। সে হাসিমুখে ইন্টারভিউ দিচ্ছে। "ও আমার চেয়ে ভাল জায়গায় আছে এখন। ওতো জান্নাতে গেছে!"
"আমি ওর খোঁজে সব জায়গায় গেলাম, আর ও আমার জন্য মর্গে অপেক্ষা করছিল। বিদায় দিতে গেলাম, এবং ওকে পেলাম হাসিমুখে শুয়ে আছে। আলহামদুলিল্লাহ!"
আমি নিজেও এমন মানুষ দেখেছি। কারোর বাবা মারা গেছেন, কারোর মা, কারোর ছোট ছোট সন্তান। কারোর ভাই বোন, শৈশবে, কৈশোরে, যৌবনে - ইজরায়েলীদের হাতে মৃত্যু সেখানে এতটাই নিয়মিত ঘটনা। কিন্তু ওরা সেইভাবে মাতম করেনা। ওরা নিশ্চিত, ওরা জান্নাতে আছে।
আহা! পরকাল! চিরস্থায়ী সুখের স্থান! এই ঈমানটাই এমন পরিস্থিতিতেও এদের মুখে হাসি ফোটায়। আর ওরা যতবার হাসে, ততবার আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরন হয়।
আহ ফিলিস্তিন! আল আকসার রক্ষক! এই ঈমানটাই ওদের বাঁচিয়ে রাখে।
আল্লাহ জালিমদের হেদায়েত দিন। ওরা না হলেও, ওদের বংশ থেকেই একদিন ওরা এই হানাহানির অবসান ঘটাবে। ইতিহাস এই আশাই দেয়। ওদের মাঝেই এখন অনেকে মুখ খুলতে শুরু করেছে জুলুমের বিরুদ্ধে। নিউইয়র্কের প্রটেস্টে জায়নিস্ট স্কুলে পড়াশোনা করে বেড়ে ওঠা এক ইহুদি মেয়ে বলল, "every single day that we don't speak out as Jews in support of Palestinian Liberation, is another day too late."
তারপরে বলে চলে মেয়েটি, "ঈদের দিনে গাজায় তিরিশের বেশি শিশুর কবরস্থ হবার ঘটনাকে কোনভাবেই জাস্টিফাই করার উপায় নেই।"
এইরকম আরও বহু ঘটনা। খোদ ইজরায়েলের ভিতরেই বহু মানুষ বাড়ছে যারা দাবি করছে যথেষ্ট হয়েছে, এখন শান্তি স্থাপিত হোক। আর মজার ব্যাপার হচ্ছে, ইহুদিরাই, এমনকি জায়নিস্টরাই নিজেদের দুষ্কর্মের সমালোচনা করছে, আর আবাল বাঙালের কিছু "বুদ্ধিমান" প্রাণীকে দেখি ইজরায়েলের হয়ে সাফাই গাইতে। এমনভাবে ঘটনাকে ওরা উপস্থাপন করছে, যেন সব দোষ ফিলিস্তিনিদের। আফসোস। ওদের জ্ঞান দিক আল্লাহ, হেদায়েত দিক।
https://www.youtube.com/watch?v=z_jnhsMLUxo
২৭ শে মে, ২০২১ রাত ১:২১
মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: কি মন্তব্য করবো বুঝতে পারছি। লাগলো আপনার কমেন্ট পড়ে।
২| ২৬ শে মে, ২০২১ সকাল ১১:৩০
মাসউদুর রহমান রাজন বলেছেন: "হামাস কেন রকেট মারে?" আমি জাস্ট ভাবতাছিলাম মানুষের বিবেকবোধ স্বার্থপরতা ও কূপমণ্ডূকতার কোন তলানিতে গিয়া পৌঁছাইলে এইসব কথা বলতে পারে! আল্লাহ ওদের জ্ঞান দিক, হেদায়েত দিক।
২৭ শে মে, ২০২১ রাত ১:২২
মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: আমিন।
৩| ২৭ শে মে, ২০২১ রাত ১:১১
রাজীব নুর বলেছেন: বুঝতে পেরেছি। শুধু এই টুকুই বললাম।
২৭ শে মে, ২০২১ রাত ১:২১
মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ধন্যবাদ!
৪| ২৭ শে মে, ২০২১ রাত ২:০৬
এস এম মামুন অর রশীদ বলেছেন: আমাদের ব্লগেও অনেকের মধ্যে শিল্পী উপাধিধারী এক কপিপেস্টবাজ পশু আছে যার নিকট ফিলিস্তনীরা গুন্ডা, সন্ত্রাসী আর ইসরায়েলিরা পেয়ারা পিতৃপুরুষ। ধিক, এসব শিল্পী নামের কুলাঙ্গারদের।
©somewhere in net ltd.
১| ২৬ শে মে, ২০২১ সকাল ১১:০৩
নয়া পাঠক বলেছেন: অসাধারণ! অসাধারণ! অসাধারণ বিশ্লেষণ! আমি নিজেও ঠিক এমনভাবেই নিজের চিন্তাগুলোকে বাস্তব জীবনে ব্যবহারিক প্রয়োগ করার চেষ্টা করি। সত্যিই আমরা যারা বিশ্বাসী তাদের ঠিক এভাবেই চিন্তা করা উচিত।
কিন্তু তবুও আমরা মানুষ! পরিচালিত হই পারিপার্শ্বিকতা, আবেগ ও চিন্তাধারার মাধ্যমে।