নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুর চৌধুরী

আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!

মঞ্জুর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

দেশে বৃদ্ধাশ্রমের প্রয়োজনীয়তা

০৪ ঠা জুলাই, ২০২১ রাত ১০:৩৮

কিছুদিন আগে বাংলাদেশের সবচেয়ে আনকমফোর্টেবল কিছু টপিকের একটি "বৃদ্ধাশ্রম" নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল। ভাবলাম, কমেন্টে এই আলোচনা সীমাবদ্ধ না রেখে বরং একটা আলাদা পোস্টই করা যাক। এতে বেশি পাঠকের কাছে পৌঁছানো যাবে। খুবই প্রয়োজনীয় বিষয়, তাই বিশেষ মনোযোগ চাইছি।

বৃদ্ধাশ্রম কনসেপ্টটা বিদেশী, আমাদের দেশে কয়েক দশক আগেও এর অস্তিত্ব ছিল না। বর্তমানে দেশব্যাপী শয়ের উপর বৃদ্ধাশ্রম আছে (এটি আমার ধারণা কেবল, সংখ্যা হাজার ছাড়াতে পারে, কমও হতে পারে, আমি নিশ্চিত না), তবে আমাদের সমাজে একে নেতিবাচক হিসেবেই দেখা হয়। ধরেই নেয়া হয় যাদের বাবা মা বৃদ্ধাশ্রমে থাকেন, তারা কুলাঙ্গার। আবার পশ্চিমা দেশে ব্যাপারটা খুবই স্বাভাবিক। বাবা মা বৃদ্ধাশ্রমে থাকবেন, সেটাই উনাদের জন্য ভাল। তাহলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে, একই পৃথিবীতে আমরা থাকি, অথচ দুই সমাজে এমন বিপরীত চিত্র কেন?
উত্তর হচ্ছে, দুই সমাজের চরিত্রই ভিন্ন।
পশ্চিমা বিশ্বে সবাই একক পরিবারে বিশ্বাসী। বাচ্চাকাচ্চা জন্মে, ওদের বেড়ে ওঠার ট্রেনিং এমন হয় যেন ওরা অতি দ্রুত আত্মনির্ভরশীল হয়ে ওঠে। সেই দুগ্ধপোষ্য অবস্থাতেই তাঁদের আলাদা বিছানা, আলাদা রুমে থাকতে বাধ্য করা হয়। চার পাঁচ বছর বয়সেরও আগে বাচ্চা এলার্ম দিয়ে ঘুম থেকে উঠে দাঁত ব্রাশ করে স্কুলের জন্য কাপড় পরে নিচে ব্রেকফাস্ট টেবিলে আসে। ষোল থেকে আঠারো বছর বয়সেই ওরা বাবা মায়ের বাড়ি ছেড়ে (ছোট ঘর হোক বা আলিশান রাজপ্রাসাদ) নিজের মত করে স্বাধীনভাবে থাকতে এপার্টমেন্টে বা রুমমেটের সাথে কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডরমিটরিতে থাকতে শুরু করে। এই খরচের টাকা ওরা নিজেরাই রেস্টুরেন্টে বা দোকানে কাজ করে তুলে। পাশাপাশি পড়ালেখা চালিয়ে যায়। ওদের বন্ধুবান্ধবদের মধ্যে যারা "এডাল্ট" হবার পরেও বাবা মায়ের সাথে থাকে, তারা "লুজার।" আমাদের দেশের কনসেপ্টে, যদি আমরা দেখি কলেজে পড়া কোন সুস্থ সবল ছেলেকে তাঁর মা হাতে ধরে স্কুলে নিয়ে আসেন এবং নিয়ে যান, কোচিং সেন্টারেও একই ভাবে নিয়ে যান, ব্যাপারটা ওর সমবয়সী ছেলেমেয়েরা যেভাবে নিবে, এখানেও ঘটনা একই। আমাদের দেশে ছেলে এসএসসি এইচএসসি পাশ করার পরে নিজের মতন আলাদা থাকতে শুরু করেছে, এই দৃশ্য আমরা এখনও কল্পনাও করতে পারি না। মেয়েদের ক্ষেত্রেতো প্রশ্নই উঠে না। "আমাদের দেশের মেয়েরা বাড়ি ছেড়ে উচ্চশিক্ষার জন্য হোস্টেলে কিংবা মেসে থেকে পড়াশোনা করে" - এই উদাহরণ আর বিদেশী লাইফ স্টাইল এক না। আমাদের মেয়েরা বাড়ির বাইরে গেলেও বিদেশিদের মতন স্বাধীন ও আত্মনির্ভরশীল থাকেনা। বাবা মায়ের শাসন, বারণ ইত্যাদি মেনে চলে। ওয়েস্টার্ন একটি এডাল্ট মেয়েকে আপনি কিছুই বলতে পারবেন না। ও এডাল্ট, ওর জীবন, ও যা খুশি তাই করতে পারে।
তা এই হচ্ছে দুই সভ্যতার ছেলেমেয়েদের বেড়ে ওঠার মাঝে বেসিক পার্থক্য।

