নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুর চৌধুরী

আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!

মঞ্জুর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঈসা নবীর রাজত্বে শাসন ব্যবস্থা কেমন হবে?

১৮ ই আগস্ট, ২০২১ রাত ১১:৪৭

মুসলিমরা বিশ্বাস করি কেয়ামতের আগে আগে দাজ্জাল আসবে, ওর বিরুদ্ধে লড়বেন মাহ্দী, এবং তিনিই স্বাগত জানাবেন নবী ঈসাকে (আঃ) যার হাতে মৃত্যু ঘটবে দাজ্জালের। তারপরে তিনি কয়েক বছর পৃথিবী শাসন করে স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করবেন।
তা এই দাজ্জালের অপেক্ষা মুসলিমরা সেই সাহাবীদের সময় থেকেই করে আসছেন। হজরত উমারের (রাঃ) দৃঢ় বিশ্বাস ছিল তাঁদের সময়ের একটি লোক দাজ্জাল। সেই থেকে শুরু, অমুক তমুককে দাজ্জাল জ্ঞান করা এখনও চলছে।
মঙ্গলরা যখন মুসলিম খিলাফত আক্রমন করলো, লাখে লাখে মুসলমানকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হলো, সভ্যতা তছনছ করে দেয়ার অপচেষ্টা চলছিল, তখনকার যুগের উলামাগণ শতভাগ নিশ্চিত ছিলেন চেঙ্গিস খান ও এর সেনাবাহিনীই ইয়াজুজ মাজুজ। হাদিসে বর্ণিত বর্ণনার সাথে ওদের চেহারা এবং লোকেশনও মিলে যায়। আজকে আমরা জানি এখন পর্যন্ত দাজ্জাল আসেনি, ইয়াজুজ মাজুজও আসেনি। মাহ্দীও না।
তবে "মাহ্দী এসে গেছেন, আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই তিনি আত্মপ্রকাশ করবেন" এই বিশ্বাস আমাদের দেশের লাখ খানেক মুসলমানের আছে। বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিলে আমাদের ওয়াজিগণ বয়ান করে থাকেন, এবং লোকে তা বিশ্বাস করে মেনেও চলে। যদি আসলেই ঈমাম মাহ্দী এসে থাকেন, তবে আলহামদুলিল্লাহ। তিনি আত্মপ্রকাশ করলে অবশ্যই তাঁর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ প্রতিটা মুসলিমের কর্তব্য। কিন্তু সমস্যা একটাই, যদি তিনি না এসে থাকেন, অথচ লোকে বিশ্বাস করে থাকে যে তিনি এসেছেন, তাহলে বিরাট গন্ডগোল বাঁধবে।
যেমন হাদিস অনুযায়ী মাহদীর পরিচয় প্রকাশ পাবে কাবা ঘরেই। তাঁকে গ্রেফতার করতে একদল সেনা আসবে, এবং সেখানেই আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি মিরাকেল ঘটবে। মাটি ভেঙ্গে যাবে, যেখানে সেনাদল তলিয়ে যাবে, এবং মাহদীকে তখনই লোকজন চিনবে এবং প্রতিশ্রুত নেতা হিসেবে মেনে নিবে। এর আগে পর্যন্ত কারোরই ধারণা থাকবে না ইনিই "ঈমাম মাহ্দী", এমনকি তিনি নিজেও জানবেন না। হেরা গুহার সেই রাত্রি যেমন মুহাম্মদকে (সঃ) রাসূলুল্লাহ বানিয়ে দিয়েছিল, এখানেও এই ঘটনায় মাহদীর আত্মপ্রকাশ ঘটবে।
এই পর্যন্ত আমরা সবাই জানি।
