নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুর চৌধুরী

আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!

মঞ্জুর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

এমন ঘটনা ঘটলে আপনি নিজে যে কতটা সাম্প্রদায়িক ইতর, সেটা প্রকাশ্য হয়ে যাবে।

০৯ ই জুন, ২০২১ ভোর ৪:২৬

ন্যায়-নীতি-প্রিন্সিপাল ইত্যাদি এমন একটা বিষয়, যা সব দেশে সব যুগে সব সমাজে সব শ্রেণীর মানুষের জন্য এক হওয়া প্রয়োজন। আমার প্রতি যা জুলুম, একই কাজ আমি যদি অন্যের প্রতি করি, তবে সেটাও জুলুমই হবে, তখন সেটা হালাল হয়ে যাবে না। এই সাধারণ বোধ শক্তির জন্য খুব বেশি শিক্ষিত হবার প্রয়োজন নেই। মাথায় সামান্যতম বুদ্ধি, যা ভাল ও মন্দের পার্থক্য করতে বুঝায়, সেটা, আর ন্যূনতম মনুষ্যত্ববোধ থাকলেই চলে। অথচ সমস্যা হচ্ছে, তথাকথিত শিক্ষিতদের মাঝেই এর চরম বৈপরীত্য দেখতে পাই। এটাকে "হিপোক্রেসি" বলবো অবশ্যই, সমস্যা হচ্ছে, উনারা নিজেরা বুঝেনতো যে তারা কতটা হিপোক্রেট?

অনেকে বলেন ও মানেন যে "তুমি নিজে যে আচরণ পেলে খুশি হবে, সেই আচরণই অন্যের সাথে কর। তাহলেই তুমি সঠিক থাকবে"
শুনতে ভাল শোনালেও এই কথাটিতেও একটা বিরাট ফাঁক আছে। প্রতিটা মানুষই আলাদা। আমি অনেক কিছু হজম করতে পারি, আমার আপন ভাইবোন যা হয়তো পারেনা। আবার ওদের হজমি শক্তি আমার চেয়ে কম বেশি হয়ে থাকে। আমার বাবা মায়েরও সহ্য ক্ষমতা আমাদের চেয়ে আলাদা। কাজেই, আমি নিজে যে আচরণ সহ্য করতে পারবো, যার প্রতি আমি আচরণটা করতে যাচ্ছি, সে সেটা সহ্য নাও করতে পারে। তাই বিবেক বুদ্ধি ইস্তেমাল করা ছাড়াও এ ব্যাপারে ইউনিভার্সাল গাইডলাইন ফলো করাই উত্তম।
যেমন ধরেন, আমরা ছোটবেলা থেকেই শিখে আসি কানাকে কানা, খোঁড়াকে খোঁড়া বলো না। আপনি নিজে হয়তো অন্ধ, অথবা চোখে কম দেখেন; আপনি নিজে হয়তো সহ্য করতে পারেন কেউ আপনার অন্ধত্ব নিয়ে উপহাস, তিরস্কার, পরিহাস ইত্যাদি করুক। কিন্তু অন্য কেউ সেটা নাও করতে পারে। তাই ইউনিভার্সাল নিয়ম ফলো করুন, সে সহ্য করবে কি করবে না সেটা চিন্তা না করে আপনি নিজের আচরণ নিয়ে চিন্তা করুন। কেউ চশমা পরলেই আপনি তাঁকে "কানা," কেউ কৃষ্ণাঙ্গ হলেই আপনি তাঁকে "কাইল্যা," কেউ "স্বাস্থ্যবান" কিংবা "রোগা" হলেই তাঁকে নিয়ে উপহাস করতে পারেন না। এইটা ন্যূনতম শিষ্টাচার। "মানুষ" হয়ে থাকলে এই মনুষ্যত্বগুন আপনাকে আয়ত্ত্ব করতেই হবে।