এখন অতি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট, পশ্চিমা দেশে বাবা মায়েরা সমস্ত জীবন চাকরি করেন এবং রিটায়ারমেন্টের জন্য টাকা জমান। যাতে বৃদ্ধ বয়সে কারোর কাছে হাত পাততে না হয়। সন্তানরা বিপদে পড়লে, টাকার প্রয়োজন হলে বাবা মা ইচ্ছা করলে এই টাকা ধার দেন, লিখিত কন্ট্রাক্ট থাকে যে সন্তান এতদিনের মধ্যে টাকা ফেরত দিবে। অনেকক্ষেত্রে অনেক বাবা মা টাকা দেন না। ওর বিপদ, ও নিজেই উদ্ধার হবার পথ খুঁজে বের করুক। আমি দিলে যদি টাকা ফেরত না দেয়? শেষ জীবনে কে হোমলেস হতে চায়?
আমাদের দেশের কনটেক্সটে ব্যাপারটাকে "স্বার্থপর" শোনালেও ব্যাপারটা যথেষ্টই প্র্যাকটিক্যাল। জীবনের সমস্ত সঞ্চয় ছেলেমেয়েদের পেছনে ব্যয় করার পরে গ্যারান্টি কি যে এই সন্তান আপনাকে সম্মানের সাথে শেষ দিনগুলোতে দেখেশুনে রাখবে? আবেগ আলাদা বিষয় এবং বাস্তবতা ভিন্ন। তাই ওরা "সাবধানের মাইর নাই" নীতিতে বিশ্বাসী।
আমেরিকায় "ফ্যামিলি টাইম" হচ্ছে ক্রিসমাস এবং "থ্যাংকস গিভিং" ডিনার। গোটা বছরে এই একটা সময়ই এডাল্ট বাচ্চারা বাবা মায়ের সাথে দেখা করতে আসে, ডিনার করে এক সাথে। ফাদার্স ডে, মাদার্স ডেতে নিজেদেরই বাচ্চাদের নিয়ে নানান পরিকল্পনা থাকে, তাই সব সময়ে সবাই নিজের বাবা মায়ের কাছে স্বশরীরে উপস্থিত হতে পারে না। একটা ফোন কল করে, কার্ড পাঠায়, গিফট দেয়। দায়িত্ব শেষ। ওরাও মেনেই নেয়। ওরাও এমনই করেছিল। এটাই ওদের দেশের বাস্তবতা।
এবং সবশেষে ওদের বৃদ্ধাশ্রমের পরিবেশটাও একটু তুলে ধরা যাক। ট্রেইন্ড প্রফেশনালরা কাজ করে, যারা জানে কখন কোন পরিস্থিতিতে কি করতে হয়। নিবাসীদের জন্য নানান এক্টিভিটিজ থাকে। সময় মতন পুষ্টিকর খাওয়া দাওয়া ব্যয়ামের ব্যবস্থা থাকে। কোন নার্স বা কর্মচারী দুর্ব্যবহার করলে ঠিক জায়গা মতন বিচার দিলে এবং তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে ওর চাকরি চলে যেতে পারে। কাস্টমার রিভিউ ওদের কাছে সবকিছু। একটা রেটিং যদি বাজে আসে, তাতেই ওদের ব্যবসা চরম মার খায়। কাজেই প্রতিটা কাস্টমারকে খুশি করতে ওরা জানপ্রাণ দিয়ে দেয়।