এখন আসা যাক এই পয়েন্টে যে অনেকেই বিশ্বাস করেন ঈমাম মাহ্দী চলে এসেছেন, এবং যেকোন সময়েই তিনি আত্মপ্রকাশ করবেন। একবার ক্যানভাসে আমাকে এক যুবক অতি আত্মবিশ্বাসের সাথে বলেছিল "আসন্ন রমজান মাসেই মাহদীর আত্মপ্রকাশ করার কথা।" সেই আসন্ন রমজান মাস বিগত হবার কয়েক বছর কেটে গেছে, উনার কনফিডেন্স কমেছে কিনা, সেটা অবশ্য জানিনা।
তা এই কনফিডেন্সের লোকেরাই সমস্যা বাড়ায়।
একটি ঘটনা বলি। আগেও বলেছি কয়েকবার, প্রসঙ্গ উঠায় আবারও পুনরাবৃত্তি করছি।
১৯৭৯ সালে জুহাইমান আল ওতাইবি নামের এক জঙ্গি নিজের চ্যালা চামচা নিয়ে অস্ত্রের মুখে কাবা ঘর দখল করে নেয়। ওদের বিশ্বাস ছিল, ইমাম মাহ্দী চলে এসেছেন, ওদের দলেই আছেন, এবং সৌদি বাদশাহসহ সমস্ত মুসলিম বিশ্ব যেন এই মাহদীর কাছে আনুগত্য করে।
স্বাভাবিকভাবেই কেউ কেউ ওদের নির্দেশ অমান্য করে, অথবা স্রেফ মানুষের মনে আতংক জাগাতেই ওরা গুলি চালিয়ে কিছু মানুষ মেরে ফেলে। কি অদ্ভুত! ইসলামের নেতৃত্ব দাবিকারী দলটি কাবা ঘরে সাধারণ মানুষের লাশ ফেলেছে!
স্বাভাবিকভাবেই, মিলিটারির মাধ্যমে এই আপদকে পৃথিবী থেকে বিদায় করা হয়েছিল।
ওরা জানতো ওদের জন্য মিলিটারি আসবে। একই সাথে ওদের বিশ্বাস ছিল, এই মিলিটারিকে মাটি গিলে ফেলবে। হাদিসেতো সেটাই লেখা। কিন্তু বেচারাদের তকদির খারাপ। আল্লাহ কোন জঙ্গির লেখা স্ক্রিপ্ট ফলো করেন না। তাঁর পরিকল্পনা মতে, মাহ্দী যখন আসবার, তিনি আপনাতেই আসবেন।
আল্লাহ মাফ করুন, তবে জুহাইমানের ঘটনার যদি পুনরাবৃত্তি ঘটে, তখন যে লোক দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে ইমাম মাহ্দী চলে এসেছেন, সে ছাগলের মতন এই সন্ত্রাসীর সমর্থন করবে। কাবা ঘরে লাশ ফেলে দিলে এই ছাগল দাঁত কেলিয়ে বলবে, "ওটা মুনাফেকের লাশ ছিল। দাজ্জালের ফেতনার শিকার!"
পালে পালে এরা সৌদি যাবার জন্য রওনা হবে।
আমি পয়েন্ট বুঝাতে পারছি? আপনি আমি সাধারণ মুসলমান, আমাদের মাহ্দীকে তখনই মেনে নিতে হবে যখন চোখের সামনে নিশ্চিতভাবেই দেখবো তিনি এসেছেন। একটু এদিক ওদিক হলে ঈমানের সবচেয়ে বড় পরীক্ষায় শোচনীয়ভাবে ফেল করবো। মুসাইলামা আল কাজ্জাব ও সেই সময়ে অনেক মিথ্যা নব্যুয়ত দাবিকারী লোক ছিল যাদের পক্ষেও এমনসব লোক ছিল যারা কয়েকদিন আগেও নবীর (সঃ) কাছ থেকে কলিমা পাঠ করে মুসলিম হয়েছিল। আহাম্মকিকে প্রশ্রয় দিবেন না, নাহলে ওদের অনুসারীদের পরিণতিই আমাদের নিতে হবে।