অতি সম্প্রতি ইংলিশ ক্রিকেটার অলি রবিনসনের শাস্তির উদাহরণই নেয়া যাক। অভিষেকেই নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে বোলিংয়ে সাত উইকেট এবং ব্যাটিংয়ে ৪২ রান করা ক্রিকেটারকে প্রতিভাবান ও ভাল বলতেই পারেন, তাই না? তা এই ক্রিকেটারকে ইংলিশ ক্রিকেট বোর্ড বর্ণবাদের অভিযোগে বহিষ্কার করেছে। কেন? কারন সে বহুবছর আগে মুসলিমদের এবং চীনাদের তামাশা করে টুইট করেছিল। ইংলিশ টেস্ট দলে অভিষিক্ত হওয়ায় সেইসব টুইট সবার সামনে চলে এসেছে, তাই ইংলিশ এবং ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড ওকে শাস্তি দিয়েছে। ইংলিশ বোর্ড এই ব্যাপারে খুবই কড়া, এবং কড়াই হওয়া উচিৎ। পৃথিবীর যেকোন সভ্যদেশের প্রথম নীতি হচ্ছে বর্ণবাদকে প্রশ্রয় না দেয়া। জিরো টলারেন্স নীতি।
কিন্তু কিছু আবাল বাঙ্গাল এখনও বুঝতেই পারছে না বর্ণবাদ কতটা ভয়াবহ অপরাধ। উনাদের দরদ উথলে পড়ছে এই ক্রিকেটারের জন্য। কেউ কেউ বলছেন, "এটাতো এমন কোন অপরাধ না যে বহিষ্কার করতে হবে।" বর্ণবাদীদের চোখে বর্ণবাদকে কখনই অপরাধ বলে বিবেচিত হয়না, সেটাই স্বাভাবিক। যেই মুহূর্তে কোন অপরাধকে আপনার অপরাধ বলে গণ্য হবেনা, সেই মুহূর্তে ধরে নিবেন, আপনি নিজেও সুযোগ পেলে সেই অপরাধটাই করবেন। এই কথাটা যেকোন ক্রিমিনোলজির প্রফেসরের সাথে ভ্যারিফাই করে দেখতে পারেন।

এই যে ক্যানাডায় মুসলিম হবার "অপরাধে" একটি আস্ত পরিবারকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হলো, এ নিয়েও অনেকে মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছেন। "মুসলিম" মরেছে তো কি হয়েছে? মনে মনে অনেকে খুশিও হচ্ছেন, মুসলিম মরেছে ভালই হয়েছে। তার উপর ওদের পোশাক দেখে মনে হচ্ছে পাকিস্তানী! আহা! কত আনন্দ! একটা ছানা বেঁচে গেছে, ওটা মরলো না কেন? এই হচ্ছে মেন্টালিটি। সিরিয়াসলি বলছি। এমন "মানুষ" আছে, আমার আপনার ফ্রেন্ডলিস্টেই। গোটা দেশের কথা বাদই দিলাম।
অথচ এখন ঘটনা উল্টো হলে, যদি ট্রাক ড্রাইভার হতো মুসলিম এবং নিহত পরিবারটি হতো ভিন্ন ধর্মের, তাহলেই ফেসবুক জুড়ে রচনা লেখা প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যেত। পড়তে পড়তে হাপায় উঠতাম। আমাদের দেশে এত এত ভাল মানুষ আছে ভেবে চোখ থেকে দুই ফোটা পানিও বেরিয়ে আসতো।
আবার যারা এখন প্রতিবাদ করছেন, আফসোস করছেন, কারন যারা নিহত হয়েছেন তাঁরা ছিলেন মুসলিম, ঘটনা উল্টো হলে তাঁদের অনেককে দেখতাম নীরব কবি হয়ে যেতে। তখন কাফের নাসারা ফিলিস্তিন ইত্যাদি নানান তথ্য প্রমান এনে অপরাধকে জাস্টিফাই করার চেষ্টা চলতো।
"বর্ণবাদের শিকার হয়ে মানুষ মরেছে" এই সহজ সত্যটা উপলব্ধি করার বোধ হারিয়েছি আমরা। আমরা ভুলেই গেছি আমরা আদম সন্তানরা বিরাট এক পরিবারের সদস্য। আজকে যারা "মুসলিম পরিবার মরেছে, আমার বাপের কি?" - ভেবে চুপ আছেন, কালকে আপনার পরিবারকেই হত্যা করা হবে, এবং তখন বুঝবেন কার বাপের কি। বাস্তব উদাহরণ দেই।
ইলেকশনের আগে থেকেই স্পষ্ট ছিল যে ট্রাম্প একটা ভয়াবহ বর্ণবাদী। কেবল আহাম্মকরাই ভেবেছিল যে সে কেবল একজন মুসলিমবিদ্বেষী। "হোয়াইট সুপ্রিমিস্টরা শ্বেতাঙ্গ বাদে সবাইকেই অমানুষ মনে করে" - এই সহজ সত্য অনেক ছাগলের মাথায় ঢুকে নাই।
কাজেই ট্রাম্প আসার পরে অনেককেই দেখেছি খুব আনন্দ করতে। মুসলিমদের প্যাদানি দিচ্ছে, খুব মজা! হিজাবি মহিলার গায়ে আগুন দিল, মুসলিমকে গুলি করে মারলো, সাতটা মুসলিম দেশের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করলো - আহা! কি আনন্দ!
তারপরে নিজের জাতের লোকেরাই যখন হেইট ক্রাইমের শিকার হলো, তখন উনাদের টনক নড়লো।
এমন উদাহরণ প্রচুর আছে।
মোট কথা, ন্যায়-নীতির ক্ষেত্রে দয়া করে কনসিস্ট্যান্ট হতে শিখুন। একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রে আপনার দরদ আকাশ স্পর্শ করবে, আপনি লোকজনকে সাম্প্রদায়িক গালি দিবেন, নিজে কত মহান মানুষ সেটা বুঝানোর চেষ্টা করবেন, আবার অপর সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রে আপনি পাত্তাই দিবেন না, চোখ কান সব বন্ধ করে বসে থাকবেন, এমন ঘটনা ঘটলে আপনি নিজে যে কতটা সাম্প্রদায়িক ইতর, সেটা প্রকাশ্য হয়ে যাবে। মানুষকে মনুষ্যত্ব শেখানোর আগে নিজে মানুষ হবার চেষ্টা করুন।
আজকে যে মুসলিম মরেছে বলে বগল বাজাচ্ছেন, জেনে রাখুন, যে মেরেছে, ওর চোখে আপনিও "অশ্বেতাঙ্গ" "বাদামি" চামড়ার "নিগার।" পৃথিবীর কোন না কোন দেশে, কোন না কোন রাস্তায় আপনাকে হাঁটতে দেখলে সে জিজ্ঞেস করবে না আপনি কয় ওয়াক্ত নামাজ পড়েন, আল্লাহকে কতখানি মানেন। ওর হাতে বন্দুক থাকতে পারে, ট্রাকও থাকতে পারে। সেই দিনটা যেন না আসে, সেজন্য এই বর্ণবাদকে অঙ্কুরেই নষ্ট করতে হবে। নাহলে অন্যকে কামড়ানোর জন্য পোষা কুকুরটা নিজের মালিককে কামড়ে দিতে সময় নিবে না।