এখন আসা যাক আমাদের দেশের দৃশ্যপটে।

প্রথম পার্থক্য হচ্ছে, আমাদের বাবা মায়েরা জীবন উৎসর্গ করতে রাজি থাকেন সন্তানদের জন্য। যত টাকা কামান, যত সম্পদ গড়েন, সবই সন্তানদের জন্য। নিজের বাড়িতে রেখে ছোট থেকে বড় করে পড়ালেখা করিয়ে চাকরিতো পাওয়ানই, তারপরে যখন বিয়ের সময় আসে, তখন নিজের পকেটের সব টাকা উজাড় করে হলেও ধুমধামের সাথে বিয়ে দেন। সন্তানদের বিয়ে দিয়ে পথে বসেছেন এমন কিছু পরিবারের ব্যাপারে বেশ কয়েক বছর আগে পড়েছিলাম। এখনও এমনটা ঘটে অহরহ। পশ্চিমা বাচ্চারা নিজেদের বিয়েতে বাবা মায়ের টাকা চায় না। আর আমরাই অবুঝের মতন এমনসব আবদার করে বসি, একটা বারের জন্যও চিন্তা করি না বাবা মার সামর্থ্যে আছে কি না।

রিটায়ারমেন্টের টাকা যা জমানো থাকে, সন্তান বিপদে পড়লে সেটা নির্দ্বিধায় দিয়ে দেন। অনেকে নিজের বাড়িঘর বেঁচে দেন। চিন্তা করেন না যে সন্তান যদি তাঁদেরকে নিজের বাড়িতে আশ্রয় না দেয়, তাহলে তাঁদের কি হবে! মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে কোরবানির সময়ে গরু/খাসি বা রমজানে প্লেটভর্তি ইফতার না পাঠালে ইজ্জ্ত থাকে না। বাবা মায়ের সামর্থ্যে না থাকলেও এই বর্বর সামাজিক প্রথার কারনে নিজেদের ব্যাংক ব্যালেন্স খালি করে ফেলতে হয়। এছাড়া বিয়ের সময়ে যৌতুকের কথা বাদ দিব কিভাবে? মেয়ের গহনা, জামা কাপড় সবকিছুর পুরোটাই আসে বাবা মায়ের পকেট থেকে। ওয়েস্টার্ন ছেলেমেয়েদের মতন আমাদের ছেলে মেয়েরা নিজেদের খরচে নিজেরা বিয়ে করে দেখাক, দেখবেন অনেক অযথা ফালতু আহ্লাদী প্রথা লুপ্ত হয়ে যাবে।
আমাদের সমাজে প্রতিদিনই বাবা দিবস, প্রতিদিনই মা দিবস, প্রতিদিনই থ্যাংকসগিভিং।
দুই সমাজের মধ্যে কোনটা ভাল কোনটা মন্দ এই বিচার করতে যাবেন না। পশ্চিমা সমাজের এই রীতিটা অবশ্যই প্রশংসনীয় যে তাঁদের সন্তানরা অতি অল্প বয়স থেকেই আত্মনির্ভরশীল হয়ে গড়ে উঠে। নিজের খরচ মেটাতে বাবা মায়ের হাতের দিকে তাকিয়ে থাকে না। গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে ডেটিং থেকে শুরু করে বিয়ে পর্যন্ত কোথাওই বাবা মায়ের কাছে হাত পাতে না। শ্রমের মর্যাদা ওরা কেবল রচনায় ভাল মার্ক্স্ পাবার জন্য মুখস্ত করে না, ওরা বাস্তবেই তা করে দেখায়। এগুলোর সবই আমাদের সমাজে মিসিং।
আমাদের দেশেরও অনেক কিছুই ভাল, অনেক কিছুই খারাপ। "সব" ভাল বা "সব" খারাপের অস্তিত্ব কোন সভ্যতাতেই নেই।

তাহলে বাংলাদেশের কনটেক্সটে বৃদ্ধাশ্রমের ব্যাপারে কি বলা যায়?