যে কারনে মাহদীর প্রসঙ্গ তুললাম, তা হচ্ছে, হাদিস অনুযায়ী মাহদীর সমর্থনে কালো পতাকাবাহী যে সেনাদল আসবে, তাঁরা এই আফগান অঞ্চল থেকেই আসবে। এই "কালো পতাকা" থেকেই আইসিস নিজেদের পতাকার রং কালো করেছে। এবং এর ফলেই ওদের ফাঁদে লাখে লাখে বেকুব ধরা খেয়েছে। বাস্তবেই এমন অনেক বেকুব আছে, যারা বিশ্বাস করে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ সন্ত্রাসী সংগঠন আইসিস হচ্ছে মাহদীর সাপোর্ট করা সেনা। একই যুক্তিতে, অনেকেরই বিশ্বাস, আফগানিস্তানের তালেবানরাই মাহদীর সাহায্যকারী সেই সেনাদল।

আবারও স্মরণ করিয়ে দেই, মাহ্দী যখন আসবেন, তখন আসবেন। তিনি কোন স্ক্রিপ্ট ফলো করে আসবেন না। আল্লাহ যখন তাঁকে পাঠাবেন, তখন তিনিই সেই সেনাদল প্রস্তুত করবেন যারা কালো পতাকাবাহী। এখন সবচেয়ে বড় পয়েন্ট হচ্ছে, এই ঘটনা আগামীকালকেও ঘটতে পারে, দুই হাজার বছর পরেও ঘটতে পারে। যখন মঙ্গলরা মুসলিম খিলাফত আক্রমন করেছিল, এবং সবাই ধরেই নিয়েছিল এরাই ইয়াজুজ মাজুজ, তখন যদি সবাই বসে থাকতেন এই আশায় যে ঈসা (আঃ) নবী এসে এদের ব্যবস্থা নিবেন, তাহলেতো হতই। তাঁরা তা করেননি। তাঁরাই মঙ্গলদের বিরুদ্ধে লড়েছেন। আমরা কি সেটা করছি?
আমাদের এটিচুডের আরেকটা কুফল দেখাই। ইজরায়েল কয়েক জেনারেশন ধরে ফিলিস্তিন দখল করে আছে। মুসলিম বিশ্ব রিল্যাক্সড। কেন? কারন হাদিস অনুযায়ীই সেটা হবার কথা। ওরা থার্ড টেম্পল তৈরী করবে, দাজ্জালের উত্থান ঘটবে, ইমাম মাহ্দী আসবেন ইত্যাদি। আরে ভাই, জেরুজালেম এর আগেও বেদখল হয়েছিল, সালাদিন আল আইউয়ুবিকে উদ্ধার করতে হয়েছিল তা। যদি সবাই ইমাম মাহদীর আশায় বসে থাকেন, এবং আল্লাহ তাঁকে আরও তিন হাজার বছর পরে পাঠান, তাহলে ফিলিস্তিনিদের কি অবস্থা হবে বুঝতে পারছেন? আমাদের কাজ আমাদের করতে হবে, মাহ্দী আসলে আলহামদুলিল্লাহ, তিনি না আসলে আমাদের সন্তানরা তাঁদের দায়িত্ব পালন করে যাক।
তালেবানদের অতীত রেকর্ড খুবই খারাপ। এইটা পশ্চিমা মিডিয়ার প্রচারণা না, ওরা নিজেরাই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে, বলেছে যে ওদের দল আগের দলের চেয়ে ভিন্ন, জনগনের প্রতি ওদের আচরণটাও ভিন্ন হবে।
কথা হচ্ছে, ওদের কথার উপর বাংলাদেশীরা যতটা না বিশ্বাস করছে, আফগানদের ততটা করতে দেখা যাচ্ছেনা। এয়ারপোর্টে পলায়নরতদের যে ভিড় দেখা গেল, এই ভিড় কেন রাস্তায় নেমে আনন্দ প্রকাশে দেখা যাচ্ছেনা? একটা দেশ বিশ বছর পরে জালিম শাসকের হাত থেকে উদ্ধার হলো, সেই আনন্দ উৎসব কোথায়? আমাদের দেশের বিজয় দিবসের ভিডিওগুলো দেখুন, পঞ্চাশ বছর পুরানো, তারপরেও রাস্তায় রাস্তায় মানুষ, কোটি কোটি মানুষ দেখা যায়। বাড়িতে বাড়িতে পতাকা উড়ছে, মুক্তিযোদ্ধাদের পারলে কোলে তুলে আনন্দ করছে জনতা। আফগানিস্তানের কোথায় এই দৃশ্য দেখা গেছে কেউ একটু বলতে পারেন? এক ভদ্রলোক দাবি করলেন হাজারে হাজারে ভিডিও আছে, যখন দেখতে চাইলাম, একটাও