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই জুন, ২০২১ ভোর ৬:৩৯

কামাল১৮ বলেছেন: যে কোন অন্যায় সে যেই সংঘটিত করুক সেটা অন্যায়।অন্যায়ের প্রতিবাদ করা প্রতিটা মানুষের কর্তব্য।এই ঘটনার চরম নিন্দা জানাচ্ছি।

০৯ ই জুন, ২০২১ সকাল ১১:৪৩

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ঠিক বলেছেন।

২| ০৯ ই জুন, ২০২১ সকাল ৭:২৮

আমিই সাইফুল বলেছেন: পৃথিবীতে কেউ কি নিরপেক্ষ হতে পেরেছে? আমরা প্যালেস্টাইনের জন্য হ্যাস ট্যাগের বন্যায় ভাসিয়ে দেই। আবার হামাস ইজ্রায়েলে হামলা করলে আলহামদুলিল্লাহ পড়ি!!! আমরা নিজেরা কতটা নিরপেক্ষ???

০৯ ই জুন, ২০২১ সকাল ১১:৪২

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: হামাস ইজরায়েলে আগ বাড়িয়ে আক্রমন করলে "আলহামদুলিল্লাহ" কয়জন বলে? হামাস কয়বার আগ বাড়িয়ে আক্রমন করে? ইজরায়েল প্রতিদিন ওদের সাথে কি করছে কোন খোঁজ রাখেন?

৩| ০৯ ই জুন, ২০২১ সকাল ৯:৪৭

স্বামী বিশুদ্ধানন্দ বলেছেন: কানাডার এই মর্মান্তিক ঘটনায় সকল রাজনৈতিক দল, অসংখ্য সামাজিক সংগঠন ও বিভিন্ন কম্যুনিটির মানুষ আজ লন্ডনের এক মসজিদের সম্মুখে সমবেত হয়ে শোক প্রকাশ করেছে। হাজার হাজার মানুষের এই সমাবেশে প্রাদেশিক ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলগুলোর প্রধানরা হেইট ক্রাইমের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। একটি পরিবারের এতজন সদস্যকে গাড়ি চাপা দিয়ে হত্যার মতো পৈশাচিক ঘটনায় স্তম্ভিত হয়ে পড়েছে সবাই। যে ছেলেটি বেঁচে আছে তার সারাটি জীবন কি পরিমান ট্রমার মধ্য দিয়ে যাবে তা সহজেই অনুমেয়।

০৯ ই জুন, ২০২১ সকাল ১১:৪৩

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: পুরো পরিবার শেষ হয়ে গেল। :(

৪| ০৯ ই জুন, ২০২১ দুপুর ২:০০

রাজীব নুর বলেছেন: অত্যন্ত দ;খজনক।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.