প্রথমত, আমাদের দেশটা স্বপ্নপুরী নয়। বিশ্বের কোন দেশই তা নয়। আমাদের দেশে অনেক সন্তানই আছে যারা বাবা মায়ের দায়িত্বকে বোঝা মনে করে। ব্যাডমিন্টনের শাটল ককের মতন এই কোর্ট থেকে ঐ কোর্টে ছুঁড়ে মারা হয়। বড় ভাই বলে ছোটভাই দায়িত্ব নিক, ছোটভাই বলে বড় ভাই নিক। নিজের বাবা মায়ের পেছনে সে কত টাকা খরচ করেছে সেই হিসাব টুকে রাখে আলাদা ডায়েরিতে। সংসারে চলে অশান্তি। বৌ বলে শ্বশুর শ্বাশুড়ি এই ঐ সমস্যা করেছে, শ্বশুর শ্বাশুড়ি বলে বৌ এইটা ঐটা করেছে, মাঝে দিয়ে ছেলের অবস্থা দফারফা।
তারপরে একদিন মাথায় বুদ্ধি আসে, এই যন্ত্রনা বিদায় করতে পারলে ভাল। তাই একদিন সকালে বাবা মাকে রেল বা বাস স্টেশনের বেঞ্চিতে বসিয়ে ছেলে পালিয়ে যায়। অতি দয়াবান হলে হয়তো সে বৃদ্ধাশ্রমে ভর্তি করিয়ে আসে। এইসব ঘটনা মোটেই কাল্পনিক না। বৃদ্ধাশ্রমে আশ্রিত প্রায় প্রতিটা বৃদ্ধবৃদ্ধার জীবনের বাস্তব ঘটনা। টিভিতে, পত্রিকায় এইসব ঘটনাই বারবার আসে। সামনা সামনি কথা বললেও একই গল্পই শুনবেন।
বাংলাদেশের বৃদ্ধাশ্রম এবং এতিমখানার মাঝে কোন পার্থক্য নাই। এই উক্তির সূত্র ধরেই আসা যাক, বাংলাদেশের বৃদ্ধাশ্রমের পরিবেশ কেমন সেই আলোচনায়।
প্রথমে আমার এই প্রশ্নের জবাব দিন, সেখানে কোন কর্মচারী যদি কারোর সাথে দুর্ব্যবহার করে, ওর কোন বিচার হবে? না, হবেনা। বাংলাদেশের বড় বড় মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতেও সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্টের বিরুদ্ধে কেউ কোন ব্যবস্থা নেয়না, কাজেই এতিমখানা হোক, মাদ্রাসা হোক কিংবা বৃদ্ধাশ্রম, কোথাওই কোন রকমের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবেনা যতক্ষন না ঘটনা পত্রিকা বা সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হচ্ছে।
বৃদ্ধবৃদ্ধারা বলতেও পারবেন না কিছু, কারন ওদের নিজেদের বাড়িতেই আশ্রয় নেই, এই আশ্রয়টুকুও যদি যায়, তখন? যৌন নিপীড়ন ছাড়াও যেকোন ছোট বড় দুর্ব্যবহারের উদাহরণই ধরে নিন, কোথাওই কোন ব্যবস্থা নেয়া হবেনা।
সেখানে খাওয়া দাওয়ার মান কতটা উন্নত? পানির মাঝে ডাল খুঁজে পাওয়া যায় না, ঝোলের নিচে মাংসের অস্তিত্ব নেই - এইসব আমাদের কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় হল ক্যান্টিনের সাধারণ দৃশ্য। তাগড়া তাগড়া যুবকদের প্রতিষ্ঠানেই যদি এই অবস্থা হয়ে থাকে, তাহলে দুর্বল বৃদ্ধদের খাবারের মান কি হবে তা সহজেই অনুমেয়। নিজের বাড়িতে নিজের স্বাধীনতা থাকে। একদিন মুরগি খেতে ইচ্ছা করে, একদিন মাছ, একদিন নিরামিষ। বৃদ্ধাশ্রমে বা দুনিয়ার কোথাও কি এই স্বাধীনতা থাকে?
এছাড়া নিজের নাতিপুতিদের সাথে কাটানো সময়কে আপনি দুনিয়ার আর কোন কিছুর সাথেই সমতুল্য করতে পারবেন না। আপনি যুক্তি দিতে পারেন বৃদ্ধাশ্রমে বৃদ্ধদের সময় ভাল কাটার কথা। সমবয়সীরা এক সাথে মিলেমিশে গল্পগুজব করে। যেসব বাড়িতে সন্তানরা অফিস করে এবং বৃদ্ধ বাবা মাকে একা থাকতে হয়, ওদের বিপদে দেখার কেউ নেই, সেই বাড়ির জন্য বৃদ্ধাশ্রম বেস্ট সমাধান। কথা ঠিক, তবে সেটা অবশ্যই একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত। যতক্ষন বাড়িতে কেউ নেই, সেই সময়টা তাঁরা যদি বৃদ্ধদের সাথে হাসিঠাট্টা আনন্দ করে কাটান, ততক্ষন পর্যন্ত এটি ঠিক আছে। বাচ্চাদের ডে কেয়ারের মতন বৃদ্ধদের ডে কেয়ার ফ্যাসিলিটি। অফিস শেষে বাড়ি ফেরার সময়ে সবাই ফিরে আসলেন।