দেখাতে পারলেন না। সব ভিডিওতে অস্ত্রধারী তালেবান সেনা রাস্তা পাহারা দিচ্ছে, জনতার উপস্থিতি শূন্য। সদ্য স্বাধীন কোন দেশে এইটা স্বাভাবিক দৃশ্য? যেদিন মার্কিন পতাকা প্রথমবারের মতন কাবুলের দূর্গে উঠেছিল, সেদিনের সাথে এদিনের পার্থক্য কেউ করতে পারবেন? তাহলে কি ৮৫% আফগান জনতা রাজাকার? নাকি ওরা আসলেই তালেবানদের ভয়ে ভীত? অতীতে ওরা ওদের শাসনে বাস করেছে, আমি আপনি নই। ব্যাপারটা এমন যেন আগুনের রাস্তায় একজনকে আমি আপনি ঠেলে দিয়ে বলছি "কোন ভয় নেই, খুব আরামে থাকবা" এদিকে নিজে এসি বাড়িতে দামি সোফায় গা এলিয়ে দিয়ে টিভি দেখছি।
কেউ কেউ বলছেন, "জনতার সাপোর্ট না থাকলে নিজেদের চেয়ে সংখ্যায় চারগুন বেশি প্রশিক্ষিত সেনাবাহিনীকে কিভাবে বিনা যুদ্ধে হারাবে?"
অতি জটিল যুক্তি। কিন্তু গত বিশ বছর ধরেই কি সবাই জানি না যে আফগানিস্তানের পুতুল সরকার চরমভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত? বিদেশ থেকে যা টাকা আসে, সব লুটপাট হয়ে যায়। সেনাবাহিনীকে খাওয়াবেন না, অস্ত্র দিবেন তো গুলি দিবেন না, বেতন দিবেন না, তাহলে ওরা যুদ্ধ লড়বে কিসের জন্য? তাও নিজের স্বজাতির বিরুদ্ধে? "বিনা যুদ্ধে সারেন্ডার" থেকেইতো বুঝা যায় ওরা যুদ্ধই করেনি। যুদ্ধ করলে তখন জনতার সাপোর্ট লাগে। রেফারেন্স লাগলে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে পড়াশোনা করেন। বিশ্বের যেকোন দেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে পড়াশোনা করেন।

এনিওয়েজ, যদি তালেবানরা আসলেই ভাল হয়ে যায়, তাহলেতো কথাই নাই। নাহলে ওরা কি করতে পারে সেটাতো ওদের অতীত রেকর্ডই বলে। আমি ব্যক্তিগত পর্যায়ে কিছু আফগানকে চিনি বলেই বাঙালির এই অতি আদিখ্যেতা বিরক্তিকর লাগছে। যাকেই জিজ্ঞেস করি, কোন আফগান থেকে এইসব খবর পেয়েছেন? চেনেন একটাও আফগানকে? শুনেছেন ওদের কারোর কাহিনী? তখনও কবি নীরব না হয়ে কুতর্ক করতেই থাকে। অদ্ভুত! সেটা ব্যাপার না, তবে "ইমাম মাহদীর সাহায্যকারী আফগান অঞ্চল থেকে আসবে, তাই আমি তালেবানদের সমর্থন করি" - জাতীয় বিশ্বাস প্রচন্ড আত্মঘাতী। আশা করি উপরে বুঝাতে পেরেছি।

এখন এই ব্যাপারে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে আসি। এখানে এক্সট্রা এটেনশন দিন।
একজন পাঠক ফালতু তর্ক না করে খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন করলেন সেদিন, ঈসা নবীর রাজত্বে শাসন ব্যবস্থা কেমন হবে? তিনি কি মেয়েদের বাইরে পড়াশোনা/চাকরি বা সমাজে চলমান অনেক কিছুই যা ট্র্যাডিশনাল ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক, তা কি তিনি এলাউ করবেন?
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন, এবং ঠিক এই কারণেই বুদ্ধিমান পাঠক পছন্দ করি। এরা অন্ধভাবে পঙ্গপালের মতন অনুসরণ করেনা, এরা গঠনমূলক চিন্তাভাবনা করে।
আমাদের দেখতে হবে আমাদের নবীর শাসন ব্যবস্থা কেমন ছিল। আমাদের বুঝতে হবে আল্লাহর নির্দেশে শাসন ব্যবস্থা কেমন হয়ে থাকে। তাহলে আমরা একটা আন্দাজ করতে পারি, ঈসা (আঃ) নবী কোন পথে যাবেন।
মুহাম্মদ (সঃ) যে যুগে আরবে আসেন, এরচেয়ে জঘন্যতম সময় সভ্যতার ইতিহাসে আর কখনও ছিল কিনা কে জানে! ওরা কেবল জীবিত কন্যাদের কবরই দিত না, উত্তরাধিকার নিয়েও ওদের একটি সামাজিক নীতি ছিল খুবই জঘন্য। তা হচ্ছে, পিতার মৃত্যুর পরে পুত্ররা উত্তরাধিকার সূত্রে সৎ মায়েদের অধিকার পেত। মানে বিয়ে করতে পারতো, অথবা রক্ষিতা হিসেবে রাখতে পারতো। একই সাথে, পুরুষ তার বিবাহিত স্ত্রীর আগের ঘরের কন্যাকে (সৎ মেয়ে) বিয়ে করতে পারতো। এইসব বিষয়ে কুরআনে আয়াত আছে, অথেন্টিক হাদিসও আছে। এছাড়া সমাজে
সুদ, জেনাহ আর মদ্যপানতো ছিলই। আমাদের নবীজিকে (সঃ) এইসবের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়েছে। আল্লাহর খেলা, তিনি দেখিয়ে দিলেন তাঁর সেরা সৃষ্টি কত নিখুঁতভাবে জঘন্যতম এক জাতিকে পাল্টে দিতে পারেন।
তা লড়াই কিভাবে শুরু হলো? প্রথমে বিশ্বাস করতে হবে তাওহীদ আর রিসালাতে, মানে আল্লাহ ছাড়া আর কোন উপাস্য নাই, মুহাম্মদ (সঃ) তাঁর রাসূল। এইটা মেনে নিলেই আপনি মুসলমান। ১০/১০।
তারপরের ধাপে এসে আল্লাহ নির্দেশ দিলেন মানুষে মানুষে ভেদাভেদ করা যাবেনা। অভুক্তকে, সে যে ধর্মেরই হোক না কেন, এমনকি জেলে বন্দি অপরাধী হলেও, খাওয়াও। পিতামাতার সেবা করো।
এইভাবে ধাপে ধাপে নিয়ম আসতে থাকে। নামাজের নির্দেশ আসে মক্কী জীবনের প্রায় শেষ পর্যায়ে (মা খাদিজার (রাঃ) মৃত্যুর পরে), রোজার নির্দেশ আসে মদিনার জীবনে, মদ নিষিদ্ধের আয়াত নাজেল হয় মদিনায়, পর্দার আয়াত আসে মদিনায় চতুর্থ হিজরী সনে, মানে ইসলাম প্রচারের সতেরো বছর পর - এইভাবে ধাপে ধাপে দীর্ঘ তেইশ বছর লেগেছে।
তাহলে এ থেকে আমরা আমাদের কমন সেন্স ও লজিক খাটিয়ে কি পাই? আল্লাহ কেন ধারাবাহিকভাবে সময় নিয়ে এইভাবে ইসলাম ধর্মের বাণী নবীর মাধ্যমে আমাদের কাছে পাঠিয়েছেন? তিনিতো চাইলেই একটা বই আকারে কুরআন পাঠিয়ে বলতে পারতেন "চ্যাপ্টার অনুযায়ী ওদের বুঝিয়ে দাও। প্রতি মাসে একেকটা চ্যাপ্টারের উপর পরীক্ষা নিবে। পরীক্ষায় পাশ করলে বেহেস্ত, না করলে দোযখ!"