এখন প্রশ্ন উঠে, বাংলাদেশে বৃদ্ধাশ্রমের প্রয়োজন আছে কি নেই? অবশ্যই প্রয়োজন আছে। নাহলে যেসব ছেলেমেয়েরা বাবা মাকে রাস্তাঘাটে ফেলে যায়, উনাদের কি হবে? রাস্তায় ভিক্ষাবৃত্তি ছাড়া তাঁদের যে কিছুই করার থাকবে না। তাঁদের জন্যই প্রয়োজন আছে বৃদ্ধাশ্রমের।
এছাড়া যদি কোন বৃদ্ধবৃদ্ধা স্বেচ্ছায় বৃদ্ধাশ্রমে থাকতে আগ্রহী হন, প্রবাসে যা অতি স্বাভাবিক ঘটনা, সেক্ষেত্রে তাঁদের জন্যও বৃদ্ধাশ্রমের প্রয়োজন আছে। আমি নিজেই হয়তো পছন্দ করবো নিজের জীবনের শেষ অধ্যায়টা বন্ধুবান্ধবদের সাথে দিনরাত আড্ডাবাজি করে কাটাতে। এক্ষেত্রে মূল পার্থক্যটা হচ্ছে, এখানে বৃদ্ধবৃদ্ধা স্বেচ্ছায় বৃদ্ধাশ্রমে আসতে আগ্রহী, আর অন্যটায় ছেলেমেয়েরা ধোঁকা দিয়ে তাঁদের ফেলে দিয়ে আসে।
সর্বক্ষেত্রেই বৃদ্ধাশ্রমের পরিবেশ উন্নত হতে হবে। সেখানে কর্মরত কর্মচারীদের দৈনন্দিন সাধারণ কাজের পাশাপাশি মোরাল, এথিকাল ট্রেনিংও দিতে হবে। যারা স্রেফ টাকার প্রয়োজনে এই চাকরি করছে, এমন লোক নিয়োগ না দিয়ে বরং যারা মানব সেবাকেই নিজের জীবনের ব্রত জ্ঞান করছে, এমন কর্মচারী নিয়োগ দিতে হবে। নাহলে "কাস্টমার সার্ভিস" জীবনেও উন্নত করতে পারবেন না।
অনেকেই দাবি করেন এতিমখানার এতিমদের এবং বৃদ্ধাশ্রমের বৃদ্ধদের কেননা একসাথে এক ছাদের নিচে রাখা হোক। দুই পক্ষেরই আপন কেউ নেই। এরাই একপক্ষ আরেক পক্ষকে আপন করে নিক।
খুবই মহান চিন্তা। কারন এর ফলে বৃদ্ধ বৃদ্ধারা শেষ বয়সে এসে নাতি নাতনি পান, এবং এতিম শিশুরাও দাদা দাদির ভালবাসার সাথে পরিচিত হয়। কিন্তু এক্ষেত্রেও একটি বিপদের শংকা থাকে। গোটা বৃদ্ধাশ্রমে যদি একটাও পার্ভার্ট বৃদ্ধ থাকে, যে স্বভাবে পেডোফাইল, তাহলেই সর্বনাশ হয়ে যাবে। এরা খুঁজে খুঁজে এমন সব দুর্বল শিশুদেরই টার্গেট করে যারা মুখ ফুটে কাউকে কিছু বলতে পারেনা। তখন সেই শিশুর জীবন শেষ। এই রিস্ক কে নিবে? যদিও সাধারণ এতিমখানাতেও একই রিস্ক থাকে। মাদ্রাসাতেও। সব প্রতিষ্ঠানেই।