জ্বি না। আল্লাহ শ্রেষ্ঠ কৌশলী। তিনি ভাল করেই তাঁর বান্দাদের চিনেন। তাই তিনি প্রথমে তাঁর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করার সময় দিয়েছেন। সবচেয়ে কঠিনতম কাজ এটি। আপনাকে পরিপূর্ণরূপে আত্মসমর্পণ করতে হবে। তারপরে ধীরে ধীরে কিছু কার্যাবলীর নির্দেশ দিয়েছেন যা পালন করার মাধ্যমে আমরা আল্লাহর রহমত ও ভালবাসার সাথে পরিচিত হতে শুরু করবো। এইভাবেই ধীরে ধীরে যখন আমাদের ঈমান তাজা হয়ে যাবে, তখন আমরা চোখ বন্ধ করে তাঁর নির্দেশ পালন করবো।
মদ জুয়ার আসক্তি প্রচন্ড খারাপ আসক্তি। এ থেকে সহজে মুক্তি মেলে না। আধুনিক যুগে প্রচন্ড দামি শোধনাগারে গিয়ে কোটি কোটি টাকা খরচ করেও অনেকে এ থেকে মুক্তি পেতে পারেন না। অথচ আল্লাহর মাত্র একটি নির্দেশ শোনা মাত্র মুসলিমরা নিজের বাড়িতে জমিয়ে রাখা মদ এনে রাস্তায় ফেলে দেন। নবীর (সঃ) কণ্ঠ থেকে কুরআনের আয়াত শুনেই এক সাহাবী ছুটে এসে যখন তাঁর মদ্যপানরত বন্ধুদের এই নিষেধাজ্ঞার কথাটি শোনান, পানরত অবস্থা থেকে তাঁরা মুখ থেকে কুলি করে ফেলে দেন, কারন আল্লাহ "নিষেধ" করেছেন। কোন পুলিশ, আর্মি, মিলিটারি গিয়ে সার্চ করে করে তাঁদের বাড়ি থেকে মদ উদ্ধার করে ধ্বংস করেননি। কিভাবে ও কেন এমনটা হলো? কারন সুদীর্ঘ পনেরো বছরে তাঁদের কয়লার হৃদয় একেকটা হীরকখণ্ডে পরিণত হয়েছিল। ঠিক যে কারনে কোন মুসলমান সারাদিন রোজা রেখে চোখের সামনে খাবার নিয়ে বসেও সূর্যাস্তের পূর্বে মুখে এক বিন্দু খাবার তুলে না। একেই বলে তাকওয়া! এটি পুরোপুরিই প্র্যাকটিসের ব্যাপার। সময়ের ব্যাপার।
যদি আল্লাহ শুরুতেই বলে দিতেন "মদ হারাম! জিনাহ হারাম!" তাহলে এই সাহাবীরাই প্রথমেই বলতেন, "আমি মদ ছাড়তে পারবো না, জিনাও না। ইসলামগ্রহণ আমাকে দিয়ে হবেনা।"
কথাটা শুনে চোখ কপালে তুলে ফেলছেন? ভাবছেন, সাহাবীদের নিয়ে এমন কথা বলার ধৃষ্টতা আমি কোথায় পেলাম? আসলে কথাটি আমার না, আমাদের সবার প্রিয় আম্মা হজরত আয়েশার (রাঃ) উক্তি। বুখারী শরীফের ৬৬ নম্বর অধ্যায়ের ১৫ নম্বর হাদীসটি দেখে নিন। সাহাবীদের মন মানসিকতা ও সমসাময়িক সমাজ ব্যবস্থা সম্পর্কে আমার আপনার চেয়ে নিশ্চই তাঁর ধারণা বেশি? তাঁর যদি এমন উক্তি হয়ে থাকে, তাহলে সাধারণ বাঙালি কিভাবে আশা করে আমি কাউকে কুরআনের দাওয়াত দিলাম, পর্দার কথা বললাম আর অমনি সে সব ছেড়ে ছুড়ে মুমিন মুসলমান হয়ে যাবে?
আল্লাহ নিজেই সূরা বাকারায় বলেছেন ধর্মের ব্যাপারে কোন জবরদস্তি করা যাবেনা। কারন জবরদস্তি করলে মুমিন তৈরী হয়না, হয় মুনাফেক। মক্কার জীবনে মুসলিমরা ছিল অসহায়, নির্যাতিত, নিপীড়িত, কিন্তু সেখানে কোন মুনাফেক ছিল না। যারা মুসলিম হয়েছিলেন, নিজ দায়িত্বে দ্বীনকে ভালবেসেই হয়েছিলেন। মেরে কেটেও তাঁদের ঈমান টলানো যায়নি।
মুনাফেকের জন্ম মদিনায়। মুসলিমরা তখন ক্ষমতায়, তাই ক্ষমতাবানদের তুষ্ট করতে মুনাফেকরা নিজেদের মনের বিরুদ্ধে গিয়ে "লোকদেখানো" ধর্মীয় আচার পালন শুরু করে। যে মেয়েটিকে আমি মেরে ধরে হিজাব পরাবো, আমি সরে যেতেই সে সেটা খুলে ফেলবে। যে যুবককে আমি ধমক দিয়ে মদ্যপান থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করবো, ও সুযোগ পেলেই বোতলে চুমুক দিবে। জোর করে জেনাহ আটকাবেন কিভাবে? নবীর (সঃ) যুগেই সাহাবী সমাজে জেনাহর ঘটনা ঘটেছে, বলাৎকারের ঘটনা ঘটেছে, চুরির ঘটনা ঘটেছে - হাদিস গ্রন্থগুলোতেই আমরা পাই। নবী (সঃ) কোথাও জোর করেছেন? না। তাঁর দায়িত্ব ছিল শিক্ষা দেয়া, কোনটা এলাউড বা এলাউড না সেটা বলা, বুঝানো। বাকিটা যার যার প্র্যাকটিসের ব্যাপার। একটি যুবক এসে নবীকেই (সঃ) বলে বসেন জেনাহর অনুমতি দিতে। নবীজি (সঃ) কি তাঁকে লাঠি পেটা করেছিলেন? বা শাস্তি? না। বরং যুবকটিকে বুঝিয়েছিলেন জেনাহ কেন খারাপ, এতে কি ক্ষতি হয়। এরপরে যুবকটিকে ছেড়ে দিয়েছিলেন নিজের সিদ্ধান্তের উপর। কোন অনুচর, গুপ্তচর কি পাঠিয়েছিলেন নজর রাখতে? যুবকটি যদি জেনাহ করতো, ধরা খেত, তাহলে আইন অনুযায়ী শাস্তির ব্যবস্থা। করতেন। কিন্তু লোকজনের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে মোরাল পুলিসিং হতো, এমন উদাহরণ দিতে পারবেন? নবীর সামনে এক বেপর্দা নারী কথা বলতে আসেন, এবং তাঁর ভাতিজা (রাঃ) ফ্যালফ্যাল করে মহিলার রূপের দিকে তাকিয়ে ছিলেন, নবীজির (সঃ) অ্যাকশন কি ছিল তখন? তিনি ভাতিজার মুখ ঘুরিয়ে দেন, মহিলাকে গালাগালি করে পর্দা করে আসতে বলেন না।

আশা করি এসব ঘটনার আলোকে নবী ঈসার (আঃ) শাসন ব্যবস্থা কেমন হবে এ সম্পর্কে কিছুটা ধারণা আমরা করতে পারি। যদি তিনি বলেন এইটা করতে হবে, আমরা মুসলমানরা সেটাই করবো, যখন তিনি বলবেন ওটা করা যাবেনা, আমরা ওটা এড়িয়ে চলবো। পুরোটাই হবে তাঁর প্রতি বিশ্বাস থেকে, আল্লাহকে, ইসলামকে ভালবেসে। নাহলে আমার বা আপনার সেই কাজের কোনই মূল্য থাকবে না।
বাকিটা আল্লাহর উপর।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে আগস্ট, ২০২১ সকাল ৯:৪২

ইমরান আশফাক বলেছেন: হুম, খুবই চিন্তাভাবনা করে লিখা। এখন পর্যন্ত কেউ আংগুল দিতে পারেনি পোষ্ট টিতে উল্টাপাল্টা মন্তব্য করে।

২৫ শে আগস্ট, ২০২১ সকাল ৮:২১

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: পড়েই নাই "জ্ঞানী গুণীরা।" :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.