এখন একটি সত্য ঘটনা বলি।
আমার বাবা আমেরিকায় পড়ালেখা করতে চেয়েছিলেন। ছোট চাচা চলে এসেছেন ততদিনে, ভালই করছে। আব্বুরও ইচ্ছা হলো। এর ফলে জীবনে স্বচ্ছন্দ আসবে, সবচেয়ে বড় কথা, ছেলে মেয়েদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা অনেকখানিই কমে যাবে। যতদূর জানি, একটি ভাল বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগও পেয়েছিলেন। দাদাও খুশি হলেন, তবে শুধু একটি প্রশ্ন করলেন, "আমরা থাকবো কোথায়?"
আসলেই যদি আব্বু যদি আম্মুকে নিয়ে চলে আসতেন তাহলে দাদা দাদির থাকার কোন স্থান ছিল না। কোন স্টুডেন্ট, সে যত ব্রিলিয়ান্টই হোক, নিজের বাবা মাকে আনতে পারে না। গ্রীন কার্ড, সিটিজেনশিপ ইত্যাদি বহু বছরের ধাক্কা। ততদিনে দাদা দাদীর হায়াৎ থাকার সম্ভাবনা কম।
কাজেই, আব্বু নিজের ইচ্ছা, ক্যারিয়ার ইত্যাদি কোরবান করলেন।
আমার বাবার গর্ব ছিল এই যে আমার দাদা দাদির মৃত্যু তাঁর বাড়িতেই ঘটেছে। এবং সেই বাবা মায়ের দোয়াতে জীবনে কখনই তিনি কোথাওই আটকে থাকেননি। যে ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যতের জন্য তিনি প্রবাসে পড়াশোনা করতে চেয়েছিলেন, সেই তিনজনই প্রবাসে প্রতিষ্ঠিত। সবই শুধু সময়ের ব্যপার। মাথার উপর বাবা মায়ের দোয়া থাকলে পৃথিবীর কিছু নিয়েই চিন্তার কোন কারন নেই।

আপাতত এখানেই লেখা শেষ করি।
অনেকের জন্যই অস্বস্তিকর টপিক এটি জানি। কিন্তু এটি এখন আমাদের সমাজের "এলিফ্যান্ট ইন দ্য রুম।" মানে হচ্ছে, আমাদের সমাজে ঘটনাটা ঘটছে এবং আমরা সবাই তা জানি, কিন্তু কেউই পাত্তা দিচ্ছি না। ভাবছি পাত্তা না দিলে আপনাতেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। বাস্তবতা হচ্ছে, কোন সমস্যাই আপনাতে সেরে উঠে না। আমরা চুপচাপ ইগনোর করলে, কিংবা গালাগালি ও তিরস্কার করলে যেই হারামজাদা নিজের বাবা মাকে রাস্তায় ফেলে আসে, সে শুধরে যাবেনা।
বাস্তবতা মেনে নিয়ে, পজিটিভ, নেগেটিভ ইত্যাদি বিবেচনায় ধরে কিভাবে এটাকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব সেটা নিয়েই বরং আমাদের ভাবা উচিৎ। ইংলিশে যেটাকে বলে "ড্যামেজ কন্ট্রোল।"

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.